শাহ ইসমাইল গাজী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শাহ ইসমাইল গাজী বাংলার একজন ইসলাম প্রচারক, যোদ্ধা ও সেনাপতি।[১] বারবক শাহের আমলে (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি) তিনি বাংলার উত্তরাঞ্চলে মুসলিম রাজ্যের বিস্তারে ও ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন।[২] একটি ফারসি পান্ডুলিপি ও বাংলার বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত লোককাহিনীগুলির মাধ্যমে শাহ ইসমাইল গাজীর আধ্যাত্মিক গৌরবময় কীর্তি জানা যায়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ইসমাইল গাজীর সমাধি, মান্দারণ

শাহ ইসমাইল গাজী মক্কায় কুরাইশ গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তিনি হযরত মুহাম্মাদের বংশধর ছিলেন। সেখানেই তিনি বড় হন এবং শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারক হন। এ উদ্দেশ্যে কয়েকজন শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রাচ্যের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং শেষ পর্যন্ত লখনৌতে পৌঁছান। তখন প্রতিবছর বাংলার রাজধানী বন্যায় প্লাবিত হতো। সুলতান রুকনুদ্দীন বারবক শাহ বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করার জন্য তার সব প্রকৌশলী ও কারিগরকে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শাহ ইসমাইল গাজী সুলতানকে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী চুটিয়া-পুটিয়া বিলের উপর একটি সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেন এবং শহরটিকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করেন। এভাবে তিনি সুলতানের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং সুলতান তাকে বিভিন্ন সীমান্তে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োগ করেন।

শাহ ইসমাইল গাজীকে প্রথমে বাংলার দক্ষিণ সীমান্তে উড়িষ্যার রাজা গজপতির আগ্রাসী পরিকল্পনার মোকাবিলা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়। তিনি গজপতিকে পরাজিত করে তার কাছ থেকে সীমান্ত-ফাঁড়ি মান্দারণ দখল করে নেন। সফল এই সেনানায়ককে এরপর কামরূপের রাজা কামেশ্বরের বিরুদ্ধে পাঠানো হয়। কামেশ্বর পরাজিত হয়ে সুলতানকে করদানে বাধ্য হন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই ঘোড়াঘাট সীমান্ত-ফাঁড়ির সেনাপতি ভান্দসী রায় ইসমাইলের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে, ইসমাইল গাজী কামরূপের রাজার সহযোগিতায় নিজের জন্য একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা করছেন এই মর্মে সুলতানের কাছে মিথ্যা অভিযোগ প্রেরণ করেন। রাগান্বিত হয়ে সুলতান দরবেশের শিরশ্ছেদের আদেশ দান করেন।[৪]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

৮৭৮ হিজরি/১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে শাহ ইসমাইল গাজীকে হত্যা করা হয়। লোক কাহিনী মতে, তার খন্ডিত মস্তক রংপুরের পীরগঞ্জ থানার কাঁটাদুয়ার নামক স্থানে কবর দেয়া হয় এবং দেহ হুগলি জেলার মান্দারণে সমাধিস্থ করা হয়।[৫] তবে শাহ ইসমাইল গাজীর স্মৃতি বিজড়িত ছয়টি দরগাহ রয়েছে। এগুলির একটি মান্দারণে, একটি ঘোড়াঘাটে এবং চারটি রংপুর জেলার পীরগঞ্জে,পীরগাছা এর বড়দরগাহাট এ তাহার একটি অলৌকিক দরগা অবস্থিত, যার মধ্যে কাটাদুয়ার দরগাহ-টিই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।[৬][৭]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ikram, S. M. (১৯৬৪)। Muslim civilization in India। New York: Columbia University Press। পৃষ্ঠা ৭৬। আইএসবিএন 0-231-02580-7ওসিএলসি 409401 
  2. Banu, U. A. B. Razia Akter (১৯৯২)। Islam in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা ১৪। আইএসবিএন 978-90-04-09497-0 
  3. Singh, Surinder; Gaur, I. D. (২০০৮)। Popular Literature and Pre-modern Societies in South Asia (ইংরেজি ভাষায়)। Pearson Education India। পৃষ্ঠা ২৮৬। আইএসবিএন 978-81-317-1358-7 
  4. মুখোপাধ্যায়, সুখময় (১৯৬৬)। বাংলার ইতিহাসের দুশো বছর: স্বাধীন সুলতানদের আমল (১৩৩৮-১৫৩৮)। ভারতীয় বুক স্টল। 
  5. "ইতিহাস আজও কথা বলে হুগলীর গড় মান্দারনে – KHONJKHOBOR" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৩ 
  6. যাকারিয়া, আবুল কালাম মোহাম্মদ (১৯৮৪)। বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ। ঢাকা: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। 
  7. "শাহ ইসমাইল গাজী (রঃ)"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৪ 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

আবদুল করিম (২০১২)। "শাহ ইসমাইল গাজী (রঃ)"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 

  • Shamsud-din Ahmed, সম্পাদক (১৯১২)। Inscriptions of Bengal: Being a corpus of inscriptions of the Muslim rulers of Bengal from 1233 to 1855 A.C. (ইংরেজি ভাষায়)। Varendra Research Society। 
  • Haq, Muhammad Enamul (১৯৭৫)। A History of Sufi-ism in Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। Asiatic Society of Bangladesh।