অক্টোপাস
অক্টোপাস সময়গত পরিসীমা: Early Pennsylvanian – Recent[১] | |
---|---|
The common octopus, Octopus vulgaris. | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
Suborders | |
প্রতিশব্দ | |
|
অক্টোপাস আটটি বাহু বিশিষ্ট সামুদ্রিক প্রাণী। দেখতে শামুকের মত হলেও (শক্ত খোলস নেই) এরা শামুক-ঝিনুকের জাতভাই অর্থাৎ মোলাস্কা ফাইলামের অন্তর্ভুক্ত। এদের মাথার ঠিক পিছনেই আটটি শুঁড়-পা আছে তাই এরা সেফালোপোডা বা "মস্তক-পদ" শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত (স্কুইড-ও একই শ্রেণীর)। এরা নিশাচর, সাধারণতঃ ধীর গতিসম্পন্ন।প্রায় ১৫০ প্রজাতির ছোটবড় বিভিন্ন আকারের অক্টোপাস রয়েছে।
সমুদ্রের বিভিন্ন অঞ্চলে অক্টোপাসেরা বসবাস করে, যার মধ্যে রয়েছে কোরাল শৈলশিরা, উন্মুক্ত অগভীর জল এবং সমুদ্রতল ইত্যাদি। কিছু কিছু আবার জোঁয়ার-ভাটা হয় এমন স্থানে আবার কিছু আছে গভীর সমুদ্রে বসবাস করে। বেশিরভাগ প্রজাতিই দ্রুত বর্ধমান, তাড়াতাড়ি পূর্ণ বয়স্ক হয়। বংশ বৃদ্ধির সময় পুরুষ অক্টোপাস বিশেষ শুঁড় দিয়ে শুক্রানু, স্ত্রী অক্টোপাসে স্থানান্তর করে,এরপর সে ধীরে ধীরে মারা যায়। স্ত্রী অক্টোপাস নিষিক্ত ডিমগুলো কোন গুহা জাতীয় স্থানে রাখে এবং ফুটে বাচ্চা বের হওয়া পূর্ব পর্যন্ত যত্ন করে, তারপর সেও মারা যায়।
শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচতে তারা কালি ছুঁড়ে মারে, ছদ্মবেশ ধারন করে বা রং পাল্টায় এবং ভীতি প্রদর্শন করে। এছাড়াও তারা আত্মরক্ষার জন্য দ্রুত পালানোর ক্ষমতা ও লুকিয়ে পড়ার ক্ষমতা ব্যবহার করে। সব অক্টোপাসই বিষাক্ত, কিন্তু শুধুমাত্র নীল গোলক বিশিষ্ট অক্টোপাসই মানুষের জন্য মারাত্মক। অক্টোপাসের ৩টি হৃৎপিণ্ড আছে।[৩] এদের মধ্যে ২টি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে।আর বাকি একটি অক্টোপাসের সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করে।হিমোসায়ানিন নামক রাসায়নিকের জন্য এদের রক্তের রং নীল। অক্টোপাস প্রচালন কাজ চালায় জেট বিমানের মতো করে।তারা প্রথমে তাদের শরীরের পেশীতে প্রচুর পানি টেনে নেয়,এরপর সাইফন নামে একটি নল বের করে সেটা দিয়ে পানি গুলো সব বের করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা পানি বের করার দিকের উল্টো দিকে গতিপ্রাপ্ত হয়।যত বেশি পানি তারা নিবে তত বেশি তারা গতি প্রাপ্ত হবে।এই প্রক্রিয়া বার বার করে তারা চলতে থাকে।
পৌরানিক কাহিনীতে অক্টোপাসকে সমুদ্রের দানবরূপে আখ্যায়িত করতে দেখা গেছে, যেমন নরওয়ের ক্রাকেন এবং আইনুদের আকোরোকামুই হিসেবে এবং সম্ভবত প্রাচীন গ্রীসে গর্গন রূপে। ভিক্টর হুগোর একটি বইয়ে, যার নাম টয়লার্স অব দ্যা সি, অক্টোপাসের সাথে একটি যুদ্ধের বয়ান আছে। আয়ান ফ্লেমিং অনুপ্রাণিত হয়ে বানান অক্টোপুসি। অক্টোপাসেরা জাপানের উত্তেজক চিত্রতেও স্থান করে নিয়েছে যার নাম সুঙ্গা। এশিয়ার সাগর ও ভূ-মধ্য সাগরের বিভিন্ন দেশে এদের খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়।
আকৃতি
[সম্পাদনা]সাধারণত অক্টোপাসগুলো খুব একটা বড়ো হয়না। দৈর্ঘ্য হয় সর্বোচ্চ ৪.৫ ফিট এবং ওজন হয় প্রায় ১০ কেজি। তবে এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলে এক প্রজাতির অক্টোপাস রয়েছে যা জায়ান্ট অক্টোপাস নামে পরিচিত। এটি অন্য যে কোন অক্টোপাস থেকে বড়। এর নাম ডলফিনি অক্টোপাস। এটি লম্বায় প্রায় ৩০ ফিট এবং ওজন প্রায় ২৭৫ কেজি পর্যন্ত হয়।
খাদ্য
[সম্পাদনা]অক্টোপাস মাংসাশী প্রাণী।মাছ, কাকড়া, চিংড়ি ইত্যাদি অক্টোপাসের প্রিয় খাদ্য।
আত্নরক্ষার কৌশল
[সম্পাদনা]অক্টোপাসের আত্নরক্ষার কৌশল বেশ অদ্ভুত। এরা ইচ্ছেমত নিজের দেহের রঙ পরিবর্তন এবং মাথার নিচের নলাকার ফানেল জলপূর্ণ করে দ্রুতবেগে বের করে দিয়ে তাড়াতাড়ি দূরে সরে যেতে পারে। রং পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের বালি, পাথর, উদ্ভিদ ইত্যাদির সাথে এমনভাবে মিশে যেতে পারে যে হাঙ্গর, ইল, ফিন (অক্টোপাসের প্রধান শত্রু) খুব কাছ থেকেও একে শনাক্ত করতে পারে না। এছাড়াও এদের দেহে কালি থলে(ink sac) থাকে যার সাহায্যে নিজের দেহ থেকে ঘন কালো কালি ছুঁড়ে দিতে পারে যা শত্রুকে কিছুক্ষণের জন্য অন্ধ করে দেয়। এ কালির আরেকটি গুণ হচ্ছে এটি শত্রুর ঘ্রাণশক্তিও কিছুক্ষণের জন্য নষ্ট করে দেয়। ফলে অক্টোপাসটি পালিয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত আত্নরক্ষার কোন উপায় না পেলে অনেক সময় এরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অথবা নিজের বাহু খেতে আরম্ভ করে! অক্টোপাস খুব দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে যা এটির আত্নরক্ষায় সহায়ক।
বর্ণ পরিবর্তনের ক্ষমতা
[সম্পাদনা]অক্টোপাসের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল রঙ বা বর্ণ পরিবর্তনের ক্ষমতা। এর ত্বকে আঁচিলের মত ফুস্কুড়ি থাকে। ত্বকের নিচে অনেকগুলি ক্রোমাটোফোর(chtomatophore) আছে। ক্রোমাটোফোরে নানা রঙের কোষ থাকে। এসব কোষের সাহাহ্যেও এরা দেহের রঙ পাল্টায়।
জীবনকাল
[সম্পাদনা]অক্টোপাসের জীবন খুবই ছোট। কিছু কিছু প্রজাতি মাত্র ছয় মাস বাঁচে। জায়ান্ট প্যাসিফিক অক্টোপাস, সবচেয়ে বড়ো অক্টোপাসের প্রজাতির একটি, পাঁচ বছরের মত বাঁচে। অক্টোপাসের জীবন তাদের বংশবৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। পুরুষ অক্টোপাসেরা স্ত্রী অক্টোপাসের সাথে মিলিত হবার পর মাত্র কিছু মাস বেচে থাকে আর স্ত্রী অক্টোপাস ডিম ফোটার কিছুদিন পরেই মারা যায়। অক্টোপাসের জননাঙ্গসমূহ পূর্ণতা পায় অপটিক গ্ল্যান্ডের হরমোনের প্রভাবে কিন্তু এর ফলে তাদের পরিপাক তন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়ে, সেটাই আসলে তাদের মৃত্যুর কারণ। তারা অনাহারে মারা যায়।[৪]:২৭৬–২৭৭পরীক্ষাগারে পরিক্ষামূলকভাবে মিলনের পর অক্টোপাসের উভয় অপটিক তন্ত্র অপসারণ করে দেখা গেছে ডিমের যত্ন না নিয়ে অক্টোপাসগুলো খাবার খাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জীবনকালও বৃদ্ধি পাচ্ছে।[৫]
বংশ বিস্তার
[সম্পাদনা]স্ত্রী অক্টোপাস প্রায় দেড় লক্ষ ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা বের হবার পর মা অক্টোপাস মারা যায়।
চিত্র
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ দৃষ্টি আকর্ষণ: এই টেমপ্লেটি ({{cite doi}}) অবচিত। doi দ্বারা চিহ্নিত প্রকাশনা উদ্ধৃত করার জন্য:10.1111/1475-4983.00155, এর পরিবর্তে দয়া করে
|doi=10.1111/1475-4983.00155
সহ {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}} ব্যবহার করুন। - ↑ Helsinki.fi ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে, Mikko's Phylogeny Archive: Coleoidea – Recent cephalopods
- ↑ "How many hearts does an octopus have?"। বিবিসি ফোকাস। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৩।
- ↑ Anderson, Roland C.; Wood, James B.; Byrne, Ruth A. (২০০২)। "Octopus Senescence: The Beginning of the End"। Journal of Applied Animal Welfare Science। 5 (4): 275–283। ডিওআই:10.1207/S15327604JAWS0504_02।
- ↑ Wodinsky, Jerome (১৯৭৭)। "Hormonal Inhibition of Feeding and Death in Octopus: Control by Optic Gland Secretion"। Science। 198 (4320): 948–951। ডিওআই:10.1126/science.198.4320.948। পিএমআইডি 17787564।