লাভ বার্ড
লাভ বার্ড | |
---|---|
ফিশার লাভ বার্ড | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Psittaciformes |
মহাপরিবার: | Psittacoidea |
পরিবার: | Psittaculidae |
উপপরিবার: | Agapornithinae |
গণ: | Agapornis Selby, 1836 |
Species | |
Nine - see text |
লাভবার্ড (ইংরেজি: Lovebird) এর প্রজাতিক নাম “আগাপোরনিস”। গ্রিক ভাষায় আগাপেইন হলো (Agapein) "to love" ও ওর্নিস (Ornis) হলো ল্যাটিন শব্দ "বার্ড"। সারা পৃথিবীতে এই প্রজাতির পাখিটি লাভ বার্ড নামে পরিচিত। এদের গড় আয়ুঃ ২০ বছর। এরা ৫-৭ ইঞ্ছি বা ১৩ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এদের আদিনিবাস আফ্রিকা এবং মাদাগাস্কার। সারা পৃথিবীতে নয় জাতের লাভ বার্ড দেখা যায়, এর মধ্যে আট জাতের মূল আবাসস্থল আফ্রিকা এবং একটি জাতের মূল আবাসস্থল মাদাগাস্কার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় প্রজাতি হচ্ছে “Beloved Peach-Faced Lovebird”। এরা সাধারণত ১০-১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।[১]
আচার-আচরণ
[সম্পাদনা]লাভবার্ড খুবই চটপটে একটি পাখি, সারাদিন বিভিন্ন রকম কাজে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। তবে এদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আচরণটি হল উচ্চস্বরে চিল্লাচিল্লি। এটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হলেও লাভবার্ড প্রেমীদের কাছে খুবই মনোহর। এছাড়া আরও একটি বিষয় হল লাভবার্ড প্রচন্ড রকমের ভীতু। কোনোরকমের শব্দ পেলেই লুকানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, খাঁচায় হাড়ি/বক্স দেয়া থাকলে সাথে সাথে তার মধ্যে ঢুকে পড়ে। এছাড়া বসার ডাল, খেলনা ইত্যাদি চাবানো এদের অন্যতম প্রিয় একটি কাজ
মিউটেশন বা জাত
[সম্পাদনা]পৃথিবীতে লাভবার্ডের মোট ৯ টি প্রজাতি আছে, এদের আবার অসংখ্য উপপ্রজাতি আছে যা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের দেশে যেগুলো বেশি পাওয়া যায় সেগুলো হলো লুটিনো, রোজি ফেসড বা পিচ ফেসড, গ্রিন ফিসার, লুটিনো ফিসার, ইয়েলো ফিসার, চিকমাস্ক বা ব্লাকমাস্ক, ব্লু মাস্ক, বিভিন্ন রকম অপালিন ইত্যাদি। এছাড়া লাভবার্ড মূলত ২ টি গোত্রে বিভক্ত - রিং বার্ড এবং নন রিং বার্ড। ফিসার গোত্রের যেকোন পাখিই রিং বার্ড, যেমন- গ্রিন ফিসার, লুটিনো ফিসার ইত্যাদি। এছাড়া চিকমাস্ক, ব্লু মাস্ক, ভায়োলেট মাস্ক এর মতো মিউটেশন গুলাও রিং বার্ড। নন রিং বার্ডের মধ্যে যেকোন অপালিন মিউটেশন, সাধারণ লুটিনো, পিচ ফেস বা রোজি ফেস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
অন্য ৮ টি প্রজাতি হচ্ছে-
- Abyssinian Lovebird
- Albino Lovebird
- Black Masked Lovebird
- Blue Masked Lovebird
- Dutch Blue Lovebird
- Fischer's Lovebird
- Lutino Lovebird
- Peach-faced Lovebird
এদের মধ্যে চার জাতের লাভ বার্ড বেশি দেখা যায় –
- Peach-faced Lovebirds
- Masked Lovebirds
- Fischer's Lovebirds
- Lutino Lovebird
তবে বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ক্রস করে নতুন নতুন রঙের ও নামের লাভ বার্ড পাখির জন্ম দিচ্ছে। লাভ বার্ড যদিও তোতা পাখি কিন্তু তারা মানুষের কথা অনুকরণ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু লাভ বার্ড প্রজাতির মায়েরা বাচ্চাদেরকে ছোটবেলায় এই কথা অনুকরণ যেন না করে বাচ্চাদের সেই রকম শিক্ষা দেয়, কেননা যদি তারা অন্য প্রানীর ভাষা অনুকরণ করে তাহলে তাদের যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটবে। তোতা পাখির প্রজাতির মধ্যে পড়লেও এরা তোতাপাখির চেয়ে অধিক জনপ্রিয়। কেননা তোতাপাখির চেয়ে এরা আকারে ছোট এবং এদের সৌন্দর্যও অধিক। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এদেরকে খুব অল্প জায়গাতেই লালন পালন করা সম্ভব। আমাদের দেশে সহজেই লালন পালন করা যায় বিধায় ও দেখতে খুব সুন্দর ও সামাজিক পাখি বলে অনেকেই বাসায় পালন করেন ।
রিং, নন রিং ও হাইব্রিড লাভবার্ড
[সম্পাদনা]রিং লাভবার্ড
[সম্পাদনা]দের চোখের চারপাশে বেশ মোটা এবং সাদা রং এর গোলাকার একটা বর্ডার থাকে। নিচের প্রথম ছবি দুইটা দেখলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। চিকমাস্ক, ব্লু মাস্ক, কোবাল্ট মাস্ক, ইয়েলো কলার্ড, বিভিন্ন ফিসার গোত্রীয় লাভবার্ড যেমন - গ্রীণ ফিসার, ভায়োলেট ফিসার, ইয়েলো ফিসার, লুটিনো ফিসার এরা সবই রিং বার্ড। নিচের ১ & ২ নং ছবি দেখলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।
নন রিং লাভবার্ড
[সম্পাদনা]রিং বার্ডের মত এদের চোখের চারপাশে কোনো সাদা বর্ডার থাকেনা। নিচের ৩ & ৪ নং ছবি দেখলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। পিচ ফেস, লুটিনো পিচ ফেস, যেকোনো ধরনের অপালিন মিউটেশনের লাভবার্ডই নন রিং। অর্থাৎ চোখের রিংটাই রিং & নন রিং বার্ডের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য, এছাড়া এদের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য নেই।
হাইব্রিড লাভবার্ড
[সম্পাদনা]রিং বার্ড এবং নন রিং বার্ডের মধ্যে জোড়া দিলে যে বাচ্চা বের হয় তাকে হাইব্রিড বা ক্রসব্রিড বলে। এই বাচ্চা দ্বিতীয়বার আর ব্রিড করতে পারে না। তাই পাখি জোড়া দেওয়ার সময় এবং ক্রয় করার সময় এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
প্রজনন
[সম্পাদনা]লাভবার্ড ব্রিড করানোর সর্বনিম্ন বয়স হলো ১ বছর, দেড় বছরে করালে সবচেয়ে ভালো হয়। বছরে ২ বারের বেশি ব্রিড করানো উচিত না। এরা সাধারনত ৪-৬ টা ডিম পাড়ে। কখনো কখনো ৮ টা পাড়তেও দেখা যায় কিন্ত তা খুবই কম। মেয়ে পাখি একাই ডিমে তা দেয়। সবকিছু ঠিক থাকলে মোটামুটি ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই বাচ্চা ফোটে। মজার ব্যাপার হলো, বাজ্রিগার, ফিঞ্চ এদের বাচ্চা ফুটলে একরকম শব্দ করে। ফলে বাইরে থেকেই বোঝা যায় যে বাচ্চা ফুটেছে। কিন্ত লাভবার্ড এর বাচ্চা এমন কোন শব্দ করে না, তাই বাইরে থেকে বোঝা যায় না। লাভবার্ড এর বাচ্চার বৃদ্ধি সাধারনত বাজি/ফিঞ্চের তুলনায় একটু ধীরে হয়। ৪০-৪৫ দিনের মত সময় লাগে ভালোভাবে খাওয়া শিখতে। মেটিং এর পর থেকে বাচ্চা বড় হওয়া পর্যন্ত এদেরকে যথেষ্ট প্রাইভেসি দিতে হবে। সম্ভব হলে খাচাটি একটু নির্জন জায়গায় মানুষের আড়ালে রাখতে হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া খাচার আশেপাশে যাওয়া উচিত নয়। এবং এসময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করাও খুব জরুরী।
খাবার
[সম্পাদনা]লাভবার্ডের সীডমিক্সে সাধারনত কাউন, চিনা, বাজরা, তিসি, সূর্যমুখী ফুলের বিচি, কুসুম ফুলের বিচি, সরিষা, ধান, বিভিন্ন ধরনের ফল, কচি ঘাসের পাতা ও সবজি ও বিভিন্ন ফল খেতে পছন্দ করে। নির্দিষ্ট কোনো অনুপাত নেই কারণ সব পাখির পছন্দ-অপছন্দ এক না। সীডমিক্সের পাশাপাশি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের শাক, সবজি, ফলমূল দেয়াও জরুরী। খাঁচায় কাটেল ফিসবোনও রাখতে হবে। একটি পাখি দিনে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম খাবার গ্রহণ করে। প্রচুর পানি পান করে থাকে । তাই সারাক্ষণ পানি ব্যবস্থা করতে হবে । এরা প্রতিদিন গোসল করতে পছন্দ করে । লাভ বার্ড অলস প্রকৃতির ও শান্তি প্রিয় পাখি , তাই এদের খুব নিরিবিলি পরিবেশে রাখতে হয় । [২]
সর্তকতা
[সম্পাদনা]পাখির খাচায় যেন পলিথিন বা প্লাস্টিক জাতীয় পাত্র না থাকে । কারণ এরা ওদের ধারাল দাঁত দিয়ে সারাক্ষণ কামড়ায় । কোন কারণে প্লাস্টিক কেটে খেয়ে ফেললে, অসুস্থ বা মারা যেতে পারে । খাচায় এই পাখি পালন করতে হলে ২৪x ২৪ x ২৪ ইঞ্চি একটি খাচায় এক জোড়া পাখি পালন করতে হবে । খাচায় যখন পাখি পালন করা হয় তখন পাখি অনেক ভিটামিন- মিনারেল গ্রহণ করতে পারে না । এজন্য পাখি চিকিৎসাকের পরামর্শে ভিটামিন ও মিনারেল অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দিতে হবে।
ছবি গ্যালারি
[সম্পাদনা]-
পারব্লু লাভবার্ড
-
মাদাগাস্কার লাভ বার্ড।
-
A feral Peach-faced Lovebird (Agapornis roseicollis) also known as the Rosy-faced Lovebird eating grass seeds in Chicago, Illinois, USA.
-
হাইব্রিড লাভবার্ড (ফিশার লাভ বার্ড × মাস্ক লাভ বার্ড)।
-
Agapornis fischeri
-
লুটিনো (orange) ও Blu মিউটেশন
-
ফিশার লাভ বার্ড।
-
গাছ মধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে লাভবার্ড সেরেঙ্গেটি, তাঞ্জানিয়া।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Alderton, David (২০০৩)। The Ultimate Encyclopedia of Caged and Aviary Birds। London, England: Hermes House। পৃষ্ঠা 216–219। আইএসবিএন 1-84309-164-X।
- ↑ "লাভ বার্ড পালন করে আয়"। Daily Inqilab। সংগ্রহের তারিখ 02 April 2017। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)