শিবসাগরের মন্দিরশ্রেণী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঘনশ্যাম দ’ল, শিবসাগর

শিবসাগর জেলায় আহোম স্বর্গদেউদের সময়ে খনন করা বড়ো বড়ো পুকুর এবং তার কাছে নির্মান করা দ’ল দেবালয়ে ভরপূর একটি ঐতিহাসিক শহর। ইংরাজী ১৭৩৪ সালে রানী অম্বিকা কলুঞ্চপার (পুরানো শিবসাগর জেলার নাম) শিবদেবতার নামে উৎসর্গ করে একটি পুষ্করিণী খনন করান। শিবদেবতার নামে উৎর্সগ করার জন্য পুষ্করিণীটির নাম রাখেন শিবসাগর। শিবসাগর পুষ্করিণীটির দক্ষিণ পারে তিনটি পুষ্করিণী আছে। তার মধ্যে শিবদৌলটি সর্ববৃহত। শিবদ'লের পূর্বে বিষ্ণু দ’ল এবং পশ্চিমে দেবী দ’ল। শিবদ'লে শিবরাত্রি-এর দিন বড়ো মেলা হয়। শিবদ’লে এটিই বড়ো উৎসব। দেবীদ'লে দুর্গাপুজা-এর দিন প্রতিমা তৈরি পূজা করা হয়। অন্যদিকে বিষ্ণুদ'লে দিকে গ’লে ৪ কিলোমিটার গেলে পথের ডানদিকে একটি দেউঘর পাওয়া যায়। একে বর্তমানে হরগৌরী মন্দির বলে জানা যায়। শিবসাগর নগর থেকে দুই কি;মি দক্ষিণে পুরানো রংপুর শহরের অস্তিত্ব বিরাজমান। আহোম রাজ্য-এর একালের রাজধানী এবং ইতিহাস প্রসিদ্ধ তলাতল ঘরও এখানেই ছিল। আহোম রাজা রাজেশ্বর সিংহ-এর সময়েই তলাতল ঘরও নির্মান করা হয়েছিল(১৬৯৮-১৭১৪)। একে মাটির নিচের দুর্গও বলা হত। উল্লেখযোগ্য যে তলাতল ঘরের যে সাতটা মহল ছিল তার মাটির নিচের মহল থেকে দিখৌ নদী এবং গড়গাঁও-এর কারেং ঘর পর্যন্ত দুটি সুরঙ্গ ছিল। প্রাকৃতিক দূযোর্গের জন্য এই পথটি বন্ধ হয়ে যায়। তলাতল ঘর থেকে পশ্চিমে কিছু কি.মি. গলেই রংঘরেো ৩৭ নং জাতীয় সড়ক-এর উপরে অবস্থিত। এটি একটি আঠকোনা দুমহলা ঘর। স্বর্গদেউ প্রমত্তসিংহ ১৭৪৪-৫১ পশুযুঁদ্ধ করার জন্য নির্মান করেছিলেন। তলাতল ঘর থেকে কিছুদূরে দক্ষিণে আছে রঙ্গনাথ দ’ল। স্বর্গদেও রুদ্রসিংহ ১৭০৩ সালে এই দ’ল তৈরি করেন। এই দ'লে স্বর্গদেউ শিবপূজা করতেন। রঙ্গনাথ দ'লের কাছে দক্ষিণ পশ্চিমে থাকা কয়েকটি খটখটিতে মৈদাম আকৃতির যে ধ্বংসাবশেষ আছে সেইয়া হল “ফাকুয়াদ’ল”। কথিত আছে যে রুদ্রসিংহই তাঁর মা সতী জয়মতীর একটি সোনার প্রতিমা তৈরি করে দেন। ফাকুয়া দ'লের থেকে থেকে অল্প ভিতরে অবস্থিত (উত্তরে) হরগৌরী দেবালয়। এই দ’লটি রাজেশ্বর সিংহের সময়ে তৈরি করা হয়। কীর্তিচন্দ্র রবরুয়াই রহার থেকে মনিপুরি এবং কাছাড়ি রাজাকে নিয়ে ঘুরে এসে থাকার সময় পর্বতে হর গৌরীর একটি মূর্ত্তি পান, মূর্ত্তিটি স্থাপন করতেই এই দ’ল তৈরি। রঙ্গনাথ দ'লের পূর্বে আছে গরুদ’ল। এর অন্য একটি নাম “ন গোঁসাই দ’ল। ন গোঁসাইদ’ল দক্ষিণ দিকে অবস্থিত জয়সাগর পুষ্করিণী এবং জয়দৌল। লাই রুদ্রসিংহ স্বর্গদেব মা জয়মতীর স্মৃতি রক্ষার্থে জেরেঙা পথারে ১৬১৯ শকের আঘোন মাসের তৃতীয় দিনে জয়সাগরপুষ্করিণী খনন করাতে আরম্ভ করেন। ১৭৯৮ সালে জয়সাগরের পারে পঞ্চদেবতার পাঁচটা মন্দির নির্মান করেন। এর মধ্যে জয়দৌল শ্রেষ্ঠ। জয়দৌলর অন্য একটি নাম শ্রীকেশবরায় বিষ্ণু দৌল। জয়দৌলর দক্ষিণৈর পঁকী ঘরটি ভোগ ঘর। জয়সাগরের উত্তর পশ্চিম চুকে দেবীদ’ল অবস্থিত। জয়সাগর পুষ্করিণীর পশ্ছিমপারে একটি দ’ল আছে ঘনশ্যাম দ’ল।কারেংঘরের নির্মান কর্তা বাংলা মুসলমান সম্প্রদায়ের ঘনশ্যাম উদ্দীনের ঘর। পরে তিনি হিন্দু ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। শিবসাগর শহর থেকে বার কিঃমিঃ পশ্চিমে নামডাং নদীর উপর থাকা এই পাথরের সাঁকো ১৭০৩ সালে স্বর্গদেউ রুদ্রসিংহের রাজত্বকালে নির্মাণ করেছিলেন। নাগা পাহাড় থেকে পাথর সংগ্রহ করে এনে কাটার জন্য আহোমযুগে "শিলাকুটি" নামের খেলার সৃষ্টি হয়েছিল। শিবসাগর জেলায় থাকা শিলাকুটি মৌজা এখনও তার স্বাক্ষর বহন করেছে। এই সাঁকোটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ ফুট। পাথরের সাঁকো নির্মানে ব্যাপক কৃষিজাত সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট অনুপাতে মিঠাতেল, শন, ধূনা, গুর, চূন, মাটিমাস, বরাচাউল, হাঁসকনী ইত্যাদি মিশিয়ে করাল বানিয়ে সাঁকো তৈরি করেছিলেন।

জয়সাগর থেকে চার কি.মি. পূর্বে বগীদ'ল অবস্থিত। স্বর্গদেউ লক্ষ্মীসিংহ-এর মা এই পুষ্করিণী খনন করিয়ে পারে দ'ল নির্মান করেছিলেন। এই রাজমাতার নাম ছিল বগী। তাঁর নামেই এই দ'লটির নাম বগীদ'ল রাখা হয়। জয়সাগরের পূর্বদিকে খরিকটীয়া আলি দিয়ে দুই কি.মি. ভিতরে লখিমীসাগরপুষ্করিণী এবং তার পারে দুটি দ'ল পাওয়া যায়। এইদুটি দ'লকে বরপাত্র দ'ল বলা হয়। নাচনী ছোয়ালী ফুলমতীকে শিবসিংহ রাণী এবং বররাজা করার পরে তিনি নিজ প্রভাবে অনেক কাজ করিয়েছিলেন। রানী ফুলেশ্বরী ভাই হরিনারায়নকে বরপাত্রগোহাঁই করেন। তিনিই লখিমীসাগর খনন করিয়ে এবং দুটি দ'ল বাঁধান। এর একটি জগদ্ধাত্রী দ'ল আনটি বরপাত্র দ'ল নামে পরিচিত।

সাথে দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]