লাই খুৎশংবি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লাই খুৎশংবি
লাই খুৎশংবি, দীর্ঘ হাতের রাক্ষস
দলপুরাণ
উপ দলমিতি পুরাণ (মণিপুরী পুরাণ)
অন্যান্য নাম(সমূহ)লাই খুতসংবি
দেশ
অঞ্চলমণিপুর

 

লাই খুৎশংবি (/laai-khoot-shaang-bee/) হলো একটি রাক্ষস ( হিংচাবি ) যাকে মেইতেই পৌরাণিক কাহিনী এবং প্রাচীন কাংলেইপাকের ( প্রাচীন মণিপুর ) লোককাহিনীতে পাওয়া যায়। তার অনেক লম্বা হাত আছে। "লাই" শব্দের অর্থ "দেবতা বা দেবত্ব", "খুত" অর্থ "হাত" এবং "সাংবি" বা "শাংবি" অর্থ মণিপুরীতে "দীর্ঘ" ( মেইতেই )।[১][২][৩] কিংবদন্তি বলে যে সে যখন হাঁটে তখন তার লম্বা হাত মাটিতে স্পর্শ করে। তার আঙ্গুলগুলো কাঁটার মত ধারালো। তার একটি দীর্ঘ জিহ্বাসহ একটি বড় মুখ আছে। তার চেহারা খুব ভয়ঙ্কর।[৪]

গল্প[সম্পাদনা]

শশী (বা "শচি" বা "লেইরিক" বা "নওচা" অন্যান্য সংস্করণে) নামে একটি ছোট বাচ্চা নিয়ে একজন পুরুষ এবং নারী একটি গ্রামে একটি বিচ্ছিন্ন বাড়িতে বসবাস করছিলেন। কাছেই ছিল জঙ্গল যেখানে লাই খুৎশংবি থাকত।[৪] সে সাধারণত গ্রাম থেকে গবাদি পশু এবং মানুষের বাচ্চা চুরি করে খেত। সে মানুষের একাকীত্বের সুযোগ নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে ত্রাসের বীজ বপন করেছিল।

লাই খুৎশংবি বিশেষ করে শিশু শশীকে খেতে চেয়েছিল। কিন্তু শশীর বাবা শশিপা এতই সাহসী ছিলেন যে লাই খুৎশংবি তাকে ভয় পেত। একদিন শশিপা বাড়ি থেকে দূরে কোথাও কাজ করতে বের হয়। কয়েকদিনের জন্য সে চলে যাবে। রাতে লাই খুৎশংবি ঘরে এসে শশীর মা শসিমাকে জিজ্ঞেস করে তার স্বামী বাড়িতে আছে কি না। শসিমা জ্ঞানী ছিল, তাই সে মিথ্যা বলেছে এবং বলল তার স্বামী বাড়িতে আছে। তখন লাই খুৎশংবি চলে যায়। কিন্তু সে রাতের পর রাত ফিরে এসে বারবার একই প্রশ্ন করল। শশীর মাও একই জবাব দিয়েছিলেন এবং শশীপা বাড়ি থেকে দূরে থাকার আসল ঘটনাটি লুকিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর শশীর বাবা বাড়ি ফিরলে শশীর মা তাকে ঘটনাটি জানায়। একথা শুনে শশীর বাবা অসুরকে পরাজিত করার পরিকল্পনা করেন। সেই রাতে, তিনি একটি ধারালো তলোয়ার নিয়ে লাই খুৎশংবির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। মাঝরাতে, রাক্ষস, যথারীতি, শসিমাকে জিজ্ঞাসা করতে আসে তার স্বামী বাড়িতে আছে কি না।[৫] এবার শশীর মা উত্তর দিলেন তিনি বাড়িতে নাই, দূরে আছেন। কৌশলটা না জানার কারণে, লাই খুৎশংবি তার একটি শক্তিশালী হাত দিয়ে বাড়ির দেয়াল ভেদ করে শিশু শশীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। এই সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকা শশীর বাবা তলোয়ার দিয়ে খুৎশংবির হাত কেটে ফেলেন।[৬] তারপর, রাক্ষস বেদনাদায়ক চিৎকার করে,

এ্যাও এমা, আমি মরে গেছি!
আয়ো ইয়ো এমা আয়ো ইয়ো
লেইমাডেং ডেং নিংজাওবি
তুমি বড় মিথ্যাবাদী
আয়ো ইয়ো এমা আয়োয়ো[৬][৭]

লাই খুৎশংবি তার অবশিষ্ট লম্বা হাত টেনে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তার কাটা হাত থেকে রক্ত উড়ে গিয়ে বনে যাওয়ার পথে বেড়ে ওঠা অনেক গাছের গায়ে পড়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে কিছু গাছে লাল দাগ দেখা যায় আর সেটা হলো তার রক্ত। শশীর বাবা তার রক্তের ছোপ অনুসরণ করে জঙ্গলে যান। দৈত্যটি সাধারণত যতটা দ্রুত দৌড়াতে পারে ততটা দ্রুত ছুটতে পারেনি কারণ সে আহত হয়েছিল। শশীর বাবা তাকে ধরে তার অন্য হাতের উপর পা চেপে ধরেন। তারপর, তিনি সেই হাতটিও কেটে ফেলেন। গ্রামবাসী শশিপাকে তার সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ জানায়। সেই দিন থেকে লাই খুৎশংবি নামের দীর্ঘ হাতের রাক্ষসকে আর দেখা যায়নি।

গ্যালারি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Oinam, James (২০১৬-০৫-২৬)। New Folktales of Manipur (ইংরেজি ভাষায়)। Notion Press। আইএসবিএন 978-1-945400-70-4 
  2. Indian Literature (ইংরেজি ভাষায়)। Sahitya Akademi.। ১৯৮১। 
  3. Singh, Moirangthem Kirti (১৯৯৩)। Folk Culture of Manipur (ইংরেজি ভাষায়)। Manas Publications। আইএসবিএন 978-81-7049-063-0 
  4. B. Jayantakumar Sharma; Dr. Chirom Rajketan Singh (২০১৪)। Folktales of Manipur। পৃষ্ঠা 96। 
  5. B. Jayantakumar Sharma; Dr. Chirom Rajketan Singh (২০১৪)। Folktales of Manipur। পৃষ্ঠা 97। 
  6. B. Jayantakumar Sharma; Dr. Chirom Rajketan Singh (২০১৪)। Folktales of Manipur। পৃষ্ঠা 98। 
  7. B. Jayantakumar Sharma; Dr. Chirom Rajketan Singh (২০১৪)। Folktales of Manipur। পৃষ্ঠা 99। 

অন্যান্য ওয়েবসাইট[সম্পাদনা]