বিষয়বস্তুতে চলুন

রেখটসষ্টাট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ধারণাটির ডেনীয় প্রকারভেদ (রেতস্তাত, Retsstat), এখানে ডেনমার্কের ন্যায়বিচার দলের ১৯৩৯ সালে একটি প্রাচীরপত্রে চিত্রিত হয়েছে।

রেখ্‌টসষ্টাট (জার্মান: Rechtsstaat; শুনুন; আক্ষরিক অর্থে "আইনি রাষ্ট্র") মহাদেশীয় ইউরোপীয় আইনি চিন্তাধারায় অবস্থিত একটি মতবাদ, যেটি জার্মান আইনশাস্ত্র থেকে উৎপত্তিলাভ করে। এটিকে বাংলায় "আইনের শাসন" বা "আইনি রাষ্ট্র" বা "আইনভিত্তিক রাষ্ট্র" বা "ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র" হিসেবে অনুবাদ করা যায়। এটি দ্বারা বোঝানো হয় যে প্রত্যেক ব্যক্তিই আইনের অধীন, বিশেষ করে সরকারও।

একটি রেখ্‌টসষ্টাট হল এক ধরনের সাংবিধানিক রাষ্ট্র যেখানে সরকারের ক্ষমতার প্রয়োগ আইন দ্বারা সীমায়িত।[১] এটি "সংবিধানবাদ" ধারণাটির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, যেটি আবার ইঙ্গ-মার্কিন আইনের শাসন ধারণাটির সাথে সংযুক্ত। কিন্তু পার্থক্য হল এই যে এটিতে ন্যায়বিচারের ধারণাটির উপরেও জোর দেওয়া হয় (ন্যায়বিচার হল নৈতিক ঋজুতার একটি ধারণা যা নীতিশাস্ত্র, যৌক্তিকতা, আইন, প্রকৃতির বিধা, ধর্ম বা ন্যায়পরতার মতো ব্যাপারগুলির উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট)। সুতরাং এটি ওবরিগকাইট্‌সষ্টাট (Obrigkeitsstaat (জার্মান: [ˈoːbʁɪçkaɪ̯t͡sʃtaːt] (শুনুন)) বা নিখ্‌টরেখ্‌টসষ্টাট (Nichtrechtsstaat, ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে চলা রাষ্ট্র),[২] এবং উনরেখ্‌টসষ্টাট (Unrechtsstaat, একটি অ-রেখ্‌টসষ্টাট যেটি ঐতিহাসিক বিকাশের মাধ্যমে রেখ্‌টসষ্টাটে পরিণত হতে পারে)।[৩]

একটি রেখ্‌টসষ্টাটে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকে যাতে কর্তৃত্বের যথেচ্ছ প্রয়োগের থেকে নাগরিকেরা সুরক্ষিত থাকে। নাগরিকেরা আইনভিত্তিক নাগরিক স্বাধীনতা ভোগ করে এবং আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। মহাদেশীয় ইউরোপীয় আইনি চিন্তাধারাতে রেখ্‌টসষ্টাটের বিপরীত ধারণাটি হল পুলিশি রাষ্ট্র। কাছাকাছি আরেকটি ধারণা হল ফরাসি এতা লেগাল[৪]

রেখ্‌টসষ্টাটের মূলনীতিসমূহ[সম্পাদনা]

জার্মান ডাকটিকিট (১৯৮১)। রেখ্‌টসষ্টাট, গণতন্ত্রের মৌলিক ধারণা – "আইনসভা সাংবিধানিক নিয়ম দ্বারা সীমাবদ্ধ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ আইন ও অধিকার দ্বারা সীমাবদ্ধ" (ধারা ২০ (৩), জার্মান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্রের মৌলিক আইন)

রেখটসষ্টাটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিগুলি নিম্নরূপ:[৫]

  • রাষ্ট্রটি জাতীয় সংবিধানের সর্বোচ্চ আধিপত্যের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে।
  • নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রের সমান অংশীদার
  • ক্ষমতার পৃথকীকরণ, যেখানে নির্বাহী, আইনপ্রণয়ন ও বিচার বিভাগগুলি একে অপরের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে এবং রোধ ও সমন্বয় সাধন করে
  • বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ (আইনের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না) এবং আইনপ্রণয়ন বিভাগ সাংবিধানিক মূলনীতি দ্বারা সীমাবদ্ধ।
  • আইন প্রণয়ন বিভাগ ও গণতন্ত্র উভয়েই মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার ও মূলনীতিসমূহ দ্বারা সীমাবদ্ধ
  • রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও সমস্ত রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের জন্য কারণ দর্শানোর আবশ্যকীয়তা
  • স্বাধীন সংস্থা দ্বারা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডসমূহের পর্যালোচনা এবং আপীল প্রক্রিয়া
  • আইনের স্তরক্রম ও স্পষ্টতা ও নির্দিষ্টতার আবশ্যকীয়তা
  • রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের নির্ভরযোগ্যতা, সদিচ্ছামূলক অতীত প্রবণতার বিপরীতে অনুবর্তী রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডসমূহ, আইনের পশ্চাৎ-বলবৎকরণ নিষিদ্ধকরণ
  • রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে আনুপাতিকতার মূলনীতি

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Carl Schmitt, The Concept of the Political, ch. 7; Crisis of Parliamentary Democracy
  2. The Legal Doctrines of the Rule of Law and the Legal State (Rechtsstaat). Editors: Silkenat, James R., Hickey Jr., James E., Barenboim, Peter D. (Eds.), Springer, 2014
  3. Gerd Roellecke (১৫ জুন ২০০৯)। "War die DDR ein Unrechtsstaat?"। FAZ.net। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৯ 
  4. Mockle, Daniel (১৯৯৪)। "L'État de droit et la théorie de la rule of law"। Les Cahiers de droit35 (4): 823–904। ডিওআই:10.7202/043305arঅবাধে প্রবেশযোগ্য 
  5. Klaus Stern, Das Staatsrecht der Bundesrepublik Deutschland, I 2nd edition, § 20, Munich 1984, আইএসবিএন ৩-৪০৬-০৯৩৭২-৮; Reinhold Zippelius, Allgemeine Staatslehre/Politikwissenschaft, 16th edition, §§ 8 II, 30-34, Munich 2010, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৪০৬-৬০৩৪২-৬

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]