তড়িচ্চালক শক্তি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

তড়িচ্চালক শক্তি বা ই. এম. এফ. (ইংরেজি: Electromotive Force) হলো বৈদ্যুতিক ক্রিয়া যা একটি বৈদ্যুতিক উৎস থেকে উৎপন্ন হয়। ই এম এফ কে E বা দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং একে ভোল্ট (ভোল্ট) এককে পরিমাপ করা হয়। [১] কেবলমাত্র, একক চার্জ একটি বদ্ধ চক্র বা পরিবাহীতে (কনডাক্টর) যখন সম্পূর্ণ ঘুরে তখন ই এম এফ বা তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন হয়। তড়িচ্চালক শক্তিকে নিম্নরূপে সঙ্গায়িত করা যায়,

কোন বর্তনী তে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করার জন্য তড়িৎশক্তির প্রয়োজন হয়। কোন তড়িৎ উৎস এক কুলম্ব আধানকে বর্তনীর এক বিন্দু থেকে উৎসসহ সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে ঐ বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয় তাকে ঐ উৎসের তড়িচ্চালক শক্তি বলে। [২] যেমন একটি ব্যাটারির শক্তি তড়িচ্চালক শক্তি। [৩] ব্যাটারিতে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। [৪]

  • কোষ বা উৎস যখন মুক্ত থাকে ,অর্থাৎ কোষ বা উৎস বর্তনীর সাথে সংযুক্ত না থাকলে, অথবা বর্তনীতে তড়িৎ সরবরাহ না করলে, এর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্যই হবে তড়িচ্চালক শক্তি। কোষের তড়িচ্চালক শক্তি বর্তনীর রোধের উপর নির্ভরশীল নয়। dq পরিমাণ চার্জকে কোষ সমেত বর্তনীর কোন বিন্দু থেকে সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে উক্ত বিন্দুতে আনতে কোষ dw পরিমাণ কাজ সম্পাদন করলে তড়িচ্চালক শক্তি,

E বা ℰ = dw/dq

= কাজের একক/ চার্জের একক

অর্থাৎ, তড়িচ্চালক শক্তির একক হলো জুল/কুলম্ব; একে ভোল্ট বলে। ১ কুলম্ব চার্জকে কোষ সমেত বর্তনীর কোন বিন্দু থেকে সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে উক্ত বিন্দুতে আনতে যদি কোষকে এক জুল কাজ সম্পাদন করতে হয়, তবে কোষের তড়িচ্চালক শক্তিকে ১ ভোল্ট বলে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৮৩০ সালের দিকে, বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তার ভোল্টাইক কোষের জন্য দুটি তড়িৎদ্বার ও তড়িৎ-বিশ্লেষ্যের সংযোগের রাসায়নিক ক্রিয়ায় উৎপন্ন তড়িচ্চালক শক্তি বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করেন। এই বিক্রিয়াটি কারেন্ট পরিচালিত করে এবং প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হতো এটি শক্তির অসীম উৎস। খোলা বর্তনীর জন্য, চার্জ বা আধান পৃথকীকরণ ততক্ষন উবদি হয় ,যতক্ষন না আলাদাভাবে প্রতিটি চার্জের তড়িৎ ক্ষেত্র বিক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট হয়। কয়েক বছর আগে , আলেসান্দ্রো ভোল্টা তার কোষের দুটি ধাতু-ধাতু ( তড়িৎদ্বার-তড়িৎদ্বার) সংযোগের জন্য বিভব পার্থক্য পরিমাপ করেন, তার অবিশুদ্ধ মতবাদ অনুসারে কেবলমাত্র দুটি তড়িৎদ্বার-তড়িৎদ্বার সংযোগই ই এম এফ এর উৎস ।

উদ্ভব[সম্পাদনা]

রাসায়নিক উৎস[সম্পাদনা]

7002648838১৯শতকের দিকে বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন ছিল কীভাবে ব্যাটারি (গ্যালভানিক কোষ) তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন করে। অবশেষে ১৮৮৯ সালে ওয়ালথের নার্নস্ট (Walther Nernst) নির্ণয় করেন প্রাথমিক ভাবে ইলেকট্রোড বা তড়িৎদ্বার ও তড়িৎ-বিশ্লেষ্যের মধ্যে সংযোগের ফলে তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন হয়।

অণু বা ধাতব পদার্থের মধ্যকার পরমাণু গুলো রাসায়নিক বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে, যার কারনে অণু বা ধাতব পদার্থটির গঠন দৃঢ় হয়। যখন অণু অথবা ধাতব পদার্থকে তুলনামুলকভাবে উচ্চ শক্তির কাছাকাছি আনা হয় তখন তাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্রিয়া হয় এবং তাদের মধ্যকার বন্ধন পুনর্বিন্যস্ত হয় ফলে কিছু মুক্ত শক্তির উদ্ভব হয়। ব্যাটারিতে অর্ধ বিক্রিয়া হয়। যার একটিতে ইলেক্ট্রনের গ্রহণ ঘটে ( জারণ অর্ধ বিক্রিয়া) আর অন্যটিতে (বিজারণ অর্ধ বিক্রিয়া) ইলেক্ট্রনের ত্যাগ ঘটে। স্বতঃস্ফূর্ত রাসায়নিক বিক্রিয়া তখনই ঘটে যখন ইলেক্ট্রন ইলেক্ট্রোড থেকে পরিবাহি তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর তড়িৎ শক্তি ততক্ষন থাকে যতক্ষন মুক্ত শক্তি থাকে।

লবণ সেতু যুক্ত একটি গ্যালভানিক কোষ।

উদাহরনস্বরূপ , ডেনিয়েল কোষের ( Daniell cell ) কথা বলা যাক, এতে দুটি অর্ধকোষ থাকে একটিতে জারণ এবং অন্যটিতে বিজারণ হয়। প্রতিটি অর্ধকোষে একটি ইলেকট্রোড যা জিঙ্ক ও কপারের পাত এবং একটি ইলেকট্রোলাইট যা এদের জলীয় দ্রবণ ZnSO4 ও CuSO4 থাকে। ইলেকট্রণ Zn থেকে Cu এর দিকে অগ্রসর হয় কেননা Zn এর শক্তি Cu এর চেয়ে বেশি ।

Zn ও ZnSO4 অর্ধকোষে বিক্রিয়া ( ap = Aqueous solution বা জলীয় দ্রবণ, s= Solid বা ধাতু)

Zn(s) → Zn2+(aq) + 2e-

Cu ও CuSO4 অর্ধকোষে বিক্রিয়া-

Cu2+(aq) + 2e- →Cu(s)

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. emf. (1992). American Heritage Dictionary of the English Language 3rd ed. Boston:Houghton Mifflin.
  2. David M. Cook (২০০৩)। The Theory of the Electromagnetic Field। Courier Dover। পৃষ্ঠা 157। আইএসবিএন 978-0-486-42567-2 
  3. Stewart, Joseph V. (২০০১)। Intermediate electromagnetic theory। World Scientific। পৃষ্ঠা 389 
  4. Tipler, Paul A. (জানুয়ারি ১৯৭৬)। Physics। New York, NY: Worth Publishers, Inc.। পৃষ্ঠা 803আইএসবিএন 978-0-87901-041-6 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]