আউফ ইবনে হারিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আউফ ইবনে হারিস আল আনসারী মুহাম্মাদের একজন আনসার সাহাবা ছিলেন, যিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মৃত্যুবরণ করেছেন।[১][২]

জন্ম ও পরিচয়[সম্পাদনা]

আউফ ইবনে হারিস মদিনার খাযরাজ বংশের নাজ্জার শাখায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম হারিস ইবনে রিফায়া এবং মাতার নাম আফরা বিনতে উবাইদ ইবনে সালাবা, তার মা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।[৩]

ইসলাম গ্রহণ[সম্পাদনা]

আউফ নবুয়তের ১২ তম বছরে অর্থাৎ, ৬২১ সালে ৬ জন ব্যক্তির সাথে মক্কায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তারপর তিনি তার বাকি সঙ্গীদের নিয়ে মদিনায় ইসলাম প্রচার করতে থাকেন।[৪] তার ইসলাম প্রচার মদিনায় বেশ সাড়া ফেলে, যার ফলে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।[৫][৬]

১ম ও ২য় বাইয়াতে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

পরবর্তী বছরে ৬১২ সালে ১১ জন ব্যক্তি নিয়ে মুহাম্মাদের সাথে আবার সাক্ষাৎ করেন ও সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর রাত্রি বেলায় মিনায় আকাবার নিকট একত্রিত হয়ে কিছু বিষয়ের উপর বাইয়াত গ্রহণ করে। সেগুলো হলো: আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরিক করবেন না, চুরি করবেন না, ব্যভিচার করবেন না, কাউকে ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দিবেন না এবং সৎ কাজে মুহাম্মাদের অবাধ্য হবেন না। এটিকে প্রথম বাইয়াত নামে অভিহিত করা হয়।[৭]

আবার আউফ ইবনে হারিস পরবর্তী বছরে অর্থাৎ, ৬১৩ সালে মুসআব ইবনে উমাইরের নেতৃত্বে ৭৫ জন ব্যক্তির সাথে তিনি আবার হজ্জ পালন করার জন্য মক্কায় আগমন করেন এবং পূর্ববর্তী বছরে এখানেই মিনার আকাবার নিকট সকলের সাথে তিনি মুহাম্মাদের সাথে দেখা করেন ও সবাইকে সৎপথে নিবৃত থাকার ও মুহাম্মাদকে সাহায্য করার শপথ বাক্য পাঠ করান। এটাকে ইসলামে আকাবার দ্বিতীয় বাইয়াত বলা হয়।[২]

যুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও এই যুদ্ধেই মৃত্যুবরণ করেন।

বদর যুদ্ধের ঘটনা[সম্পাদনা]

বদর যুদ্ধে আউফ ইবনে হারিস ও তার দুই ভাই মুয়াজ ইবনে হারিসমুয়াবিজ ইবনে হারিস অংশগ্রহণ করেছেন। তার দুলাভাই-শালা এই যুদ্ধে যোগদান করেছিল। যুদ্ধের সময় যখন উভয় পক্ষ সারি বেঁধে প্রস্তুত হচ্ছিল তখন মুশরিকদের মধ্য হতে শায়বা ইবনে রাবিয়া, উতবা ইবনে রাবিয়াওয়ালীদ ইবনে উতবা সামনে এসে মুসলিমগণকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহবান করলে মুসলিম পক্ষে আনসার সাহাবা হতে মুয়াজ, মুয়াবিজ ও আউফ এই তিন ভাই মুশরিকদের সম্মুখে অগ্রসর হন।[৮] মুশরিকদের সাথে প্রথম দ্বন্দ্বযুদ্ধে মুহাজিরগণ অবতীর্ণ হবেন, এটাই মুহাম্মাদের ইচ্ছা ছিল। অপরপক্ষে মুশরিকরাও মুহাজির সাহাবাদের সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চাচ্ছিল। তাই মুহাম্মাদ তাদের তিন ভাইয়ের এই ইচ্ছায় খুশি হয়ে প্রশংসা করে ফিরে আসতে বললেন।[৯]

অতঃপর এক সময় আউফ মুহাম্মাদের বিশেষ প্রেরণায় লৌহবর্ম খুলে শত্রু পক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়েন এবং এক সময় মৃত্যুবরণ করেন।[১০] এই যুদ্ধেই তার দুই ভাই মুয়াজ ও মুয়াবিজ আবু জাহেলকে হত্যা করেছিল।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইসলামী বিশ্বকোষ (১ম খণ্ড)। পৃষ্ঠা ৬৪। 
  2. আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া, ইবনে কাসির (৩য় খণ্ড), [ বৈরুত ১৯৭৮ ]। পৃষ্ঠা ৩২৩। 
  3. আত-তাবাকাতুল কুবরা,ইবনে সাদ, বৈরূত তা, বি., ১খন্ড- ২১৯ 
  4. (ইবনে সাদ, ১ম খণ্ড- ২১৯) 
  5. আত-তাবাকাতুল কুবরা,ইবন সাদ, বৈরূত তা, বি. ২খণ্ড- ৩, ৮ 
  6. আত-তাবাকাতুল কুবরা,ইবন সা'দ, বৈরূত তা, বি., ২খণ্ড- ১৭, ১৬৪, ৪৯২ 
  7. সিরাতুল মুস্তাফা, ইদ্রিস কান্ধলভি ১ম খণ্ড- ৩২৭, ৩৩১, ৩৩২, ৩৩৭, ৫৪৮, ৫৬১ [ দিল্লি ১৯৮১ ]  
  8. (ইবন সাদ, ২খণ্ড- ১৭) 
  9. আল-ইসাবা, শিহাবুদ্দীন ইন হাজার আল-আসকালানী, , মিসর ১৩২৮ হি., ৩খন্ড- ৪২; 
  10. ( সীরাতুল মুস্তাফা,ইদ্রীস কান্ধলাবী, ১খণ্ড- ৫৬১)