গ্ত্সাং-পা রাজবংশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গ্ত্সাং-পা রাজবংশ (তিব্বতি: གཙང་པওয়াইলি: gTsang pa) ১৫৫ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মধ্য ও পশ্চিম তিব্বত শাসনকারী একটি রাজবংশ। এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন ঝিগ-শাগ-পা-ত্শে-ব্র্তান-র্দো-র্জে

রাজবংশ প্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]

গ্ত্সাং-পা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ঝিগ-শাগ-পা-ত্শে-ব্র্তান-র্দো-র্জে গ্ত্সাং অঞ্চল শাসনকারী রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের হয়ে কর-সংগ্রাহকের কাজ করেন। ১৫৪৮ খ্রিষ্টাব্দে সামরিকদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাম-গ্রুব-ত্সে দুর্গের অধিপতি হিসেবে তাকে নিয়োগ করা হয়।[১]:২৮০ দুর্গাধিপতি হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে তিনি রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। ১৫৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঐ রাজবংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। ১৫৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পানাম ল্হুনদ্রুপ ক্যুংত্সে অবরোধ করে অধিকার করলে কুন-ম্খ্যেন-পাদ-মা-দ্কার-পো নামক 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের চতুর্থ র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। কিন্তু ১৫৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ন্যাংতোদ অঞ্চলে এক নতুন যুদ্ধের সূচনা হলে কুন-ম্খ্যেন-পাদ-মা-দ্কার-পোর মধ্যস্থতায় ঙ্গা-দ্বাং-'জিগ্স-মেদ-গ্রাগ্স-পা সমগ্র পানাম অঞ্চলটি ঝিগ-শাগ-পা-ত্শে-ব্র্তান-র্দো-র্জেকে সমর্পণ করে দিতে সম্মত হন। এরফলে রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের প্রভাব মধ্য তিব্বত থেকে অন্তর্হিত হয়।[১]:২৮১ ১৫৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ঝিগ-শাগ-পা-ত্শে-ব্র্তান-র্দো-র্জে নিজেকে ত্সাংতোদ গ্যালপো বা উত্তর গ্ত্সাং অঞ্চলের রাজা ঘোষণা করেন।[২] তার নতুন রাজবংশের নাম হয় গ্ত্সাং-পা রাজবংশ। তিনি পূর্ব মধ্য তিব্বত শাসনকারী ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন, কোকোনর অঞ্চলের মঙ্গোলদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেন এবং চোগথু মঙ্গোল জনজাতির সাহায্যের আশ্বাস আদায় করে নেন।[১]:৮৯ এরপর তিনি পশ্চিম তিব্বতের ছাং ও লাতোদ অঞ্চল নিজের অধিকারে নিয়ে আসেন।[৩] তার দুই পুত্র ম্থু-স্তোব্স-র্নাম-র্গ্যালকুন-স্পাংস-ল্হা-দ্বাং-র্দো-র্জের রাজত্বকাল সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না।

ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের সঙ্গে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

১৫৯২ খ্রিষ্টাব্দে 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর চতুর্থ প্রধান বা র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা কুন-ম্খ্যেন-পাদ-মা-দ্কার-পোর মৃত্যু হলে ছোংয়ে অঞ্চলের রাজপুত্রের পুত্র দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পো এবং রালুং বৌদ্ধবিহারের প্রধান লামা মি-ফাম-ছোস-র্গ্যালের পুত্র ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের মধ্যে কে পরবর্তী অবতার সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। এই দ্বন্দ্বে তিব্বতের তৎকালীন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অধিকাংশ জড়িয়ে পড়েন। একদিকে যেমন কুন-ম্খ্যেন-পাদ-মা-দ্কার-পোর ঘনিষ্ঠ বৌদ্ধভিক্ষু ল্হা-র্ত্সে-বা-ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্জাং-পো (ওয়াইলি: lha rtse ba ngag dbang bzang po) এবং দ্রুক সাঙ্গাগ ছোলিং বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুরা দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পোকে সমর্থন করেন, অন্যদিকে র্গ্যা পরিবারগোষ্ঠীর রালুং বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুরা ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালকে পরবর্তী র্গ্যাল-দ্বাং-'ব্রুগ-পা হিসেবে নির্বাচন করেন। এই বিতর্ক নতুন মাত্রা নেয় যখন গ্ত্সাং-পা রাজবংশের পঞ্চম রাজা ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দ্পাগ-ব্সাম-দ্বাং-পোকে সমর্থন করেন। এই ঘটনায় কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়, 'ব্রুগ-পা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠী উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং ১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যাল হিমালয়ের দক্ষিণে এক নতুন রাজ্যের স্থাপন করেন, যা বর্তমানে ভুটান নামে পরিচিত। কিছুদিন পরে গ্ত্সাং-পা রাজবংশ ঙ্গাগ-দ্বাং-র্নাম-র্গ্যালের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী পাঠান কিন্তু তারা পরাজিত হন।[৪][৫][৬][৭]

দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে বিরোধিতা[সম্পাদনা]

গ্ত্সাং-পা রাজবংশের চতুর্থ রাজা ব্স্তান-স্রুং-দ্বাং-পো কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক ও দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের বিরোধী ছিলেন।[৮]:৯০ ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গোলিয়া থেকে চতুর্থ দলাই লামা তিব্বত পৌঁছনোর কিছু সময় পর থেকে দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের বিরোধ শুরু হয়। কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের রক্ষাকর্তা হিসেবে ব্স্তান-স্রুং-দ্বাং-পো ১৬০৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বুস অঞ্চল আক্রমণ করে ফান্যুল অবরোধ করেন। ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে তার সৈন্যদল ক্যিশোদ অধিকার করে। এই লড়াইয়ে প্রায় ৫০০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।[৯]:২৬ কোন কোন সূত্র মতে, ব্স্তান-স্রুং-দ্বাং-পো ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু অন্য কিছু সূত্র মতে ১৬০৩ খ্রিষ্টাব্দে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল গ্ত্সাং-পা রাজবংশের রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন।[১০] সেই হিসেবে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের দ্বারা দ্বুস অঞ্চলের সামরিক আক্রমণ পরবর্তী রাজা ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের নেতৃত্বে হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে তার সেনাবাহিনী লাসা শহরের নিকটবর্তী ক্যিশোদ নগরে মঙ্গোল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন।[১১]:৬৯৮ এরফলে পশ্চিম তিব্বতের তোহ, পূর্ব মধ্য তিব্বতের কিছু অংশ এবং পশ্চিম মধ্য তিব্বতের সমগ্র অংশ গ্ত্সাং-পা রাজবংশের অধীনে আসে।[৮]:৯০,৯৮ ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পশ্চিম তিব্বতের ঙ্গারি অঞ্চলে আভিযান চালান, যারফলে গুংথাং রাজ্য, ছাং, লাতোদ লো প্রভৃতি অঞ্চল তার অধীনস্থ হয়।[১২] কইন্তু এই সমস্ত অঞ্চলগুলিকে বশবর্তী করে রাখতে তাকে বেশ কয়েকবার অভিযান চালাতে হয়।[১১]:৬৯৮ পূর্বসূররীদের মতোই ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং সেই হিসেবে চতুর্থ দলাই লামা য়োন-তান-র্গ্যা-ম্ত্শোচতুর্থ পাঞ্চেন লামা ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-র্গ্যাল-ম্ত্শানের নেতৃত্বাধীন দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের বিরোধী ছিলেন। ১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তিনি গ্ত্সাং অঞ্চলের সমস্ত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে এক সভায় আহ্বান করে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের দশম র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা ছোস-দ্ব্যিংস-র্দো-র্জেকে রাজ্যের ধর্মীয় শাসক হিসেবে মেনে নিতে তাদের বাধ্য করেন।[৯]:৩০ চতুর্থ দলাই লামা মৃত্যুবরণ করার পরে ১৬১৮ খ্রিষ্টাব্দে ছোখুর মঙ্গোলদের একটি দল দ্বুস অঞ্চলে তীর্থযাত্রায় এসে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের অধীনস্থ এলাকায় লুঠপাট চালালে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দ্বুস অঞ্চলে আক্রমণ করে দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধধর্মসম্প্রদায়ের বহু বৌদ্ধবিহারকে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের বৌদ্ধবিহারে পরিণত করেন।[১]:৩২৭,৩২৮ শেষ জীবনে চতুর্থ পাঞ্চেন লামা ব্লো-ব্জাং-ছোস-ক্যি-র্গ্যাল-ম্ত্শানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হলে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল দলাই লামার পরবর্তী অবতার খোঁজার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন এবং ১৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম দলাই লামা হিসেবে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-র্গ্যা-ম্ত্শোকে চিহ্নিত করা হয়।[৯]:৩৩

১৬২০ খ্রিষ্টাব্দে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যালের মৃত্যু হলে তার পুত্র ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন।[১]:২৮৪[৮]:৯৯-১০২ তার কম বয়সের কারণে রাজ্যের দুই মন্ত্রী দ্রোন্যের বোঙ্গোং এবং গাংজুকপা রাজ্যভার হাতে নেন। কিংহাই মঙ্গোলদের সঙ্গে দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী হওয়ার কারণে এই দুই মন্ত্রী সদ্য চিহ্নিত পঞ্চম দলাই লামার নিকট প্রতিনিধিদল পাঠাতে ইচ্ছুক ছিলেন না। ১৬২১ খ্রিষ্টাব্দে ল্হাত্সুন এবং হুংতাইজির নেতৃত্বে মঙ্গোলরা দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের সমর্থনে দ্বুস অঞ্চল আক্রমণ করলেব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো গ্যাথাংগাং নামক স্থানে তাদের সম্মুখীন হন কিন্তু তিনি ও তার সৈন্যদল মুঙ্গোলদের কাছে পরাজিত ও বন্দী হন।[১১]:৬৯৭ এই সময় পাঞ্চেন লামা সহ দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের প্রধান লামারা তাদের মুক্তির জন্য মঙ্গোলদের অনুরোধ করলে তারা মুক্তি পান। কিন্তু এর পরিবর্তে দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায় তাদের পূর্বেকার সমস্ত বৌদ্ধবিহার পুনরায় অধিকার করে এবং দ্বুস অঞ্চলে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের সমস্ত সামরিক ছাউনিগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

রাজ্যের পতন[সম্পাদনা]

১৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়কে পিছু হঠিয়ে দিতে সক্ষম হন, যার ফলশ্রুতিতে পঞ্চম দলাই লামা শক্তিহীন ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধীনস্থ নেদং অঞ্চলে আশ্রয় নিত বাধ্য হন।[১১]:৫৯ এই সময় ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো লিগদান খান নামক এক বরিষ্ঠ মঙ্গোল নেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। ১৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে লিগদান খান কোকোনর এলাকা নিজের অধিকারে নিয়ে আসে কিন্তু পরের বছর গুটিবসন্ত রোগে তার মৃত্যু হলে তার রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে।[৯]:৩৪ ১৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে চোগথু মোঙ্গোলদের নেতা আর্সলান তিব্বত আক্রমণ করলে ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো তার সঙ্গেও সন্ধি স্থাপন করেন। এই জোট তৈরী হওয়ার পর আর্সলান দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের বৌদ্ধবিহার ধ্বংসের উদ্দেশ্যে লাসার দিকে যাত্রা করেন, কিন্তু অকস্মাৎ তিনি দলাই লামার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পোর বাহিনীকে আক্রমণ করেন এবং গ্যাংত্সে ও রাজধানী শিগাত্সে অধিকার করে নেন। ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো এরপর আর্সলানের পিতার নিকট দূত পাঠিয়ে আর্সলানের বিশ্বাসঘাতকতার খবর পাঠালে তার পিতার দূত আর্সলান ও তার সমর্থকদের হত্যা করেন।[৮]:১০৩,১০৪[১১]:৬০,৬১ আর্সলানের মৃত্যুর পর ১৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে দলাই লামাপন্থী খোসুত মঙ্গোল নেতা গুশ্রী খান দ্জুঙ্গার নেতা এর্দেনি বাতুরের সঙ্গে কোকোনর অঞ্চলে চোগথু মোঙ্গোলদের পরাজিত করেন। এই সমুয় ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো খাম্স অঞ্চলের বোন ধর্মাবলম্বী ও দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায় বিরোধী রাজা দোন-য়োদ-র্দো-র্জের সাথে সন্ধি স্থাপন করলে ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে গুশ্রী খান আমদো অঞ্চলের পারিক জনজাতির সাথে মিলিতভাবে খাম্স অঞ্চল আক্রমণ করে দোন-য়োদ-র্দো-র্জেকে হত্যা করেন। এরফলে খাম্স অঞ্চল দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে।[৮]:১০৪-১০৭[১১]:৬১-৬৩ এরপর গুশ্রী খান ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পোর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। পঞ্চম দলাই লামা ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্লো-ব্জাং-র্গ্যা-ম্ত্শো এই ব্যাপারে কোন ধরনের রক্তপাতের পক্ষপাতী না হলেও তার অন্যতম প্রধান সহায়ক ব্সোদ-নাম্স-ছোস-'ফেল এই যুদ্ধের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। গুশ্রী খান ও তার সেনাবাহিনী খুব সহজে গ্ত্সাং-পা রাজ্যের তেরোটি জেলা অধিকার করে নেন এবং রাজধানী শিগাত্সে অবরোধ করেন কিন্তু ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পোর তীরন্দাজেরা তাদের মাসের পর মাস ঠেকিয়ে রাখেন। এই সময় ব্সোদ-নাম্স-ছোস-'ফেল দ্বুস অঞ্চলে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের প্রভাধীন এলাকাগুলিকে বলপূর্বক নিজের অধিকারে আনেন। এরপর তিনি গুশ্রী খানের সমর্থনে বহু সংখ্যক সৈন্য নিয়ে শিগাত্সে অবরোধে সামিল হন।[৮]:১১০ ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে শিগাত্সের পতন হয় এবং ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো তার পরিবারসহ লাসা শহরের নিকট নেউ দুর্গে বন্দী হন। কয়েকদিন পরে গুশ্রী খান ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পো এবং তার দুই মন্ত্রী দ্রোন্যের বোঙ্গোং ঙ্গো গাংজুকপাকে কো-থুমগ্যাব-পা পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। ব্স্তান-স্ক্যোং-দ্বাং-পোকে একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে নেউ দুর্গের নিকটস্থ নদী ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। এরফলে সমগ্র মধ্য তিব্বত অঞ্চল দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে।[৮]:১১১,১১২[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Tsepon W.D. Shakabpa, One Hundred Thousand Moons, Leiden 2010
  2. Sarat Chandra Das, 'Tibet under her Last Kings (1434-1642 A.D.)', Journal of the Asiatic Society of Bengal 1:6 1905 p. 166.
  3. Karl-Heinz Everding & Dawa Dargyay Dzongphugpa, Das tibetische Fürstentum La stod lHo (um 1265-1642), Wiesbaden 2006, p. 112.
  4. Sangay Dorji (২০০৮)। The Biography of Shabdrung Ngawang Namgyal: Pal Drukpa Rinpoche। Sonam Kinga (translator)। Thimphu, Bhutan: KMT Publications। আইএসবিএন 99936-22-40-0 
  5. Yoshiro Imaeda (২০১৩)। The Successors of Zhabdung Ngawang Namgyel। Thimphu: Riyang Books। পৃষ্ঠা 8–10। আইএসবিএন 978-99936-899-3-5 
  6. Yonten Dargye (২০০১)। History of the Drukpa Kagyud School in Bhutan (12th to 17th Century A.D.)। Thimphu, Bhutan। পৃষ্ঠা 119–123। আইএসবিএন 99936-616-0-0 
  7. Karma Phuntsho (২০১৩)। The History of Bhutan। Nodia: Random House India। পৃষ্ঠা 213–217। আইএসবিএন 9788184003116 
  8. Tsepon W.D. Shakabpa, Tibet. A Political History, Yale 1967.
  9. Ya Hanzhang, Biographies of the Tibetan Spiritual Leaders Panchen Erdenis, Beijing 1994.
  10. Hugh E. Richardson, Tibet and its History, Boston & London 1984, Appendix, chronological table, p. 307.
  11. Giuseppe Tucci, Tibetan Painted Scrolls, Rome 1949
  12. Karl-Heinz Everding & Dawa Dargyay Dzongphugpa, Das tibetische Fürstentum La stod lHo (um 1265-1642), Wiesbaden 2006, p. 113.
  13. Sarat Chandra Das, 'Tibet, a Dependency of Mongolia', Journal of the Asiatic Society of Bengal I:5 1905, p. 153-54.

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]