আলোক চিত্রানুলিপিকারক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
কর্মপদ্ধতি যোগ
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''আলোক চিত্রানুলিপিকারক''' একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যার সাহায্যে কাগজ কিংবা পাতলা প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে তৈরী পৃষ্ঠাতে দ্রুত ও কম খরচে নথিপত্র (ফাইল) এবং অন্যান্য চিত্রসমূহের বহুসংখ্যক অনুলিপি (নকল বা কপি) তৈরি করা যায়। ইংরেজি পরিভাষাতে একে '''"ফটোকপিয়ার"''' বা '''"ফটোকপি মেশিন"''' বলা হয়।
'''আলোক চিত্রানুলিপিকারক''' একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যার সাহায্যে কাগজ কিংবা পাতলা প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে তৈরী পৃষ্ঠাতে দ্রুত ও কম খরচে নথিপত্র (ফাইল) এবং অন্যান্য চিত্রসমূহের বহুসংখ্যক অনুলিপি (নকল বা কপি) তৈরি করা যায়। ইংরেজি পরিভাষাতে একে '''"ফটোকপিয়ার"''' বা '''"ফটোকপি মেশিন"''' বলা হয়।


বেশিরভাগ আধুনিক আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্রে জিরোগ্রাফি বা জিরোলিখন (Xerography) নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এটিকে স্থিরবৈদ্যুতিক মুদ্রণ (Electrostatic printing)-ও বলা হয়। এই প্রযুক্তিতে "টোনার" নামের শুষ্ক কালির গুঁড়াকে স্থিরবিদ্যুতের মাধ্যমে আকৃষ্ট করা হয় এবং এগুলিকে পরে তাপ, চাপ বা উভয়ের সমন্বয়ে কাগজে ছাপানো হয়। মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি জিরক্স (Xerox) ১৯৫৬ সালে উপরোক্ত জিরোলিখনভিত্তিক বাণিজ্যিক আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্র বাজারে নিয়ে আসে। এগুলি দিয়ে খুবই সস্তায় এক পৃষ্ঠা অনুলিপি বা নকল (কপি) করা যেত; আগের তুলনায় অনুলিপির খরচ অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে (প্রতি পাতায় খরচ ২৫ সেন্ট থেকে ১০ সেন্টে নেমে আসে)। বর্তমানে বাজারের সিংহভাগ আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্রই জিরক্স কোম্পানির যন্ত্রের সদৃশ।
বেশিরভাগ আধুনিক আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্রে জিরোগ্রাফি বা জিরো-চিত্রলিখন (Xerography) নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এটিকে স্থিরবৈদ্যুতিক মুদ্রণ (Electrostatic printing)-ও বলা হয়। এই প্রযুক্তিতে "টোনার" নামের শুষ্ক কালির গুঁড়াকে স্থিরবিদ্যুতের মাধ্যমে আকৃষ্ট করা হয় এবং এগুলিকে পরে তাপ, চাপ বা উভয়ের সমন্বয়ে কাগজে ছাপানো হয়। মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি জিরক্স (Xerox) ১৯৫৬ সালে উপরোক্ত জিরো-চিত্রলিখনভিত্তিক আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্র বাজারে নিয়ে আসে। এগুলি দিয়ে খুবই সস্তায় এক পৃষ্ঠা অনুলিপি বা নকল (কপি) করা যেত; আগের তুলনায় অনুলিপির খরচ অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে (প্রতি পাতায় খরচ ২৫ সেন্ট থেকে ১০ সেন্টে নেমে আসে)। বর্তমানে বাজারের সিংহভাগ আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্রই জিরক্স কোম্পানির যন্ত্রের সদৃশ। আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্র ২০শ শতকের শেষে এসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য একটি সরঞ্জামে পরিণত হয়। কার্যালয়ের বাইরেও আলোক চিত্রানুলিপি সেবা প্রদানকারী অনেক দোকান গড়ে ওঠে যেখানে সাধারণ ব্যক্তি এমনকি কার্যালয়ের কর্মচারীরা চাহিদা অনুযায়ী অনুলিপি করাতে পারে।


ইদানিং ২১শ শতকে এসে [[চিত্রগ্রহণযন্ত্র]] বা স্ক্যানার, [[মুদ্রণযন্ত্র]] বা প্রিন্টার ও আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্র বা ফটোকপিয়ার - তিন ধরনের যন্ত্র একত্র করে একটি যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে এবং এ ধরনের সমন্বিত যন্ত্র ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইদানিং ২১শ শতকে এসে [[চিত্রগ্রহণযন্ত্র]] বা স্ক্যানার, [[মুদ্রণযন্ত্র]] বা প্রিন্টার ও আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্র বা ফটোকপিয়ার - তিন ধরনের যন্ত্র একত্র করে একটি যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে এবং এ ধরনের সমন্বিত যন্ত্র ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সমন্বিত যন্ত্রের আবির্ভাবের ফলে পুরাতন এক-উদ্দেশ্যের যন্ত্রগুলির দাম অনেক কমে যাওয়ায় এগুলি এখনও অনেক জনপ্রিয়। কারও কারও মতে ভবিষ্যতে মানুষ ফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটের পর্দাতেই সবসময় পড়বে এবং আলোক চিত্রানুলিপির প্রয়োজন ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকবে।


==আলোক চিত্রানুলিপিকারকের কাজের পদ্ধতি==
==আলোক চিত্রানুলিপিকারকের কাজের পদ্ধতি==

১২:২০, ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

২০১০ সালের একটি আলোক চিত্রানুলিপিকারক (জিরক্স প্রযুক্তির)

আলোক চিত্রানুলিপিকারক একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যার সাহায্যে কাগজ কিংবা পাতলা প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে তৈরী পৃষ্ঠাতে দ্রুত ও কম খরচে নথিপত্র (ফাইল) এবং অন্যান্য চিত্রসমূহের বহুসংখ্যক অনুলিপি (নকল বা কপি) তৈরি করা যায়। ইংরেজি পরিভাষাতে একে "ফটোকপিয়ার" বা "ফটোকপি মেশিন" বলা হয়।

বেশিরভাগ আধুনিক আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্রে জিরোগ্রাফি বা জিরো-চিত্রলিখন (Xerography) নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এটিকে স্থিরবৈদ্যুতিক মুদ্রণ (Electrostatic printing)-ও বলা হয়। এই প্রযুক্তিতে "টোনার" নামের শুষ্ক কালির গুঁড়াকে স্থিরবিদ্যুতের মাধ্যমে আকৃষ্ট করা হয় এবং এগুলিকে পরে তাপ, চাপ বা উভয়ের সমন্বয়ে কাগজে ছাপানো হয়। মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি জিরক্স (Xerox) ১৯৫৬ সালে উপরোক্ত জিরো-চিত্রলিখনভিত্তিক আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্র বাজারে নিয়ে আসে। এগুলি দিয়ে খুবই সস্তায় এক পৃষ্ঠা অনুলিপি বা নকল (কপি) করা যেত; আগের তুলনায় অনুলিপির খরচ অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে (প্রতি পাতায় খরচ ২৫ সেন্ট থেকে ১০ সেন্টে নেমে আসে)। বর্তমানে বাজারের সিংহভাগ আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্রই জিরক্স কোম্পানির যন্ত্রের সদৃশ। আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্র ২০শ শতকের শেষে এসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য একটি সরঞ্জামে পরিণত হয়। কার্যালয়ের বাইরেও আলোক চিত্রানুলিপি সেবা প্রদানকারী অনেক দোকান গড়ে ওঠে যেখানে সাধারণ ব্যক্তি এমনকি কার্যালয়ের কর্মচারীরা চাহিদা অনুযায়ী অনুলিপি করাতে পারে।

ইদানিং ২১শ শতকে এসে চিত্রগ্রহণযন্ত্র বা স্ক্যানার, মুদ্রণযন্ত্র বা প্রিন্টার ও আলোক চিত্রানুলিপিকারক যন্ত্র বা ফটোকপিয়ার - তিন ধরনের যন্ত্র একত্র করে একটি যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে এবং এ ধরনের সমন্বিত যন্ত্র ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সমন্বিত যন্ত্রের আবির্ভাবের ফলে পুরাতন এক-উদ্দেশ্যের যন্ত্রগুলির দাম অনেক কমে যাওয়ায় এগুলি এখনও অনেক জনপ্রিয়। কারও কারও মতে ভবিষ্যতে মানুষ ফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটের পর্দাতেই সবসময় পড়বে এবং আলোক চিত্রানুলিপির প্রয়োজন ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকবে।

আলোক চিত্রানুলিপিকারকের কাজের পদ্ধতি

আলোক চিত্রানুলিপিকরণ প্রক্রিয়ার নকশা

প্রথমে ব্যবহারকারী বৈদ্যুতিক সুইচ টিপে যন্ত্রটি চালু করেন। যন্ত্রের উপরের অংশটি হল চিত্রগ্রাহক বা স্ক্যানার। এটির উপরে একটি কব্জালাগানো ঢাকনা থাকে। ঢাকনাটি খুললে নিচে একটি অনুভূমিক কাচের জানালা দেখতে পাওয়া যায়। এরপর যে পৃষ্ঠাটির অনুলিপি বা নকল করতে হবে, সেটিকে উপুড় করে কাচের জানালার উপর স্থাপন করতে হয়। এরপর ঢাকনা বন্ধ করে দিয়ে যন্ত্রের সম্মুখভাগে অবস্থিত নিয়ন্ত্রক অংশে (কন্ট্রোল প্যানেল) চাবি টিপে বা স্পর্শকাতর পর্দায় টিপে নির্দেশ দিলে কাচের জানালার নিচ থেকে উজ্জ্বল আলো পৃষ্ঠাটির উপর এসে পড়ে সেটিকে আলোকিত করে। এর ফলে পৃষ্ঠাটির যে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়, সেটি একটি পরকলা বা লেন্সের ভেতর দিয়ে অভিক্ষিপ্ত হয়ে সেলিনিয়াম ধাতুর প্রলেপ লাগানো একটি পিপা বা ড্রামের উপর গিয়ে পড়ে। পিপাটির সেলিনিয়াম পৃষ্ঠ স্থিরবিদ্যুৎ দ্বারা ঋণাত্মক আধানে আহিত থাকে। সেলিনিয়ামের একটি বিশেষ ধর্ম হল এই যে এর উপর আলো পড়লে এর বৈদ্যুতিক রোধ হঠাৎ করে কমে যায়। পৃষ্ঠার সাদা অংশ থেকে প্রতিফলিত ও আগত আলো পিপার পৃষ্ঠের যে অংশে পড়ে, সে অংশের রোধ কমে যায় এবং ঋণাত্মক আধান ভূমিতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে পৃষ্ঠার কালো অংশ থেকে কোন আলো পিপার পৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় না বলে ঐ অংশের রোধের কোনও পরিবর্তন হয় না, ফলে সেটি তখনও ঋণাত্মক আধানে আহিত থাকে। অন্যদিকে টোনার তথা বিশেষ কালির গুঁড়াগুলি ধনাত্মক আধানে আহিত থাকে। এগুলি সেলিনিয়াম ড্রামের ঋণাত্মক আধানগুলির দ্বারা আকৃষ্ট হয়, এবং ঠিক সেইসব জায়গায় ড্রামের গায়ে লেগে যায়। ড্রামের পৃষ্ঠে এভাবে মূল পৃষ্ঠার একটি বিপরীতমুখী নকল বা অনুলিপি তৈরি হয়। এখন সাদা কাগজের পৃষ্ঠাকে পিপার কাছে এনে পিপা ঘেঁষে গড়িয়ে দিলে সাদা কাগজে কালিগুলি স্থানান্তরিত হয়ে যায়, কেননা কাগজ পিপার চেয়েও বেশি ঋণাত্মক থাকে। এরপর কালির ছাপ পড়া কাগজের পৃষ্ঠাকে উত্তপ্তকারী বেলন (হিটার বা ফিউজার রোলার) এবং চাপপ্রদানকারী বেলন (প্রেসার রোলারের) মধ্য দিয়ে চালনা করলে পৃষ্ঠার সামনের দিকে অত্যধিক উত্তাপ ও পেছনের দিক থেকে চাপের কারণে কালির গুঁড়া গলে কাগজের গায়ে সামনের দিকে স্থায়ীভাবে আটকে যায়। সবশেষে মুদ্রিত কাগজটি যন্ত্রের বাইরে নির্দিষ্ট একটি ধারণপাত্রে বেরিয়ে এসে জমা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। মূল প্রমাণপত্র (Master document) একবার চিত্রগ্রহণ হয়ে যাবার পর একাধিক অনুলিপি মুদ্রণ করা যায় এবং একেকটি অনুলিপি মুদ্রণ করতে এক সেকেন্ড বা তারও কম সময়ের দরকার হয়।