বিষয়বস্তুতে চলুন

শ্রীলঙ্কার বোধিসত্ত্ব মূর্তিসমূহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আনুমানিক ৮ম শতকের একটি ব্রোঞ্জ নির্মিত বোধিসত্ত্ব মূর্তি যা নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে রাখা হয়েছে।
৭ম শতকের শেষ থেকে ৮ম শতকের শুরুর মধ্যবর্তী সময়ের একটি আসনাধীন বোধিসত্ত্ব মূর্তি; মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে সংরক্ষিত।

বর্তমান শ্রীলঙ্কার সর্বত্রই থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব দেখা গেলেও প্রাচীনকালে এখানে বোধিসত্ত্ব মূর্তির উপাসনাকারী বা বোধিসত্ত্ব মূর্তির উপাসনার সমর্থক মহাযান বিশ্বাসরীতির বা মহাযান সম্প্রদায়েরও অস্তিত্ব ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণগুলো থেকে দেখা যায় যে, অনুরাধাপুর যুগে শ্রীলঙ্কায় বোধিসত্ত্ব ধর্মাচার রীতি গৌতম বুদ্ধের উপাসনার তুলনায় অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের ধর্মাচার রীতি হিসেবে প্রচলিত ছিল।[] শ্রীলঙ্কায় আজও যেসব বোধিসত্ত্ব মূর্তি টিকে রয়েছে সেগুলো থেকে এমনটাই অনুমান করা যায়।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

অনুরাধাপুর যুগের মধ্যবর্তী সময়ে বোধিসত্ত্ব ধর্মাচার রীতি শ্রীলঙ্কায় খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[] প্রারম্ভিক যুগে শ্রীলঙ্কা মূলত থেরবাদী বৌদ্ধধর্মে পরিপুষ্ট হয়েছিল, সে সময় বৌদ্ধধর্মের এই বিশ্বাস রীতিই সারা শ্রীলঙ্কায় ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে এখানে মহাযানী ধারণার বিকাশ ঘটে। মহাযান বৌদ্ধরীতিতে বোধিসত্ত্ব খুবই গুরুত্বের সাথে পূজিত হতেন। অনুরাধাপুরের রাজা মহাসেন সে যুগে বোধিসত্ত্বের মূর্তি তৈরি করেছেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।[] এছাড়াও অনুরাধাপুরের রাজা ধাতুসেন (৪৫৯-৪৭৭ খ্রি.) মৈত্রেয়-এর একটি মূর্তি নির্মাণ করেন।[] অনুরাধাপুর যুগের বেশ কিছু শিলালিপি পাওয়া গেছে যেগুলোতে অবলোকিতেশ্বরের উল্লেখ রয়েছে।[]

খ্রিস্টীয় ৭ম–১০ম শতকের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ভূখণ্ডে মহাযান বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়ে।[] এ যুগের যেসব বোধিসত্ত্ব মূর্তি এবং খোদাই ভাস্কর্য এখনও টিকে রয়েছে সেগুলোর অনেকগুলোই ৭ম থেকে ১০ম শতকে শ্রীলঙ্কায় মহাযানের অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ দেয়। অনুরাধাপুরের রাজা ১ম দাপুলা ক্ষুদ্র রাজ্য রুহুনাতে মৈত্রেয়-এর একটি ১৫ হাত উঁচু মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন বলেও উল্লেখ পাওয়া যায়।[] সম্প্রতি পুনরুদ্ধার করা দাম্বেগোডা বোধিসত্ত্ব মূর্তিটিই দাপুলা কর্তৃক নির্মিত মৈত্রেয়-এর মূর্তি বলে মনে করা হয়।[] শ্রীলঙ্কায় মৈত্রেয় যে বোধিসত্ত্বরূপে পূজিত হতেন এবং তার যে একটি স্বতন্ত্র বিশ্বাসরীতি গড়ে উঠেছিল দাম্বেগোডা বোধিসত্ত্ব মূর্তিটি সেটারই এক শক্তিশালী প্রমাণ।

গাম্পোলার রাজা ৪র্থ ভুবনেকাবাহু ক্যান্ডির লঙ্কাতিলক বিহারে মৈত্রেয় এবং নাথের (অবলোকিতেশ্বর) মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। ক্যান্ডির নায়ক রাজবংশীয় দ্বিতীয় রাজা কীর্তি শ্রী রাজাসিংহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রিদি বিহারে মৈত্রেয়ের একটি মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন বলেও বিবরণ পাওয়া যায়।

ডাম্বুলু বিহার থুদাপথ হলো ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের একটি পুস্তক। প্রাচীন এই পুস্তকে ডাম্বুলা গুহা মন্দিরের কয়েকটি মৈত্রেয় এবং নাথ মূর্তির উল্লেখ রয়েছে। মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারের কাছে দণ্ডায়মান বুদ্ধের চারপাশ ঘেষা দূরত্বে এই মূর্তিগুলো দেখা যায়।[]

শ্রীলঙ্কায় নারী ও পুরুষ উভয় প্রকারের বোধিসত্ত্ব মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার এহেন মূর্তিশিল্পে অবলোকিতেশ্বরের মূর্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[] অধিকন্তু অবলোকিতেশ্বরের সঙ্গী তারারও বিভিন্ন মূর্তি শ্রীলঙ্কায় আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীন শ্রীলঙ্কায় তারার উপাসনা জনপ্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হয়।[] এছাড়াও শ্রীলঙ্কায় আবিষ্কৃত বোধিসত্ত্ব মূর্তির তালিকার মধ্যে সচরাচর মৈত্রেয়ের মূর্তিও পাওয়া যায়। এ ভূখণ্ডে পাওয়া অন্যান্য বোধিসত্ত্ব মূর্তির মধ্যে রয়েছে বজ্রপাণি এবং মঞ্জুশ্রীর মূর্তি।

শ্রীলঙ্কার এসব বোধিসত্ত্ব মূর্তির নির্মাণে ব্রোঞ্জ, দূর্লভ পাথর এবং হাতির দাঁতকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

উদাহরণ

[সম্পাদনা]
বোধিসত্ত্ব তারার মূর্তি; ব্রিটিশ মিউজিয়াম

শ্রীলঙ্কায় আবিস্কৃত বোধিসত্ত্ব মূর্তিগুলোর মধ্যে কলম্বোর জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত বেহেরাগালা অবলোকিতেশ্বর বোধিসত্ত্ব মূর্তিটিকে সবচেয়ে নিখুঁত মনে করা হয়।[] অনুরাধাপুর যুগের এই ব্রোঞ্জ মূর্তিটি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে নকশা করা হয়েছে। এছাড়াও শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলীয় ত্রিঙ্কোমালিতে পাওয়া তারার মূর্তিটিকে শ্রীলঙ্কার শিল্পকলার একটি মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নগ্ন বক্ষের এই মাস্টারপিসটি বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে।[][] ৩৩ ফুট উচ্চতার দাম্বেগোডা বোধিসত্ত্ব মূর্তিটির সুখ্যাতি রয়েছে। বুদুরুভাগালা মন্দিরে অবলোকিতেশ্বর, মৈত্রেয়, মঞ্জুশ্রী এবং তারার মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়।[] শ্রীলঙ্কার বোধিসত্ত্ব ভাস্কর্যগুলোর আরেকটি উদাহরণ হলো ভেলিগামা শহরের কুশথারাজাগালা বোধিসত্ত্ব মূর্তিটি[] এছাড়া কলম্বোর জাতীয় জাদুঘরে তারার আরেকটি নিখুঁত মূর্তি রয়েছে যার নির্মাণকাল ৮ম–৯ম শতক। কুরুনেগালা জেলায় আবিস্কৃত উপবিষ্ট এই মূর্তিটিও ব্রিটিশ মিউজিয়ামের তারামূর্তির মতো অনাবৃত।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Sanath Dharmabandu (২০১১)। "බෝධිසත්ත්ව ප්‍රතිමා සහ වෙනත් ප්‍රතිමා"। චිත්‍ර හා මූර්ති කලාව। M. D. Gunasena and Company Ltd.। আইএসবিএন 955211571X 
  2. Ranjith Hewage (২০১২)। "වෙහෙරගල අව‍ලෝකිතේශ්වර බෝධිසත්ත්ව මූර්තිය"। විස්මිත අතීත උරුමයන්। Susara Publishers। আইএসবিএন 9789556761658 
  3. Nandadeva Wijesekara (১৯৯৭)। "සොයාගැනීම්වල ඉතිහාසය"। පැරණි සිංහල ප්‍රතිමා ශිල්පය। M. D. Gunasena and Company Ltd.। আইএসবিএন 9789553061812 
  4. Ranjith Hewage (২০১২)। "තාරා දෙවඟන මූර්තිය"। විස්මිත අතීත උරුමයන්। Susara Publishers। আইএসবিএন 9789556761658 
  5. Statue of Tara, Highlights, British Museum, accessed 9 December 2013
  6. Ranjith Hewage (২০১২)। "හිඳි තාරා මූර්තිය"। විස්මිත අතීත උරුමයන්। Susara Publishers। আইএসবিএন 9789556761658 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]