ছায়াপথ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{কাজ চলছে}}
{{কাজ চলছে}}
{{Multiple image |direction=vertical |align=right |width=310|image1=NGC 4414 (NASA-med).jpg|caption1=[[এনজিসি ৪৪১৪]], [[কোমা বেরেনিসেস]] [[তারামণ্ডল|তারামণ্ডলের]] অন্তর্গত একটি বৈশিষ্ট্যসূচক [[সর্পিল ছায়াপথ]]। এটির ব্যাস প্রায় ৫৫,০০০ [[আলোকবর্ষ]] এবং পৃথিবী থেকে এটি প্রায় ৬ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।}}
{{Multiple image |direction=vertical |align=right |width=310|image1=NGC 4414 (NASA-med).jpg|caption1=[[এনজিসি ৪৪১৪]], [[কোমা বেরেনিসেস]] [[তারামণ্ডল|তারামণ্ডলের]] অন্তর্গত একটি বৈশিষ্ট্যসূচক [[সর্পিল ছায়াপথ]]। এটির ব্যাস প্রায় ৫৫,০০০ [[আলোকবর্ষ]] এবং পৃথিবী থেকে এটি প্রায় ৬ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।}}
'''ছায়াপথ''' হল [[তারা]], [[নাক্ষত্রিক অবশেষ]], [[আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম|আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস]], [[মহাজাগতিক ধূলিকণা|ধূলিকণা]] ও [[তমোপদার্থ]] নিয়ে গঠিত [[মহাকর্ষ|মহাকর্ষীয়]] টানে আবদ্ধ একটি জগৎ।<ref name="sparkegallagher2000" /><ref name=nasa060812 /> ‘ছায়াপথ’ শব্দটির ইংরেজি ‘galaxy’ প্রতিশব্দটির উৎস [[প্রাচীন গ্রিক ভাষা|গ্রিক]] ''{{transl|grc|galaxias}}'' ({{lang|grc|γαλαξίας}}) শব্দটি, যার আক্ষরিক অর্থ, ‘দুধালো’ (এটি [[আকাশগঙ্গা ছায়াপথ|আকাশগঙ্গা]] অর্থে ব্যবহৃত হত)। আকারগত দিক থেকে ছায়াপথগুলি [[বামন ছায়াপথ|বামনাকৃতি]] (কয়েকশো মিলিয়ন বা {{10^|8}} তারা নিয়ে গঠিত) থেকে [[আইসি ১১০১|দানবাকৃতি (একশো ট্রিলিয়ন বা {{10^|14}} তারা নিয়ে গঠিত) পর্যন্ত হতে পারে<ref name=science250_4980_539 /> প্রতিটি ছায়াপথই তার [[ভরকেন্দ্র|ভরকেন্দ্রটির]] চারিদিকে আবর্তনশীল।
'''ছায়াপথ''' মহাকর্ষীয় শক্তি দ্বারা আবদ্ধ একটি অতি বৃহৎ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা যা [[তারা]], [[আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম|আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা]], [[প্লাসমা (পদার্থবিজ্ঞান)|প্লাসমা]] এবং প্রচুর পরিমাণে [[অদৃশ্য বস্তু]] দ্বারা গঠিত। একটি আদর্শ ছায়াপথে ১০ মিলিয়ন থেকে এক ট্রিলিয়ন পর্যন্ত তারা থাকে যারা সবাই একটি সাধারণ মহাকর্ষীয় কেন্দ্রের চারদিকে ঘূর্ণায়মান। বিচ্ছিন্ন তারা ছাড়াও ছায়াপথে [[বহুতারা ব্যবস্থা]], [[তারা স্তবক]] এবং বিভিন্ন ধরনের [[নীহারিকা]] থাকে। অধিকাংশ ছায়াপথের ব্যস কয়েকশ [[আলোকবর্ষ]] থেকে শুরু করে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত এবং ছায়াপথসমূহের মধ্যবর্তী দূরত্ব মিলিয়ন আলোকবর্ষের পর্যায়ে।


দৃশ্যগত [[অঙ্গসংস্থান (জ্যোতির্বিজ্ঞান)|অঙ্গসংস্থান]] অনুযায়ী ছায়াপথগুলিকে [[উপবৃত্তাকার ছায়াপথ|উপবৃত্তাকার]], <ref name=uf030616 /> [[সর্পিল ছায়াপথ|সর্পিল]] বা [[অনিয়তাকার ছায়াপথ|অনিয়তাকার]]<ref name="IRatlas" /> – এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। মনে করা হয় যে অনেক ছায়াপথের কেন্দ্রেই [[অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর]] অবস্থিত। আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রীয় কৃষ্ণগহ্বরটি [[ধনু এ*]] নামে পরিচিত। এটি [[সূর্য]] অপেক্ষা ৪০ লক্ষ গুণ অধিক ভরযুক্ত।<ref name="smbh" /> ২০১৬ সালের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী, পর্যবেক্ষিত ছায়াপথগুলির মধ্যে প্রাচীনতম ও সর্বাপেক্ষা দূরবর্তী ছায়াপথটি হল [[জিএন-জেড১১]]। [[পৃথিবী]] থেকে এটির [[সমসঞ্চরণশীল দূরত্ব]] হল ৩২০০ কোটি [[আলোকবর্ষ]] এবং [[মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব|মহাবিস্ফোরণের]] মাত্র ৪০ কোটি বছর পরেও এটির অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।
ছায়াপথের শতকরা ৯০ ভাগ ভরের জন্য দায়ী করা হয় অদৃশ্য বস্তুকে যদিও এদের অস্তিত্ব এবং গঠন সম্পর্কে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। ছায়াপথের অভ্যন্তরে [[অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর|অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বরের]] অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। [[আন্তঃছায়াপথীয় স্থান]] হালকা [[প্লাসমা (পদার্থবিজ্ঞান)|প্লাসমা]] দ্বারা পূর্ণ। আমাদের [[পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব|পর্যবেক্ষণিক সীমার]] মধ্যে একশ বিলিয়নেরও বেশি ছায়াপথ রয়েছে।

২০২১ সালে নাসার [[নিউ হোরাইজনস]] স্পেস প্রোবের তথ্য ব্যবহার করে জানা যায় যে, ২০,০০০ কোটি ({{val|2e11}}) ছায়াপথের অস্তিত্ব রয়েছে।<ref>{{Cite web|title=Astronomers were wrong about the number of galaxies in universe|url=https://www.jpost.com/health-science/astronomers-were-wrong-about-the-number-of-galaxies-in-universe-655425|access-date=2021-01-14|website=The Jerusalem Post {{!}} JPost.com|language=en-US|archive-date=January 14, 2021|archive-url=https://web.archive.org/web/20210114153938/https://www.jpost.com/health-science/astronomers-were-wrong-about-the-number-of-galaxies-in-universe-655425|url-status=live}}</ref> উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের একটি পরিগণনা অনুযায়ী, ছায়াপথের সংখ্যা মনে করা হয়েছিল দুই ট্রিলিয়ন ({{val|2e12}}) বা ততোধিক<ref name="Conselice" /><ref name="NYT-20161017">{{cite news |last=Fountain |first=Henry |title=Two Trillion Galaxies, at the Very Least |url=https://www.nytimes.com/2016/10/18/science/two-trillion-galaxies-at-the-very-least.html |date=17 October 2016 |work=[[The New York Times]] |access-date=17 October 2016 |archive-date=December 31, 2019 |archive-url=https://web.archive.org/web/20191231233343/https://www.nytimes.com/2016/10/18/science/two-trillion-galaxies-at-the-very-least.html |url-status=live }}</ref> ছায়াপথ রয়েছে [[দৃশ্যমান মহাবিশ্ব|দৃশ্যমান মহাবিশ্বে]] এবং সর্বসমেত তারা রয়েছে আনুমানিক {{val|1e24}}<ref name="ESA-2019">{{cite web |author=Staff |title=How Many Stars Are There In The Universe? |url=https://www.esa.int/Our_Activities/Space_Science/Herschel/How_many_stars_are_there_in_the_Universe |date=2019 |work=[[European Space Agency]] |access-date=21 September 2019 |archive-date=September 23, 2019 |archive-url=https://web.archive.org/web/20190923134902/http://www.esa.int/Our_Activities/Space_Science/Herschel/How_many_stars_are_there_in_the_Universe |url-status=live }}</ref><ref>{{Cite book|chapter=The Structure of the Universe|doi=10.1007/978-1-4614-8730-2_10|title=The Fundamentals of Modern Astrophysics|pages=279–294|year=2015|last1=Marov|first1=Mikhail Ya.|isbn=978-1-4614-8729-6}}</ref> ([[পৃথিবী]] গ্রহের সকল সমুদ্রসৈকতের সকল [[বালি|বালুকণার]] সংখ্যার থেকেও বেশি)।<ref name="SU-20020201">{{cite web |last=Mackie |first=Glen |title=To see the Universe in a Grain of Taranaki Sand |url=http://astronomy.swin.edu.au/~gmackie/billions.html |date=1 February 2002 |work=[[Centre for Astrophysics and Supercomputing]] |access-date=28 January 2017 |archive-date=January 7, 2019 |archive-url=https://web.archive.org/web/20190107010855/http://astronomy.swin.edu.au/~gmackie/billions.html%0A%20 |url-status=live }}</ref> অধিকাংশ ছায়াপথেরই ব্যাস ১,০০০ থেকে ১০০,০০০ [[পারসেক|পারসেকের]] মধ্যে (প্রায় ৩,০০০ থেকে ৩০০,০০০ [[আলোকবর্ষ]]) এবং এগুলির পারস্পরিক দূরত্ব দশ লক্ষ পারসেকেরও (বা মেগাপারসেক) বেশি। উদাহরণস্বরূপ, আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ব্যাস অন্তত ৩০,০০০ পারসেক (১০০,০০০ আলোকবর্ষ) এবং এটির নিকটবর্তী বৃহৎ প্রতিবেশী [[অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ|অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের]] থেকে এটির দূরত্ব ৭৮০,০০০ পারসেক (২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ)।

ছায়াপথগুলির মধ্যবর্তী [[আন্তঃছায়াপথ মহাকাশ|মহাকাশ]] পূর্ণ হয়ে রয়েছে একতি পাতলা গ্যাস দ্বারা ([[বহিঃস্থ মহাকাশ#আন্তঃছায়াপথ মহাকাশ|আন্তঃছায়াপথ মাধ্যম]])। এটির গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে এক [[পরমাণু]] অপেক্ষাও কম। অধিকাংশ ছায়াপথই মহাকর্ষীয় টানে [[ছায়াপথ গুচ্ছ|গুচ্ছ]], [[ছায়াপথ স্তবক|স্তবক]] ও [[মহাস্তবক|মহাস্তবকে]] বিন্যস্ত। [[আকাশগঙ্গা ছায়াপথ]] হল [[স্থানীয় গুচ্ছ|স্থানীয় গুচ্ছের]] অংশ, যেটিতে প্রাধান্য বিস্তার করে রয়েছে আকাশগঙ্গা ও [[অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ]]। এই গুচ্ছটি [[কন্যা মহাস্তবক|কন্যা মহাস্তবকের]] অংশ। [[মহাবিশ্বের বৃহৎ পরিসরে গঠন|বৃহত্তর পরিসরে]] এই সংযোগগুলি সাধারণভাবে বিন্যস্ত হয়ে [[ছায়াপথ সূত্র|আস্তর ও সূত্রে]], যাকে ঘিরে থাকে অপরিমেয় [[শূন্যতা (জ্যোতির্বিজ্ঞান)|শূন্যতা]]।<ref name=camb_lss /> স্থানীয় গুচ্ছ ও [[কন্যা মহাস্তবক]] দুইই [[লানিয়াকিয়া মহাস্তবক|লানিয়াকিয়া]] নামে অনেকটা বড়ো এক মহাজাগতিক গঠনের অংশ।<ref>{{cite journal | last1 = Gibney | first1 = Elizabeth | s2cid = 124323774 | year = 2014 | title = Earth's new address: 'Solar System, Milky Way, Laniakea' | journal = Nature | doi = 10.1038/nature.2014.15819 }}</ref>
{{TOC limit|3}}


== উৎপত্তি ==
== উৎপত্তি ==

২০:২১, ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এনজিসি ৪৪১৪, কোমা বেরেনিসেস তারামণ্ডলের অন্তর্গত একটি বৈশিষ্ট্যসূচক সর্পিল ছায়াপথ। এটির ব্যাস প্রায় ৫৫,০০০ আলোকবর্ষ এবং পৃথিবী থেকে এটি প্রায় ৬ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

ছায়াপথ হল তারা, নাক্ষত্রিক অবশেষ, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস, ধূলিকণাতমোপদার্থ নিয়ে গঠিত মহাকর্ষীয় টানে আবদ্ধ একটি জগৎ।[১][২] ‘ছায়াপথ’ শব্দটির ইংরেজি ‘galaxy’ প্রতিশব্দটির উৎস গ্রিক galaxias (γαλαξίας) শব্দটি, যার আক্ষরিক অর্থ, ‘দুধালো’ (এটি আকাশগঙ্গা অর্থে ব্যবহৃত হত)। আকারগত দিক থেকে ছায়াপথগুলি বামনাকৃতি (কয়েকশো মিলিয়ন বা ১০ তারা নিয়ে গঠিত) থেকে [[আইসি ১১০১|দানবাকৃতি (একশো ট্রিলিয়ন বা ১০১৪ তারা নিয়ে গঠিত) পর্যন্ত হতে পারে[৩] প্রতিটি ছায়াপথই তার ভরকেন্দ্রটির চারিদিকে আবর্তনশীল।

দৃশ্যগত অঙ্গসংস্থান অনুযায়ী ছায়াপথগুলিকে উপবৃত্তাকার, [৪] সর্পিল বা অনিয়তাকার[৫] – এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। মনে করা হয় যে অনেক ছায়াপথের কেন্দ্রেই অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর অবস্থিত। আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রীয় কৃষ্ণগহ্বরটি ধনু এ* নামে পরিচিত। এটি সূর্য অপেক্ষা ৪০ লক্ষ গুণ অধিক ভরযুক্ত।[৬] ২০১৬ সালের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী, পর্যবেক্ষিত ছায়াপথগুলির মধ্যে প্রাচীনতম ও সর্বাপেক্ষা দূরবর্তী ছায়াপথটি হল জিএন-জেড১১পৃথিবী থেকে এটির সমসঞ্চরণশীল দূরত্ব হল ৩২০০ কোটি আলোকবর্ষ এবং মহাবিস্ফোরণের মাত্র ৪০ কোটি বছর পরেও এটির অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।

২০২১ সালে নাসার নিউ হোরাইজনস স্পেস প্রোবের তথ্য ব্যবহার করে জানা যায় যে, ২০,০০০ কোটি (×১০১১) ছায়াপথের অস্তিত্ব রয়েছে।[৭] উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের একটি পরিগণনা অনুযায়ী, ছায়াপথের সংখ্যা মনে করা হয়েছিল দুই ট্রিলিয়ন (×১০১২) বা ততোধিক[৮][৯] ছায়াপথ রয়েছে দৃশ্যমান মহাবিশ্বে এবং সর্বসমেত তারা রয়েছে আনুমানিক ×১০২৪[১০][১১] (পৃথিবী গ্রহের সকল সমুদ্রসৈকতের সকল বালুকণার সংখ্যার থেকেও বেশি)।[১২] অধিকাংশ ছায়াপথেরই ব্যাস ১,০০০ থেকে ১০০,০০০ পারসেকের মধ্যে (প্রায় ৩,০০০ থেকে ৩০০,০০০ আলোকবর্ষ) এবং এগুলির পারস্পরিক দূরত্ব দশ লক্ষ পারসেকেরও (বা মেগাপারসেক) বেশি। উদাহরণস্বরূপ, আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ব্যাস অন্তত ৩০,০০০ পারসেক (১০০,০০০ আলোকবর্ষ) এবং এটির নিকটবর্তী বৃহৎ প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের থেকে এটির দূরত্ব ৭৮০,০০০ পারসেক (২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ)।

ছায়াপথগুলির মধ্যবর্তী মহাকাশ পূর্ণ হয়ে রয়েছে একতি পাতলা গ্যাস দ্বারা (আন্তঃছায়াপথ মাধ্যম)। এটির গড় ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে এক পরমাণু অপেক্ষাও কম। অধিকাংশ ছায়াপথই মহাকর্ষীয় টানে গুচ্ছ, স্তবকমহাস্তবকে বিন্যস্ত। আকাশগঙ্গা ছায়াপথ হল স্থানীয় গুচ্ছের অংশ, যেটিতে প্রাধান্য বিস্তার করে রয়েছে আকাশগঙ্গা ও অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ। এই গুচ্ছটি কন্যা মহাস্তবকের অংশ। বৃহত্তর পরিসরে এই সংযোগগুলি সাধারণভাবে বিন্যস্ত হয়ে আস্তর ও সূত্রে, যাকে ঘিরে থাকে অপরিমেয় শূন্যতা[১৩] স্থানীয় গুচ্ছ ও কন্যা মহাস্তবক দুইই লানিয়াকিয়া নামে অনেকটা বড়ো এক মহাজাগতিক গঠনের অংশ।[১৪]

উৎপত্তি

ছায়াপথ শব্দটি ইংরেজি Galaxy শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে বাংলায় ব্যবহৃত হয়। Galaxy শব্দটি গ্রিক γαλαξίας (গালাক্সিয়াস) শব্দ থেকে উদ্ভূত। আমাদের সৌরজগত যে ছায়াপথে অবস্থিত তার গ্রিক নাম দেয়া হয়েছিল γαλαξίας যার অর্থ kyklos galaktikos বা "দুধালো বৃত্তপথ" (Milky circle)। পরবর্তীকালে এই নামটিকেই ছায়াপথের সাধারণ নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রিক পুরাণ অনুসারে জিউস তার সন্তান শিশু হারকিউলিসকে একজন মরণশীল নারীর সাহায্যে হেরার বুকে স্থাপন করেন। তখন হেরা ঘুমন্ত ছিল। জিউসের উদ্দেশ্য ছিল, হারকিউলিস যেন হেরার বুকের স্বর্গীয় স্তন্য পান করার মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করতে পারে। স্তন্যপানের সময় হেরার ঘুম ভেঙে যায় এবং সে দেখে যে সে একটি অচেনা শিশুর সেবা করছে। সে শিশুটিকে ঠেলে দেয় যার ফলে তার স্তন থেকে দুধের একটি ক্ষীণ ধারা রাতের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। আর এ থেকেই সৃষ্টি হয় "দুধালো বৃত্তপথের"।

আগে বেশ কিছু মহাজাগতিক বস্তুকে কুণ্ডলীত নীহারিকা নামে অভিহিত করা হতো, কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখেন যে সেগুলো প্রকৃতপক্ষে প্রচুর তারার সমন্বয়ে গঠিত। একে ঘিরে গড়ে উঠে দ্বীপ মহাবিশ্ব তত্ত্ব। কিন্তু পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে এর নামকরণ ভুল হয়েছে কারণ প্রকৃত মহাবিশ্ব এর অন্তর্ভুক্ত সকল বস্তুরই সামষ্টিক নাম। তাই এর পর থেকে এধরনের তারার সমষ্টিকে সাধারণভাবে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ নামে অভিহিত করা হতে থাকে।

ছায়াপথ গবেষণার ইতিহাস

পারস্যদেশীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল সুফি সর্বপ্রথম কুণ্ডলাকার ছায়াপথের বর্ণনা করেন। তার বর্ণনাটি ছিল ধ্রুবমাতা মণ্ডলের একটি ছায়াপথের। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা রাতের আকাশে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করেন যা তখন আকাশে আলোর একটি উজ্জ্বল ব্যান্ড হিসেবে পরিচিত ছিল। তিনি দেখেন যে এটি অসংখ্য ক্ষীণ আলোকবিশিষ্ট তারার সমন্বয়ে গঠিত। ১৭৫৫ সালে ইমানুয়েল কান্ট টমাস রাইটকৃত প্রাচীন একটি গবেষণা উপর ভিত্তি করে কিছু ছবি আঁকার সময় উল্লেখ করেন যে ছায়াপথ অনেকগুলো তারার সমন্বয়ে গঠিত একটি ঘূর্ণায়মান জ্যোতিষ্ক হতে পারে, আর এতে অবস্থিত তারাগুলো মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে একীভূত হয়ে থাকে; এর সাথে সৌরজগতের তুলনা করা যেতে পারে যদিও ছায়াপথসমূহে তা একটি সুবৃহৎ পরিসরে থাকে। তার এই অনুমিতিটিকি সঠিক ছিল। এছাড়াও কান্ট বলেছিলেন, রাতের আকাশে দৃশ্যমান নীহারিকাগুলো পৃথক পৃথক ছায়াপথ হতে পারে। তার এই শেষোক্ত ধারণাটি অবশ্য বর্তমানকালে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আসলে নীহারিকা ও ছায়াপথ ভিন্ন দুটি বস্তু।

১৭৮০ সালে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ার একটি তালিকা প্রণয়ন করেন যাতে ৩২ টি ছায়াপথ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই ছায়াপথগুলোকে বর্তমানে মেসিয়ার (M) সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যেমন ধ্রুবমাতা মণ্ডলের মেসিয়ার সংখ্যা হল এম৩১ (M31)। মেসিয়ার প্রকৃতপক্ষে ১০৯ টি উজ্জ্বলতম নীহারিকার তালিকা করেছিলেন, পরবর্তীকালে উইলিয়াম হার্শেল তা পরিবর্ধন করে ৫০০০ নীহারিকার তালিকা প্রণয়ন করেন। যা হোক মেসিয়ারের তালিকায় ৩২ টি ছায়াপথের নাম ছিল; কিন্তু ছায়াপথ ও নীহারিকার মধ্যে পার্থক্য জানা না থাকায় সম্ভবত সেগুলো আলাদা করা সম্ভব হয় নি। ১৭৮৫ সালে ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম হার্শেল প্রথম আকাশগঙ্গা ছায়াপথের আকৃতি সম্বন্ধে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন, এর জন্য তিনি আকাশের বিভিন্ন অঞ্চলে দৃশ্যমান তারার সংখ্যা গণনা করেন। পরবর্তীকালে উইলিয়াম হার্শেল ৫০০০ নীহারিকার একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন যাতে তার বোন স্যার ক্যারোলিন হার্শেল এবং ছেলে স্যার জন হার্শেল সহায়তা করে। এই তালিকায় অনেকগুলো ছায়াপথ অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৮৪৫ সালে লর্ড রোস একটি নতুন দূরবীক্ষণ যন্ত্র গঠন করেন যা দ্বারা প্রথম উপবৃত্তাকার ও কুণ্ডলাকার নীহারিকার মধ্যে পার্থক্য প্রমাণ করেন। এর পাশাপাশি তিনি নীহারিকাগুলোর মধ্যে পৃথক পৃথক আলোর উৎস চিহ্নিত করতে সমর্থ হন।

পৃথিবীর নিকটবর্তী কয়েকটি ছায়াপথের নাম

১. মিল্কি ওয়ে (পৃথিবীর নিজস্ব ছায়াপথ) : দূরত্ব ০.০২৭ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

২. স্যাজিটারিয়াস ড্রফ স্ফিরোইডাল গ্যালাক্সি : দূরত্ব ০.০৮১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৩. আরসা মেজর ২ ড্রফ : দূরত্ব ০.০৯৮ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৪. লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড (এলএমসি) : দূরত্ব ০.১৬৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৫. বুটেস ১ : দূরত্ব ০.১৯৭ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৬. স্মল ম্যাজেলানিক ক্লাউড (এসএমসি, এনজিসি ২৯২) : দূরত্ব ০.২০৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৭. আরসা মাইনর ড্রফ : দূরত্ব ০.২০৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৮. ড্রাকো ড্রফ (ডিডিও ২০৮) : দূরত্ব ০.২৫৮ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

৯. এনজিসি ২৪১৯ : দূরত্ব ০.২৭৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

১০. সেক্সটেনস ড্রফ এসপিএস : দূরত্ব ০.২৮১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

১১. স্কাল্পচার ড্রফ (ই৩৫১-জি৩০) : দূরত্ব ০.২৮৭ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

১২. আরসা মেজর ১ ড্রফ (ইউএমএ ১ ডিএসপিএস) : দূরত্ব ০.৩৩০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

১৩. কারিনা ড্রফ (ই২০৬-জি২২০) : দূরত্ব ০.৩৩০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

১৪. ফরনেক্স ড্রফ (ই৩৫৬-জি০৪) : দূরত্ব ০.৪৬০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

১৫. লিও ২ ড্রফ (লিও বি, ডিডিও ৯৩) : দূরত্ব ০.৭০১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

১৬. লিও ১ ড্রফ (ডিডিও ৭৪, ইউজিসি ৫৪৭০) : দূরত্ব ০.৮২০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ ।

১৭. লিও টি ড্রফ : দূরত্ব ১.৩৭০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ ।

১৮. ফোনিক্স ড্রফ গ্যালাক্সি (পি ৬৮৩০) : দূরত্ব ১.৪৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

১৯. বারনার্ড’স গ্যালাক্সি (এনজিসি ৬৮২২) : দূরত্ব ১.৬৩০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

২০. এমজিসি১ : দূরত্ব ২.০০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।

বহিঃসংযোগ

আরও দেখুন

  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; sparkegallagher2000 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; nasa060812 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; science250_4980_539 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; uf030616 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; IRatlas নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; smbh নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. "Astronomers were wrong about the number of galaxies in universe"The Jerusalem Post | JPost.com (ইংরেজি ভাষায়)। জানুয়ারি ১৪, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৪ 
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Conselice নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. Fountain, Henry (১৭ অক্টোবর ২০১৬)। "Two Trillion Galaxies, at the Very Least"The New York Times। ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৬ 
  10. Staff (২০১৯)। "How Many Stars Are There In The Universe?"European Space Agency। সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  11. Marov, Mikhail Ya. (২০১৫)। "The Structure of the Universe"। The Fundamentals of Modern Astrophysics। পৃষ্ঠা 279–294। আইএসবিএন 978-1-4614-8729-6ডিওআই:10.1007/978-1-4614-8730-2_10 
  12. Mackie, Glen (১ ফেব্রুয়ারি ২০০২)। "To see the Universe in a Grain of Taranaki Sand"Centre for Astrophysics and Supercomputing। জানুয়ারি ৭, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ 
  13. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; camb_lss নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  14. Gibney, Elizabeth (২০১৪)। "Earth's new address: 'Solar System, Milky Way, Laniakea'"। Natureএসটুসিআইডি 124323774ডিওআই:10.1038/nature.2014.15819