লিওনিড রগোজভ
লিওনিড আইভানোভিচ রগোজভ
Леонид Иванович Рогозов | |
---|---|
জন্ম | চিতা ওবলাস্ট, সোভিয়েত ইউনিয়ন | ১৪ মার্চ ১৯৩৪
মৃত্যু | ২১ সেপ্টেম্বর ২০০০ | (বয়স ৬৬)
জাতীয়তা | সোভিয়েত ইউনিয়ন, রাশিয়া |
পেশা | ভেষজ চিকিৎসক, সার্জন |
পরিচিতির কারণ | এন্টার্কটিকার একটি গবেষণা স্টেশনে নিজের দেহে নিজেই অস্ত্রোপচার করে এপেন্ডিক্স অপসারন করেছিলেন। |
লিওনিড আইভানোভিচ রগোজভ (রুশ: Леонид Иванович Рогозов, ১৪ মার্চ, ১৯৩৪-২১ সেপ্টেম্বর, ২০০০) ছিলেন অস্ত্রোপচারে পারদর্শী একজন রাশিয়ান চিকিৎসক। তিনি ১৯৬০-১৯৬১ সালের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ষষ্ঠ এন্টার্কটিকা অভিযানের ডাক্তার ছিলেন। তিনিই ছিলেন “নভোলাজারেভস্কায়া” স্টেশনের একমাত্র ডাক্তার। একদিন তিনি পেটে এপিন্ডিক্সের ব্যথা অনুভব করলে নিজেই তা অস্ত্রোপচার করে অপসারন করেন।[১][২] বিশ্বে নিজের দেহে নিজের অস্ত্রোপচারের এই ঘটনাটি অত্যন্ত বিখ্যাত।[৩][৪]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]লিওনিড রগোজভ পূর্ব সাইবেরিয়ার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম ডাউরিয়া স্টেশন, চিতা ওবলাস্টে জন্মগ্রহণ করেন যা ম্যানজোলির কাছে এবং মঙ্গোলিয়া ও চীনের সীমান্তের কাছে সোভিয়েত সীমান্ত থেকে ১৭ কি.মি. দূরে অবস্থিত। তার পিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৩ সালে খুন হন। ১৯৫৩ সালে তিনি মিনুসিনস্ক, ক্রারনয়ারক্স ক্রাই থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপ্ত করেন এবং “লেনিনগ্রাদ পেডিয়াট্রিক মেডিকেল ইন্সটিটিউটে” (বর্তমান সাংক্ত পিতেরবুর্গ) ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে তিনি সাধারণ চিকিৎসক (যে চিকিৎসক ভেষজ উপাচারের পাশাপাশি ছোটখাটো অস্ত্রোপচারেও পারদর্শী) হিসেবে স্নাতক সম্পন্ন করেন ও অস্ত্রোপচারের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বর, ১৯৬০ সালে, ২৬ বছর বয়সে তিনি তার ট্রেনিং অসমাপ্ত রেখেই ষষ্ঠ সোভিয়েত এন্টার্কটিক অভিযানের ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেন।
এন্টার্কটিকায় কর্মজীবন
[সম্পাদনা]রগোজভ ১৯৬০ সালে এন্টার্কটিকা অভিযানে যোগদান করার পর ১৯৬১ সালের জানুয়ারিতে “নভোলাজারেভস্কায়া” স্টেশন স্থাপন করা হয়। স্টেশনের ১৩ জন গবেষকদের জন্য তিনি ছিলেন একমাত্র ডাক্তার। রগোজভ অক্টোবর, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এন্টার্কটিকায় কাজ করেন।
১৯৬১ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে রগোজভ সাধারণ দূর্বলতা, জ্বর জ্বর ভাব ও উদরে পাকস্থলীর কছে ব্যাথা অনুভব করেন। তিনি সাধারণ সকল চিকিৎসা পদ্ধতিই প্রয়োগ করেন কিন্তু তার অবস্থায় আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে। ৩০ এপ্রিল পেরিটানাইটিসের (চিরহরিৎ লতানো গাছ যাতে হালকা নীল ফুল ফোটে) উপসর্গ দেখা দেয় কিন্তু বিকেলের দিকে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। মীরনি নামে কাছের সোভিয়েত গবেষণা স্টেশনটি ছিল ১৬০০ কি.মি. (১,০০০ মাইল) এর বেশি দূরে। স্টেশনে কোন বিমানও ছিলনা। রগোজভের নিজের দেহে নিজে অস্ত্রোপচার করা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা।
অপারেশন শুরু হয় ৩০ এপ্রিল রাত ২২:০০ টায়, তাকে সাহায্য করেন একজন গাড়ি চালক ও একজন আবহাওয়াবিদ যিনি যন্ত্রপাতি এগিয়ে দিচ্ছিলেন ও অপরজন আয়না ধরে রাখছিলেন যাতে যে সকল জায়গায় সরাসরি দেখতে অসুবিধা তা যেন রগোজভ আয়নার মাধ্যমে দেখতে পারেন। মধ্যরাতের দিকে অস্ত্রোপচার শেষ হয়। অস্ত্রোপচারের কিছুদিন পর আস্তে আস্তে তার দূর্বলতা কেটে যায়, পেরিটানাইটিসের উপসর্গও দূর হয়ে যায়। পাঁচ দিন পর তার শররের তাপমাত্রাও স্বাভাবিক হয়ে আসে। সুস্থ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর তিনি পুনরায় তার কাজে যোগদান করেন।[৩] ১৯৬১ সালে সোভিয়েত সরকার তাকে “অর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার অফ লেবার” পুরস্কারে ভূষিত করে।
পরবর্তী জীবন
[সম্পাদনা]১৯৬২ সালের অক্টোবরে রগোজভ লেনিনগ্রাদে ফিরে আসেন ও পিএইসডি ডিগ্রীর জন্য গবেষণা শুরু করেন। সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬ সালে তিনি পিএইসডির জন্য থিসিস পেপার জমা দেন যার শিরোনাম ছিল, “রিসেকসন অফ দ্য এসোফেগাস ফর ট্রিটিং এসোফেগাল ক্যান্সার”। তিনি পরবর্তীতে সাংক্ত পিতেরবুর্গের বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি “সাংক্ত পিতেরবুর্গ যক্ষ্মা ফুসফসবিদ্যার গবেষণা কেন্দ্রের অস্ত্রোপাচার বিভাগের প্রধান ছিলেন।
রগোজভ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০০০ সালে ৬৬ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Alexis C. Madrigal (Mar 14 2011)। "Antarctica, 1961: A Soviet Surgeon Has to Remove His Own Appendix"। সংগ্রহের তারিখ 2013-06-14। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "A hero surguon"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৪।
- ↑ ক খ L.I. Rogozov (১৯৬৪)। "Self-operation" (পিডিএফ)। Soviet Antarctic Expedition Information Bulletin: 223–224। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৩।
- ↑ Rogozov, V.; Bermel, N.; Rogozov, LI. (২০০৯)। "Auto-appendectomy in the Antarctic: case report."। BMJ। 339: b4965। ডিওআই:10.1136/bmj.b4965। পিএমআইডি 20008968।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Self-operation. Tracking down a good story, with photos from the operation