অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি
অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি হল কোন বহিরাগত বা অপরিচিত মানুষের থেকে ভয় বা অবিশ্বাস।[১][২]
অজ্ঞাতব্যক্তিভীতির প্রভাব গোষ্ঠীর ভিতরের মানুষের গোষ্ঠীর বাইরের মানুষের ওপর বা বিষয়ে সম্বন্ধ, অনুভূতি ইত্যাদিতে দেখা যায়। নিজের পরিচয় হারানোর ভয়, কর্মকাণ্ডের ওপর সন্দেহ, উগ্রতা, এবং তার উপস্থিতি নাকচ করে আগে থেকে ধারণা করে নিয়ে পবিত্রতা রক্ষা ইত্যাদি এর অন্তর্গত।[৩] অজ্ঞাতব্যক্তিভীতিকে "অন্য সংস্কৃতির অসমালোচনামূলক উৎকর্ষ" হিসাবে দেখানো যায়, যেখানে কোনো একটি সংস্কৃতিকে "অবাস্তব, রূঢ়বদ্ধভাবে ধৃত এবং বিদেশী" আখ্যা দেওয়া হয়।[৩]
অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি এবং বর্ণবাদের (racism) ভেদ না বুঝে কখনো কখনো দুটি শব্দকে অন্যটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। কারণ বহুক্ষেত্রে, একই রাষ্ট্রের লোক একই বর্ণ বা জাতির হয়।[৪] সেইজন্য, অজ্ঞাতব্যক্তিভীতিকে বহিরাগত সংস্কৃতির বিরোধ বলে মনে করে পৃথক করা হয়।[৪]
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]অজ্ঞাতব্যক্তিভীতিকে "বহিরাগতের প্রতি দৃঢ়বদ্ধভাবে থাকা ভয়" বা "অচেনার ভয়" বলা যায়।[৫] অজ্ঞাতভীতির ইংরাজী শব্দ জেনোফোবিয়া (xenophobia) এসেছে গ্রিক জেনোস (ξένος) অর্থাৎ "অপরিচিত", "বহিরাগত" এবং ফোবোস (φόβος) অর্থাৎ "ভয়"-এর থেকে।
চিহ্নিতকরণ
[সম্পাদনা]এশিয়া
[সম্পাদনা]মালয়েশিয়া
[সম্পাদনা]২০১৪ সালে, পেনাং রাজ্যে বিদেশিদের স্থানীয় খাবার রান্না করার উপর একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। খ্যাতনামা স্থানীয় রাঁধুনি রেজুয়াওয়ান ইসমাইল এই আইনের সমালোচনা করেন।
ওশিয়ানিয়া
[সম্পাদনা]অস্ট্রেলিয়া
[সম্পাদনা]২০০৫ সালের ক্রোনুলা দাঙ্গা সংঘটিত হয় শ্বেতাঙ্গ ও লেবানিয় অস্ট্রেলীয়দের পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসপূর্ণ মনোভাবের জন্য।
আফ্রিকা
[সম্পাদনা]দক্ষিণ আফ্রিকা
[সম্পাদনা]দক্ষিণ আফ্রিকায় অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি বর্ণভেদের যুগ এবং বর্ণভেদের পরবর্তী যুগ, উভয় সময়েই দেখা গেছে। দ্বিতীয় বুয়ার্স যুদ্ধের পর বুয়ারদের এবং ব্রিটিশদের মধ্যেকার সম্বন্ধ অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক গরিব আফ্রিকান ব্রিটিশদের ব্যবসায়িক স্থানসমূহ আক্রমণ করে।[৬] দক্ষিণ আফ্রিকায় সেকারণে অনেক আইন গৃহীত হয়, যেমন: "ইচ্ছুক না হওয়া" ভারতীয়দের বিতাড়ন করতে প্রণয়ন করা ১৯১৩ সালের ইমিগ্রেণ্টস্ রেগুলেশন অ্যাক্ট। টাউনশিপ ফ্র্যানচাইজি অর্ডিনেন্স অব ১৯২৪-এ ভারতীয়দেরকে মিউনিসিপাল ফ্র্যানচাইজির থেকে বঞ্চিত করতে তৈরি করা হয়েছিল।[৭]
১৯৯৪ এবং ১৯৯৫-তে জোহানেসবার্গে বিদেশীদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। দাবী করা হয় যে, পুলিশরা যেন বিদেশীদের তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়।[৮] ২০০৮ এ একই স্থানে পুনরায় আক্রমণ ঘটে।[৯][১০][১১] হাজার হাজার বিদেশীকে স্থান ত্যাগ করতে হয়; তাদের সম্পত্তি, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান এবং ঘরবাড়ি লুট করা হয়।[১২] এই আক্রমণে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়।[৮]
২০১৫-তে, দক্ষিণ আফ্রিকায় পুনরায় অজ্ঞাতব্যক্তিভীতি সম্বন্ধীয় আক্রমণ সংঘটিত হয় জিম্বাবুয়ে থেকে আসা লোকজনের বিরুদ্ধে।[১৩] জুলু রাজা গুডউইল জ্বেলিথিনি কভেকুজুলু বিদেশীদের "তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশ ছাড়ো" বলার পরেই এমনটা হয়।[৮][১৪] ২০ এপ্রিল ২০১৫-এর তথ্যানুযায়ী, এই ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু, এবং ২০০০-এরও বেশি বিদেশী স্থানচ্যুত হয়।[১৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Xenophobia - definition of xenophobia in English from the Oxford dictionary"। oxforddictionaries.com। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "Xenophobia - Define Xenophobia at Dictionary.com"। Dictionary.com।
- ↑ ক খ Guido Bolaffi.
- ↑ ক খ "Xenophobia"। United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৬।
- ↑ Webster's New Universal Unabridged Dictionary, Dorset and Baber, Simon & Schuster
- ↑ Giliomee, Hermann (২০০৩)। The Afrikaners: Biography of a People। C. Hurst & Co. Publishers। পৃষ্ঠা 383। আইএসবিএন 9781850657149।
- ↑ "Anti-Indian Legislation 1800s - 1959"। South African History Online। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৬।
- ↑ ক খ গ "Xenophobic violence in democratic South Africa"। South Africa History Online। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৬।
- ↑ "South Afrians Take Out Rage on Immigrants"। The New York Times। ২০ মে ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৬।
- ↑ "Thousands seek sanctuary as South Africans turn on refugees"। The Guardian। ২০ মে ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৬।
- ↑ "Thousands flee S Africa attacks"। BBC NEWS। ১৯ মে ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৬।
- ↑ "Analysis: The ugly truth behind SA's xenophobic violence"। Daily Maverick। ২৮ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৬।
- ↑ ক খ Kazunga, Oliver (২০ এপ্রিল ২০১৫)। "Xenophobia death toll climbs to 7"। The Chronicle। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।
- ↑ "Deaths in South Africa as mobs target foreigners"। Al Jazeera। ১৫ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬।