বিষয়বস্তুতে চলুন

শাহ বেগম (জাহাঙ্গীরের স্ত্রী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শাহ বেগম
শাহ বেগমের সমাধি
জন্মমন বাঈ
আনু. 1570
আমের রাজত্ব
মৃত্যু১৬ মে ১৬০৪(1604-05-16) (বয়স ৩৩–৩৪)
এলাহাবাদ, মোগল সাম্রাজ্য
দাম্পত্য সঙ্গীজাহাঙ্গীর
বংশধরসুলতান-উন-নিসা বেগম
খুসারাউ মির্জা
রাজবংশকাছাওয়াহা (জন্মগতভাবে)
তৈমুরিড (বিবাহের মাধ্যমে)
পিতারাজা ভগবন্ত দাস
ধর্মহিন্দু

শাহ বেগম ( ফার্সি: شاہ بیگم  ; আনু. ১৫৭০ - ১৬ মে ১৬০৪), যার অর্থ 'রাজকীয় মহিলা' ছিলেন রাজপুত। তিনি যুবরাজ সেলিম অর্থাৎ ভবিষ্যতের সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন।

পরিবার

[সম্পাদনা]

শৈসবে তাঁর নাম ছিল মান বাঈ।[] তিনি আমেরের রাজা ভগবন্ত দাসের কন্যা ছিলেন। [] তিনি ভারমল রাজার নাতনী ছিলেন, যাঁর মেয়ে যোধা বাইয়ের বিয়ে হয়েছিল সম্রাট আকবরের সাথে, ১৫৬২ সালে, এবং জাহাঙ্গীর তাঁর পুত্র ছিলেন। [] তিনি সেলিমের বড় ছেলে খুসারাউ মির্জার মা ছিলেন, পুত্রের জন্মের পরে সেলিম তাঁকে শাহ বেগম উপাধি দিয়েছিলেন।

বিবাহ

[সম্পাদনা]

পনেরো বছর বয়সে সেলিম তাঁর সম্পর্কিত বোন মন বাইয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই কোটি টঙ্কাতে বিবাহ স্থির হয়েছিল। আকবর নিজেই তাঁর সমস্ত উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে রাজার প্রাসাদে গিয়েছিলেন এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারি ১৫৮৫ সালে মুসলিম কাজীদের উপস্থিতিতে বিবাহের উদ্‌যাপন করেছিলেন, তবে হিন্দু অনুষ্ঠানের কিছু বৈশিষ্ট্যও পালিত হয়েছিল। []

ভগবান দাসের প্রদত্ত যৌতুকের মধ্যে একশো হাতি, ঘোড়া, মণি, বিভিন্ন সোনার পাত্র, মূল্যবান পাথর, স্বর্ণ ও রূপার পাত্র এবং বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র ছিল, যার পরিমাণ ছিল সমস্ত গণনার বাইরে। গণ্যমান্য আভিজাত্যদের পার্সিয়ান, তুর্কি এবং আরবীয় ঘোড়া দেওয়া হয়েছিল যাদের জিনগুলি ছিল সোনার। কনের সাথে ভারতীয়, অ্যাবসিনিয়ান এবং সার্কাসিয়ান বংশোদ্ভূত অনেক পুরুষ ও মহিলা দাস দেওয়া হয়েছিল। [] দুর্লভ এবং পছন্দসই কাপড় পরিহিত গণ্যমান্যদের মিছিলটি মহাসড়ক ধরে ফিরে আসার সময়, সম্রাট, বিবাহেপ্রাপ্ত ঝলমলে স্বর্ণ এবং রত্নগুলি অযত্নে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। []

এই দম্পতির প্রথম সন্তানের নাম ছিল সুলতান-উন-নিসা বেগম, যিনি ১৫৮৬ সালের ২৫শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং [] ১৬৪৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। [] তিনি ষাট বছর বেঁচে ছিলেন কিন্তু ইতিহাসে তাঁর কোন অবদান নেই। দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান ছিল খুসারাউ মির্জা, তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৫৮৭ সালের ৬ই আগস্ট। তাঁর জন্মের পর মান বাইকে "শাহ বেগম" উপাধি দেওয়া হয়েছিল যার অর্থ "রাজকীয় মহিলা"। [][]

বর্ণনা অনুযায়ী তিনি একজন খুব সুন্দরী মহিলা ছিলেন। জাহাঙ্গীরের প্রতি তাঁর বিশ্বস্ততা ও আন্তরিক নিষ্ঠার জন্য তিনি তাঁর হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান অর্জন করেছিলেন। [] তিনি একজন স্নায়বিক মহিলা ছিলেন, কল্পিত অপমানে অপমানিত বোধ করতেন, জাহাঙ্গীরের বহুগামিতা ও প্রধানত মুসলিম পরিবারে থাকার ফলে এই রাজপুত রাজকন্যা প্রায়শই অপমানিত ভেবে নিতেন। ইনায়াতুল্লাহ বলেছেন, “মহিলা [শাহ বেগম] হারেমের অন্যান্য বাসিন্দাদের তুলনায় উচ্চাভিলাষী ছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছার সামান্যতম বিরোধিতা করলেই হিংস্র হয়ে উঠতেন।" জাহাঙ্গীর লিখেছেন, "সময়ে সময়ে তাঁর মন ঘুরে বেড়াত এবং তাঁর বাবা এবং ভাইয়েরা সকলেই আমাকে বলছিলেন যে তিনি অপ্রকৃতিস্থ," । [১০]

শাহ বেগম ক্রমাগত খুসারাউকে পিতার অনুগত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি যখন দেখলেন যে এটির কোনও লাভ হয়নি, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজের জীবনহানি করার যা রাজপুত প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। [১১]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

১৬০৪ সালের ১৬ই মে শাহ বেগম মারা যান। [১২] ভারসাম্যহীন অবস্থায় তিনি প্রচুর আফিম খান এবং তার পরে মারা যান। তিনি জাহাঙ্গীরের প্রতি তাঁর পুত্র এবং ভাইয়ের দুর্ব্যবহার সহ্য করতে পারেননি এবং পরিস্থিতিগত মানসিক আঘাতে জীবনের প্রতি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। [১৩]

শাহ বেগমের সমাধিটি এলাহাবাদের খুসারাউ বাগানে অবস্থিত। এলাহাবাদ দরবারের প্রধান শিল্পী আকা রেজাকে তাঁর সমাধি নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটি ১৬০৬-০৭ সালে শেষ হয়েছিল। [১৪]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

[সম্পাদনা]

এপিক চ্যানেলের সমালোচক দ্বারা প্রশংসিত ঐতিহাসিক নাটক সিয়াসাত (বিশতম স্ত্রী এর উপর ভিত্তি করে) -এ নিতা শেট্টি শাহ বেগমের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Prasad, Ishwari (১৯৭৪)। The Mughal Empire। Chugh Publications। পৃষ্ঠা 294। 
  2. The Proceedings of the Indian History Congress - Volume 64। Indian History Congress। ২০০৪। পৃষ্ঠা 598। 
  3. Flores, Jorge (২০ নভেম্বর ২০১৫)। The Mughal Padshah: A Jesuit Treatise on Emperor Jahangir's Court and Household। BRILL। পৃষ্ঠা 91 n. 23। আইএসবিএন 978-9-004-30753-7 
  4. Prasad 1930
  5. Ojha, P. N (১৯৭৫)। North Indian social life during Mughal period। Oriental Publishers & Distributors। পৃষ্ঠা 131। 
  6. Jahangir, Emperor; Thackston, Wheeler McIntosh (১৯৯৯)। The Jahangirnama : memoirs of Jahangir, Emperor of India। Freer Gallery of Art and the Arthur M. Sackler Gallery, Smithsonian Institution; New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 7 n. 20, 29 n. 36। 
  7. Sharma, S. R. (১৯৯৯)। Mughal Empire In India: A Systematic Study Including Source Material, Volume 2। Atlantic Publishers & Dist। পৃষ্ঠা 310। আইএসবিএন 978-8-171-56818-5 
  8. Nicoll, Fergus (২০০৯)। Shah Jahan: The Rise and Fall of the Mughal Emperor। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 26। আইএসবিএন 978-0-670-08303-9 
  9. Soma Mukherjee (২০০১)। Royal Mughal Ladies and Their Contributions। Gyan Publishing House। পৃষ্ঠা 128। আইএসবিএন 978-8-121-20760-7 
  10. Eraly, Abraham (২০০০)। Emperors of the Peacock Throne : the saga of the great Mughals। Penguin books। পৃষ্ঠা 273আইএসবিএন 9780141001432 
  11. Jahangir, Emperor; Thackston, Wheeler McIntosh (১৯৯৯)। The Jahangirnama : memoirs of Jahangir, Emperor of India। Freer Gallery of Art and the Arthur M. Sackler Gallery, Smithsonian Institution; New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 51 
  12. Journal of the Royal Asiatic Society of the Great Britain and Ireland। Cambridge University Press for the Royal Asiatic Society। ১৯০৭। পৃষ্ঠা 604। 
  13. Jahangir, Emperor; Rogers, Alexander (১৯০৯)। The Tuzuk-i-Jahangiri; or, Memoirs of Jahangir. Translated by Alexander Rogers. Edited by Henry Beveridge। London Royal Asiatic Society। পৃষ্ঠা 56 
  14. Asher, Catherine B. (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯২)। Architecture of Mughal India, Part 1, Volume 4। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 104আইএসবিএন 978-0-521-26728-1