সুরথ
সুরথ | |
---|---|
মহারাজাধিরাজ সুরথ | |
বঙ্গের শাসক | |
পূর্বসূরি | সম্রাট পরাশক্তি |
রাজবংশ | চিত্রগুপ্তবংশী |
পিতা | সম্রাট পরাশক্তি |
ধর্ম | সনাতন ধর্ম (শাক্ত) |
সুরথ ছিলেন হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যের চিত্রগুপ্তবংশী কায়স্থ সম্রাট।[১][২] মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এ তার উল্লেখ আছে।[৩] তিনি হিন্দু ধর্মের একজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিও ছিলেন। তার রাজধানী ছিল বলিপুরে যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর শহর। তিনি ছিলেন দেবী দুর্গার ভক্ত। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে তিনি মর্ত্যের অধিবাসীদের মধ্যে দেবী মাহাত্ম্য (শ্রী শ্রী চণ্ডী) প্রচার করেছিলেন এবং তিনি বঙ্গে দূর্গাপূজার প্রথম আয়োজক ছিলেন। যা পরে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
পটভূমি
[সম্পাদনা]তথ্যের উৎস
[সম্পাদনা]তার সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায় মার্কণ্ডেয় পুরাণের দেবীমাহাত্ম্য থেকে।
সুরথের রাজ্যের রাজধানী
[সম্পাদনা]দেবী মাহাত্ম্যের ১২তম এবং ১৫তম লাইন "তত: স্বপুরমায়াতো নিজেদেশাধিপোহভবৎ" অনুসারে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরের বর্তমান "সুপুর" (স্বপুর) এর রাজা ছিলেন।[৪] মার্কণ্ডেয় পুরাণে এই স্থানটির উল্লেখ আছে:
তত: স্বপুরমায়াতো নিজেদেশাধিপোহভবৎ।
আক্রান্ত: স মহাভাগস্তৈস্তদা প্রবলারিভি:॥৭
অমাতৈ:বলিভি:দুষ্টে:দুর্বলস্য দুরাত্মভি:।
কোষ বলঞ্চাপহৃতং তাত্রাপি স্বপুরে তত:॥৮
প্রথম দুর্গাপূজার ইতিহাস
[সম্পাদনা]রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্তবংশী রাজা (চিত্রগুপ্তের বংশধর) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দূর্গা সপ্তশতী দেবী মাহাত্ম্য এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে। তিনি তার রাজ্য এবং তার সমস্ত সম্পত্তি হারান। সবকিছু হারিয়ে তিনি তার ভাগ্য ফেরাতে তার রাজধানী বলিপুর (বর্তমানে বোলপুর) ত্যাগ করেন। পরে সমাধি বৈশ্যের সাথে তার দেখা হয়। যিনি একজন বণিক ছিলেন। কাকতালীয়ভাবে তিনিও দেউলিয়া ছিলেন। কারণ তার পরিবার তার সাথে প্রতারণা করেছিল। তারপর সৌভাগ্যক্রমে তাদের সাথে মেধস মুনির সাথে দেখা হয়। তিনি তাদের ভাগ্য ফিরে পাওয়ার জন্য তাদের অবশ্যই দেবী দূর্গার পূজা করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
রাজা সুরথ এবং সমাধি বৈশ্য পশ্চিমবঙ্গের গড় জঙ্গলে মেধস মুনির আশ্রমে দেবী দূর্গাকর দূর্গা পূজা বা দুর্গোৎসব করেছিলেন।[৫] এটি ছিল পৃথিবীর প্রথম দূর্গাপূজা। বর্তমান দিনে গড় জঙ্গল পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরে । বোলপুরে তার প্রতিষ্ঠিত সুরথেশ্বর শিব মন্দির ও রয়েছে।[৬][৭][৮] তারা বসন্তকালে দেবী দূর্গার পূজা করেছিলেন। সুতরাং এই উৎসবকে বলা হয় বাসন্তী পূজা বা "বসন্তকালীন দুর্গোৎসব"। শ্রী শ্রী চণ্ডীর মতে, তারা এই দূর্গা প্রতিমা গড় জঙ্গলে মাটি দিয়ে তৈরি করেছিলেন । পুজোর পর সুরথ তার সমস্ত হারানো সম্পত্তি ফেরত পান এবং তিনি তার রাজধানী বলিপুরে (বর্তমানে বোলপুর) ফিরে আসেন। সুরথ বসন্তে তার রাজধানী বোলপুরে দূর্গাপুজো করেছিলেন। এই পুজোর সময় তিনি বলি দেন লক্ষ লক্ষ পশু। এই বাংলা শব্দ "বলি" (পশু বলি) থেকে, এই স্থানকে "বলিপুর" (বর্তমানে বোলপুর) বলা হয়।[৯][১০]
জনপ্রিয় গণমাধ্যমে সুরথ
[সম্পাদনা]মহালয়ার দিনে ডিডি বাংলায় একটি সাংস্কৃতিক নাটক পরিবেশিত হয় (ভারত সরকার প্রযোজিত একটি বাংলা বিনোদন টেলিভিশন চ্যানেল) যেখানে রাজা সুরথকে দেবী দূর্গা বা মহিষাসুরমর্দিনীর প্রথম উপাসক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[১১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Garh Jungle, Durgapur Garh Jungle Photos and Timings"। www.holidify.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৬।
- ↑ "Medhashmunir Ashram – A Sacred Haven"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-১০-২৩। ২০১৭-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৭।
- ↑ শ্রীশ্রীচণ্ডী, অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ স্বামী জগদীশ্বরানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬২ সংস্করণ
- ↑ "সুপুরের ইতিকথা"। Birbhum Lal Matir Desh (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১২-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৬।
- ↑ "পৌরাণিক মতে বাংলায় প্রথম দুর্গাপুজো করেছিলেন সুরথ রাজা, কিন্তু জানেনা অধিকাংশ বাঙালী- Bangla News"। Bangla Hunt (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৯-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৯।
- ↑ "সুরথেশ্বর শিব মন্দিরে ভক্তদের সমাবেশ"। www.amritobazar.com। ২০২২-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৫।
- ↑ janadarpan (২০১৯-১১-২৪)। "ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন সুরথেশ্বর"। Janadarpan.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Bartaman Patrika"। bartamanpatrika.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৬।
- ↑ "Garh Jungle, Durgapur Garh Jungle Photos and Timings"। www.holidify.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৬।
- ↑ "Medhashmunir Ashram – A Sacred Haven"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-১০-২৩। ২০১৭-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৭।
- ↑ Sanskritam (২০১৬-০৮-১১), Mahalaya Video (মহালয়া ভিডিও) – Mahisasuramardini, সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-২০