বিষয়বস্তুতে চলুন

মহালয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মহালয়া দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা করে

মহালয়া হলো পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ।[] এর মাধ্যমে দুর্গাপূজা উৎসবের সূচনা হয়। দেবী দুর্গা এই দিন পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। বাঙালিরা ঐতিহ্যগতভাবে দেবীমাহাত্ম্যম্ শাস্ত্র থেকে স্তোত্র পাঠ করতে মহালয়ার দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে। মহিষাসুরমর্দিনী নামে পরিচিত গান এবং মন্ত্রগুলির শোনার জন্য প্রত্যেক বাঙালি পরিবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে। এটি দেবী দুর্গার জন্ম এবং অসুর রাজা মহিষাসুরের উপর তাঁর চূড়ান্ত বিজয়ের বর্ণনা দেয় । পিতৃপক্ষে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে 'জলদান' বা তর্পণ করা হয় এবং পরলোকগত পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।

কিংবদন্তি

[সম্পাদনা]

প্রলয়কালে পৃথিবী এক বিরাট কারণ-সমুদ্রে পরিণত হলে শ্রীবিষ্ণু সেই সমুদ্রের উপর অনন্তনাগকে শয্যা করে যোগনিদ্রায় মগ্ন হন।[][] এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমূল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই দৈত্য নির্গত হয়ে বিষ্ণুর নাভিপদ্মে স্থিত ব্রহ্মাকে বধ করতে উদ্যত হল। ভিত হয়ে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্য তাঁর নয়নাশ্রিতা যোগনিদ্রাকে স্তব করতে লাগলেন। সৃষ্টি হয়ে দেবী শ্রীবিষ্ণুকে জাগরিত করলে তিনি পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সাথে মহাযুদ্ধে রত হলেন। পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ হচ্ছে মহালয়া[]

ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ শুরু হয়ে পরবর্তী অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কে পিতৃপক্ষ বলে। পুরাণ মতে ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসনে। তাই এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাদের কাছে পৌছায়[]। তাই গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদেব স্মরণ ও মননের মাধ্যমে তর্পণ করা হয়। যার চূড়ান্ত প্রকাশ বা মহালগ্ন হল মহালয়া, পিতৃপক্ষের শেষ দিন। পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। সেই দিন থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিনই হল দেবীপক্ষ।

দেবীপক্ষের সূচনা

[সম্পাদনা]

যা চন্ডি মধুকৈটভারী, দৈত্য দলনী, যা মহিষমর্দিনী, যা দূর্গে চন্ড মুন্ডোমালিনী,যা রক্ত বিজশ্বরী,শক্তি সুন্দরী সুন্দর দৈত দলনী—যা—। আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেঁজে উঠেছে আলোক মঞ্জিল, ধরনীর বর্হিআকাশে-অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তর আকাশে জাগরিত জোর্তিময়ী জগত্‍মাতার আগমন বার্তা, আনন্দময়ী মহামায়ার পদ্ধধ্বনি অসিম ছন্দে বেজে ঊঠে রুপলোক ও রশলোকে আনে নবভাব মাধুরীর সঞ্জিবন, ত্রাহি আনান নন্দিতা শামলী মাতৃকার চিন্ময়ীকে-মৃন্ময়ীকে আবাহন। আজ শক্তিরুপীনি বিশ্বজননীর শারদও শ্রীমন্ডিত প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানগ্রহিতা। মহামায়া-সনাতনী শক্তিরুপা গুনাময়ী-হে ভগবতী মহামায়া তুমিই ত্রিগুনাতিকা, তুমিই রজগুনে ব্রহ্মার গৃহিনী বাগদেবী,শপ্তগুনে বিহ্মœুর পতিœ লহ্মি, তমগুনে শিবের বনিতা পাবর্তী,আবার ত্রিগুনাতিত তুমিই অর্নিবচ্চনিয়া, আবার দেব ঋষি কণ্যা কাত্যায়নের কণ্যা কাত্যায়নী, তিনিই কণ্যাকুমারী আখ্যাতা দূর্গে, তিনিই দাক্ষ্যয়নি সতি, তিনিই আদিশক্তি, দেবী দূর্গা নিজদেহ সম্ভুত তেজপ্রবাহে শত্রুদহনকালে অগ্নিবর্ণা, অগ্নি লোচনা, এই উষা লগ্নে—হে মহাদেবী তোমার উদ্বোধনে প্রানের ভক্তিরশে আলোকিত হোক দিকে দিকে, হে অমিতজ্যোতি, হে মা দুর্গা, তোমার আবির্ভাবে ধরনী হোক প্রাণময়ী, জাগো জাগো মা।

জাগো দশপ্রহরণ ধারিণী

[সম্পাদনা]

জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণ ধারিণী, অভয়াশক্তি বল প্রদায়নী তুমি জাগো-দেবী প্রসীদ পরিপালয়ে নো হরি ভীতে: নিত্যং যথাসুরবধদিধনৈব সদ্য: পাপানি সর্বজগতাঞ্চ শমং নয়াশু উত্‍পাতপাকজনিতাংশ্চ মহোপসর্গানা। পূত পবিত্র এই আহবানের মধ্যে দিয়ে আজ দিবাগত রাতের শেষে ভোরে (১৪ অক্টোবর শনিবার)সারাবিশ্বে পালিত হবে পূণ্য তিথি মহালয়া। আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত হবে মহিষাসুরমর্দ্দিনী। বাণী কুমারের রচনা ও প্রবর্তনায় মাতৃসাধক বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের অমর কন্ঠের গ্রন্থনা ও শ্লোক পাঠে আবাহন হবে জগত্‍ জননী দেবী দূর্গার। দূর্গায়ে দূর্গপারায়ৈ সারায়ৈ সর্ব্বকারিণ্যৈ, খ্যাত্যৈ তথৈব্য কৃষ্ণায়ৈ ধুম্রায়ৈ সতত: নম:- মাতৃবন্ধনার এ আহবানে পবিত্র পূণ্যতিথি মহালয়া। শারদীয় দূর্গাপুজার সপ্তাহকাল পূর্বে মায়ের আরাধনা বন্ধনায় মহালয়া পালিত হবে।

চন্ডী পাঠ

[সম্পাদনা]

শাস্ত্রমতে মহালয়া হচ্ছে একটি অমাবস্যা তিথি,এ তিথিতে সাধারনত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ তর্পণ করা হয়। এ দিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষরা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আমাদের আর্শিবাদ প্রদান করেন। এছাড়া মহালয়ার দিনে দেবী দূর্গার বোধন করা হয়,বোধন অর্থ জাগরণ। তাই মহালয়ার পর দেবীপক্ষের/শুক্লপক্ষের প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার সুচনা করা হয়। শ্রাবন থেকে পৌষ ছয় মাস দক্ষিনায়ণ,দক্ষিণায়ণ দেবতাদের ঘুমের কাল। তাই বোধন করে দেবতাদের জাগ্রত করা হয়। মহালয়ার পর প্রতিপদে যে বোধন হয় সে সময় সংকল্প করে দুর্গাপূজার আয়োজন চলে। একে বলে কল্পরম্ভা, যদিও ষষ্ঠি থেকে পূজার প্রধান কার্যক্রম শুরু হয় তাই বলা হয় ষষ্ঠাদিকল্পরম্ভা। এবং সপ্তমী থেকে বিগ্রহতে। প্রতিপদ থেকে শুধু ঘটে পূজো ও চন্ডী পাঠ চলে।

আরো দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Durga Puja 2021: আত্মাদের মহাসমাবেশেই 'মহালয়া'! কেন এই তিথি শাস্ত্রমতে গুরুত্বপূর্ণ?"Zee24Ghanta.com। ২০২১-০৯-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৫ 
  2. "মহালয়া শুভ না অশুভ? বাঙালির কাছে মহালয়ার তাৎপর্য কী?"sangbadpratidin (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৫ 
  3. সংবাদদাতা, নিজস্ব। "Durga Puja 2021: বুধবার মহালয়া, জেনে নিন নির্ঘণ্ট"anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "Mahalaya 2021: পুরাণ থেকে রামায়ণ! মহালয়া ঘিরে রয়েছে নানা প্রচলিত কাহিনি"Aaj Tak বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৫