এর্ভিন রমেল
এর্ভিন ইয়োহানেস অয়গেন রমেল | |
---|---|
ডাকনাম | "ভুস্টেনফুক্স" (মরুভূমির শিয়াল) |
আনুগত্য | জার্মান সাম্রাজ্য (১৯১৮ পর্যন্ত) ভাইমার প্রজাতন্ত্র (১৯৩৩ পর্যন্ত) নাৎসি জার্মানি |
কার্যকাল | ১৯১১-১৯৪৪ |
পদমর্যাদা | ফিল্ড মার্শাল |
নেতৃত্বসমূহ | ৭তম পান্ৎসার ডিভিশান আফ্রিকা কর্পস পান্ৎসার আর্মি আফ্রিকা আর্মি গ্রুপ আফ্রিকা আর্মি গ্রুপ-বি |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
|
পুরস্কার | পুর ল্য মেরিত খেতাব (প্রুশিয়া) নাইটস ক্রস অফ আয়রন ক্রস (ওক পাতা, তলোয়ার ও হীরাসহ) মিলিটারি মেরিট ক্রস (অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি) |
সম্পর্ক | মানফ্রেড রমেল |
এর্ভিন ইয়োহানেস অয়গেন রমেল (
১৫ নভেম্বর ১৮৯১–ফেব্রুয়ারি ১০, ১৯৪৪ ), যিনি ইতিহাসে ‘ডেজার্ট ফক্স’ বা ‘মরুভূমির শিয়াল’ নামে খ্যাত, একজন জার্মান ফিল্ড মার্শাল।রমেলের অবদান হিসেবে মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা হলেও তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধেই একজন অত্যন্ত দক্ষ ও সন্মানিত কর্মকর্তা ছিলেন এবং সে সময়ে ইতালীয় ফ্রন্টে বীরত্ব প্রদর্শনের বিনিময়ে তৎকালীন প্রুশিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব পুর ল্য মেরিত অর্জন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে ১৯৪০ সালে জার্মানির ফ্রান্স অভিযানের সময় রমেল একটি পান্ৎসার ডিভিশানের নেতৃত্বে ছিলেন, মিত্রবাহিনী যে ডিভিশানটিকে রমেলের বিশেষ রণকৌশলের কারণে ‘ভৌতিক ডিভিশান’ আখ্যা দিয়েছিল।
১৯৪০ সালে শুরু হওয়া অপর এক সামরিক অভিযান ‘উত্তর আফ্রিকা অভিযান’ যেটিতে জার্মানি ও ইটালির সৈন্যদের নেতৃত্ব দিয়ে রমেল তার শত্রুদেরই দ্বারা একজন শ্রেষ্ঠ রণকৌশলী হিসেবে ‘ডেজার্ট ফক্স’ বা ‘মরুভুমির শিয়াল’ আখ্যা লাভ করেন। উল্লেখ্য ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল বার্নার্ড মন্টগোমরি উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধে প্রতিপক্ষ রমেলের অসাধারণ রণকৌশল ও দক্ষতায় অভিভূত হয়ে তাঁকে এই নামটি দিয়ছিলেন।[১]
এর্ভিন রমেল তার মানবীয় গুণাবলীর কারণে শত্রুদের কাছেও অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ছিলেন কেননা এরূপ মানবীয় গুণাবলী তৎকালীন নাৎসি উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের মাঝে খুব সহজলভ্য ছিলনা। এই কারণে রমেলের নেতৃত্বাধীন আফ্রিকা কর্পস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়নি।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]এর্ভিন রমেল ১৮৯১ সালের ১৫ নভেম্বর তারিখে জার্মানির দক্ষিণভাগের হাইডেনহাইম শহরে (বর্তমান জার্মান প্রজাতন্ত্রের বাডেন-ভুর্টেমবের্গ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত, বায়ার্নের সীমান্ত সংলগ্ন) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা যার নিজের নামও ছিল এর্ভিন রমেল, হাইডেনহাইমের নিকটবর্তী আলেন শহরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রোটেস্টান্ট প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রমেলের মা হেলেনে ফন লুৎস ছিলেন স্থানীয় এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির কন্যা। রমেল চার ভাইবোনের মধ্যে ছিল দ্বিতীয়। রমেলের বাকি ভাইবোনরা ছিল কার্ল, গেরহার্ড ও হেলেনে। রমেল তার শৈশব স্মরণ করতে গিয়ে লিখেছিলেন যে তার ছেলেবেলা অত্যন্ত আনন্দের মধ্য দিয়ে কেটেছিল।
১৪ বছর বয়সে রমেল তার এক বন্ধুর সাথে যৌথ প্রচেষ্টায় একটি পরিপূর্ণ গ্লাইডার বানাতে সক্ষম হন যা সীমিত দূরত্বের জন্য উড়তে পারত। শৈশবে রমেল তার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে একজন প্রকৌশলী হওয়াকে স্থির করেছিলেন যা হওয়ার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন চমকপ্রদ নির্মাণকাজ করবেন। কিন্তু বাবার উৎসাহে রমেল ১৯১০ সালে স্থানীয় ১২৪তম ভুর্টেমবের্গ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে তিনি উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ডানৎসিশের অফিসার ক্যাডেট স্কুলে প্রেরিত হন এবং তার বিংশতম জন্মবার্ষিকীতে সেখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। রমেল ১৯১২ সালে জার্মান সশস্ত্র বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
১৯১১ সালে ক্যাডেট স্কুলে থাকা কালীন রমেলের সাথে লুসিয়া মারিয়া মলিনের (জন্মঃ ৬ জুন ১৮৯৪ দানজিগে, মৃত্যুঃ ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ষ্টুটগার্টে) দেখা হয় এবং ১৯১৬ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখে তাদের বিয়ে হয়। পরে ১৯২৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে রমেল দম্পতির প্রথম ও একমাত্র সন্তান ম্যানফ্রেড রমেলের জন্ম হয়। রমেলপুত্র ম্যানফ্রেড রমেল বর্তমান জার্মানির একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ক্ষমতাসীন খ্রিস্টান ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা ও প্রধান শহর ষ্টুটগার্টের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র যে দায়িত্ব মানফ্রেড ১৯৯৬ সালে অবসর নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ বাইশ বছর যাবৎ পালন করেছেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অবদান
[সম্পাদনা]প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রমেল ফ্রান্সের রণক্ষেত্রে দায়িত্মপ্রাপ্ত ছিলেন। ইটালি ও রোমানিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি নিযুক্ত হয়েছিলেন। প্রাথমিক ভাবে তিনি ৬ষ্ঠ ওয়ার্টেমবুর্গ পদাতিক রেজিমেন্টের অধীনে যুদ্ধ করলেও অধিকাংশ সময়েই বিশেষ সৈন্যদল আলপেনকর্পসে নিযুক্ত ছিলেন। এই বিশেষ দলে থাকাকালীন তিনি তার বেশ কিছু সামরিক গুণাবলীর জন্য খ্যাতি অর্জন করেন, যেমন তিনি খুব দ্রুত ও দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন এবং শত্রুর বিভ্রমের সুবিধা আদায় করে কৌশল ঠিক করতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি তিনবার আহত হয়েছিলেন যার কারণে তিনি সামরিক খেতাব আয়রন ক্রস, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করেন। স্লোভেনিয়ার পাহাড়ী অঞ্চলে ইসোনজো যুদ্ধে অবদানের কারণে তিনি প্রুশিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব পুর লা মেরিতও অর্জন করেন। লোনিয়ারোন যুদ্ধে তিনি তার বাহিনী নিয়ে ইটালির একটি সৈন্যদলকে পরাস্ত করেন। তার ক্ষুদ্র বাহিনীর প্রতিপক্ষ ইটালির বাহিনীটিতে ছিল দেড়শ জন অফিসার, ৯,০০০ এর অধিক সৈন্য ও ৮১টি আর্টিলারি ইউনিট।
ইসোনজোর যুদ্ধে অফিসার রমেল ইটালির সৈন্যদের হাতে বন্দী হন। কিন্তু তিনি তার সামরিক কৌশলাদি ও ইতালিয় ভাষায় বাকপারদর্শিতার মাধ্যমে মাত্র দুই সপ্তাহর মধ্যে শত্রুদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তার নিজস্ব জার্মান লাইনে ফিরে আসেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন জার্মানরা ইটালির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করল, রমেল প্রাথমিক ভাবে এতে বিরক্ত হয়েছিলেন কারণ পূর্ববর্তী যুদ্ধ অভিজ্ঞতার দ্বারা ইটালির সৈন্যদের রণকৌশলে, নেতৃত্বে ও দক্ষতায় দূর্বলতার কথা তিনি ভালোভাবে জানতেন।[২]
দুই মহাযুদ্ধের মধ্যকালীন সময়ে রমেল
[সম্পাদনা]রোমেল দক্ষিণ জার্মান বা সোয়াবিয়ান টানে জার্মান ভাষায় কথা বলতেন। তিনি তৎকালীন প্রুশিয়ান ক্ষমতা কুক্ষিগতকারীদের দলে ছিলেন না। তিনি জার্মান আর্মিতে "জেনারেল স্টাফ" এর পদ হেলায় ছেড়ে দেন যেটা ছিল সেনা অফিসারদের উঁচু র্যাংকে উঠার সুযোগ। এরচেয়ে তিনি সম্মুখ সমরের অফিসার এর জীবন বেছে নেন। তার যুদ্ধের সময় লেখা ডায়ারি মিলিটারি পাঠ্যবই হিসেবে বিবেচিত হত। তার লেখা হিটলার নিজেই খুব পছন্দ করতেন। ১৯৩৫ সালে তিনি 'যুব হিটলার' সংগঠনে তরুনদের গড়ে তোলার দায়িত্ব পান। ১৯৩৮ সালে তিনি কর্নেল উপাধি পান এবং একটি যুদ্ধবিদ্যার একাডেমিতে কমান্ডার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]১৪ অক্টোবর ১৯৪৪, হিটলার এর সাথে মতবিরোধের কারণে পটাশিয়াম সায়ানাইড পিল খাইয়ে তাকে মারা হয়
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]মন্তব্য
[সম্পাদনা]- মন্তব্য
- বর্ণনা
- ↑ Hakim, War, Peace and all that Jazz, p. [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
- ↑ Current Biography Yearbook 1942 New York: H.W. Wilson, 1943. pp. 701–04. See also: http://www.storico.org/Rommel.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১২ তারিখে