সিস্ত্রাম
| ||
সিস্ত্রাম চিত্রলিপিতে |
---|
সিস্ত্রাম হল পারকাশন পরিবারের একটি বাদ্যযন্ত্র, যা মূলত প্রাচীন মিশরীয় সংস্কৃতির সাথে যুক্ত। [১] সিস্ত্রাম শব্দটি গ্রীক সিস্ট্রন মূলধাতু হতে উদ্ভূত, যার অর্থ যা ঝাঁকানো বা কাঁপানো হয়েছে। এটি একটি হাতল এবং একটি U-আকৃতির ধাতব কাঠামো নিয়ে গঠিত, যা মূলত পিতল বা ব্রোঞ্জের তৈরি এবং ৩০ থেকে ৭৬ সেমি প্রস্থবিশিষ্ট। যখন ঝাঁকুনি দেওয়া হয়, তখন এর চলমান ক্রসবারগুলিতে পাতলা ধাতুর ছোট রিং বা লুপগুলি এমন একটি শব্দ উৎপন্ন করে, যা কোমল ঝনঝন থেকে জোরালো শ্রুতিকটুও হতে পারে। প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় এর নাম ছিল সেখেম এবং সেশেশেট।
সেখেম হল সরল হুপের মতো সিস্ত্রাম, অন্যদিকে সেশেশেট হল নাওস -আকৃতির সিস্ত্রাম। আধুনিক দিনের পশ্চিম আফ্রিকান ডিস্ক র্যাটেল যন্ত্রটিকেও সিস্ত্রাম বলা হয়ে থাকে। [২]
মিশরীয় সিস্ত্রাম
[সম্পাদনা]প্রাচীন মিশরে সিস্ত্রাম একটি পবিত্র যন্ত্র ছিল। সম্ভবত বাদুড়ের উপাসনার জন্য এর উদ্ভব হয়েছিলো। এছাড়াও বিশেষ নৃত্য এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে এটি ব্যবহৃত হত, বিশেষ করে দেবী হাথোরের উপাসনায়। সিস্ত্রামের হাতল এবং কাঠামোর U- আকৃতি গরু দেবীর মুখ এবং শিংগুলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। [৩] এটি নীল নদের বন্যা এড়াতে এবং সেটকে ভয় দেখানোর জন্যও ঝাঁকানো হয়েছিল। [৪]
নীল নদের বন্যার প্রতীক, মা এবং সৃষ্টির দেবী আইসিসকে চিত্রিত করা হয়েছিল এক হাতে একটি পাত্র এবং আরেক হাতে একটি সিস্ত্রাম ধরিয়ে দিয়ে।[৫]
মিনোয়ান সিস্ত্রাম
[সম্পাদনা]প্রাচীন মিনোয়ানরাও সিস্ত্রাম ব্যবহার করত এবং ক্রিট দ্বীপে স্থানীয় মাটির তৈরি বেশ কয়েকটি নমুনাও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাঁচটি অ্যাজিওস নিকোলাওসের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়। হাগিয়া ট্রায়াডাতে একটি শিল্পকর্ম পাওয়া যায়, যেথায় হার্ভেস্টার ফুলদানিতে একটি সিস্ত্রাম চিত্রিত করা রয়েছে।
গবেষকরা এখনও নিশ্চিত নন যে মাটির সিস্ত্রামটি আদৌ সঙ্গীতে ব্যবহৃত প্রকৃত যন্ত্র ছিল, নাকি পরিবর্তে শুধুমাত্র প্রতীকী নকশা ছিল। কিন্তু, একটি সিরামিক প্রতিরূপ নিয়ে করা পরীক্ষাগুলি দেখায় যে কাদামাটিতে এই জাতীয় নকশার দ্বারা একটি সন্তোষজনক ঝনঝন শব্দ তৈরি হয়, তাই আচার-অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার অনেকের পছন্দনীয়।[৬]
আধুনিক সিস্ত্রাম
[সম্পাদনা]স্যানাসেল (সিস্ত্রাম) শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স চার্চে একটি উপাসনামূলক যন্ত্র হিসেবে রয়ে গেছে এবং আজও চার্চের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে ডেটেরা (ক্যান্টর) দ্বারা সঞ্চালিত নাচের সময় সেটা বাজানো হয়। এটি মাঝে মাঝে নিওপাগান পূজা এবং আচার-অনুষ্ঠানেও পাওয়া যায়।
ঊনিশ শতকের পশ্চিমা ঐকবাদন সঙ্গীতে মাঝে মাঝে সিস্ত্রামের ব্যবহার পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, যা ফরাসি সুরকার হেক্টর বারলিওজের অপেরা লেস ট্রয়েনস (১৮৫৬- ১৮৫৮) এর প্রথম কর্মে -এ সবচেয়ে বিশিষ্টভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল। আজকাল, এটি তার ঘনিষ্ঠ আধুনিক সমতুল্য ট্যাম্বোরিন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
ধ্রুপদী সুরকার হ্যান্স ওয়ার্নার হেনজে (১৯২৬ -২০১২) তার ১৯৮৮ সালের রচনা 'সোনাটা ফর সিক্স প্লেয়ারস'-এ বাঁশিবাদককে দুটি সিস্ত্রা বাজানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।
পশ্চিম আফ্রিকা
[সম্পাদনা]বিভিন্ন আধুনিক পশ্চিম আফ্রিকান এবং গ্যাবন র্যাটল যন্ত্রকে সিস্ত্রা (সিস্ত্রামের বহুবচন) অথবা ক্যালাব্যাশ সিস্ত্রাম, পশ্চিম আফ্রিকান সিস্ত্রাম বা ডিস্ক র্যাটল, ওয়াসাম্বা বা ওয়াসাহাউবা র্যাটল নামেও ডাকা হয়। এটিতে সাধারণত একটি V-আকৃতির শাখা থাকে যার সাথে কিছু বা অনেকগুলি অবতল ক্যালাব্যাশ ডিস্ক সংযুক্ত থাকে, যা সজ্জিত করা যেতে পারে। [৭]
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
বিকৃত মিশরীয় সিস্ত্রাম।
-
দ্বিতীয় রামসেসের স্ত্রী নেফারতারি একটি শেখেম জাতীয় সিস্ত্রাম ধরে আছে।
-
মিশরীয় সিস্ত্রাম।
-
ল্যুভর যাদুঘরে সিস্ত্রামের সংগ্রহশালা।
-
ওয়াল্টার'স আর্ট মিউজিয়াম , আণু. ৩৮০–২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
-
হাদ্রিয়ানের অধীনে নির্মিত মুদ্রায় সিস্ত্রাম হাতে বসে থাকা এক রমনী।
-
হাদ্রিয়ানের সময় হতে সিস্ত্রাম হাতে দণ্ডায়মান দেবী আইসিস।
-
দুটি র্যাটল ডিস্ক (সিস্ত্রা) হাতে স্কুল ব্যান্ড খেলোয়ার, জিগুইনচর, সেনেগাল, ১৯৭৩।
-
তামার তৈরি এনাটোলিয়া (তুরস্ক), ২৩০০-২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ σεῖστρον, σείω. Liddell, Henry George; Scott, Robert; পারসিয়াস প্রজেক্টে এ গ্রিক–ইংলিশ লেক্সিকন.
- ↑ Smithsonian National Museum of African Art https://africa.si.edu/collections, search for sistrum[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Hart (2005), পৃ. 65
- ↑ Plutarch (1936), cap. 63
- ↑ Merchant (1992), পৃ. 115
- ↑ Philip P. Betancourt, Costis Davaras, and Eleni Stravopodi, "Excavations in the Hagios Charlambos Cave: A Preliminary Report", Hesperia 77 (2008): 539–605.
- ↑ "Musée virtuel Canada museevirtuel.ca/edu Calabash Sistra, Gabon"। ৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।