শান্তি দেবী
শান্তি দেবী (১১ ডিসেম্বর, ১৯২৬ - ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৭) ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। [১]
১৯৩০ এর দশকে শৈশবাবস্থায় তিনি নিজেকে 'জাতিস্মর' (পূর্বজন্মের স্মৃতিধর) হিসাবে দাবি করেন। ঘটনাটি মহাত্মা গান্ধীর গোচরে আনা হলে তিনি শান্তির সঙ্গে দেখা করেন এবং তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন; ১৯৩৬ সালে এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।[২]
আরও দুটি প্রতিবেদন সেই সময় লেখা হয়েছিল। বালচন্দ্র নাহাত তার প্রতিবেদনটি 'পুনর্জন্ম কি পর্যালোচনা' নামে একটি হিন্দি পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করেন। তিনি এতে বলেন, "যে সব তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, তাতে নিশ্চিতভাবে উপসংহার টানা যায় না যে, শান্তি দেবীর 'পূর্বজন্মের স্মৃতিসমূহ বা এ সংক্রান্ত ঘটনা পুনর্জন্ম প্রমাণ করে।"[৩] ইন্দ্র সেন তার এক নিবন্ধে এই যুক্তি খন্ডন করেন।[৪]
১৯৩৬ সালে নেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে, ১৯৫২ সালে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।[৫]
এক সুইডিশ লেখক শান্তি দেবীর দু'বার সাক্ষাৎকার নিয়ে ১৯৯৪ সালে একটি বই প্রকাশ করেন; এর ইংরেজি অনুবাদ ১৯৯৮ এ বের হয়। [৬]
শান্তি দেবী মাত্র চার বছর বয়সে তার বাবা-মাকে বলেন যে, তার আসল বাড়ি মথুরাতে এবং সেখানে তার স্বামী বাস করেন, যা তাদের বাড়ি দিল্লি থেকে ১৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত। ছয় বছর বয়সেই তিনি মথুরায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে পালান। বাড়ি ফিরে, তিনি স্কুলে বলেন যে, তিনি বিবাহিতা এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার দশদিন পর তার মৃত্যু হয়েছিল। শিক্ষকদের সাথে আলাপচারিতায় শান্তি মথুরার কথ্যভাষা ব্যবহার করতেন এবং নিজের ব্যবসায়ী স্বামীর নাম 'কেদারনাথ' বলে উল্লেখ করতেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মথুরাতে গিয়ে ঐ নামে এক ব্যবসায়ীকে খুঁজে বার করেন, যার স্ত্রী লগড়ি দেবী, ন'বছর আগে একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার দশদিন পর মারা গিয়েছিলেন। কেদারনাথ দিল্লিতে পৌঁছালে শান্তি তাকে ও তার ছেলেকে তৎক্ষণাৎ চিনতে পারেন। শান্তি দেবী কেদারনাথের দাম্পত্য জীবনের নানা খুঁটিনাটির বর্ণনা দিলে কেদারনাথ তাকে লগডি দেবীর 'পুনর্জন্ম' হিসেবে মেনে নেন। ঘটনাটি মহাত্মা গান্ধীর নজরে আনা হলে তিনি শান্তির সঙ্গে দেখা করেন এবং তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন। কমিশন ১৯৩৫ সালের ১৫ই নভেম্বর শান্তি দেবীকে নিয়ে মথুরা যায়। সেখানে শান্তি লগড়ি দেবীর দাদু তথা পরিবারের আত্মীয়দের শনাক্ত করেন। শান্তি বুঝতে পারেন যে, কেদারনাথ তার স্ত্রীর মৃত্যুশয্যায় দেওয়া কয়েকটি প্রতিশ্রুতি পালন করেন নি। কমিশনের রিপোর্টে শান্তি দেবীকে লগড়ি দেবীর যথার্থ জন্মান্তর হিসেবে দেখিয়ে উপসংহার টানা হয়। [২]
শান্তি দেবী আজীবন অবিবাহিতা ছিলেন। ১৯৫০ এর দশকে তিনি তার কাহিনী আবারও বলেন। ১৯৮৬ তে তিনি আয়ান স্টিভেনসন ও কে.এস. রাউতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লগড়ি দেবীর মৃত্যু-পূর্ব অভিজ্ঞতাসমূহ ব্যক্ত করেন। কে.এস. রাউত তার তদন্ত ১৯৮৭ তেও চালিয়ে যান এবং শেষ সাক্ষাৎকারটি ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৭ তে শান্তি দেবীর মৃত্যুর চারদিন পূর্বে নেওয়া হয়। [৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ K. S. Rawat, T. Rivas (July 2005), "The Life Beyond: Through the eyes of Children who Claim to Remember Previous Lives", The Journal of Religion and Psychical Research 28 (3): 126–136
- ↑ ক খ L. D. Gupta, N. R. Sharma, T. C. Mathur, An Inquiry into the Case of Shanti Devi, International Aryan League, Delhi, 1936
- ↑ Nahata, Bal Chand. Punarjanma Ki Paryyalochana. Calcutta: Buddiwadi Songh. (Undated.)
- ↑ Sen, Indra. "Shantidevi Further Investigated". Proceedings of the India Philosophical Congress. 1938
- ↑ Bose, Suskil C. A Case of Reincarnation, Calcutta: Satsang, 1952
- ↑ Sture Lönnerstrand, Shanti Devi: En berättelse om reinkarnation. Stockholm 1994. English translation: I Have Lived Before: The True Story of the Reincarnation of Shanti Devi, Ozark Mountain Publishing, 1998. আইএসবিএন ১-৮৮৬৯৪০-০৩-৭
- ↑ "After Life Death: fact or Fiction". Sunday Post (Kathmandu Post). 14 April 2002.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- পুনর্জন্মের অবিশ্বাস্য কাহিনী বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৮ এপ্রিল ২০১৮, পৃষ্ঠা ৫।