শেখ হাদিসুর রহমান বাবু
শেখ হাদিসুর রহমান বাবু (শহীদ হাদিস নামেও পরিচিত) (২১ এপ্রিল ১৯৪৪ - ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯) ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদ হওয়াদের অন্যতম একজন। তার পুরো নাম শেখ হাদিসুর রহমান বাবু। ১৯৬৯-এর আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে যে গণবিক্ষোভ শুরু হয় সেই বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে শহীন হন শেখ হাদিসুর রহমান বাবু। তার সম্মানে বিভাগীয় শহর খুলনার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পার্কের নামকরণ করা হয় শহীদ হাদিস পার্ক।[১]
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]শেখ হাদিসুর রহমান ১৯৪৪ সালের ২১ এপ্রিল বাগেরহাট জেলার রণবিজয়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তারা ছিলেন ৪ ভাই ও ৩ বোন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন
[সম্পাদনা]এসএসসি পাশ করে খুলনার প্রসিদ্ধ আযম খান কমার্স কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য খুলনা এসেছিলেন শহীদ হাদিস। পরিবারে অসচ্ছলতা থাকায় হাদিস শান্তিধাম মোড়ের হোয়াইট স্নো নামের একটি লন্ড্রিতে চাকরি করতেন।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন
[সম্পাদনা]১৯৬৯-এর আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলন শুরু হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২১ ফেব্রুয়ারি খুলনা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল এসে মিউনিসিপ্যাল পার্কে সমবেত হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় একটি মিছিল খুলনা শহরের হাজী মহসিন রোড দিয়ে আসার সময় পৌরসভার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অবাঙালী আফজাল কাহুতের বাসভবনের সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে শহীদ হন শেখ হাদিসুর রহমান বাবু।[২] হাদিসুরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শহর জুড়ে বিক্ষোভ আরো তীব্র হয়। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন গণতন্ত্রকামীরা। শহীদ হন আলতাফ, প্রদীপসহ আরো অনেকে। তৎকালীন জেলা প্রশাসন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে খুলনার সর্বত্র কারফিউ জারি করে।[৩]
হাদিস পার্কের নামকরণ
[সম্পাদনা]পরেরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি এক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। এই এক ঘণ্টায় তৎকালীন খুলনার ছাত্র নেতৃবৃন্দ জড়ো হন মিউনিসিপ্যাল পার্কে। তারা মিউনিসিপ্যাল পার্কের নাম বদলে শহীদ হাদিসের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী দ্রুত সাদা কাগজ ও কালি কিনে আনা হয়। এবং মিউনিসিপ্যাল পার্কের নাম লেখা হয় ‘শহীদ হাদিস পার্ক’। এরপর মুখে মুখে শহীদ হাদিস পার্কের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এ পার্কটি এখনো খুলনার অন্যতম প্রধান বিনোদনকেন্দ্র। এ পার্কে প্রতিদিনই অনেক মানুষের জমায়েত হয়।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "ঢাকার আদলে খুলনায় শহীদ মিনার"। প্রথম আলো। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "খুলনার ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্ক"। দৈনিক সংগ্রাম। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "হাদিস পার্কের নাম শহীদ হাদিস পার্ক কেন?"। খুলনার অন্যতম। ২০১৮-০৯-১৮। ২০২১-০১-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫।
- ↑ "খুলনার ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্ক"। bangladeshtimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫।