২২° বর্ণবলয়

২২° বর্ণবলয় হলো এক ধরনের আলোকীয় ঘটনা। বরফ-স্ফটিকে আলোর ক্রিয়ার ফলে এই ধরনের বর্ণবলয়ের উদ্ভব হয়। সূর্য বা চাঁদের চারপাশে আনুমানিক ২২° আপাত ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট এই বলয় বা চক্রের আবির্ভাব হয়। চাঁদের চারপাশে গঠিত হলে, একে চন্দ্র বলয়, মুন রিং বা শৈত্য বলয় (উইন্টার হ্যালো) বলা হয়। বায়ুমণ্ডলের ঘনীভূত ষড়ভুজাকার বরফ-স্ফটিকে সরাসরি আপতিত সূর্য বা চাঁদের আলো প্রতিসরিত হয়ে এ ধরনের বর্ণবলয় গঠন করে।[১] বলয়গুলো আকারে বৃহৎ দেখাতে পারে। এর ব্যাসার্ধ প্রসারিত বাহুর দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান।[২] ২২° বর্ণবলয় প্রতি ১০০ দিনে একবার দেখা যেতে পারে; অর্থাৎ, প্রকৃতিতে রংধনুর চেয়েও এদের বেশি দেখা যায়।[৩]
গঠন
[সম্পাদনা]

সবচেয়ে সাধারণ বর্ণবলয় হওয়া সত্ত্বেও, ২২° বর্ণবলয়ের জন্য দায়ী বরফ-স্ফটিকের আকার ও ধরনের বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ষড়ভুজাকার, এলোমেলোভাবে সজ্জিত বরফ-স্ফটিকের স্তম্ভ ইত্যাদিকে এই প্রাকৃতিক ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়। তবে এ জাতীয় ব্যাখ্যায় সমস্যা রয়েছে। যেমন: বাতাসের গতিধর্মের কারণে স্ফটিকগুলো এলোমেলো না থেকে আনুভূমিকভাবে সজ্জিত হএয়ার প্রবণতা দেখায়। এছাড়া বুলেট-আকৃতির স্তম্ভাকার মেঘপুঞ্জের উপস্থিতি দ্বারা অনেক সময় এই ঘটনার বিকল্প ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।[৪][৫]
বরফের ষড়ভুজাকার প্রিজমের সর্বোচ্চ ৬০° কোণের মধ্য দিয়ে গমন করার সময় আলো দুইবার অপসৃত হয়। ফলাফলস্বরূপ চূড়ান্তভাবে ২২° থেকে ৫০° কোণে আলো বিচ্যুত হয়। ষড়ভুজাকার বরফ প্রিজমে আলো আলোর ন্যূনতম বিচ্যুতি কোণ হয় প্রায় ২২° (গড়ে ২১.৮৪°; লাল আলোর জন্য ন্যূনতম বিচ্যুতি ২১.৫৪° এবং নীল আলোর ন্যূনতম বিচ্যুতি ২২.৩৭°)। তরঙ্গদৈর্ঘ্য-নির্ভর আলোর প্রতিসরণে এই পার্থক্যের কারণে বর্ণবলয়ের অভ্যন্তরভাগ কিছুটা লালাভ এবং বহির্ভাগ কিছুটা নীলাভ হয়ে থাকে।
প্রতিটি বরফ-স্ফটিকই প্রায় একইরকমভাবে আলোকে প্রতিসরিত করে। কিন্তু কেবলমাত্র ২২ ডিগ্রি কোণে অপসৃত আলো থেকেই একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে বর্ণবলয় দৃশ্যমান হয়। ২২°-এর নিচে কোনো আলো প্রতিসরিত না হওয়ায় বর্ণবলয়ের অভ্যন্তরের আকাশ অপেক্ষাকৃত অন্ধকার বলে মনে হয়।[৬]
অনেক সময় সূর্য ও চাঁদের আশেপাশে করোনা নামক একধরনের আলোকীয় ঘটনাকে ২২° বর্ণবলয় বলে ভ্রম হয়। ২২° বর্ণবলয়ের চাইতে করোনা অনেক ছোট, কিন্তু অধিক বর্ণীল হয়ে থাকে। বরফ-স্ফটিকের বদলে পানির ফোঁটা থেকে করোনার উৎপত্তি হয়।[২]

আবহাওয়ার সাথে সংশ্লিষ্টতা
[সম্পাদনা]লোকগাথা অনুযায়ী, চন্দ্রবলয়কে আসন্ন ঝড়ের সংকেত হিসেবে গণ্য করা হয়।[৭] অন্যান্য বরফঘটিত বর্ণবলয়ের মতো, আকাশে অলকমেঘ বা অলকস্তরী মেঘের উপস্থিতিতে ২২° বর্ণবলয় সৃষ্টি হয়। সাধারণত বড়সড় কোনো ঝড়ের কয়েকদিন পূর্বেই এই ধরনের মেঘ বাহিত হয়ে আসে।[৮] তবে, আবহাওয়ার সংশ্লিষ্ট পরিবর্তনের সময়ও এই ধরনের মেঘের আবির্ভাব হতে পারে। সেক্ষেত্রে, ২২° বর্ণবলয় থেকে খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস কার্যকর হয় না।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
ফিলিপাইনের টারল্যাকে দৃশ্যমান ২২° সৌর বর্ণবলয়, ২৮ এপ্রিল ২০১৯
-
দক্ষিণ মেরুতে ২২° সৌর বর্ণবলয়ের সাথে দৃশ্যমান মায়া সূর্য ও দুর্লভ নিম্ন স্পর্শকীয় চাপ, ১২ জানুয়ারি ২০০৯
-
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের স্প্রিংফিল্ডের আকাশে দৃশ্যমান ২২° পূর্ণচক্রীয় চান্দ্র বর্ণবলয়, ২৭ মে ২০১৮
-
২২° পূর্ণচক্রীয় সৌর বর্ণবলয়, বাংলাদেশ, ১৯ মার্চ ২০২০
-
যুক্তরাষ্ট্রের অকল্যান্ডে দৃশ্যমান ২২° চান্দ্র বর্ণবলয়, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
-
কোল্ড মুনের সময় দৃশ্যমান ২২° বর্ণবলয়, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, পাজারো ডুন্স, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
-
নিউজিল্যান্ডের আবেল তাসমান থেকে দৃশ্যমান ২২° বর্ণবলয়, ১ জানুয়ারি ২০২১
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ""Disk with a hole" in the sky"। atoptics.co.uk।
- ↑ ক খ Les Cowley। "22° Circular halo"। Atmospheric Optics। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-১৫।
- ↑ Pretor-Pinney, Gavin (২০১১)। The Cloud Collector's Handbook। San Francisco: Chronicle Books। পৃষ্ঠা 120। আইএসবিএন 978-0-8118-7542-4।
- ↑ Tape, Walter; Moilanen, Jarmo (২০০৬)। Atmospheric Halos and the Search for Angle x। Washington, DC: American Geophysical Union। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 0-87590-727-X।
- ↑ Cowley, Les (এপ্রিল ২০১৬)। "Bullet Rosettes & 22° Halos"। Atmospheric Optics। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-৩০।
- ↑ Les Cowley। "22° Halo Formation"। Atmospheric Optics। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-১৫। (Including excellent illustrations and animations.)
- ↑ "Why a halo around the sun or moon?"। earthsky.org। EarthSky। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬।
Lunar halos are signs that storms are nearby.
- ↑ Harrison, Wayne (ফেব্রুয়ারি ১, ২০১২)। "Nelson: Ring Around Moon Sign Of Approaching Storm"। The Denver Channel। Denver। TheDenverChannel.com। ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১২।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]