সামামা ইবনে আশরাস
সামামা (সামামাহ ) ইবনে আশরাস (মৃত্যু.৮৮২ খ্রিস্টাব্দ)[১] (আরবি: ثمامة بن الأشرس),যিনি আবু মা'ন আল-নুমায়রি (أبو معن النميري)নামেও পরিচিত, ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খেলাফত ,আব্বাসীয় খিলাফত যুগের একজন মুতাজিলা ধর্মতত্ত্ববিদ । [২]
জীবনী
[সম্পাদনা]সামামা ইবনে আশরাস ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত। তার শৈশব কৈশোর ও প্রথমদিকের জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। তার জন্মসাল ও পারিবারিক ইতিহাস ও সুস্পষ্ট নয়। [৩] তবে যতটুকু জানা যায়,তিনি আব্বাসীয় আমলের প্রভাবশালী বার্মাকিডস পরিবারের অধীনস্থ ছিলেন এবং ৮০২ খ্রিস্টাব্দে তারা ক্ষমতাচ্যুত হলে তিনি গ্রেপ্তার হন। [৪] খ্রিস্টীয় ৮০৭ অব্দের দিকে তাঁর খ্যাতি পর্যাপ্তভাবে এতটাই পুনরুদ্ধারিত হয়েছিল যে হারুন আল-রশিদ তাকে তাঁরখুরসান অভিযানের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন । [৪]
অ্যালন ইবনে আশরাসকে আল-মা'মুনের 'সভা ধর্মতত্ত্ববিদ' হিসাবে বর্ণনা করেছেন ;[৫] নাওয়াস তাকে 'বিশিষ্ট মু'তাজিলাইত' হিসাবে গণ্য করেছেন। [৬] আল-মা'মুন তাকে উজির হিসেবে নিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন, তবে ইবনে আশরাস তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কারণ সম্ভবত উজিরের অবস্থানটি তখনকার বিতর্কের বিষয় ছিল।খলিফা পরবর্তীতে আদালতে ইবনে আশরাসের পরিসেবার জন্য নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আশরাসকে ৩০০,০০০ দিরহাম দিয়েছিলেন। [৭] আহমদ ইবনে আবি খালিদ আল-আহওয়াল, যাকে ইবনে আশরাসের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিলো, ইবনে আশরাসকে আদালতে 'একমাত্র' 'আনুষ্ঠানিক উপাধিবিহীন' বলে অভিহিত করেছিলেন। [৭]
একটি প্রাচীন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে ইবনে আশরাস আল-মামুনকে মুতাজিলা ধর্মতত্ত্ব গ্রহণ করতে রাজি করিয়েছিলেন। মুতাজিলা ধর্মতত্ত্ব কারণ ও যুক্তি আলোচনার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ৮ম থেকে ১০ শতাব্দীতে বসরা ও বাগদাদে এর প্রাধান্য ছিল। কুরআনকে আল্লাহর সৃষ্ট বলার কারণে তারা বেশি আলোচিত। তাদের মতে কুরআন আল্লাহর সাথে একই অস্তিত্বে ছিল না বরং তা আল্লাহর সৃষ্ট। আল-খতিব আল-বাগদাদির "হিস্ট্রি অফ বাগদাদ" এর অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইবনে আশরাস আল-মা'মুনের আগে একটি বৈঠকে আবু-ল-আতাহিয়াকে অসন্তুষ্ট করেছিলেন, যখন কবি আতাহিয়া ইবনে আশরাসকে মানুষের কর্মের উৎসের বিষয়ে মু'তাজিলা মতবাদের পক্ষ সমর্থনকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। [৮][৯]
একপর্যায়ে ইবনে আশরাসকে তুর্কিরা বন্দী করে রেখেছিল। কারাবাসের সময় তার সাথে এত ভাল ব্যবহার করা হয়েছিল যে, তিনি তুর্কি ভাড়াটে সৈনিকদের আনুকূল্যে যেতে শুরু করেন। [১০]
মতবাদ
[সম্পাদনা]তৎকালীন ধর্মতত্ত্ববিদদেরা অনেক গ্ৰন্থ রচনা করলেও ইবনে আশরাস তাদের মত প্রচুর পরিমাণে গ্রন্থ রচনা করেননি। [১১] ইয়াহিয়া ইবনে আক্তমসহ সে সময়ের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ যাদের সাথে তিনি স্বাধীন ইচ্ছার বিষয়ে আলোচনা করেছেন,তাদের কথোপকথন এবং বিতর্ক থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনগুলোর মাধ্যমে তাঁর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি মূলত টিকে আছে। উল্লেখ্য, সুন্নি গোঁড়ামির সমর্থক হিসাবে, ইয়াহিয়া ইবনে আক্তম মুতাজিলাইত বিশ্বাসেরও(যে কুরআন তৈরি হয়েছিল ) বিরোধী ছিলেন, যা মুতাজিলিজমের অনুসারী খলিফার সাথে তার মতবিরোধ তৈরি করেছিল।[১১]
ইবনে আশরাস শিখিয়েছিলেন যে, অবিশ্বাসীদের তাদের অবিশ্বাসের জন্য দোষী সাব্যস্ত করার দরকার নেই যতক্ষণ না তারা স্পষ্টতই ওহী প্রত্যাখ্যান করে। [১] তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন ভালবাসা হয় তখনই 'যখন অন্তরাত্মা ও আকর্ষণের বন্ধনের একাত্মতা হয়'। [১২]
প্রয়াণ
[সম্পাদনা]ইবনে আশরাস ৮৮২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু সম্বন্ধে বিশদ বিবরণ নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে উল্লেখ নেই।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Green (১৯৯২)। The City of the Moon God: Religious Traditions of Harran (ইংরেজি ভাষায়)। Brill। পৃষ্ঠা 132। আইএসবিএন 978-90-04-30142-9।
- ↑ Macdonald, Duncan Black (২০০৮)। Development of Muslim Theology, Jurisprudence, and Constitutional Theory (ইংরেজি ভাষায়)। The Lawbook Exchange, Ltd.। আইএসবিএন 978-1-58477-858-5।
- ↑ van Ess 2017, পৃ. 173।
- ↑ ক খ van Ess, Josef (২০১২-০৪-২৪)। "T̲h̲umāma b. As̲h̲ras"। Encyclopaedia of Islam (ইংরেজি ভাষায়) (2nd সংস্করণ)। Brill। ডিওআই:10.1163/1573-3912_islam_SIM_7532।
- ↑ Alon, Ilai (এপ্রিল ১৯৮৯)। "Fārābī's funny flora: al-Nawābit as 'opposition'"। Journal of the Royal Asiatic Society (ইংরেজি ভাষায়)। 121 (2): 227। আইএসএসএন 0035-869X। ডিওআই:10.1017/S0035869X00109220।
- ↑ Nawas 1994, পৃ. 617।
- ↑ ক খ van Ess 2017, পৃ. 171।
- ↑ McKinney 2004, পৃ. 72।
- ↑ Brown, Jonathan A. C. (২০১২), Cobb, Paul, সম্পাদক, "Scholars and Charlatans on the Baghdad-Khurasan Circuit from the Ninth to the Eleventh Centuries", The Lineaments of Islam, Brill, পৃষ্ঠা 91–92, আইএসবিএন 978-90-04-23194-8, ডিওআই:10.1163/9789004231948_006
- ↑ van Ess 2017, পৃ. 172।
- ↑ ক খ van Ess 2017, পৃ. 175।
- ↑ Meisami, Julie Scott (১৯৮৯)। "Mas'ūdī on Love and the Fall of the Barmakids"। Journal of the Royal Asiatic Society (2): 273। আইএসএসএন 0035-869X।
উৎস
[সম্পাদনা]- van Ess, Josef (২০১৭)। A History of Religious Thought in Early Islam। Theology and Society in the Second and Third Centuries of the Hijra (ইংরেজি ভাষায়)। 3। Brill। আইএসবিএন 978-90-04-35640-5। ডিওআই:10.1163/9789004356405।
- McKinney, Robert C. (২০০৪)। The Case of Rhyme Versus Reason: Ibn al-Rūmī and His Poetics in Context (ইংরেজি ভাষায়)। Brill। আইএসবিএন 978-90-04-13010-4।
- Nawas, John A. (নভেম্বর ১৯৯৪)। "A Reexamination of Three Current Explanations for al-Maʾmun's Introduction of the Miḥna"। International Journal of Middle East Studies (ইংরেজি ভাষায়)। 26 (4): 615–629। আইএসএসএন 0020-7438। ডিওআই:10.1017/S0020743800061134।