২০১৮ নোয়াখালী গণধর্ষণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ধানের শীষে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য বাগ্যার গ্রামে স্বামী সন্তানকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে (৩২) গণধর্ষণ করা হয় [১][২][৩]। নির্যাতনের শিকার নারী পারুল জানান ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা সবাই একই এলাকার চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনের লোক। তারা সবাই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। ভোটের দিন আসামিরা তাকে নৌকায় ভোট দিতে বলেন। তিনি তাতে রাজি না হলে এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে যুবকেরা তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এরপর ওই দিন রাতে বাড়িতে গিয়ে তারা মারধর ও ধর্ষণ করেন[৪]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

নোয়াখালীর সুবর্নচর উপজেলার ৫ নং চরজুবলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মো: সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী পারুল আক্তার ভোট দিতে যায়। এ সময় ১০/১৫ জন তাকে ঘিরে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য কিন্তু তিনি ধানের শীষ ভোট দেন[৫][৬]। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

রবিবার রাত ১২ টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা[৭] সাবেক মেম্বার রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ৮-১০ জনের একদল সন্ত্রাসী দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে চলে যায়। এতে তার স্ত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গৃহবধুর গলা কেটে হত্যার পরিকল্পনা করলে তিনি সন্ত্রাসীদের হাত পা ধরে কান্নাকাটি করে জীবন ভিক্ষা চান। ফলে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা না করেই ভোর ৫টার দিকে পুকুর ঘাটে ফেলে যায়।[৮] ধর্ষকেরা চলে যাওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করে। পরে ধর্ষিতাকে আহত অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ধর্ষিতার স্বামী সিরাজ মিয়া বাদী হয়ে মো. সোহেল (৩৫), মো. হানিফ ৩০), মো. স্বপন (৩৫), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বেচু (২৫), বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু (৪০), আবুল (৪০), মোশারফ (৩৫) ও ছালা উদ্দিনের (৩৫) নামে মামলা করেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা: খলিল উল্লাহ বলেন, গৃহবধূ ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। চর জব্বার থানার পুলিশ ধর্ষণ ঘটনার মূল হোতা আমিন বাহিনীর প্রধান রুহুল আমিনকে বৃহস্পতিবার রাত ২টায় গ্রেফতার করে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে নোয়াখালী সচেতন ছাত্রসমাজের ব্যানারে দুপুরে জেলা শহর মাইজদী টাউনহল মোড়ে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা যেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।[৯] এর আগে মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলা থেকে মামলার তিন নম্বর আসামি স্বপনকে এবং বুধবার দুপুরে সোহেলকে কুমিল্লার বরুড়ার মহেশপুরের একটি ইটভাটা থেকে নোয়াখালী ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে।

বিচার[সম্পাদনা]

দীর্ঘ ৫ বছর পর বিচারকার্য শেষে এই মামলায় ১০ অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড ও অন্য ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২ বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ও জরিমানা না দিলে আরও দুই বছরের কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়।[১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ধানের শীষে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের, গ্রেফতার ১"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "সুবর্ণচরে ধর্ষণ, প্রধান আসামি আ.লীগ কর্মী গ্রেপ্তার"ঢাকা টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৯ 
  3. "নোয়াখালীতে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে গণধর্ষণ"দৈনিক সমকাল। ১ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "সুবর্ণচরে নারী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৯ 
  5. "ভোটের দিন ধর্ষণ: নোয়াখালীর সেই আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার"বিডিনিউজ। ৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৯ 
  6. "নোয়াখালীর সেই গৃহবধু গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ৩"দৈনিক নয়াদিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "গৃহবধু ধর্ষণের নির্দেশদাতা আ'লীগ নেতা রুহুল আমিন গ্রেফতার"। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৯ 
  8. "গণধর্ষণ জবাইয়ের চেষ্টা!"। দৈনিক কালেরকন্ঠ। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৯ 
  9. "ধর্ষক রুহুল : চা দোকানি থেকে যেভাবে কোটিপতি"। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৯ 
  10. "নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণ, ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড"। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪