শারীরগত আধুনিক মানুষ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৭ নং লাইন: | ৭ নং লাইন: | ||
| authority = |
| authority = |
||
|Name=|genus=Homo|species=sapiens|subspecies=sapiens|range_map=Habitat-homo-sapiens.svg|range_map_caption="হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স"এর বিস্তার (লাল ও গোলাপী)|synonyms=}} |
|Name=|genus=Homo|species=sapiens|subspecies=sapiens|range_map=Habitat-homo-sapiens.svg|range_map_caption="হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স"এর বিস্তার (লাল ও গোলাপী)|synonyms=}} |
||
প্যালিওঅ্যান্থ্রোপোলজিতে, শারীরগত আধুনিক মানুষ শব্দটি ''হোমো সেপিয়েন্সের'' অন্তর্গত সমসাময়িক মানুষের ফেনোটাইপ বিস্তারযুক্ত শরীরগঠনের সঙ্গে প্রাচীন অবলুপ্ত মানুষের প্রকৃতিগত পার্থক্য নিরুপণ করতেই ব্যবহৃত হয়। |
প্যালিওঅ্যান্থ্রোপোলজিতে, শারীরগত আধুনিক মানুষ শব্দটি<ref>Nitecki, Matthew H. and Nitecki, Doris V. (1994). ''Origins of Anatomically Modern Humans''. Springer.</ref> ''হোমো সেপিয়েন্সের'' অন্তর্গত সমসাময়িক মানুষের ফেনোটাইপ বিস্তারযুক্ত শরীরগঠনের সঙ্গে প্রাচীন অবলুপ্ত মানুষের প্রকৃতিগত পার্থক্য নিরুপণ করতেই ব্যবহৃত হয়। |
||
৩,১৫,০০০ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্স তার প্রাচীন ও বলিষ্ঠ পূর্বসূরীদের (''হোমো হেইডেলবার্গেনসিস'', ''হোমো ইরেকটাসে''র শাখা) থেকে নবরূপ প্রাপ্ত হয়। এর কিছু সময় পর থেকেই আধুনিক মনুষ্যপ্রজাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, দক্ষিণ আফ্রিকাতে শিকারী-সংগ্রাহক জনগোষ্ঠীই সর্বপ্রথম বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে; যদিও আধুনিক মানুষের নিজেদের মধ্যে এবং আধুনিক ও প্রাচীন মানুষের মধ্যে প্রচুর বিমিশ্রণ সংঘটিত হয়েছে। |
৩,১৫,০০০ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্স তার প্রাচীন ও বলিষ্ঠ পূর্বসূরীদের (''হোমো হেইডেলবার্গেনসিস'', ''হোমো ইরেকটাসে''র শাখা) থেকে নবরূপ প্রাপ্ত হয়। এর কিছু সময় পর থেকেই আধুনিক মনুষ্যপ্রজাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, দক্ষিণ আফ্রিকাতে শিকারী-সংগ্রাহক জনগোষ্ঠীই সর্বপ্রথম বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে; যদিও আধুনিক মানুষের নিজেদের মধ্যে এবং আধুনিক ও প্রাচীন মানুষের মধ্যে প্রচুর বিমিশ্রণ সংঘটিত হয়েছে। |
||
ব্যবহারিক আধুনিকতা, যেমন ভাষাগত উন্নতি, অবয়ব শিল্পের বিকাশ এবং ধর্মের প্রাথমিক রূপের উন্নয়ন প্রভৃতি আজ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে শুরু হয়; এটি ছিল আপার প্যালিওলিথিক যুগ (আফ্রিকায় যা পরবর্তী প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত ছিল)। |
ব্যবহারিক আধুনিকতা, যেমন ভাষাগত উন্নতি, অবয়ব শিল্পের বিকাশ এবং ধর্মের প্রাথমিক রূপের উন্নয়ন প্রভৃতি আজ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে শুরু হয়; এটি ছিল আপার প্যালিওলিথিক যুগ (আফ্রিকায় যা পরবর্তী প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত ছিল)।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|title=Klein, Richard (1995). "Anatomy, behavior, and modern human origins". Journal of World Prehistory. 9 (2): 167–198. doi:10.1007/bf02221838|last=|first=|publisher=|year=|isbn=|location=|pages=}}</ref> |
||
== নামকরণ ও শ্রেণীবিন্যাস == |
== নামকরণ ও শ্রেণীবিন্যাস == |
||
ট্যাক্সোনমিক প্রজাতি হিসেবে সমসাময়িক মনুষ্য জনগোষ্ঠীর দ্বিপদী নাম হল ''হোমো সেপিয়েন্স''। এই প্রজাতিটি এর একটি ''হোমো'' প্রজাতি থেকে প্রায় ২,০০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ বছর আগে উদ্ভুত হয়। |
ট্যাক্সোনমিক প্রজাতি হিসেবে সমসাময়িক মনুষ্য জনগোষ্ঠীর দ্বিপদী নাম হল ''হোমো সেপিয়েন্স''। এই প্রজাতিটি এর একটি ''হোমো'' প্রজাতি থেকে প্রায় ২,০০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ বছর আগে উদ্ভুত হয়।<ref>This is a matter of convention (rather than a factual dispute), and there is no universal consensus on terminology. Some scholars include humans of up to 600,000 years ago under the same species. See [https://books.google.com/books?isbn=0761925147 Handbook of Death and Dying], Volume 1. Clifton D. Bryant. 2003. p. 811. See also: [https://books.google.com/books?isbn=1137000384 Masters of the Planet]: The Search for Our Human Origins. Ian Tattersall. Page 82 (''cf''. Unfortunately this consensus in principle hardly clarifies matters much in practice. For there is no agreement on what the 'qualities of a man' actually are," [...]).</ref> |
||
“শারীরগত আধুনিক মানুষ” শব্দটি বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয়, “শারীরগত আধুনিক” হোমো সেপিয়েন্স –এর থেকে নিয়েন্ডার্থালসের মত প্রাচীন মানবকে পার্থক্য নিরূপণ করতে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯০এর দশকের জনপ্রিয় প্রথা অনুযায়ী, নিয়েন্ডার্থালসদের ''হোমো সেপিয়েন্স নিয়েন্ডার্থালেন্সিস্'' নামক ''হোমো সেপিয়েন্সের'' উপ-প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হত, যেখানে শারীরগত আধুনিক মানুষ (অথবা ইউরোপীয় প্রাক্-আধুনিক মানুষ) বলতে ক্রো-ম্যাগনন বা ''হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স'' বোঝাতো। এই প্রকার নামকরণ অনুযায়ী (যেখানে নিয়েন্ডার্থালসদের হোমো সেপিয়েন্স বলা হত), “শারীরগত আধুনিক হোমো সেপিয়েন্স” বলতে ইউরোপীয় প্রাক্-আধুনিক মানুষ (“ক্রো-ম্যাগনন”) বোঝানো হত। নিয়েন্ডার্থালস্দের আলাদা প্রজাতি (''হোমো নিয়েন্ডার্থালেন্সিস্'') হিসেবে নামকরণ করা খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে, যাতে ইউরোপীয় পরিপ্রেক্ষিতে “শারীরগত আধুনিক মানুষ” বলতে ''হোমো সেপিয়েন্স'' বোঝায় (কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনভাবেই এই প্রশ্নের মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি)। |
“শারীরগত আধুনিক মানুষ” শব্দটি বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয়, “শারীরগত আধুনিক” হোমো সেপিয়েন্স –এর থেকে নিয়েন্ডার্থালসের মত প্রাচীন মানবকে পার্থক্য নিরূপণ করতে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯০এর দশকের জনপ্রিয় প্রথা অনুযায়ী, নিয়েন্ডার্থালসদের ''হোমো সেপিয়েন্স নিয়েন্ডার্থালেন্সিস্'' নামক ''হোমো সেপিয়েন্সের'' উপ-প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হত, যেখানে শারীরগত আধুনিক মানুষ (অথবা ইউরোপীয় প্রাক্-আধুনিক মানুষ) বলতে ক্রো-ম্যাগনন বা ''হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স'' বোঝাতো। এই প্রকার নামকরণ অনুযায়ী (যেখানে নিয়েন্ডার্থালসদের হোমো সেপিয়েন্স বলা হত), “শারীরগত আধুনিক হোমো সেপিয়েন্স” বলতে ইউরোপীয় প্রাক্-আধুনিক মানুষ (“ক্রো-ম্যাগনন”) বোঝানো হত। নিয়েন্ডার্থালস্দের আলাদা প্রজাতি (''হোমো নিয়েন্ডার্থালেন্সিস্'') হিসেবে নামকরণ করা খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে, যাতে ইউরোপীয় পরিপ্রেক্ষিতে “শারীরগত আধুনিক মানুষ” বলতে ''হোমো সেপিয়েন্স'' বোঝায় (কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনভাবেই এই প্রশ্নের মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি)। |
||
১৮০ নং লাইন: | ১৮০ নং লাইন: | ||
=== হোমো ইরেকটাস থেকে উদ্বর্তন === |
=== হোমো ইরেকটাস থেকে উদ্বর্তন === |
||
[[File:Homo_sapiens_lineage.svg|সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Homo_sapiens_lineage.svg|থাম্ব|300x300পিক্সেল| |
[[File:Homo_sapiens_lineage.svg|সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Homo_sapiens_lineage.svg|থাম্ব|300x300পিক্সেল|মধ্য প্যালিওলিথিক যুগের হোমো সেপিয়েন্সের জাতিজনির একটি মডেল। অনুভূমিক অক্ষটি ভৌগোলিক অবস্থান নির্দেশিত করে; এবং উল্লম্ব অক্ষটি সময়কে (হাজার বছর পূর্বেকার) নির্দেশ করে।<ref>based on Schlebusch et al., "Southern African ancient genomes estimate modern human divergence to 350,000 to 260,000 years ago" ''Science'', 28 Sep 2017, [http://science.sciencemag.org/content/early/2017/09/27/science.aao6266.full DOI: 10.1126/science.aao6266], [https://d2ufo47lrtsv5s.cloudfront.net/content/sci/early/2017/09/27/science.aao6266/F3.large.jpg Fig. 3] (''H. sapiens'' divergence times) and {{cite journal|last=Stringer|first=C.|title=What makes a modern human|journal=Nature|year=2012|volume=485|issue=7396|pages=33–35|doi=10.1038/485033a|pmid=22552077|bibcode=2012Natur.485...33S}} (archaic admixture).</ref> দেখা যাচ্ছে, হোমো হেইডেলবার্গজেনেসিস নিয়েন্ডার্থালস্, ডেনিসোভান্স্, এবং হোমো সেপিয়েন্সে মিশে যাচ্ছে। ১ লক্ষ বছর ব্যাপী হোমো সেপিয়েন্সের বিস্তারের ফলে নিয়েন্ডার্থালস্, ডেনিসোভান্স্ এবং অনির্দিষ্ট প্রাচীন আফ্রিকান হোমিনিন্স্ পুনরায় হোমো সেপিয়েন্সের বংশে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এর সাথে, আধুনিক আফ্রিকান জনগোষ্ঠীতে নানা বিমিশ্রণের ঘটনারও ইঙ্গিত রয়েছে। ]] |
||
প্রাচীন মানুষের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকারভেদ (যাদের সকলেই ''হোমো ইরেকটাস'' থেকে প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে আবির্ভুত হয়) থেকে ''হোমো সেপিয়েন্সের'' তুলনামূলক সমরূপ একক প্রজাতিতে উদ্বর্তন বিষয়ে ১৯৮০র দশকে উত্থাপিত দুটি ভিন্ন মডেল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় : “আধুনিক আফ্রিকান উৎস” নামক মডেলে দাবি করা হয়, আফ্রিকায় হোমো সেপিয়েন্সের আবির্ভাব হয় একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে যা বিস্তৃত হয় এবং অন্যান্য সকল মনুষ্য প্রজাতিকে অবলুপ্ত করে দেয়; অন্যদিকে, “বহুস্থানিক বিবর্তন” মডেলে দাবি করা হয়, প্রাচীন মানুষের মধ্যে স্থানিক বৈশিষ্ট্যগুলির অস্তিত্ব বজায় ছিল যা ধীরে ধীরে ক্লাইনাল পরিবর্তন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে জিন সঞ্চরণ, জিন প্রবাহ এবং প্লিস্টোসিন পর্বে নির্বাচনের মাধ্যমে আধুনিক মানব বৈচিত্র্যের দিকে উপনীত হয়। |
প্রাচীন মানুষের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকারভেদ (যাদের সকলেই ''হোমো ইরেকটাস'' থেকে প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে আবির্ভুত হয়) থেকে ''হোমো সেপিয়েন্সের'' তুলনামূলক সমরূপ একক প্রজাতিতে উদ্বর্তন বিষয়ে ১৯৮০র দশকে উত্থাপিত দুটি ভিন্ন মডেল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় : “আধুনিক আফ্রিকান উৎস” নামক মডেলে দাবি করা হয়, আফ্রিকায় হোমো সেপিয়েন্সের আবির্ভাব হয় একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে যা বিস্তৃত হয় এবং অন্যান্য সকল মনুষ্য প্রজাতিকে অবলুপ্ত করে দেয়; অন্যদিকে, “বহুস্থানিক বিবর্তন” মডেলে দাবি করা হয়, প্রাচীন মানুষের মধ্যে স্থানিক বৈশিষ্ট্যগুলির অস্তিত্ব বজায় ছিল যা ধীরে ধীরে ক্লাইনাল পরিবর্তন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে জিন সঞ্চরণ, জিন প্রবাহ এবং প্লিস্টোসিন পর্বে নির্বাচনের মাধ্যমে আধুনিক মানব বৈচিত্র্যের দিকে উপনীত হয়। |
||
১৯৩ নং লাইন: | ১৯৩ নং লাইন: | ||
=== প্রাক-''হোমো সেপিয়েন্স'' === |
=== প্রাক-''হোমো সেপিয়েন্স'' === |
||
[[File:Skhul.JPG|সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Skhul.JPG |
[[File:Skhul.JPG|সংযোগ=https://en.wikipedia.org/wiki/File:Skhul.JPG|থাম্ব|208x208পিক্সেল|পঞ্চম স্খুল (১,০০,০০০ খ্রীঃপুঃ) যাতে প্রাচীন এবং আধুনিক ধারার মিশ্রণ দেখা যাচ্ছে।]] |
||
মধ্য প্যালিওলিথিক নামটি হোমো সেপিয়েন্সের প্রথম আবির্ভাবের সময় (প্রায় ৩,০০,০০০ বছর আগে) এবং পূর্ণ আচরণগত আধুনিকত্বের আবির্ভাবের সময়ের (প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে) মধ্যবর্তী সময়কে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। |
মধ্য প্যালিওলিথিক নামটি হোমো সেপিয়েন্সের প্রথম আবির্ভাবের সময় (প্রায় ৩,০০,০০০ বছর আগে) এবং পূর্ণ আচরণগত আধুনিকত্বের আবির্ভাবের সময়ের (প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে) মধ্যবর্তী সময়কে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। |
||
২১০ নং লাইন: | ২১০ নং লাইন: | ||
আফ্রিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ্যায় পরবর্তী ইউরেশিয় প্যালিওলিথিকের সমতুল যুগ পরবর্তী প্রস্তর যুগ হিসেবে পরিচিত যা প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯শ শতকের শেষভাগে ইওরোপে আচরণগত আধুনিকতার সবথেকে স্বচ্ছ নিদর্শন পাওয়া যায়, যেমন ভেনাস মূর্তি এবং অরিগ্নাসিয়ান্ থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য হস্তনির্মিত শিল্পকর্ম; আরো সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে সান নামক তৎকালীন শিকারী-সংগ্রাহকদের বস্তু সংস্কৃতির আবশ্যিক উপাদানগুলি অন্ততপক্ষে ৪০,০০০ বছর আগেও উপস্থিত ছিল, এগুলি ছিল আজকের দিনে ব্যবহৃত খননকার্য চালানোর যন্ত্রের মত, যেমন উটপাখির ডিমের খোলা দিয়ে তৈরি পুঁতি, হাড় দিয়ে তৈরি তীরের ফলা যাতে নির্দিষ্ট প্রস্তুতকারকের চিহ্ন লাল গৈরিক রঙে খোদিত থাকত এবং ছিল বিষ প্রলেপক। আরো একটি জ্ঞাতব্য তথ্য হল, যে “৭৫ হাজার বছর আগে মধ্য প্রস্তর যুগে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লম্বস গুহা থেকে উদ্ধারকৃত পাথরের হস্তনির্মিত বস্তুর অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য সবথেকে ভাল বোঝা যায় প্রেশার ফ্লেকিং বা চাপের মাধ্যমে ফলক তোলার মধ্যে দিয়ে। এই পদ্ধতিটি উত্তপ্ত সিলক্রিটের ওপরে স্টিল বে’এর দ্বিমুখী চূড়া নির্মাণের সময় ব্যবহৃত হত। প্রেশার ফ্লেকিং এবং বস্তুকে উত্তপ্ত করার পদ্ধতিটি প্রাক্-ইতিহাসে আরো পরবর্তীযুগের বলে আগে ধারণা করা হত এবং উভয় পদ্ধতিই প্রাকৃতিক বস্তুর ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি আচরণগত আধুনিক দিককে সূচিত করে। আফ্রিকান সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির পাশাপাশি গুহা অঞ্চলের গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে “সাংস্কৃতিক এবং বৌদ্ধিক চরিত্র আধুনিক মানুষের মধ্যে কখন দেখা গেল তা নিয়ে বিতর্কের” দিন হয়ত শেষ হয়ে আসছে, কারণ “বৃহৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তি” যার জন্য “অগাধ বিশ্বাস এবং ভাষার ব্যবহার দরকার হয়” তা পিনাকল পয়েন্টের ৫ – ৬ নং সাইটে পাওয়া গেছে। এটা প্রায় ৭১,০০০ বছর আগেকার নিদর্শন। গবেষকদের মতে তাঁদের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে মাইক্রোলিথিক (ক্ষুদ্রাকৃতি-প্রস্তর) প্রযুক্তি প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছিল এবং তা অত্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে বিবর্তিত হয় (প্রায় ১১,০০০ বছর), এবং তারপর তা উত্তপ্তকরণের জটিল প্রযুক্তির সঙ্গে মিশে যায় যা প্রায় ১,০০,০০০ বছর ধরে চলেছিল। আফ্রিকার উন্নত প্রযুক্তি ছিল আদি ও স্থায়ী; আফ্রিকার খননকৃত অঞ্চলের একটি ছোট নিদর্শনই হল যেকোন ধারণা করা ‘ফ্লিকারিং’ নকশার সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা।” এর ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে উপ-সাহারান আফ্রিকার পরবর্তী প্রস্তর যুগের সংগ্রাহকের দল আজ থেকে অন্ততপক্ষে ৫০,০০০ বছর আগে আধুনিক জ্ঞান ও আচরণে উন্নীত হয়েছিল। মনে করা হয়, এই আচরণগত পরিবর্তন ১,৩৫,০০০ থেকে ৭৫,০০০ বছর আগের একটি জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট শুষ্ক ও শীতল পরিবেশের ফলশ্রুতি হিসেবে ঘটেছে। এর ফলে অন্তর্দেশীয় খরার কারণে মানবদলগুলি শামুক ও অন্যান্য সম্পদে আকীর্ণ সমুদ্রতীরবর্তী নিম্ন জলাভূমি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। হিমবাহের মধ্যে প্রচুর জল আটকে থাকায় সমুদ্রতল অত্যন্ত নীচু ছিল, এবং এই ধরনের জলাভূমি অঞ্চলগুলি ইউরেশিয়ার দক্ষিণ তট বরাবর বিস্তৃত ছিল। ভেলা ও নৌকার আবিষ্কারের ফলে বহির্দেশীয় দ্বীপসমূহ অন্বেষণ এবং সমুদ্রতট বরাবর ভ্রমণ সহজ হয়, এবং এরই ফলে নিউ গিনি ও পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়াও সম্ভব হয়। |
আফ্রিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ্যায় পরবর্তী ইউরেশিয় প্যালিওলিথিকের সমতুল যুগ পরবর্তী প্রস্তর যুগ হিসেবে পরিচিত যা প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯শ শতকের শেষভাগে ইওরোপে আচরণগত আধুনিকতার সবথেকে স্বচ্ছ নিদর্শন পাওয়া যায়, যেমন ভেনাস মূর্তি এবং অরিগ্নাসিয়ান্ থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য হস্তনির্মিত শিল্পকর্ম; আরো সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে সান নামক তৎকালীন শিকারী-সংগ্রাহকদের বস্তু সংস্কৃতির আবশ্যিক উপাদানগুলি অন্ততপক্ষে ৪০,০০০ বছর আগেও উপস্থিত ছিল, এগুলি ছিল আজকের দিনে ব্যবহৃত খননকার্য চালানোর যন্ত্রের মত, যেমন উটপাখির ডিমের খোলা দিয়ে তৈরি পুঁতি, হাড় দিয়ে তৈরি তীরের ফলা যাতে নির্দিষ্ট প্রস্তুতকারকের চিহ্ন লাল গৈরিক রঙে খোদিত থাকত এবং ছিল বিষ প্রলেপক। আরো একটি জ্ঞাতব্য তথ্য হল, যে “৭৫ হাজার বছর আগে মধ্য প্রস্তর যুগে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লম্বস গুহা থেকে উদ্ধারকৃত পাথরের হস্তনির্মিত বস্তুর অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য সবথেকে ভাল বোঝা যায় প্রেশার ফ্লেকিং বা চাপের মাধ্যমে ফলক তোলার মধ্যে দিয়ে। এই পদ্ধতিটি উত্তপ্ত সিলক্রিটের ওপরে স্টিল বে’এর দ্বিমুখী চূড়া নির্মাণের সময় ব্যবহৃত হত। প্রেশার ফ্লেকিং এবং বস্তুকে উত্তপ্ত করার পদ্ধতিটি প্রাক্-ইতিহাসে আরো পরবর্তীযুগের বলে আগে ধারণা করা হত এবং উভয় পদ্ধতিই প্রাকৃতিক বস্তুর ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি আচরণগত আধুনিক দিককে সূচিত করে। আফ্রিকান সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির পাশাপাশি গুহা অঞ্চলের গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে “সাংস্কৃতিক এবং বৌদ্ধিক চরিত্র আধুনিক মানুষের মধ্যে কখন দেখা গেল তা নিয়ে বিতর্কের” দিন হয়ত শেষ হয়ে আসছে, কারণ “বৃহৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তি” যার জন্য “অগাধ বিশ্বাস এবং ভাষার ব্যবহার দরকার হয়” তা পিনাকল পয়েন্টের ৫ – ৬ নং সাইটে পাওয়া গেছে। এটা প্রায় ৭১,০০০ বছর আগেকার নিদর্শন। গবেষকদের মতে তাঁদের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে মাইক্রোলিথিক (ক্ষুদ্রাকৃতি-প্রস্তর) প্রযুক্তি প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছিল এবং তা অত্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে বিবর্তিত হয় (প্রায় ১১,০০০ বছর), এবং তারপর তা উত্তপ্তকরণের জটিল প্রযুক্তির সঙ্গে মিশে যায় যা প্রায় ১,০০,০০০ বছর ধরে চলেছিল। আফ্রিকার উন্নত প্রযুক্তি ছিল আদি ও স্থায়ী; আফ্রিকার খননকৃত অঞ্চলের একটি ছোট নিদর্শনই হল যেকোন ধারণা করা ‘ফ্লিকারিং’ নকশার সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা।” এর ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে উপ-সাহারান আফ্রিকার পরবর্তী প্রস্তর যুগের সংগ্রাহকের দল আজ থেকে অন্ততপক্ষে ৫০,০০০ বছর আগে আধুনিক জ্ঞান ও আচরণে উন্নীত হয়েছিল। মনে করা হয়, এই আচরণগত পরিবর্তন ১,৩৫,০০০ থেকে ৭৫,০০০ বছর আগের একটি জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট শুষ্ক ও শীতল পরিবেশের ফলশ্রুতি হিসেবে ঘটেছে। এর ফলে অন্তর্দেশীয় খরার কারণে মানবদলগুলি শামুক ও অন্যান্য সম্পদে আকীর্ণ সমুদ্রতীরবর্তী নিম্ন জলাভূমি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। হিমবাহের মধ্যে প্রচুর জল আটকে থাকায় সমুদ্রতল অত্যন্ত নীচু ছিল, এবং এই ধরনের জলাভূমি অঞ্চলগুলি ইউরেশিয়ার দক্ষিণ তট বরাবর বিস্তৃত ছিল। ভেলা ও নৌকার আবিষ্কারের ফলে বহির্দেশীয় দ্বীপসমূহ অন্বেষণ এবং সমুদ্রতট বরাবর ভ্রমণ সহজ হয়, এবং এরই ফলে নিউ গিনি ও পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়াও সম্ভব হয়। |
||
== আরো দেখুন == |
|||
জীবাশ্ম |
|||
Fossil, ''Dawn of Humanity'' (2015 PBS film), List of fossil sites (fossils of primates, transitional fossils, and human evolution fossils), Paleontology |
|||
জিনগত বিবর্তন |
|||
Haplogroups (Mitochondrial Eve and Y-chromosomal Adam), Human evolution (Lamarckism, Modern evolutionary synthesis, and Epigenetics) |
|||
জিনগত ইতিহাস |
|||
: আফ্রিকা, ইউরোপ, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, ইবেরিয়ান পেনিনসুলা, ল্যাটিন আমেরিকা, ইতালি, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া |
|||
পরিযাণ |
|||
আদি মানব পরিযাণ, উপকূলীয় পরিযাণ, মানব পরিযাণ, ঐতিহাসিক পরিযাণ |
|||
জনগোষ্ঠী |
|||
প্যালিওডেমোগ্রাফি (কোন এক সময়ে অস্তিত্ব থাকা মানুষের সংখ্যা), জনসংখ্যার পুনর্গঠন, বিশ্বের জনসংখ্যার ধারণা, সরাইটস্ প্যারাডক্স |
|||
ধর্ম |
|||
ধর্মের বিবর্তনমূলক উৎস, সৃষ্টির পৌরাণিক গাথা, আধ্যাত্মিক বিবর্তন |
|||
তালিকা ও সারণী |
|||
প্রথম মনুষ্য বসতির দেশ ও দ্বীপসমূহের তালিকা, প্রাচীনকালের প্রধান প্রধান প্রাগৈতিহাসিক বিশ্বসংস্কৃতির সারসংক্ষেপিত সারণী |
|||
== তথ্যসূত্র == |
০৫:১৫, ১১ মার্চ ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
এই নিবন্ধটি ইংরেজি উইকিপিডিয়া হতে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০১৮ উপলক্ষে তৈরী করা হলো, নিবন্ধটিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নিবন্ধকার কর্তৃক অনুবাদ দ্বারা মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে; আপনার যেকোন প্রয়োজনে এই নিবন্ধের আলাপ পাতাটি ব্যবহার করুন। আপনার আগ্রহের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। |
শারীরগত আধুনিক মানুষ | |
---|---|
পূর্ণবয়স্ক হোমো সেপিয়েন্স দম্পতি, থাইল্যান্ড | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
মহাজগত: | সংবাহী উদ্ভিদ (ট্র্যাকিওফাইট) |
জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণি: | স্তন্যপায়ী (ম্যামেলিয়া) |
বর্গ: | প্রাইমেট |
উপবর্গ: | Haplorhini |
অধিবর্গ: | Simiiformes |
পরিবার: | Hominidae |
গণ: | মানব |
প্রজাতি: | H. sapiens |
দ্বিপদী নাম | |
Homo sapiens | |
"হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স"এর বিস্তার (লাল ও গোলাপী) |
প্যালিওঅ্যান্থ্রোপোলজিতে, শারীরগত আধুনিক মানুষ শব্দটি[১] হোমো সেপিয়েন্সের অন্তর্গত সমসাময়িক মানুষের ফেনোটাইপ বিস্তারযুক্ত শরীরগঠনের সঙ্গে প্রাচীন অবলুপ্ত মানুষের প্রকৃতিগত পার্থক্য নিরুপণ করতেই ব্যবহৃত হয়।
৩,১৫,০০০ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্স তার প্রাচীন ও বলিষ্ঠ পূর্বসূরীদের (হোমো হেইডেলবার্গেনসিস, হোমো ইরেকটাসের শাখা) থেকে নবরূপ প্রাপ্ত হয়। এর কিছু সময় পর থেকেই আধুনিক মনুষ্যপ্রজাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, দক্ষিণ আফ্রিকাতে শিকারী-সংগ্রাহক জনগোষ্ঠীই সর্বপ্রথম বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে; যদিও আধুনিক মানুষের নিজেদের মধ্যে এবং আধুনিক ও প্রাচীন মানুষের মধ্যে প্রচুর বিমিশ্রণ সংঘটিত হয়েছে।
ব্যবহারিক আধুনিকতা, যেমন ভাষাগত উন্নতি, অবয়ব শিল্পের বিকাশ এবং ধর্মের প্রাথমিক রূপের উন্নয়ন প্রভৃতি আজ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে শুরু হয়; এটি ছিল আপার প্যালিওলিথিক যুগ (আফ্রিকায় যা পরবর্তী প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত ছিল)।[২]
নামকরণ ও শ্রেণীবিন্যাস
ট্যাক্সোনমিক প্রজাতি হিসেবে সমসাময়িক মনুষ্য জনগোষ্ঠীর দ্বিপদী নাম হল হোমো সেপিয়েন্স। এই প্রজাতিটি এর একটি হোমো প্রজাতি থেকে প্রায় ২,০০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ বছর আগে উদ্ভুত হয়।[৩]
“শারীরগত আধুনিক মানুষ” শব্দটি বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয়, “শারীরগত আধুনিক” হোমো সেপিয়েন্স –এর থেকে নিয়েন্ডার্থালসের মত প্রাচীন মানবকে পার্থক্য নিরূপণ করতে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯০এর দশকের জনপ্রিয় প্রথা অনুযায়ী, নিয়েন্ডার্থালসদের হোমো সেপিয়েন্স নিয়েন্ডার্থালেন্সিস্ নামক হোমো সেপিয়েন্সের উপ-প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হত, যেখানে শারীরগত আধুনিক মানুষ (অথবা ইউরোপীয় প্রাক্-আধুনিক মানুষ) বলতে ক্রো-ম্যাগনন বা হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স বোঝাতো। এই প্রকার নামকরণ অনুযায়ী (যেখানে নিয়েন্ডার্থালসদের হোমো সেপিয়েন্স বলা হত), “শারীরগত আধুনিক হোমো সেপিয়েন্স” বলতে ইউরোপীয় প্রাক্-আধুনিক মানুষ (“ক্রো-ম্যাগনন”) বোঝানো হত। নিয়েন্ডার্থালস্দের আলাদা প্রজাতি (হোমো নিয়েন্ডার্থালেন্সিস্) হিসেবে নামকরণ করা খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে, যাতে ইউরোপীয় পরিপ্রেক্ষিতে “শারীরগত আধুনিক মানুষ” বলতে হোমো সেপিয়েন্স বোঝায় (কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনভাবেই এই প্রশ্নের মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি)।
হোমো সেপিয়েন্সের এই সংকীর্ণ সংজ্ঞায়, ২০০৩ সালে আবিষ্কৃত, হোমো সেপিয়েন্স ইডাল্টুও, “শারীরগত আধুনিক”-এর একই ছত্রতলে পড়ে। আধুনিক মানবগোষ্ঠীর উত্তরসূরীদের একটি বৈধ প্রজাতি হিসেবে হোমো সেপিয়েন্স ইডাল্টুর স্বীকৃতি, সমসাময়িক মানুষের হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স প্রজাতি নামটিকেই সমর্থন করে।
সুবিধার জন্য, “শারীরগত আধুনিক মানুষ”কে ‘প্রাক্’ কিংবা ‘বলশালী’ বনাম ‘হিমযুগ-পরবর্তী’ কিংবা ‘কৃশকায়’ উপশাখায় বিভক্ত করা হয়। “কৃশকায় শারীরগত আধুনিক মানুষের” আবির্ভাব ৫০,০০০ – ৩০,০০০ বছর আগে মানুষের আকারগত ক্ষুদ্রতর হওয়া এবং অধিকতর সরু অস্থির আবির্ভাবকেই সূচিত করে।
২ লক্ষ বছরের মধ্যে বসবাসরত “আধুনিক”/“প্রাচীন” তালিকার অন্তর্গত মানবপ্রজাতি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
জনগোষ্ঠী | বয়স | শ্রেণীবিন্যাস |
হোমো সেপিয়েন্স | ৩,০০,০০০ বছর - বর্তমান | modern |
হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স | ১০,০০০ বছর - বর্তমান | "হিমযুগ-পরবর্তী" আধুনিক |
লাল হরিণ গুহা মানব | ১০ হাজার বছর | মিশ্র (?) |
হোমো সেপিয়েন্স ইডাল্টু | ২ লক্ষ - ১.৬ লক্ষ বছর | "প্রাক্" আধুনিক |
ডেনিসোভান্স্[৪] | ১ লক্ষ - ৪০ হাজার বছর | প্রাচীন |
হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস | ১.৯ লক্ষ - ৫০ হাজার বছর | প্রাচীন |
হোমো নিয়েন্ডার্থালনেসিস | ২.৫ লক্ষ - ৪০ হাজার বছর | প্রাচীন |
হোমো রোডেসিয়েন্সিস | ৩ লক্ষ - ১.২৫ লক্ষ | প্রাচীন |
হোমো ইরেকটাস্ সোলোয়েন্সিস্ (সোলো মানব) | –১.৪ লক্ষ(?)[৫] | প্রাচীন |
হোমো হেইডেলবার্গজেনেসিস[৬][৭] | ৬ লক্ষ - ২ লক্ষ | প্রাচীন |
শারীরগত দিক
সাধারণ গঠন
সাধারণভাবে আধুনিক মানুষ তাদের পূর্বসুরী প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর থেকে শারীরিকভাবে দূর্বল। মানবপ্রজাতি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল; আধুনিক মানুষ বেশ শক্তসমর্থ লক্ষণবিশিষ্ট হতে পারে, এবং প্রাক্-আধুনিক মানুষ তার চেয়েও বেশি বলশালী হতে পারে। তবুও, আধুনিক মানুষ আর প্রাচীন মানুষের (নিয়েন্ডার্থালস্ এবং ডেনিসোভান্স্) মধ্যে বেশ কিছু শারীরগত পার্থক্য রয়েছে।
করোটিগত গঠন
করোটিতে ঘাড়ের কাছে অক্সিপিটাল বান কম পরিমাণে থাকে; অক্সিপিটাল বান হল ঘাড়ের পেশীর কাছে একটি অস্থি স্ফীতি যা নিয়েন্ডার্থালস্দের ক্ষেত্রে প্রকটভাবে দেখা যায়। আধুনিক মানুষের, এমনকি এর পূর্বসুরীদেরও, প্রাচীন মানুষের তুলনায় বৃহত্তর পুরোমস্তিষ্ক রয়েছে, যাতে মস্তিষ্ক চক্ষুর পিছনে না থেকে তার ঊর্দ্ধভাগেও অবস্থান করতে পারে। এর ফলে কপাল সাধারণত (যদিও সবসময়ে নয়) আয়তনে বৃহৎ হয়, এবং ব্রো রিজ সংকুচিত হয়। প্রাক্-আধুনিক মানুষ এবং কিছু বর্তমান মানবগোষ্ঠীরও বড় ব্রো রিজ রয়েছে, কিন্তু প্রাচীন মানুষের থেকে সেগুলি আলাদা, কারণ প্রাচীন মানবগোষ্ঠীর অক্ষিগোলকের ওপর একটি গর্ত বা খাঁজ তৈরি হয়েছে যা প্রতিটি চোখের ওপর সংযোগরেখার মধ্যে দিয়ে একটি খাঁজ তৈরি করেছে। এটি সংযোগরেখাটিকে একটি কেন্দ্রীয় অংশ ও দুটি প্রান্তীয় অংশে বিভক্ত করেছে। আধুনিক মানুষের ক্ষেত্রে, এর মধ্যে কেবল কেন্দ্রীয় অংশটিই রক্ষিত আছে (যদি আদৌ তা থাকে)। এটিই প্রাচীন মানব গোষ্ঠীর সঙ্গে এদের পার্থক্য, প্রাচীন মানুষের এই ব্রো রিজটি যথেষ্ট বড় এবং অবিভক্ত।
আধুনিক মানুষের সাধারণত একটি খাড়া, এমনকি উল্লম্ব কপাল দেখা যায়, যেখানে তাদের পূর্বসুরীদের কপাল একেবারেই পশ্চাৎ নতিযুক্ত। ডেসমণ্ড মরিসের মতে, উল্লম্ব কপাল মানুষের ক্ষেত্রে ভ্রূ-সঞ্চালন এবং কপালের ত্বক সংকোচনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যোগাযোগস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
চোয়াল গঠন
প্রাচীন মানুষের সঙ্গে তুলনা করলে, শারীরগত আধুনিক মানুষ ক্ষুদ্রতর, ভিন্ন আকৃতির দন্তের অধিকারী। এর ফলে এদের নিম্নচোয়ালের অস্থি ক্ষুদ্রতর হয় যার ফলে অবশিষ্ট চোয়ালরেখা বেরিয়ে থাকে যা চিবুকটিকে স্পষ্ট করে তোলে। চোয়ালের কেন্দ্রীয় অংশ চিবুকটিকে একটি ত্রিকোণাকৃতি গঠন দান করে যার শীর্ষভাগকে মেন্টাল ট্রিগন বা চিবুক-ত্রিকোণ নামে পরিচিত, এটি প্রাচীন মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। বিশেষত বর্তমান জনগোষ্ঠীতে, আগুন ও যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে চোয়ালের পেশীর সংখ্যা কমে গেছে এবং চোয়াল হয়ে পড়েছে রোগা ও কৃশকায়। প্রাচীন মানুষের তুলনায়, আধুনিক মানুষ ক্ষুদ্রাকার ও নিকৃষ্টতর মুখমণ্ডলের অধিকারী।
দেহ কঙ্কাল
পূর্বতম এবং সবথেকে শক্তিশালী আধুনিক মানুষের দেহ কঙ্কালও নিয়েন্ডার্থালস্দের তুলনায় কম মজবুত ছিল (ডেনিসোভানস্দের থেকে আমরা যেটুকু জানতে পারি), যেহেতু তাদের কঙ্কালে অত্যাবশ্যকীয় আধুনিক উপাদান বর্তমান ছিল। হাত ও পায়ের লম্বা অস্থির ক্ষেত্রে, দূরবর্তী অস্থিগুলি (রেডিয়াস/আলনা এবং টিবিয়া/ফিবুলা) নিকটবর্তী অস্থির চাইতে (হিউমেরাস এবং ফিমার) কিছুটা ছোট অথবা একই দৈর্ঘ্যের। নিয়েন্ডার্থালস্দের ক্ষেত্রে দূরবর্তী অস্থিগুলি ক্ষুদ্রতর, সাধারণত মনে করা হয় যে এগুলি শীতল আবহাওয়ার সাথে অভিযোজিত কারণেই এমন হয়েছে। মেরু অঞ্চলে বসবাসকারী কিছু আধুনিক মানবগোষ্ঠীর মধ্যেও এই একই অভিযোজন দেখা যায়।
বিবর্তন
হোমিনান্দের করোটি | |
---|---|
ছড়িয়ে পড়বার আনুমানিক সময়
অস্ট্রালোপিথেকানস্ হোমিনিনস্ থেকে হোমো প্রজাতির উদ্ভব ৩০ লক্ষ বছর আগে কোন এক সময় শুরু হয়েছিল। জীবাশ্ম হিসেব অনুসারে, ১৮ লক্ষ থেকে ১৩ লক্ষ বছর আগে হোমো ইরেকটাসের আবির্ভাবের সময় থেকে করোটির আয়তন দ্বিগুণ হয়ে ৮৫০ কিউবিক সেমি হয়ে যায়। মনে করা হয়, হোমো ইরেকটাস এবং হোমো এরগাস্টার প্রথম আগুন ও জটিল যন্ত্রের ব্যবহার শেখে। আধুনিক মানুষ হোমো হেইডেলবার্জেনেসিস, হোমো রোডেসিয়েন্সিস অথবা হোমো অ্যান্টেসেসর্সদের থেকে বিবর্তিত হয় এবং ১,০০,০০০ থেকে ৫০,০০০ বছর আগে হোমো ইরেকটাস, হোমো ডেনিসোভা, হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস এবং হোমো নিয়েন্ডার্থালেন্সিসের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্থান অধিকার করে।
প্রায় ৩ লক্ষ বছর আগে মরক্কো থেকে প্রাপ্ত জেবল ইরহোদের জীবাশ্ম হল শারীরগত আধুনিক মানুষের প্রাচীনতম জীবাশ্ম। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাক্-আধুনিক মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পূর্ব আফ্রিকায় প্রাপ্ত ওমো অবশেষ যা ১,৯৫,০০০ বছর আগেকার এবং এখানে মাথার করোটির পার্শ্বস্থ দুটি অংশ, বাহু, পা, পায়ের পাতা এবং পেলভিস অস্থি পাওয়া গেছিল। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায়, প্রস্তর যুগের খোই-সান মানুষের কঙ্কালের জিনোমের সাথে অন্যান্য আধুনিক আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর তুলনা করে এটা বোঝা যায় যে পশ্চিম আফ্রিকান মান্ডিনকা জনগোষ্ঠী থেকে আনুমানিক ৩,৫৬,০০০ বছর আগে খোই-সান জনগোষ্ঠী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে; এর ফলে বোঝা গেল আধুনিক মানুষের উৎপত্তি আগে যা ভাবা হত তা তার চেয়ে প্রাচীন। অন্যান্য জীবাশ্মগুলির মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়ার হার্টোয় ১,৬০,০০০ বছর আগেকার প্রস্তাবিত হোমো সেপিয়েন্স ইডাল্টুর জীবাশ্ম এবং ইজরায়েলে ৯০,০০০ বছর আগেকার স্খুল হোমিনিডস্। পশ্চিম সাইবেরিয়ায় ৪৫,০০০ বছর আগেকার উস্ট-ইশিম মানুষের অবশেষই হল প্রাচীনতম যার থেকে সম্পূর্ণ জিনোম বের করা সম্ভব হয়েছে।
- আনুমানিক সন-তারিখ, বিশদে জানবার জন্য অন্যান্য নিবন্ধ দেখুন
- (২,০০,০০০ খ্রীঃপুঃ থেকে ২০১৩ খ্রীঃ পর্যন্ত (আংশিক ব্যাখ্যামূলক প্রতীকচিহ্ন)
হোমো ইরেকটাস থেকে উদ্বর্তন
প্রাচীন মানুষের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকারভেদ (যাদের সকলেই হোমো ইরেকটাস থেকে প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে আবির্ভুত হয়) থেকে হোমো সেপিয়েন্সের তুলনামূলক সমরূপ একক প্রজাতিতে উদ্বর্তন বিষয়ে ১৯৮০র দশকে উত্থাপিত দুটি ভিন্ন মডেল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় : “আধুনিক আফ্রিকান উৎস” নামক মডেলে দাবি করা হয়, আফ্রিকায় হোমো সেপিয়েন্সের আবির্ভাব হয় একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে যা বিস্তৃত হয় এবং অন্যান্য সকল মনুষ্য প্রজাতিকে অবলুপ্ত করে দেয়; অন্যদিকে, “বহুস্থানিক বিবর্তন” মডেলে দাবি করা হয়, প্রাচীন মানুষের মধ্যে স্থানিক বৈশিষ্ট্যগুলির অস্তিত্ব বজায় ছিল যা ধীরে ধীরে ক্লাইনাল পরিবর্তন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে জিন সঞ্চরণ, জিন প্রবাহ এবং প্লিস্টোসিন পর্বে নির্বাচনের মাধ্যমে আধুনিক মানব বৈচিত্র্যের দিকে উপনীত হয়।
২০০০-এর শূন্য দশকে প্রত্ন-জিনবিদ্যা ও জন-জিনবিদ্যার মাধ্যমে সন-তারিখ প্রাপ্ত হওয়ায় আরো বিশদ ও পরিষ্কার ছবি পাওয়া গেছে যার ফলে উপরোল্লিখিত দুটি প্রতিযোগী তত্ত্বের একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে আসা গেছে : সাম্প্রত আফ্রিকা-বহির্মুখী প্রসারই আধুনিক মানব উৎপত্তির মূলাংশ গঠন করেছে, তবে স্থানীয় প্রাচীন মানবের সাথে মিশ্রণের ঘটনাও এই মানবের উৎপত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত (২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী) হোমো সেপিয়েন্সের অন্তত দুটি আফ্রিকা-বহির্মুখী পরিযাণ ঘটেছিল। এর প্রথমটি ঘটেছিল ১,৩০,০০০ এবং ১,১৫,০০০ বছর আগে কোন এক সময়ে এবং দ্বিতীয়টি ঘটেছিল ৭৭,০০০ বছর আগে যা তোবা মহা-অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ঘটেছিল বলে মনে করা হয়; এই দলটি তথাকথিত দক্ষিণ পথ ধরে এশিয়ার দক্ষিণ সমুদ্রোপকূল বরাবর এগিয়ে চলে এবং ৬৫,০০০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া অধিকার করে; এর একটি পূর্বতন শাখা প্রায়-প্রাচ্য এবং ইউরোপে প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে বসতিস্থাপন করে।
আফ্রিকার মধ্যে, এরও আগে একটি বহির্মুখী অভিগমন দেখা গিয়েছিল এবং তা ছিল ১,৫০,০০০ বছরেরও আগে দক্ষিণ আফ্রিকার শিকারী-সংগ্রাহক, মধ্য আফ্রিকার লতাগুল্ম-সংগ্রাহক, পশ্চিম এবং পূর্ব আফ্রিকার অধিবাসীদের মধ্যে; সম্ভবত এটি ৩,০০,০০০ আগে শুরু হয়ে থাকতে পারে। অতএব সবথেকে স্বতন্ত্র জিনগত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সমসাময়িক মানব জনগোষ্ঠী হল দক্ষিণ আফ্রিকার শিকারী-সংগ্রাহক।
শারীরগত আধুনিক মানুষের মধ্যে নিরন্তর মিশ্রণ প্রক্রিয়া চলবার কারণে আধুনিক জনগোষ্ঠীর মাতৃগত ও পিতৃগত দিক থেকে সবথেকে ঘনিষ্ঠ পূর্বসুরীর কাল আন্দাজ করা অত্যন্ত দুষ্কর হয়ে উঠেছে (মাইটোকণ্ড্রিয়াল ইভ এবং ওয়াই-ক্রোমোজোমাল আদম)। ২০১৩ সালে একটি প্রাচীন ওয়াই-ক্রোমোজোমাল বংশ আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে ওয়াই ক্রোমোজোমাল আদমের বয়সকে ৩,০০,০০০ বছর আগে বলে হিসাব করা হয়। প্রাচীন মানুষ থেকে কোন ওয়াই-ক্রোমোজোমাল অথবা মাইটোকণ্ড্রিয়াল ডিএনএর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি (যার ফলে সর্বাধুনিক পিতৃগত ও মাতৃগত বংশের কালসীমা ৫,০০,০০০ বছর আগে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে)।
প্রাক-হোমো সেপিয়েন্স
মধ্য প্যালিওলিথিক নামটি হোমো সেপিয়েন্সের প্রথম আবির্ভাবের সময় (প্রায় ৩,০০,০০০ বছর আগে) এবং পূর্ণ আচরণগত আধুনিকত্বের আবির্ভাবের সময়ের (প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে) মধ্যবর্তী সময়কে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়।
অনেক প্রাক্-আধুনিক মানুষের মধ্যে (যেমন, ওমো, হার্টো, স্খুল এবং পেস্টেরা কু ওয়েস) প্রাচীন এবং আধুনিক ধারার মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পঞ্চম স্খুলের স্পষ্ট ব্রো রিজ এবং একটি অভিক্ষিপ্ত মুখমণ্ডল রয়েছে। যদিও, এদের মাথার করোটি হল গোলাকার এবং নিয়েন্ডার্থালস্দের থেকে স্বতন্ত্র এবং আধুনিক মানুষের মাথার করোটির অনুরূপ। অধুনা জানা গেছে, যে উত্তর সাহারা এবং আফ্রিকার বাইরের অঞ্চলের আধুনিক মানুষের মধ্যে কিছু প্রাচীন মানবের মিশ্রণ ঘটেছে, যদিও পঞ্চম স্খুলের মত প্রাক্-আধুনিক মানুষের শক্তিশালী ধারার ফলেই এই মিশ্র বংশের উৎপত্তি নাকি তা প্রাচীন কোন ধারার অবশেষ, তা এখনও অমীমাংসিত।
শারীরগত আধুনিক মানুষের “কৃশকায়” অথবা দূর্বলভাবে গঠিত কঙ্কালের সাথে বর্দ্ধিত জনসংযোগ এবং “সম্পদ পরিবহন”সহ তার জীবনযাত্রার অন্যান্য দিকগুলিও জড়িয়ে রয়েছে। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে মানব মস্তিষ্কের বিকাশের, বিশেষত পুরোমস্তিষ্কের বিকাশের, কারণ হল “মানবদেহে বিপাকীয় উপাদানের অত্যন্ত দ্রুত বিবর্তন...এর সাথে সাথে পেশী শক্তির চূড়ান্ত অবক্ষয়। মস্তিষ্কে এবং পেশীতে লক্ষ্যণীয়রকমের দ্রুত বিপাকীয় পরিবর্তন, এবং তার সাথে অনন্য মানব জ্ঞান দক্ষতা ও পেশীকার্যের হ্রাস, মানব বিবর্তন পদ্ধতিতে সমান্তরাল ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হয়”। শনিনজেন বল্লম এবং এদের আনুষঙ্গিক অবশেষ থেকে বোঝা যায় যে এরা আজ থেকে ৩,০০,০০০ বছর আগেই জটিল প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছিল এবং এটাই ছিল সক্রিয় (বড় রকমের) শিকারের প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ। হোমো হেইডেলবার্গজেনেসিসের পূর্ব-পরিকল্পনা করা, চিন্তা করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার মত মেধাগত ও জ্ঞানগত দক্ষতা ছিল এবং তা ছিল একেবারেই আধুনিক মানুষের মত।
পরবর্তী প্যালিওলিথিক
প্রাক্কালীন শারীরগত আধুনিক মানুষ আধুনিক অথবা বর্তমান মানুষের মতই আচরণ করত কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ আছে। আচরণগত আধুনিকতার মধ্যে লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্যগুলি হল সম্পূর্ণ সুগঠিত ভাষা (যার জন্য বিমূর্ত চিন্তার ক্ষমতা থাকা দরকার), শিল্পগত প্রকাশ, ধার্মিক আচরণের প্রাথমিক রূপ, বর্ধিত জনসংযোগ এবং প্রাথমিক বসতিস্থাপন এবং পাথর, হাড় অথবা হরিণের শিং থেকে যন্ত্রের উদ্ভব। ইউরেশিয়ায় আধুনিক মানুষের দ্রুত বিস্তার থেকে যে যুগ শুরু, তাকে পরবর্তী প্যালিওলিথিক যুগ বলে অভিহিত করা হয়; এই সময়ে প্যালিওলিথিক শিল্পের প্রথম আবির্ভাব ঘটে এবং তার ফলে গুহাচিত্রের বিকাশ ঘটে এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি লক্ষ্য করা যায়, বল্লম-নিক্ষেপের মত কার্যকলাপ এই সময়ে লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তী প্যালিওলিথিক ৫০,০০০ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল এবং এই সময় থেকেই নিয়েন্ডার্থালস্দের মত প্রাচীন মানুষের অবলুপ্তি ঘটতে থাকে।
“আচরণগত আধুনিকতা” শব্দটি কিছুটা বিতর্কিত। পরবর্তী প্যালিওলিথিক যুগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়, কিন্তু কিছু পণ্ডিত ২,০০,০০০ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্স আবির্ভাবের সময়কাল থেকেই “আচরণগত আধুনিকতা” শব্দটি ব্যবহার করবার পক্ষপাতী, আবার কেউ কেউ ৫০,০০০ বছর আগে দ্রুত বিকাশের সময়ের বৈশিষ্ট্য হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহার করেন। বলা যায় যে আচরণগত আধুনিকতা একটা ধীর ক্রমান্বয়ী প্রক্রিয়া।
২০১৮ সালের জানুয়ারীতে জানানো হয়েছে যে ২০০২ সালে ইজরায়েলের মিসলিয়া গুহায় প্রাপ্ত ১,৮৫,০০০ বছর আগেকার আধুনিক মানব অবশেষই হল তাদের আফ্রিকা বহির্গমনের পূর্বতম নিদর্শন।
ইওরোপে প্রাপ্ত সর্বপ্রাচীন হোমো সেপিয়েন্স (শারীরগত আধুনিক মানুষ) হল “ক্রো-ম্যাগনন” (ফ্রান্সে আবিষ্কৃত স্থানটির নামানুসারে) যারা ৪০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ বছর আগে আবির্ভুত হয়। এদেরকে এদের পূর্বসুরী নিয়েন্ডার্থালস্দের বিপরীতে “ইওরোপীয় প্রাক্-আধুনিক মানুষ” নামেও অভিহিত করা হয়।
আফ্রিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ্যায় পরবর্তী ইউরেশিয় প্যালিওলিথিকের সমতুল যুগ পরবর্তী প্রস্তর যুগ হিসেবে পরিচিত যা প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯শ শতকের শেষভাগে ইওরোপে আচরণগত আধুনিকতার সবথেকে স্বচ্ছ নিদর্শন পাওয়া যায়, যেমন ভেনাস মূর্তি এবং অরিগ্নাসিয়ান্ থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য হস্তনির্মিত শিল্পকর্ম; আরো সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে সান নামক তৎকালীন শিকারী-সংগ্রাহকদের বস্তু সংস্কৃতির আবশ্যিক উপাদানগুলি অন্ততপক্ষে ৪০,০০০ বছর আগেও উপস্থিত ছিল, এগুলি ছিল আজকের দিনে ব্যবহৃত খননকার্য চালানোর যন্ত্রের মত, যেমন উটপাখির ডিমের খোলা দিয়ে তৈরি পুঁতি, হাড় দিয়ে তৈরি তীরের ফলা যাতে নির্দিষ্ট প্রস্তুতকারকের চিহ্ন লাল গৈরিক রঙে খোদিত থাকত এবং ছিল বিষ প্রলেপক। আরো একটি জ্ঞাতব্য তথ্য হল, যে “৭৫ হাজার বছর আগে মধ্য প্রস্তর যুগে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লম্বস গুহা থেকে উদ্ধারকৃত পাথরের হস্তনির্মিত বস্তুর অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য সবথেকে ভাল বোঝা যায় প্রেশার ফ্লেকিং বা চাপের মাধ্যমে ফলক তোলার মধ্যে দিয়ে। এই পদ্ধতিটি উত্তপ্ত সিলক্রিটের ওপরে স্টিল বে’এর দ্বিমুখী চূড়া নির্মাণের সময় ব্যবহৃত হত। প্রেশার ফ্লেকিং এবং বস্তুকে উত্তপ্ত করার পদ্ধতিটি প্রাক্-ইতিহাসে আরো পরবর্তীযুগের বলে আগে ধারণা করা হত এবং উভয় পদ্ধতিই প্রাকৃতিক বস্তুর ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি আচরণগত আধুনিক দিককে সূচিত করে। আফ্রিকান সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির পাশাপাশি গুহা অঞ্চলের গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে “সাংস্কৃতিক এবং বৌদ্ধিক চরিত্র আধুনিক মানুষের মধ্যে কখন দেখা গেল তা নিয়ে বিতর্কের” দিন হয়ত শেষ হয়ে আসছে, কারণ “বৃহৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তি” যার জন্য “অগাধ বিশ্বাস এবং ভাষার ব্যবহার দরকার হয়” তা পিনাকল পয়েন্টের ৫ – ৬ নং সাইটে পাওয়া গেছে। এটা প্রায় ৭১,০০০ বছর আগেকার নিদর্শন। গবেষকদের মতে তাঁদের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে মাইক্রোলিথিক (ক্ষুদ্রাকৃতি-প্রস্তর) প্রযুক্তি প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছিল এবং তা অত্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে বিবর্তিত হয় (প্রায় ১১,০০০ বছর), এবং তারপর তা উত্তপ্তকরণের জটিল প্রযুক্তির সঙ্গে মিশে যায় যা প্রায় ১,০০,০০০ বছর ধরে চলেছিল। আফ্রিকার উন্নত প্রযুক্তি ছিল আদি ও স্থায়ী; আফ্রিকার খননকৃত অঞ্চলের একটি ছোট নিদর্শনই হল যেকোন ধারণা করা ‘ফ্লিকারিং’ নকশার সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা।” এর ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে উপ-সাহারান আফ্রিকার পরবর্তী প্রস্তর যুগের সংগ্রাহকের দল আজ থেকে অন্ততপক্ষে ৫০,০০০ বছর আগে আধুনিক জ্ঞান ও আচরণে উন্নীত হয়েছিল। মনে করা হয়, এই আচরণগত পরিবর্তন ১,৩৫,০০০ থেকে ৭৫,০০০ বছর আগের একটি জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট শুষ্ক ও শীতল পরিবেশের ফলশ্রুতি হিসেবে ঘটেছে। এর ফলে অন্তর্দেশীয় খরার কারণে মানবদলগুলি শামুক ও অন্যান্য সম্পদে আকীর্ণ সমুদ্রতীরবর্তী নিম্ন জলাভূমি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। হিমবাহের মধ্যে প্রচুর জল আটকে থাকায় সমুদ্রতল অত্যন্ত নীচু ছিল, এবং এই ধরনের জলাভূমি অঞ্চলগুলি ইউরেশিয়ার দক্ষিণ তট বরাবর বিস্তৃত ছিল। ভেলা ও নৌকার আবিষ্কারের ফলে বহির্দেশীয় দ্বীপসমূহ অন্বেষণ এবং সমুদ্রতট বরাবর ভ্রমণ সহজ হয়, এবং এরই ফলে নিউ গিনি ও পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়াও সম্ভব হয়।
আরো দেখুন
জীবাশ্ম
Fossil, Dawn of Humanity (2015 PBS film), List of fossil sites (fossils of primates, transitional fossils, and human evolution fossils), Paleontology
জিনগত বিবর্তন
Haplogroups (Mitochondrial Eve and Y-chromosomal Adam), Human evolution (Lamarckism, Modern evolutionary synthesis, and Epigenetics)
জিনগত ইতিহাস
- আফ্রিকা, ইউরোপ, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, ইবেরিয়ান পেনিনসুলা, ল্যাটিন আমেরিকা, ইতালি, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া
পরিযাণ
আদি মানব পরিযাণ, উপকূলীয় পরিযাণ, মানব পরিযাণ, ঐতিহাসিক পরিযাণ
জনগোষ্ঠী
প্যালিওডেমোগ্রাফি (কোন এক সময়ে অস্তিত্ব থাকা মানুষের সংখ্যা), জনসংখ্যার পুনর্গঠন, বিশ্বের জনসংখ্যার ধারণা, সরাইটস্ প্যারাডক্স
ধর্ম
ধর্মের বিবর্তনমূলক উৎস, সৃষ্টির পৌরাণিক গাথা, আধ্যাত্মিক বিবর্তন
তালিকা ও সারণী
প্রথম মনুষ্য বসতির দেশ ও দ্বীপসমূহের তালিকা, প্রাচীনকালের প্রধান প্রধান প্রাগৈতিহাসিক বিশ্বসংস্কৃতির সারসংক্ষেপিত সারণী
তথ্যসূত্র
- ↑ Nitecki, Matthew H. and Nitecki, Doris V. (1994). Origins of Anatomically Modern Humans. Springer.
- ↑ Klein, Richard (1995). "Anatomy, behavior, and modern human origins". Journal of World Prehistory. 9 (2): 167–198. doi:10.1007/bf02221838।
- ↑ This is a matter of convention (rather than a factual dispute), and there is no universal consensus on terminology. Some scholars include humans of up to 600,000 years ago under the same species. See Handbook of Death and Dying, Volume 1. Clifton D. Bryant. 2003. p. 811. See also: Masters of the Planet: The Search for Our Human Origins. Ian Tattersall. Page 82 (cf. Unfortunately this consensus in principle hardly clarifies matters much in practice. For there is no agreement on what the 'qualities of a man' actually are," [...]).
- ↑ Krause, Johannes; Fu, Qiaomei; Good, Jeffrey M.; Viola, Bence; Shunkov, Michael V.; Derevianko, Anatoli P. & Pääbo, Svante (২০১০)। "The complete mitochondrial DNA genome of an unknown hominin from southern Siberia"। Nature। 464 (7290): 894–897। ডিওআই:10.1038/nature08976। পিএমআইডি 20336068। বিবকোড:2010Natur.464..894K।
- ↑ Solo Man was previously thought to have survived in Indonesia until about 50 kya, but a 2011 study pushed back the date to before 140 kya. Indriati E, Swisher CC III, Lepre C, Quinn RL, Suriyanto RA, et al. 2011 The Age of the 20 Meter Solo River Terrace, Java, Indonesia and the Survival of Homo erectus in Asia. PLoS ONE 6(6): e21562. ডিওআই:10.1371/journal.pone.0021562
- ↑ Owen, Elizabeth; Daintith, Eve (১৪ মে ২০১৪)। The Facts on File Dictionary of Evolutionary Biology। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 115–। আইএসবিএন 978-1-4381-0943-5।
- ↑ Dawkins, Richard; Wong, Yan (২০০৫)। The Ancestor's Tale: A Pilgrimage to the Dawn of Evolution। Houghton Mifflin Harcourt। পৃষ্ঠা 63–। আইএসবিএন 0-618-61916-X।
- ↑ based on Schlebusch et al., "Southern African ancient genomes estimate modern human divergence to 350,000 to 260,000 years ago" Science, 28 Sep 2017, DOI: 10.1126/science.aao6266, Fig. 3 (H. sapiens divergence times) and Stringer, C. (২০১২)। "What makes a modern human"। Nature। 485 (7396): 33–35। ডিওআই:10.1038/485033a। পিএমআইডি 22552077। বিবকোড:2012Natur.485...33S। (archaic admixture).