স্তন ক্যান্সার
স্তন্য ক্যান্সার | |
---|---|
মেমোগ্রামসে একটি সাধারণ স্তন (বামে) এবং একটি ক্যান্সার আক্রান্ত স্তন (ডানে, তীর চিহ্নসহ)। | |
বিশেষত্ব | অনকোলজি |
লক্ষণ | একটি স্তনের মধ্যে লাম্প, স্তনের আকৃতিতে পরিবর্তন, ত্বকে ডিম্পল হওয়া, স্তনবৃন্ত থেকে তরল আসা, নতুন উল্টানো স্তনবৃন্ত, ত্বকের লাল স্ক্যালি প্যাচ |
ঝুঁকির কারণ | মহিলা, স্থূলতা, ব্যায়ামের অভাব, অ্যালকোহল, মেনোপেজের সময় হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি, কাইনফেল্টার সিনড্রোম, বাচ্চা না থাকা বা বেশি বয়সে বাচ্চা হওয়া, বয়স হওয়া, পারিবারিক ইতিহাস [১][২] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | টিস্যু বায়োপসি |
চিকিৎসা | অস্ত্রপাচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি |
আরোগ্যসম্ভাবনা | পাঁচ-বছর বাঁচার হার ~৮৫% (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য) |
মৃতের সংখ্যা | ৫,৩৩,৬০০ (২০১৫)[৩] |
স্তন্য ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এতোদিন এই ক্যান্সারের ব্যাপারে নারীদের সচেতন করার জোরটা ছিল বেশি, কিন্তু এখন পুরুষদেরকেও সচেতন করার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কারণ, পুরুষদের মধ্যেও স্তন্য ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। যদিও পুরুষদের স্তন্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই কম। এক হিসেবে দেখা যায় যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ৪১ হাজার মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, সেই তুলনায় মাত্র ৩০০ জন পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হন।
লক্ষণ বা উপসর্গ
[সম্পাদনা]- স্তনের কোন অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া
- স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন
- স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন
- স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া
- স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া
- বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া
- স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া
শ্রেণিবিভাগ
[সম্পাদনা]স্তন ক্যান্সার বিভিন্ন গ্রেডিং সিস্টেম দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এই প্রতিটি প্রজনন প্রভাবিত করে এবং চিকিৎসা প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত করতে পারে। স্তন ক্যান্সারের বর্ণনাটি সর্বোত্তমভাবে এই সমস্ত কারণগুলি অন্তর্ভুক্ত করে।
হিস্টোপ্যাথোলজি। স্তন ক্যান্সার সাধারণত প্রাথমিকভাবে তার হিস্টোলজিকাল দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। সর্বাধিক স্তন ক্যান্সার ডাক্তস বা লোবিঊলস আচ্ছাদিত ইপেথেলিয়াম, থেকে উদ্ভূত হয়, এবং এই ক্যান্সার ডাক্টাল বা লোবুলার কারসিনোমা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। বসন্তের কার্সিনোমা নিম্নমানের ক্যান্সারযুক্ত বা প্রিন্স্যান্সার কোষগুলির বৃদ্ধি বিশেষ টিস্যু কোষের অভ্যন্তরে যেমন পার্শ্ববর্তী টিস্যু আক্রমণ না করে স্তন্যপায়ী নল। বিপরীতে, আক্রমণকারী কার্সিনোমা প্রাথমিক টিস্যু কোষে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে না। [৪]
ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাফি
[সম্পাদনা]৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিনবছর পর পর ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। ম্যামোগ্রাম হচ্ছে এক্স-রে’র মাধ্যমে নারীদের স্তনের অবস্থা পরীক্ষা করা। সাধারণত প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার এতো ছোট থাকে যে বাইরে থেকে সেটা বোঝা সম্ভব হয় না। কিন্তু ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে খুব ছোট থাকা অবস্থাতেই বা প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরলে ক্যান্সার থেকে সুস্থ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রচুর থাকে। আর এই পরীক্ষার জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে।
ঝুঁকির মাত্রা বেশি যাদের
[সম্পাদনা]৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। স্তন ক্যান্সারে যতোজন আক্রান্ত হন তাদের ৮০ ভাগেরই বয়স হচ্ছে ৫০-এর ওপর। সেই সাথে যাদের পরিবারে কারোর স্তন ক্যান্সার রয়েছে তাদেরও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।
জিনগত পরিব্যক্তি
[সম্পাদনা]স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কিছু কিছু জিনগত পরিব্যক্তিও অনেকসময়েই দায়ী হয়ে থাকে। এমনকি সারা বিশ্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৫-১০% স্তন ক্যান্সার জিনগত পরিব্যক্তির কারণেই হয়ে থাকে। ডাক্তারি মতে, যেসব মহিলাদের মায়েদের ৫০ বছরের আগেই স্তন ক্যান্সার ধরা পরেছে তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায় যেখানে এই সংখ্যাটি নেমে ১.৪ শতাংশ হয়ে যায় সেইসব মহিলাদের ক্ষেত্রে যাদের মায়েদের স্তন ক্যান্সার ৫০ বছর বা তারপরে গিয়ে ধরা পরেছে। আবার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যেসব মহিলাদের আত্মীয়দের মধ্যে স্তন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে শূণ্য, এক বা দুই সেইসব ক্ষেত্রে তাদের ৮০ বছরের আগে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা যথাক্রমে ৭.৮%, ১৩.৩% এবং ২১.১%। শুধু তাই নয় এসব ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুহারের পরিমাণ যথাক্রমে ২.৩%, ৪.২% এবং ৭.৬%। এমনকি যেসব মহিলাদের ফার্স্ট ডিগ্রী আত্মীয়দের মধ্যে যদি কারোর স্তন ক্যান্সার ধরা পরে তবে তাদের ৪০-৫০ বছরের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা সাধারণ মানুষের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ৫% এর কম ক্ষেত্রে দেখা যায় যে জিনগত পরিব্যক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বিশ্ব ক্যান্সার প্রতিবেদন ২০১৪। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০১৪। পৃষ্ঠা অধ্যায় ৫.২। আইএসবিএন 92-832-0429-8।
- ↑ "Klinefelter Syndrome"। Eunice Kennedy Shriver National Institute of Child Health and Human Development। ২৪ মে ২০০৭। ২৭ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ GBD 2015 Mortality and Causes of Death, Collaborators. (৮ অক্টোবর ২০১৬)। "Global, regional, and national life expectancy, all-cause mortality, and cause-specific mortality for 249 causes of death, 1980–2015: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2015."। Lancet। ৩৮৮ (১০০৫৩): 1459–1544। ডিওআই:10.1016/s0140-6736(16)31012-1। পিএমআইডি ২৭৭৩৩২৮১
|pmid=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। পিএমসি ৫৩৮৮৯০৩|pmc=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। - ↑ Merck Manual, Professional Edition ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ নভেম্বর ২০১১ তারিখে, অধ্যায়২৫৩, স্তন ক্যান্সার
- ↑ Collaborative Group on Hormonal Factors in Breast Cancer (২৭ অক্টোবর ২০০১)। "Familial breast cancer: collaborative reanalysis of individual data from 52 epidemiological studies including 58,209 women with breast cancer and 101,986 women without the disease"। ল্যাঞ্চেট। ৩৫৮ (৯২৯১): ১৩৮৯–৯৯। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(01)06524-2। পিএমআইডি 11705483।