কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৪ মে ২০০৬ | (বয়স ৭৯)
দাম্পত্য সঙ্গী | রমলা মুখোপাধ্যায় |
পিতা-মাতা | ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (পিতা) ছায়া দেবী (মাতা) |
পুরস্কার | রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৯৭) |
পণ্ডিত কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ( ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ – ১৪ মে ২০০৬ ) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতবিশারদ ও লেখক। [১] বহুল আলোচিত কুদরত্ রঙ্গিবিরঙ্গী উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশের অধুনা উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে পিতার কর্মস্থলে। পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভাটপাড়ায়। পিতা ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও মার্গসংগীতের সমঝদার সুখ্যাত সমালোচক। মাতা ছায়া দেবী। কুমারপ্রসাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষা লখনউ-এ। তবে স্কুল পাঠের কিছু সময়ে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তিনি অর্থনীতি ও সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]কর্মজীবনের প্রথমদিকে ভারত সরকারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট পুলের আধিকারিকপদে কাজ করেন। শেষেরদিকে তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ হতে কয়লা মন্ত্রকের অধীনস্থ যথাক্রমে ন্যাশনাল কোল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এন সি ডি সি), কোল মাইন্স অথরিটি ও কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের কমার্শিয়াল ডাইরেক্টর ছিলেন। অবসরের পরও তিনি নানা একাধিক বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত একাডেমীর ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন।
স্কুল-কলেজে পাঠের সময় থেকেই তার সঙ্গীতচর্চা ছিল পুরো মাত্রায়। সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয় আট বৎসর বয়সে রবীন্দ্রলাল রায়ের কাছে। তারপর রামপুর-সহসওয়ান ঘরানার উস্তাদ মুস্তাক হুসেইন খানের কাছে তালিম নেন। আগ্রা ঘরানার আফতাব-এ মৌসিকী নামে খ্যাত উস্তাদ ফৈয়াজ খানের প্রভাব পড়ে কুমারপ্রসাদের সঙ্গীতচর্চায়। ফৈয়াজ খানের শ্যালক আতা হুসেন খাঁ ও ভাগনে উস্তাদ লতাফত হোসেন খানের কাছে বহুদিন তালিম নেন। সঙ্গীতপ্রেমী কুমারপ্রসাদ পাঞ্জাবের হরবল্লভ সংগীত সম্মেলন ছাড়া ভারতের সব সঙ্গীত সম্মেলনে অংশ নেন। অবশ্য আমন্ত্রিত শিল্পী হিসাবে জীবনের প্রথম অনুষ্ঠান করেন রেডিওতে। সঙ্গীতবিশারদ হিসাবে বক্তব্য এবং গান গেয়েছেন কলকাতার সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি, সিমলার ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডিজে, মাদ্রাজের মিউজিক আকাডেমি ও ত্যাগরাজ বিদ্বৎসমাজ, ব্যাঙ্গালোরের গায়ন সমাজে ও গানকলা পরিষদে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে গানকলা পরিষদ কুমারপ্রসাদকে পণ্ডিত আখ্যায় ভূষিত করে। বিজয়কুমার কিচলু ও তার অনুজ রবি কিচলুর সঙ্গে তার হৃদ্যতা ছিল। সাঙ্গীতিক পরিবেশে লালিত কুমারপ্রসাদ তার অননুকরণীয় রচনাশৈলী এবং বিষয়বৈচিত্র্য নিয়ে রচনা করেন কুদরত্ রঙ্গিবিরঙ্গী। রাজানুকূল্যে প্রবাদপ্রতিম শিল্পীরা বর্ণাঢ্য, ঘটনাবহুল জীবন কাটাতেন সেই সব কাহিনির এ গ্রন্থ তার উজ্জ্বল সৃষ্টি। [২] একাধারে ইতিহাস ও মার্গসংগীতের তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনা দেশ পত্রিকা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হত। পরে বই আকারে প্রকাশিত হলে তিনি ১৪০৩ বঙ্গাব্দ (১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে) রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।
তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল-
- ম্যহ্ফিল, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা আইএসবিএন:978-81-2950-581-1
- দিশি গান বিলিতি খেলা, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
- মজলিশ (১৯৯৭), আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা আইএসবিএন:9788172156886
- খেয়াল ও হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের অবক্ষয়, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা
- দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড অফ হিন্দুস্তানি মিউজিক (২০০৬) পেঙ্গুইন বুকস আইএসবিএন:9780143061991
কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ক্রিকেট খেলায় বিশেষ অনুরাগ এবং ফটোগ্রাফিতে শখ ছিল। [১]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]সঙ্গীতজ্ঞ কুমারপ্রসাদ খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে ৭৯ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৯৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ মুখোপাধ্যায়, কুমারপ্রসাদ (১৯৯৪)। কুদরত্ রঙ্গিবিরঙ্গী। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। আইএসবিএন 9788172153427।