আমাশয়
অনুগ্রহ করে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করে এর উন্নতিতে সহায়তা করুন। অতিরিক্ত তথ্যের জন্য আলাপ পাতা দেখতে পারেন।
|
আমাশয় | |
---|---|
প্রতিশব্দ | রক্তযুক্ত উদরাময় |
১৯৪৩ সালে বার্মার একটি হাসপাতালে আমাশয়ের রোগী | |
বিশেষত্ব | সংক্রামক রোগ |
লক্ষণ | রক্তযুক্ত উদরাময়, উদরে ব্যথা, জ্বর |
জটিলতা | পানিশূন্যতা |
স্থিতিকাল | এক সপ্তাহের কম |
কারণ | সাধারণত শিগেলা নামক দণ্ডাণু ব্যাকটেরিয়া বা এন্ট্যামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক অ্যামিবা |
ঝুঁকির কারণ | অপ্রতুল পয়োনিষ্কাশন বা স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে খাদ্য ও পানিতে মলের দূষণ |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | উপসর্গভিত্তিক, মল পরীক্ষা |
প্রতিরোধ | হাত ধোয়া, নিরাপদ খাদ্য |
চিকিৎসা | পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ, ব্যাকটেরিয়া নিরোধক ঔষধ (গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে) |
সংঘটনের হার | বিশ্বের বহু অঞ্চলে ঘটে থাকে |
আমাশয় (Dysentery) মানব অন্ত্রে রোগজীবাণুর সংক্রমণজনিত রোগ। সাধারণত এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা (Entamoeba histolytica) কিংবা শিগেলা (Shigella) গণভুক্ত ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের পরিপাক তন্ত্রে সংক্রমণ করলে এই রোগ হয়। অন্ত্রের সংশ্লিষ্ট অংশে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, পেট ব্যথা করে এবং শ্লেষ্মা ও রক্তসহ পাতলা পায়খানা হতে থাকে।[১] আমাশয় হলে পেট কামড়ানোসহ মলের সঙ্গে পিচ্ছিল আম অথবা শ্লেষ্মাযুক্ত রক্ত যায়।[২]
সংক্রমিত ব্যক্তির মল দ্বারা খাদ্য বা পানি দূষিত হলে আমাশয় ছড়িয়ে থাকে। প্রায়শই সংক্রমিত ব্যক্তিদের হাত পরিস্কার করে না ধুলে এমনটি হয়। শিগেলা নামক দণ্ডাণুর (দণ্ডাকৃতি ব্যাকটেরিয়া) কারণে ঘটিত আমাশয়কে শিগেলাধিক্য রোগ (শিগেলোসিস) বলা হয়। এই জাতীয় আমাশয় মৃদু প্রকৃতির হতে পারে, কিংবা হঠাৎ, গুরুতর ও জীবনঘাতী রূপ ধারণ করতে পারে। আমাশয়ের কারণে দেহ থেকে তরল পদার্থ বের হয়ে গিয়ে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে দীর্ঘস্থায়ী বৃহদন্ত্রের ঘা বা ক্ষত (আলসার) হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া নিরোধক ঔষধ (অ্যান্টিবায়োটিক), তরল প্রতিস্থাপন ও কখনও কখনও রক্ত পরিভরণ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এককোষী প্রাণীঘটিত তথা অ্যামিবাঘটিত আমাশয় এন্ট্যামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক অণুজীবের কারণে ঘটে থাকে। অ্যামিবাঘটিত আমাশয় দুইটি রূপ ধারণ করতে পারে। একটি রূপ দণ্ডাকৃতি ব্যাকটেরিয়াঘটিত আমাশয়ের অনুরূপ, অন্যটি দীর্ঘস্থায়ী ও থেমে থেমে (সবিরাম) বিরতি দিয়ে ঘটে থাকে এবং বৃহদন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে। অ্যামিবানাশক ঔষধ দিয়ে এই ধরনের আমাশয়ের চিকিৎসা করা হয়।
প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]আমাশয় দুই ধরনের হয়ে থাকে: অ্যামিবাঘটিত আমাশয় এবং দণ্ড-ব্যাকটেরিয়াঘটিত (ব্যাসিলারি) আমাশয়। এদের সংক্রমণের কারণ ভিন্ন, রোগের লক্ষণ ভিন্ন এবং চিকিৎসাও ভিন্ন।
অ্যামিবাঘটিত আমাশয়
[সম্পাদনা]অ্যামিবাঘটিত আমাশয় (Amoebic dysentery, Amoebiasis) বড় ছেলে-মেয়েদের হয়ে থাকে কিন্তু ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এর প্রবণতা অত্যন্ত কম৷ পরিপাকতন্ত্রের বৃহদান্ত্রে এন্ট্যামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক পরজীবীর সংক্রামণের ফলে এই রোগ হয়৷
সংক্রমণের কারণ
[সম্পাদনা]এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা নামীয় পরজীবীটি নিজের চারদিকে এক ধরনের আবরণ গঠন করে মাটিতে ও পানিতে বিচরণ করে৷ সাধারণতঃ দূষিত পানি এবং অপরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এই এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা মানুষের পেটের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং বৃহদান্ত্রের সিকামের কাছাকাছি জায়গায় গিয়ে এর বাইরের আবরণটি খুলে ফেলে৷ এরপর পরজীবীটি বৃহদান্ত্রের গায়ে যে শ্লেষ্মাঝিল্লি আছে তা আকড়ে ধরে বাসা বাঁধে। পরজীবীটির দেহ থেকে এক প্রকার ক্ষতিকারক রস নিঃসরণ হয় যা অন্ত্রে গাত্রের শ্লেষ্মাঝিল্লিকে ভেঙে দেয়। আর এই ভেঙ্গে যাওয়া শ্লেষ্মাঝিল্লিতে এ্যমিবার আক্রমণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়৷ শ্লেষ্মাঝিল্লির ঝরে পড়া অংশ মলের সঙ্গে নিঃসৃত হয় যাকে “আম” বলে আখ্যায়িত করা হয়। তলপেটে সাধারণত ডানপাশে চিনচিনে ব্যথা হয়৷ তলপেটের ডান পাশে সিকাম থাকে যা পরজীবীটির আক্রমণের মূল লক্ষ্য।[৩]
রোগের লক্ষণ
[সম্পাদনা]রোগীর বারবার পাতলা পায়খানা হতে থাকে। মলের সঙ্গে মিউকাস (শ্লেষ্মাঝিল্লি) বা আম বেশি থাকে। রক্ত থাকলেও কম৷ সাধারণত ডানদিকের তলপেটে ব্যথা হয়৷
চিকিৎসা
[সম্পাদনা]যে কোন প্রকারের আমাশয়ে প্রথম করণীয় হলো খাওয়ার স্যালাইন গ্রহণ করা। অধিকন্তু রোগীকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে৷ ডিহাইড্রেশান প্রতিরোধের স্বার্থে প্রচুর পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট মেট্রোনিডাজল (৪০০ মি.গ্রা.) ১টা দিনে ৩ বার করে ৫ দিন (পূর্ণ বয়স্কদের ক্ষেত্রে) খেতে হবে৷ ডাক্তার ওজন অনুযায়ী শিশুদের চিকিৎসা দেবেন।
দণ্ডাণুঘটিত আমাশয়
[সম্পাদনা]দণ্ডাণুঘটিত আমাশয় (ইংঃ Bacillary dysentery, Shigellosis) শিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হয়। এ রোগটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে দেখা যায় এবং বহু লোকের মৃত্যুর জন্য এই রোগ দায়ী৷ দণ্ডাণুঘটিত আরেক নাম শিগেলাধিক্য রোগ বা শিগেলোসিস৷ শিগেলা নামে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে এই রোগটি হয়৷ শিগেলার চারটি প্রজাতির মধ্যে Shigella flexneri নামক প্রজাতিটির মাধ্যমে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে আমাশয় ছড়ায়। এটি সবচেয়ে বেশি ছড়ায় জীবাণুবাহী আধোয়া হাত দিয়ে। জীবণুবাহী মাছি ও খাবারের মাধ্যমেও ছড়ায়। মলের সঙ্গে রক্ত বেশি যায় বলে এটিকে এক সময় রক্ত আমাশয় বলা হতো।[৩]
সংক্রমণের পদ্ধতি
[সম্পাদনা]২ থেকে ৫ বছরের শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়৷ এ রোগের প্রধান উৎস হলো রোগীর মল৷ মাছির মাধ্যমে রোগজীবাণু খাদ্য ও পানীয়তে সঞ্চারিত হয়৷ এ সকল দূষিত খাদ্য ও পানীয় পান করার ফলে রোগের সংক্রামণ হয়৷ শিগেলা জীবাণুটি মানুষের পেটে ঢুকে পাকস্থলী অতিক্রম করে চলে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে৷ সেখানে জীবাণুটি বংশবৃদ্ধি করে এবং বৃহদান্ত্রে ঘায়ের সৃষ্টি করে৷ ঝিল্লি ফুলে উঠে ও লাল হয়ে যায়৷ ঝিল্লিতে পুঁজের আবরণ পড়ে এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়৷ সামান্য আঘাতেই এই ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হয়৷ তাই মলের সঙ্গে রক্ত যায়৷
রোগের লক্ষণ
[সম্পাদনা]হঠাৎ করে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা শুরু হয় এবং চিকিৎসা নিতে দেরি হলে দিনে ১০ বারের বেশি মলত্যাগ করতে হয়। আক্রান্ত রোগীর পেটে ব্যথা করতে থাকে। রোগীর শরীরে খিঁচুনি হতে পারে৷ রোগীর গায়ের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। জ্বর হয়। তাপমাত্রা ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহিট পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। অনেকবার মলত্যাগের কারণে শরীরে ফলে পানিস্বল্পতা ও ইলেকট্রোলাইট ঘাটতি দেখা দেয়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা
[সম্পাদনা]প্রথমেই বারবার মলত্যাগ বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া যে কোন প্রকারের আমাশয়ে প্রথম করণীয় হলো খাওয়ার স্যালাইন গ্রহণ করা। অধিকন্তু রোগীকে প্রথমত বিশ্রাম নিতে হবে। ডিহাইড্রেশন ঠেকানোর জন্য প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর খাওয়ার স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার যেমন ভাল ঠাণ্ডা পানি, চিনির সরবত, ডাবের পানি, ফলের রৎস ইত্যাদি খেতে হবে৷ অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে৷ সিগেলা প্রজাতির আমাশয়ে ডাক্তারের পরামর্শমত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়
[সম্পাদনা]অ্যামিবাঘটিত আমাশয় এবং দণ্ডাণুঘটিত আমাশয় উভয়ই স্বল্পমেয়াদী আমাশয়। সাধারণভাবে “স্বল্পমেয়াদী আমাশয়” বলতে এক সপ্তাহের কম সময় ধরে আমাশয় থাকাকে বোঝায়। স্বল্পমেয়াদী আমাশয় অল্প সময়ের চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে যায়। দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় (ক্রনিক ডিসেন্ট্রি) ভাল করার জন্য অনেক দিনের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। দীর্ঘদিনের আমাশয় বিভিন্ন জটিলতার জন্ম দেয়। দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়ের ক্ষেত্রে মলধার সর্বদা ফাঁক হয়ে থাকে, হারিস গোন্ডল বের হয়।[৪]