সত্যোত্তর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সত্যোত্তর একটি বিশেষণবাচক শব্দ, যা দিয়ে এমন কোনও পরিস্থিতি, পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে নির্দেশ করা হয়, যেখানে বস্তুনিষ্ঠ বাস্তব সত্যের পরিবর্তে আবেগ-অনুভূতি ও ব্যক্তিগত বিশ্বাস জনমতের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অধিকতর প্রভাব বিস্তার করে। [১][২] এটি একটি দার্শনিক ও রাজনৈতিক ধারণা যা "সত্যতা নির্ণয়ের সর্বজনগৃহীত বস্তুনিষ্ঠ আদর্শের বিলুপ্তি"[৩] এবং "বাস্তব সত্য, বিকল্প সত্য, জ্ঞান, মতামত, বিশ্বাসসত্যের মধ্যে মারপ্যাঁচমূলক বিচ্যুতি" নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়।[৪] ইংরেজিতে একে "পোস্ট-ট্রুথ" (Post-truth) বলা হয়।

সত্যোত্তর কথাটি সাম্প্রতিক হলেও এর কাছাকাছি অনেক ধারণা যেমন উত্তরাধুনিকতাবাদ, আপেক্ষিকতাবাদ, রাজনীতিতে মিথ্যাবাদিতার বিভিন্ন রূপ যেমন অসত্যতা, ছলনা-প্রতারণা, ইচ্ছাকৃত মিথ্যা, ইত্যাদির উপরে অতীতে অনেক নৈতিক, জ্ঞানতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছে।[৫]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও পাশ্চাত্যের অন্যত্র ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পরে এক ধরনের রাজনীতির উদ্ভব ঘটে, যাকে সত্যোত্তর রাজনীতি (post-truth politics) নামকরণ করা হয়েছে। সত্যোত্তর রাজনীতির সাথে বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণী ও মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের উপর আস্থার অভাব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আন্তর্জালে (ইন্টারনেটে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে এক ধরনের পুনরাবৃত্তিমূলক বদ্ধপ্রকোষ্ঠ ক্রিয়া এই ধরনের সত্যোত্তর রাজনীতির বৃদ্ধির পেছনে কাজ করেছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।[৬]

ইংরেজি ভাষায় উচ্চশিক্ষায়তনিক ও সার্বজনিক আনুষ্ঠানিক আলোচনাগুলিতে সত্যোত্তর বা "পোস্ট-ট্রুথ" পরিভাষাটি আপাতদৃষ্টিতে ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। ২০০৪ সালে রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের ১ম শাসনামলের শেষে এসে দ্য পোস্ট-ট্রুথ এরা নামক গ্রন্থে র‍্যাল্‌ফ কিজ লেখেন যে "সত্যোত্তর যুগের" আবির্ভাব হয়েছে এবং একই বছরে এরিক অল্টারম্যান হোয়েন প্রেসিডেন্ট্‌স লাই নামক গ্রন্থে "সত্যোত্তর রাষ্ট্রপতিত্ব" (post-truth presidency) পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। ২০১৫-২০১৬ খ্রিস্টাব্দে এসে সত্যোত্তর বা "পোস্ট-ট্রুথ" পরিভাষার ব্যবহার বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। "সত্যোত্তর রাজনীতি" কথাটি ২০১৬ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও ঐ বছরের ব্রেক্সিট গণভোটের সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।[৭] ২০১৬ সালের শেষে অক্সফোর্ড অভিধান প্রকাশক সংস্থা "পোস্ট-ট্রুথ"-কে "বছরের সেরা আন্তর্জাতিক শব্দ" নির্বাচিত করে।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. https://www.oxfordlearnersdictionaries.com/definition/english/post-truth  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  2. https://dictionary.cambridge.org/dictionary/english/post-truth  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  3. Illing, Sean (২০১৮-০৮-১৪)। "A philosopher explains America's "post-truth" problem"Vox। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২২ 
  4. Biesecker (২০১৮)। "Guest Editor's Introduction: Toward an Archaeogenealogy of Post-truth"। Philosophy & Rhetoric51 (4): 329। আইএসএসএন 0031-8213ডিওআই:10.5325/philrhet.51.4.0329 
  5. Arendt, Hannah (১৯৭২)। Crises of the Republic; lying in politics, civil disobedience on violence, thoughts on politics, and revolution। Harcourt Brace Jovanovich। পৃষ্ঠা 4আইএসবিএন 0151230951ওসিএলসি 1081530613 
  6. Daniel Chandler; Rod Munday (২০২০), A Dictionary of Media and Communication, Oxford University Press 
  7. Jayson Harsin (২০১৯), "Post-Truth and Critical Communication", The Oxford Encyclopedia of Communication and Critical Cultural Studies, Oxford University Press 
  8. "'Post-truth' declared word of the year by Oxford Dictionaries"। BBC। 16 November, 2016। সংগ্রহের তারিখ 18 February, 2021  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

আরও দেখুন[সম্পাদনা]