মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম(১৯০৯-০৮-১৯)১৯ আগস্ট ১৯০৯
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ী,কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৪ জানুয়ারি ১৯৬৯(1969-01-14) (বয়স ৫৯)
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৯০৯-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৬৯)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রেসিডেন্সি কলেজ
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিদক্ষিণের বারান্দা
দাম্পত্যসঙ্গীমিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়
সন্তানমিতেন্দ্রলাল গঙ্গোপাধ্যায়

মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় (১৯ আগস্ট ১৯০৯ – ১৪ জানুয়ারি ১৯৬৯) বিশ শতকের বাংলায় একজন পরিসংখ্যানবিদ হয়েও জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির আশ্রয়ে থেকে বাংলার শিশু-কিশোর সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।[১]

জীবনী[সম্পাদনা]

মোহনলাল অবনীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠা কন্যা করুণা ও জামাতা ভারতী গোষ্ঠীর সুসাহিত্যিক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র। তাঁর জন্ম ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট জোড়াসাঁকোর দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের পাঁচ নম্বর বাড়িতে। সেখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের প্রাথমিক দিনগুলি। দাদামশায় অবনীন্দ্রনাথ ছিলেন মোহনলালের ছায়াসঙ্গী। তার অনুজ শোভনলালও থাকতেন ঠাকুরবাড়িতেই। মোহনলাল কলকাতার হেয়ার স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজের পাঠ শেষ করে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে পড়াশোনা করেন। দেশে ফিরে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের আমন্ত্রণে কলকাতার ভারতীয় রাশিবিজ্ঞান সংস্থা তথা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের সঙ্গে যুক্ত হন এবং অন্যতম পরিসংখ্যানবিদ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন।

ইউরোপে ছাত্রজীবনে পদব্রজে ও লাফা যাত্রায় অনেক ঘোরাঘুরি করেছেন। কর্মসূত্রে চেকোশ্লোভাকিয়ায় অতিবাহিত করেন একবছর। বিবাহ করেন চেকোশ্লোভাকিয়ার এক রমণী মিলাডাকে।

অল্প বয়স থেকেই তিনি গল্প ইত্যাদি লিখতে শুরু করেছিলেন। নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেন। তবে ছোটদের জন্যই লিখতেন বেশি। তার প্রথম প্রকাশিত সোনার ঝরণা শিশুদের উপযোগী গ্রন্থ। দাদামশাইদের (গগনেন্দ্রনাথ, সমরেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ) সান্নিধ্যে আনন্দঘন মুহূর্তের ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন স্মৃতিকথা–দক্ষিণের বারান্দা

মোহনলালের গদ্য রচনা যেমন ছিল নির্ভার, তেমনই উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলা শব্দের ব্যবহার। তিনি রচনায় ইংরাজী শব্দের ব্যবহারে করতেন না। নিজেই বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি করেছেন। 'রুকস্যাক'কে করেছেন 'পিঠঝুলি', 'হিচ-হাইকিঙ' কে 'লাফা যাত্রা' , পদব্রজে হাঁটাকে 'চরণিক', 'শেল্ফ হেল্প শপ' কে 'আত্মসেব দোকান' ইত্যাদি। তিনি বাংলা কিশোর সাহিত্যে সংযোজন করেন–

  • বোর্ডিং ইস্কুল
  • বাবুইয়ের অ্যাডভেঞ্চার
  • গ্রিমভাইদের রূপকথা (অনুবাদ)
  • অল কোয়ায়েট অন দি ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট (অনুবাদ)

বেশকিছু ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন তিনি। ছাত্রবস্থায় দেশ বেড়ানোর স্মৃতি নিয়ে লিখেছিলেন– চরণিক আর লাফা-যাত্রা'। সেই কাহিনীগুলির সংকলন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ভ্রমণসমগ্র[২]

তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল–

  • অসমাপ্ত চট্টাব্দ (চটকলের শ্রমিকজীবন নিয়ে উপন্যাস)
  • দক্ষিণের বারান্দা (স্মৃতিকথা)
  • পুনরুদ্ধার চ
  • গগনেন্দ্রনাথ (স্মৃতিকথা) প্রভৃতি।

মোহনলালের চেক স্ত্রী মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে গিয়েছিলেন। বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতি, তৎকালীন বাংলাদেশের পাঁচালীমেয়েদের ব্রতকথা ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি এগুলি চেকভাষায় অনুবাদও করেছেন।

মোহনলাল কর্মজীবন থেকে অবসরের পর সাহিত্যকর্মে মনোনিবেশ করবেন স্থির করেছিলেন, কিন্তু তার শেষগ্রন্থ– গগনেন্দ্রনাথ (১৩৮০ বঙ্গাব্দ,১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে) প্রকাশের আগেই ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি অকস্মাৎই পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৫৮৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়। শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক। ভ্রমণসমগ্র। দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-295-2706-6