শিপ্রা গুহ মুখোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শিপ্রা গুহ মুখোপাধ্যায় (১৩ জুলাই ১৯৩৮ - ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭) [১] ছিলেন একজন ভারতীয় উদ্ভিদবিদ যিনি উদ্ভিদ টিস্যু বা দেহকলা উৎপাদন, উদ্ভিদ আণবিক জীববিজ্ঞান, জৈবপ্রযুক্তি এবং কোষের আণবিক জীববিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছিলেন। [২] ২০০৭ সালে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ফলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শিপ্রা গুহ মুখার্জি হচ্ছেন সেই মহিলা বিজ্ঞানী যিনি "পরাগধানী বা এথার উৎপাদনের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ উৎপাদন করার কৌশল" এর যুগান্তকারী আবিষ্কারের পিছনে অবদান রেখেছিলেন।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

শিপ্রা গুহ মুখোপাধ্যায় ১৩ জুলাই ১৯৩৮ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। [১] তিনি বোম্বে এবং দিল্লিতে পড়াশোনা করেছিলেন এবং ১৯৫৪ সালে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক (বিএসসি অনার্স) সম্পন্ন করার জন্য দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলেন। [৩] প্রথমে ছাত্র, পরে অধ্যাপক এবং গবেষক হিসাবে তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি সেখান থেকে তার সম্মানসহ স্নাতকোত্তর (এমএসসি) ডিগ্রিও শেষ করেছিলেন। এরপরে তিনি অধ্যাপক বি. এম. জোহরির অধীনে পিঁয়াজের ( Allium cepa) উপর পিএইচডি শুরু করেছিলেন। এবং ১৯৬৩ সালে পিএইচডি শেষ করেছিলেন।

গবেষণা ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তার বিশেষায়নের ক্ষেত্রটি ছিল উদ্ভিদের দেহকলা উৎপাদন, উদ্ভিদের আণবিক জীববিজ্ঞান, জৈবপ্রযুক্তি এবং কোষ জীববিজ্ঞান। পিএইচডি শেষ করার পরে তিনি পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসাবে এস. সি. মহেশ্বরী ল্যাবে যোগদান করেছিলেন এবং সেখানেই তিনি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করেছিলেন। ১৯৬৪ এবং ১৯৬৬ সালের মধ্যে তিনি ধুতুরার (Datura innoxia) পরাগরেণুকে উপাদান হিসাবে ব্যবহার করে পরাগধানী উৎপাদনের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড পরাগ উদ্ভিদ উৎপাদন কৌশল আবিষ্কার করেছিলেন যা ইন ভিট্রো সেলুলার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। এই কাজটি অল্পবয়সী ডিম্বক এবং ডিম্বাশয়ের উৎপাদন কৌশল প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করে। এই কৌশলটি উন্নত জাতের চাল, গম, আলু এবং অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য সংযোজিত প্রক্রিয়া হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। [৩] তিনি দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব লাইফ সায়েন্সে দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন এনজাইম, মেমব্রেন বা ঝিল্লি ফসপোলিপিড এবং দ্বিতীয় বার্তাবাহককে সাথে রেখে উদ্ভিদের পুনরুৎপাদন এবং পুনরুৎপাদনের প্রক্রিয়া নিয়েও কাজ করেছিলেন।[৪]

এরপরে শিপ্রা মুখোপাধ্যায় ১৯৬৬ সালের শেষদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন এবং মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা সহযোগী হিসাবে উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও উদ্ভিদ প্যাথলজি বিভাগে আর.এস. বান্দুরস্কির সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক এবং পরবর্তীতে অ্যান্টন ল্যাং এবং জো ভার্নার থাকাকালীন সুপরিচিত এমএসইউ/ডিওই উদ্ভিদ গবেষণা ল্যাবরেটরিতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভারতে ফিরে আসার পরে তিনি এম. এস. স্বামীনাথনের সাথে ভাতের চালে হাপ্লয়েড বাড়ানোর কাজে সহযোগিতা করেছিলেন।[৫]

তারপরে তিনি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জীবনবিজ্ঞান অনুষদে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যোগদানের জন্য ফিরে আসেন। তিনি ১৯৭৯ সালে পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন এবং ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে তিনি জীবনবিজ্ঞানের ডিনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। [৩] তিনি ভারত সরকারের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগে টাস্কফোর্স এবং বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এবং ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেরও বোর্ডে-সদস্য ছিলেন।

শিপ্রা গুহ মুখোপাধ্যায় উদ্ভিদের দেহকলা উৎপাদন, হ্যাপ্লয়েডস এবং উদ্ভিদ জৈবপ্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

শিপ্রা গুহ মুখোপাধ্যায় জ্যেষ্ঠ জাতীয় জৈববিদ পুরস্কার, জৈবপ্রযুক্তিতে ওম প্রকাশ ভাসিন ফাউন্ডেশন পুরস্কার এবং লায়নস ক্লাব থেকে কনিষ্ক পুরস্কার পেয়েছিলেন। [২] তিনি বেঙ্গালুরুর ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমী এবং এলাহাবাদে ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

"লীলাবতীর কন্যারা" লেখার পরে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শিপ্রা গুহ মুখোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তিনি স্বামী এবং যমজ কন্যার মাঝে বেঁচে রয়েছেন। [৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Sipra Guha Mukherjee - An Inspiration to Many Indian Women Botanists"www.indianbotanists.com। ২০১৭-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-০৪ 
  2. "Sipra Guha-Mukherjee - Google Arts & Culture"Google Cultural Institute (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-০৪ 
  3. Maheshwari, S. C. (২৫ ডিসেম্বর ২০০৭)। "Personal News" (পিডিএফ)Current Science: A Fortnightly Journal of Research। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৭ 
  4. "Contribution of Eminent Scientists Towards Plant Tissue Culture"biologydiscussion.com। ১ অক্টোবর ২০১৫। 
  5. PUROHIT, SUNIL D. (২০১২-১০-৩০)। INTRODUCTION TO PLANT CELL TISSUE AND ORGAN CULTURE (ইংরেজি ভাষায়)। PHI Learning Pvt. Ltd.। আইএসবিএন 9788120346772