রঞ্জক চূর্ণ
রঞ্জক চূর্ণ হলো এমন একটি উপাদান যা প্রতিফলিত বা প্রেরিত আলোর কোনো কোনো তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে তার রঙ বদলে দেয়। আলোর বিভিন্ন রকম বিকিরণ, যেমন প্রতিপ্রভা (fluorescence) বা অনুপ্রভা (phosphorescence) থেকে এই ভৌত প্রক্রিয়াটি ভিন্ন।
অনেক বস্তুই বেছে বেছে আলোর নির্দিষ্ট কোনো তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে। কিন্তু মানুষ সেসব বস্তুই রঞ্জক চূর্ণ হিসেবে ব্যবহার ও বিকশিত করেছে সেগুলো অন্যান্য বস্তুকেও ঠিকভাবে রঞ্জিত করতে পারে। একটি রঞ্জক চূর্ণে অবশ্যই সেই তীব্র টিন্টিং ক্ষমতা থাকতে হবে যা উদ্দীষ্ট বস্তু রঙ করতে প্রয়োজনীয়। আর পরিবেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় টিকে থাকতে হবে।
চিত্রকলা ও শিল্পক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য স্থায়িত্ব ও টেকসইতা দুটি আকাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য। যেসব রঞ্জক চূর্ণ দীর্ঘস্থায়ী নয় সেগুলোকে বলে fugitive বা ভঙ্গুর। এগুলো সময়ের সাথে সাথে অথবা কড়া আলোতে রাখলে উজ্জ্বলতা হারায় বা কালচে হয়ে যায়।
রঞ্জক চূর্ণ ব্যবহার করে পেইন্ট, কালি, প্লাস্টিক, তন্তু, প্রসাধনী, খাদ্য এবং অন্যান্য বিবিধ দ্রব্য রঙ করা হয়। ম্যানুফ্যাকচারিং এবং দৃশ্যকলায় ব্যবহৃত অধিকাংশ রঞ্জক চূর্ণই শুষ্ক রঙকণিকা (colorant), সাধারণত মিহিভাবে গুঁড়ো করা। এই গুঁড়ো মেশানো হয় তুলনামূলক নিরপেক্ষ বা বর্ণহীন বাইন্ডারের (বা বাহকের) সাথে যা রঞ্জক চূর্ণকে মিশ্রিত করে এবং রঙ মেখে যায়।
রঞ্জক চূর্ণ (পিগমেন্ট) ও দ্রবণীয় রঞ্জক (ডাই) এর মধ্যে একটি পার্থক্য হলো: রঞ্জক চূর্ণ রঙবাহকে অদ্রবণীয় (ফলে মিশ্রণ বা নিলম্বন সৃষ্টি হয় ), কিন্তু দ্রবণীয় রঞ্জক হয় তরল বা দ্রবণীয় (ফলে দ্রবণ সৃষ্টি হয়)। কোনো রঙকণিকা রঞ্জক চূর্ণ না দ্রবণীয় রঙ হিসেবে কাজ করবে তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট বাহকের ওপর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, দ্রবণীয় রঞ্জককে ধাতব লবণের সাথে দ্রবীভূত করে থিতিয়ে নিলম্বনযোগ্য রঞ্জক চূর্ণ তৈরি করা যায়। এরকম উৎপন্ন রঞ্জক চূর্ণকে বলে লেক রঞ্জক চূর্ণ। আর জৈব রঞ্জক (biological pigment) বলতে দ্রাব্যতা নির্বিশেষে সব রঙিন পদার্থকেই বোঝায়।[১]
২০০৬ সালে সারাবিশ্বে ৭.৪ মিলিয়ন টন জৈব, অজৈব ও বিশেষ রঞ্জক চূর্ণ বাজারজাত করা হয়েছে। পরিমাণের হিসাবে সর্বাধিক বাজারজাত করেছে এশিয়া, তারপর যথাক্রমে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা। ২০২০ সালের মধ্যে এ থেকে আয় বেড়ে হবে আনুমানিক ৩৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[২] ২০০৯ সালে রঞ্জক চূর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা ছিল মোটামুটি ২০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, পূর্ববর্তী বছরের প্রায় ১.৫-২% বেশি। সামনের বছরগুলোতে এটি স্থিতিশীল হারে বাড়তে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে রঞ্জক চূর্ণের বৈশ্বিক বিক্রয়ের অর্থমূল্য হবার কথা ২৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৮ সালে ২৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[৩]
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]- দ্রবণীয় রঙ (ডাই)
- প্রস্তরশিল্প
- বিভাজক রঙ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Khan, Amina (১৪ অক্টোবর ২০১১)। "Artifacts indicate a 100,000-year-old art studio" – LA Times-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Market Study Pigments, 3rd ed., Ceresana, 11/13"। ১৮ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Market Report: World Pigment Market"। Acmite Market Intelligence।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Ball, Philip (২০০২)। Bright Earth: Art and the Invention of Color। Farrar, Straus and Giroux। আইএসবিএন 0-374-11679-2।
- Doerner, Max (১৯৮৪)। The Materials of the Artist and Their Use in Painting: With Notes on the Techniques of the Old Masters, Revised Edition.। Harcourt। আইএসবিএন 0-15-657716-X।
- Finlay, Victoria (২০০৩)। Color: A Natural History of the Palette। Random House। আইএসবিএন 0-8129-7142-6।
- Gage, John (১৯৯৯)। Color and Culture: Practice and Meaning from Antiquity to Abstraction। University of California Press। আইএসবিএন 0-520-22225-3।
- Meyer, Ralph (১৯৯১)। The Artist's Handbook of Materials and Techniques, Fifth Edition। Viking। আইএসবিএন 0-670-83701-6।
- L. Feller, L. Ed., Artists' Pigments. A Handbook of Their History and Characteristics, Vol. 1, Cambridge University Press, London 1986.
- Roy A. Ed., Artists' Pigments. A Handbook of Their History and Characteristics, Vol. 2, Oxford University Press 1993.
- Fitzhugh, E.W. Ed. Artists’ Pigments. A Handbook of Their History and Characteristics, Vol. 3: Oxford University Press 1997.
- Berrie, B. Ed., Artists' Pigments. A Handbook of Their History and Characteristics, Vol. 4, Archetype books, 2007.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Pigments through the ages ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে
- ColourLex Pigment Lexicon
- Meyrs, G.D., An Artists Paint and Pigment Reference with Color Index Names, Color Index Numbers and Chemical Composition
- Earliest evidence of art found
- Sarah Lowengard,The Creation of Color in Eighteenth-century Europe, Columbia University Press, 2006
- Phillip Ball, (audio) On Chemistry and Colour in Art
- An Overview On A Pigment Phthalo Green Organic Pigments ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে
- ইউটিউবে Alchemy's Rainbow: Pigment Science and the Art of Conservation, Chemical Heritage Foundation
- ইউটিউবে Poisons and Pigments: A Talk with Art Historian Elisabeth Berry-Drago, Chemical Heritage Foundation