কুয়েতে নারীদের ভোটাধিকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কুয়েতে নারীদের ভোটাধিকার দেওয়ার প্রথম বিলটি ১৯৬৩ সালে সংসদে উত্থাপিত হয়।[১] রক্ষণশীলদের চাপের কারণে এটি শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়। ১৯৮৫-১৯৮৬ সালে বিলগুলি অস্বীকার করা অব্যাহত থাকে। ইরাক-ইরান যুদ্ধে কুয়েত ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে। নারীরা তাদের পরিবার ও সমাজকে কার্যকরী রাখার জন্য স্বীকৃতি দাবি করতে শুরু করে। ফলে পার্লামেন্ট সম্মত হয়ে ১৯৯৩ সালে পারস্য উপসাগরের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিযুক্ত দেয়। ১৯৯৬ সালে ভোটাধিকারের জন্য ৫০০ নারী এক ঘন্টার জন্য কাজ বন্ধ করে দেয় এবং পরবর্তী ৬ বছর ধরে বিক্ষোভ চলতে থাকে। ১৯৯৯ সালের মে মাসে আমির একটি ডিক্রি জারি করে, যা নারীদের ভোটাধিকার ও নির্বচনী পদে নির্বাচন করার অধিকার প্রদান করে। তবে ৬ মাস পরে সংসদ এটিকে আবার বাতিল করে দেয়।

২০০৩ সালের নির্বাচনে নারীরা নকল ব্যালট তৈরি করে "শত শত নারীকে প্রকৃত প্রার্থীদের প্রতীকী ভোট দেওয়ার অনুমতি দেয়।"[২] ২০০৫ সালের মার্চ মাসে কুয়েতের পার্লামেন্টকে এক হাজার মানুষ ঘিরে ফেলে এবং ১৭ মে কুয়েতি নারীদের ভোটাধিকার ও নির্বাচনে দৌড়ানোর অধিকার প্রদান করে একটি বিল পাস করে। বিলটির পক্ষে পড়ে ৩৭টি ভোট এবং বিপক্ষে পড়ে ২১ টি ভোটে ।[৩] চার বছর পর, ২০০৯ সালের মে মাসে সাধারণ নির্বাচনে পঞ্চাশটি আসনের মধ্যে চারজন নারী সংসদীয় আসনে জয়লাভ করে।[৪] [৫] যদিও এটি ২০১৩ সালের নির্বাচনের মধ্যে পার্লামেন্টের ৮% ছিল। বর্তমান সংসদে কোন নারী নির্বাচিত হয়নি এবং সর্বশেষ নির্বাচিত মহিলা ২০১৪ সালের মে মাসে পদত্যাগ করেন। [৬] সাফা আল হাশেম ২০১২ ও ২০১৬ সালে কুয়েতের পার্লামেন্টে পরপর দুইবার নির্বাচিত প্রথম এবং একমাত্র নারী সাংসদ ছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি আসন হারান।[৭] [৮]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯১৬ সালে কুয়েত স্বাধীনতা লাভের পর কুয়েত পার্লামেন্ট নতুন আইন পাস করে। এ আইনে ১৯২০ সালের আগে ২১ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ যাদের পরিবার কুয়েতে বসবাস করত তাদের ভোট সীমিত করে। কুয়েতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্নাতক শ্রেণীর নারীরা ১৯৬৩ সালে মহিলা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সমাজ গঠনের জন্য একত্রিত হন। ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে তাদের লক্ষ্য ছিল নারীদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ ছিল কুয়েতি নারীদের উৎসাহিত করা এবং তাদের সফল হওয়ার সুযোগ দেওয়া। কুয়েতি নারীরা তাদের নিকটবর্তী প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেক বেশি স্বাধীনতা পায়, যেমন উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকার।

১৯৮৫ এবং ২০০৫ সালে নারীদের ভোটাধিকার[সম্পাদনা]

২০০৫ সালে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্প্রসারিত করা হয। ১৯৮৫ সালে কুয়েতে প্রথম ভোটের প্রচলন হয়।[৯] এই অধিকার পরে অপসারণ করা হয়। ২০০৫ সালে কুয়েতি নারীদের পুনরায় ভোটাধিকার প্রদান করা হয়।[১০]

নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলন[সম্পাদনা]

১৯৭৩ সালে পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপিত হয়। এতে নারীদের ভোটাধিকার এবং নির্বাচিত পদে দৌড়ানোর অধিকার দেয়। শেষ পর্যন্ত রক্ষণশীলদের চাপের কারণে বিলটি বাতিল হয়ে যায়। ১০ বছরেরও বেশি সময় পরে ১৯৮৪ সালে, বর্তমান আমির (জাবের সাবাহ) এবং প্রধানমন্ত্রী (ক্রাউন প্রিন্স সাদ সাবাহ) ঘোষণা করেন যে তারা নারীদের ভোটাধিকার বিলের পক্ষে। তবে এটা মিথ্যা কথা ছিল। কেননা ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ এর মধ্যে তারা বিভিন্ন বিল অস্বীকার করা অব্যাহত রাখে। এটি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের সর্বোচ্চ পদে একজন কুয়েতী মহিলা সহকারী সচিবের পদে থাকতে পারতেন। ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে, কুয়েত তখন ইরাক-ইরান যুদ্ধে ব্যাপকভাবে জড়িত হয়ে পড়ে। যুদ্ধে জড়িত হওয়ার সাথে সাথে নারীদের জন্য হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক হওয়া এবং তাদের পরিবারের জন্য খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এ সময় নারীরা তাদের প্রচেষ্টার জন্য স্বীকৃতি দাবি করে। পার্লামেন্ট সম্মত হয়ে ১৯৯৩ সালে প্রথম একজন নারীকে পারস্য উপসাগরে রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিযুক্ত দেয়। ১৯৯৯ সালের মে মাসে, বর্তমান আমীর একটি ডিক্রি জারি করেন যা নারীদের ভোট দেওয়ার এবং নির্বাচন পদে দৌড়ানোর অধিকার দেয়, তবে কুয়েতি সংবিধানের অধীনে পার্লামেন্ট আমিরকে প্রত্যাখ্যান ও ক্ষমতাচ্যুত করার অনুমতি দেয় এবং তা তারা করে। ৬ মাসের জন্য নারীদের ভোটাধিকার ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার আগে এই সময়ের মধ্যে কোনও নির্বাচন শোনা যায়নি।[১১] এরপর আন্দোলন গতি পেতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালে প্রথম অহিংস বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ৫০০ নারী তাদের ভোটাধিকার অধিকারে সংহতি দেখানোর জন্য এক ঘন্টা কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী ৬ বছর ধরে ছোট বিক্ষোভ চলতে থাকে। ২০০২ সালে কয়েকজন কুয়েতী নারী ভোটার নিবন্ধন কেন্দ্রের বাইরে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিস্থিতি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০০৩ সালের নির্বাচনে নারীরা নকল ব্যালট তৈরি করেন যা "শত শত নারীকে প্রকৃত প্রার্থীদের প্রতীকী ভোট দেওয়ার অনুমতি দেয়।" [১২] ২০০৫ সালের মার্চ মাসে, ভোটাধিকার প্রয়োজনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কুয়েতের পার্লামেন্টকে এক হাজার মানুষ ঘিরে ফেলে। ২০০৫ সালের ১৭ মে কুয়েতের নারীদের ভোটাধিকার এবং নির্বাচিত অফিসে দৌড়ানোর অধিকার প্রদান করে একটি বিল পাস হয়, পক্ষে পড়ে ৩৭ ভোট এবং বিপক্ষে পড়ে ২১ ভোট। চার বছর পর, ২০০৯ সালের মে মাসে, সাধারণ নির্বাচনে পঞ্চাশটি আসনের মধ্যে চারজন মহিলা সংসদীয় আসনে জয়লাভ করে।[১৩] [১৪] যদিও এটি ২০১৩ সালের নির্বাচনের মধ্যে পার্লামেন্টের ৮% ছিল । বর্তমান সংসদে কোন নির্বাচিত নারী নাই এবং ২০১৪ সালে সর্বশেষ নির্বাচিত মহিলা মে মাসে পদত্যাগ করেন। [১৫]

নারী আন্দোলনের কর্মী[সম্পাদনা]

নুরেয়া আল-সাদ্দানি : একজন লেখক, সম্প্রচারকারী, পরিচালক। তিনি কুয়েতে প্রথম নারী সংগঠন শুরু করেন। তিনি ১৯৭১ সালে নারীদের রাজনৈতিক অধিকার প্রদানের জন্য জাতীয় পরিষদে প্রস্তাব করেন।[১৬] লুলওয়া আলমুল্লা : গত ২৬ বছর ধরে সারা বিশ্বে ও নিজ দেশ কুয়েতে নারীদের ভোটাধিকার লাভের চেষ্টা করেন। সে পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি তার আসল আবেগ ছিল স্বেচ্ছাসেবী হওয়া। তিনি দাবি করেন, নারীদের ভোটাধিকার শেষ হয় নাই। এখন নারীদের পার্লামেন্টে স্থান অধিকার করতে হবে।[১৭] "ফৌজদারি আদালত আজ রানা আল-সাদউনকে মুসাল্লাম আল-বারাকের বক্তৃতা পুনরাবৃত্তির ঘটনায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে।" [১৮]

কুয়েত এবং আইসিসিপিআর[সম্পাদনা]

কুয়েত প্রথম ১৯৯৪ সালে নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের সকল প্রকার বিলোপ সংক্রান্ত কনভেনশন অনুমোদন করে। এর ২ বছর পর ১৯৯৬ সালে আইসিসিপিআর নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করে। ২০০০ সালে, কুয়েতি সরকার লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করার জন্য খুব কম কাজ করে। [১৯]

আইসিসিপিআর এর আপত্তি[সম্পাদনা]

"কুয়েত সরকার সাধারণভাবে কুয়েত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯ এর বিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটি অনুচ্ছেদে নাগরিকের যোগ্যতাগুলিকে সমর্থন করে। সে অধিকারগুলি অবশ্যই কুয়েতি আইন দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।"[২০] তারা এ অনুচ্ছেদের আপত্তি করে বলে এতে নারী-পুরুষের সমতা রাখা হয়নি।

জাতীয়তা[সম্পাদনা]

জাতীয়তার ক্ষেত্রে, কুয়েতি নারীরা তাদের সন্তানদের কুয়েতের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার রাখে না যদি না তারা কুয়েতীয় পুরুষদের বিয়ে করে। কুয়েতি নারীরা আবাসিক পরিচর্যা এবং অন্যান্য অধিকার পেতে পারে না যা পুরুষরা কুয়েতবিহীন নারীদের বিয়ে করলে পেতে পারে। যদি একজন ব্যক্তি কুয়েতে বা তার বাইরে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাদের পিতা কুয়েতি নাগরিক হন, তাহলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেরাই একজন জাতীয় নাগরিক হবে। [২১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

  • মহিলাদের ভোটাধিকার টাইমলাইন

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "UN CEDAW reports submitted by the State Parties in accordance with Article 18 of the Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against women - Kuwait"United Nations Documents। পৃষ্ঠা 22। ১৩ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২১ 
  2. PeaceVoice (২০১৬-০৫-১১)। "Blue Revolution – Kuwaiti Women Gain Suffrage"PeaceVoice। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  3. "Kuwaiti women struggle for suffrage (Blue Revolution), 2002–2005 | Global Nonviolent Action Database"nvdatabase.swarthmore.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  4. CNN
  5. "Four Kuwaiti Women Become First to Win Seats in Parliament | NDI"www.ndi.org। ২০১৬-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  6. Shalaby, Marwa। "Women's Political Representation in Kuwait: An Untold Story" (পিডিএফ)। Rice University's Baker Institute for Public Policy। ১৬ মে ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  7. "Kuwait elections: Only female MP Safa al-Hashem loses seat"BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-১২-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০১ 
  8. "Safa first woman to win two consecutive times"gulfnews.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০১ 
  9. Apollo Rwomire (২০০১)। African Women and Children: Crisis and Response। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 8 
  10. Hassan M. Fattah (১৭ মে ২০০৫)। "Kuwait Grants Political Rights to Its Women"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৫ 
  11. Wills, Emily (২০১২)। "Democratic Paradoxes: Women's Rights and Democratization in Kuwait": 173–184। ডিওআই:10.3751/67.2.11 
  12. PeaceVoice (২০১৬-০৫-১১)। "Blue Revolution – Kuwaiti Women Gain Suffrage"PeaceVoice। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  13. CNN
  14. "Four Kuwaiti Women Become First to Win Seats in Parliament | NDI"www.ndi.org। ২০১৬-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  15. Shalaby, Marwa। "Women's Political Representation in Kuwait: An Untold Story" (পিডিএফ)। Rice University's Baker Institute for Public Policy। ১৬ মে ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  16. "الأستاذة نورية السداني - تاريخ الكويت"www.kuwait-history.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  17. Kmietowicz, Zosia (২০০৬)। "Victory for women's rights in Kuwait reawakens hope": 826। ডিওআই:10.1136/bmj.333.7573.826পিএমআইডি 17053234পিএমসি 1618438অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  18. "Kuwait activist sentenced for insulting emir"www.aljazeera.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  19. "Kuwait: Promises Betrayed - Discrimination Against Women"www.hrw.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  20. "United Nations Treaty Collection" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮ 
  21. Refugees, United Nations High Commissioner for। "Refworld | Nationality Law, 1959"Refworld। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৮