লক্ষীনারায়ণের পুকুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

লক্ষীনারায়ণের পুকুর বাংলাদেশের মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় অবস্থিত সপ্তদশ শতাব্দীর একটি প্রাচীন পুকুর। যা মহম্মদপুরে রাজা সীতারাম রায়ের আমলের অন্যতম কীর্তি বলে মনে করা হয়।

পুকুরের বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

আকারের মাঝারি রকমের পুকুরটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। পুকুরের চারদিকের পাড় একেবারে উপর থেকে পানির গভীরে তলা পর্যন্ত সান বাধানো মানে পাকা করা। এমন কি পুকুরের তলদেশও পাকা। পুকুরের তলদেশে সাত-আটটি কুয়ো দিয়ে পানি উঠে পুকুরটি জলে পূর্ণ থাকে।[১] বাংলাদেশের যশোরের চাঁচড়ার রাজবাড়ি এলাকায় দুধ সাগর নামে আরও একটি পুকুরে এমন ইটের গাথুনি দিয়ে পাড় বাধাঁনো পুকুরের সন্ধান পাওয়া গেছে, তবে সেটি এ পুকুরের চেয়ে আকারে ছোট। [২] লক্ষীনারায়ণের পুকুরের সাথে এর মূল পার্থক্য হচ্ছে লক্ষীনারায়ণের পুকুরের পাড়ের প্রাচীর দুই ধাপে নির্মিত। যা এখনো শনাক্ত করা যায়। এ দুই ধাপের উপর এবং নিচ তলাতে ছিল অনেক কুলুঙ্গি। কুলুঙ্গিগুলো পরস্পর থেকে কয়েক হাত দূরে দূরে রয়েছে। রাজা সীতারামের আমলে এই কুলুঙ্গি গুলোতে প্রদীপ জ্বালানো হতো। আর গোটা পুকুরের জলে প্রতিবিম্ব তৈরি হয়ে এক নৈশর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হত।

পুকুরের দুই দিকে দুইটি ইমারত ছিল যা এখন নিশ্চিহ্ন প্রায়। এর একটি হল, আট কোণাকার শিবমন্দির। অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে এই ইমারত নির্মিত বলে মনে করা হয়। যা দোতলা এবং এর ছাঁদ সমতল।[১] পুকুরের অন্য পাড়ে রয়েছে একটি প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ যা সীতারামের প্রাসাদ বলে পরিচিত।

সীতারাম রায়[সম্পাদনা]

সীতারাম রায় ছিলেন সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকের স্বাধীন রাজা। মাগুরার মোহাম্মদপুরে ছিল তার রাজধানী। যা ছিল পরিখা ঘেরা। সেই পরিখা স্থানীয়দের কাছে গড় নামে পরিচিত। সীতারাম রায়ের পিতা ছিলেন মুঘল আমলে মুর্শিদাবাদের নবাবের একজন পদস্থ কর্মচারী। সীতারাম মুর্শিদাবাদের নবাবের কাছ থেকে জমিদার ও পরে রাজা উপাধি লাভ করেন। সময়ের সাথে প্রতিপত্তি লাভের সাথে সাথে প্রবল ক্ষমতাধর হয়ে উঠলে নবাবকে রাজস্ব দেওয়া বন্ধ করে দেন।

নবাব মুর্শিদকুলি খান এতে রুষ্ট হন এবং ফৌজদার আবু তোরাবের নেতৃত্বে এক সেনাদল প্রেরণ করেন। সীতারামের বাহিনীর সাথে নবাব বাহিনীর যুদ্ধে বাংলার নবাবের বাহিনী হেরে যায় এওবং সেনানায়ক আবু তোরাব নিহত হন। ১৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে বখ্‌শ আলী খাঁর নেতৃত্বে নবাবের এক শক্তিশালী বাহিনী আবারও যুদ্ধে প্রেরণ করলে সীতারাম রায় পরাজিত, বন্ধী এবং নিহত হন। এবং সীতারাম প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. যশোর-খুলনার ইতিহাস, সতীশচন্দ্র মিত্র
  2. লক্ষীনারায়ণের পুকুর, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, পৃষ্ঠা ২, জানুয়ারি ১৮, ২০০৮।