মোস্তাফা আল-তুর্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোস্তাফা আল-তুর্ক
জন্ম (1973-07-14) ১৪ জুলাই ১৯৭৩ (বয়স ৫০)
বৈরুত, লেবানন[১]
স্থানীয় নামمصطفى الترك
জাতীয়তালেবানিয়
ইংরেজ
উচ্চতা৬ ফু ২ ইঞ্চি (১৮৮ সেমি)
ওজন২৩৫ পা (১০৭ কেজি; ১৬ স্টো ১১ পা)
বিভাগহেভিওয়েট(ভারী ওজনশ্রেণী)
নাগাল৭৭.৫ ইঞ্চি (১৯৭ সেমি)
ম্যাচে অংশের স্থানলন্ডন, ইংল্যান্ড
দললন্ডন শুটফাইটারস
কার্যকাল২০০২-২০১০
মিশ্র মার্শাল আর্টস পরিসংখ্যান
মোট১২
জয়
নকআউট
হার
নকআউট
সাবমিশন
সিদ্ধান্ত
মিশ্র মার্শাল আর্টস পরিসংখ্যানশারডগ
পদকের তথ্য
লেবানন-এর প্রতিনিধিত্বকারী
পুরুষদের সাবমিশন কুস্তি
এডিসিসি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ২০০৫ স্টকহোম +৯৯ কেজি

মোস্তাফা আল-তুর্ক (আরবি: مصطفى الترك, জন্মঃ ১৪ জুলাই, ১৯৭৩) একজন অবসর প্রাপ্ত লেবানিয়-ইংরেজ মিশ্র মার্শাল আর্টস খেলোয়াড়। অবসরে গমনের পূর্বে তিনি ২০০২ হতে ২০১০ পর্যন্ত আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউএফসি), কেজ রেজ চ্যাম্পিয়নশিপএক্সট্রিম ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ নামক মিশ্র মার্শাল আর্টস সংস্থার হয়ে ভারী ওজন শ্রেণী(হেভিওয়েট) বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি কেজ রেজ ব্রিটিশ হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রাক্তন শিরোপাধারি।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

মোস্তাফা আল-তুর্ক লেবাননের বৈরুতের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা একজন চিকিৎসক ছিলেন, তিনি নিজেও ঔষধ শিল্পে কাজ করতেন। আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের কয়েকটি অনুষ্ঠান দেখার পর তিনি মিশ্র মার্শাল আর্ট সম্পর্কে আগ্রহী হন এবং পেশা হিসেবে এই খেলাকে গ্রহণ করেন। তিনি ব্রাজিলের জু-জিতসু খেলায় বেশ সাফলতা অর্জন করেছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি এডিসিসি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন এবং এডিসিসি সাবমিশন রেসলিং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিলেন। ফাইনালে (ভবিষ্যৎ ইউএফসি'র খেলোয়াড়) গ্যাব্রিয়েল গনজাগা'র কাছে তিন পয়েন্টের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন যা তাকে মিশ্র মার্শাল আর্টস খেলোয়াড় হতে আরো উদ্দীপ্ত করেছিল।[২]

খেলোয়াড় জীবন[সম্পাদনা]

প্রারম্ভ[সম্পাদনা]

পেশাদার মিশ্র মার্শাল আর্ট খেলোয়াড় হওয়ার আগে মোস্তাফার দুইটি শৌখিন ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। দুইটি ম্যাচেই তিনি চোট পেয়ে হেরেছিলেন। নিজেকে পেশাদার হিসেবে প্রস্তুর করার জন্য তিনি অপেশাদার বক্সিং ও সাবমিশন কুস্তি খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তার পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুটা ভাল হয়নি। এক্সট্রিম ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা প্রথম দুই ম্যাচে তিনি ট্যাকনিক্যাল নক আউটের মাধমে পরাজিত হয়েছিলেন। পেশাদার জীবনের হতাশাব্যাঞ্জক সূচনার জন্য তিনি ভাল মানুষিক প্রস্তুতি না থাকা এবং পরিবার থেকে পরিবার থেকে সমর্থন না পাওয়াকে মূল কারণ মনে করতেন।[২]

কেজ রেজ চ্যাম্পিয়নশিপ[সম্পাদনা]

নিজের দ্বিতীয় পেশাদার ম্যাচের প্রায় এক বছর পরে উদীয়মান ব্রিটিশ মিশ্র মার্শাল আর্ট সংস্থা কেজ রেজ চ্যাম্পিয়নশিপের হয়ে মোস্তাফা আল-তুর্ক আবারো খেলা শুরু করেন। এই সংস্থার হয়ে তরুন মোস্তাফা সাতটি মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কেজ রেজ-এ যোগদানের পর তিনি টানা চারটি জয় পান। চারটি জয়ের প্রথম তিনটি ছিল ঘুষি দিয়ে 'ট্যাকনিকাল নক আউটের মাধ্যমে অর্জিত এবং একটি উল্লেখযোগ্য জয় ছিল প্রাক্তন সুমো কুস্তিগির ও প্রাইড ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের খেলোয়াড় হেনরি আর্মস্ট্রং মিলারের বিরুদ্ধে। চতুর্থ জয় এসেছিল প্রাক্তন দুই বারের ইউএফসি চ্যাম্পিয়ন ও প্রাইড ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের দীর্ঘদিনের খেলোয়াড় মার্ক কের-এর বিরুদ্ধে।

টানা চার জয়ের পর পঞ্চম ম্যাচে প্রাক্তন কেজ রেজ ব্রিটিশ হেভিওয়েট শিরোপাজয়ী জর্জিয়ান খেলোয়াড় টেঙ্গিজ টেডোরাডজে'র কাছে মোস্তাফা পরাজিত হয়েছিলেন।

ষষ্ঠ ম্যাচে তিনি জয়ের ধারায় ফিরেন। এই ম্যাচে তিনি কে-ওয়ান কিকবক্সার গ্যারি টার্নারকে সাবমিশন ঘুষির মাধমে পরাজিত করেছিলেন। তার সপ্তম লড়াই ছিল কেজ রেজ ব্রিটিশ হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য। শিরোপা নির্ধারনি এই ম্যাচে তিনি ভবিষ্যৎ ইউএফসি'র খেলোয়াড় জেমস ম্যাকসুয়েনিকে পরাজিত করেছিলেন। সংস্থাটির বিলুপ্তির আগে তিনি ছিলেন এই শিরোপার সর্বশেষ বিজয়ী। ইউএফসি তাকে চারটি লড়াইয়ের জন্য চুক্তির প্রস্তাব দিলে তিনি ইউএফসি'তে যোগ দিয়েছিলেন।

আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ[সম্পাদনা]

আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপে মোস্তাফা আল-তুর্কের অভিষেক ঘটে ৭ ডিসেম্বর, ২০০৮-এ আয়োজিত 'ইউএফসি ৯২' অনুষ্ঠানে। প্রথম ম্যাচে তিনি ফরাসি কিকবক্সার চিক কঙ্গো'র বিরুদ্ধে ট্যাকনিকাল নক আউটের মাধমে পরাজিত হয়েছিলেন। চিক কঙ্গো 'গ্রাউন্ড এন্ড পাউন্ড' কৌশল ব্যবহার করে দুইটি ডানহাতের ঘুষির মাধ্যমে পরাস্ত করেছিলেন।[৩] এই ম্যাচের রেফারি স্টিভ মাজাগাত্তি প্রথম রাউন্ডের ৪ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের মাথায় খেলা থামিয়ে দিয়েছিলেন। মনে করা হয়, খেলা থামাতে দেরি করা হয়েছিল। এসময় মোস্তাফা'র অনেক রক্তপাত হচ্ছিল, তিনি বেশ উল্লেখযোগ্য সময় ধরে প্রতিহত ও প্রতিপক্ষের আঘাত হতে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি।

১৩ জুন, ২০০৯-এ 'ইউএফসি ৯৯' -এ অনুষ্ঠিত পরবর্তী ম্যাচে মোস্তাফা মিরকো ক্রো কপের কাছে পরাজিত হন। এই লড়াইয়ের সমাপ্তি নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়েছিল কারণ মোস্তাফা দাবি করেছিলেন যে ক্রো কপ মাথার লাথি দিয়ে পরাস্ত করার আগে চোখে খোচা দিয়েছিলেন। রেফারি ড্যান মিরগ্লিয়োত্তা বা ক্রো কপ দু'জনেরই কোনও চোখের ছোঁয়া লক্ষ্য করেনি। মোস্তাফা এই হারের জন্য এই খেলার ফল পুনরায় যাচাইয়ের আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তার আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।[৪]

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১০-এ 'ইউএফসি ১০৯' অনুষ্ঠানে মোস্তাফার সাথে নবাগত রোলেস গার্সি'র লড়াই নির্ধারিত ছিল, তবে লড়াইটি ভিসা জটিলতার কারণে বাতিল হয়েছিল।[৫][৬]

ইউএফসি ১১২' অনুষ্ঠানে তিনি এই সংস্থার হয়ে সর্বশেষ লড়াই করেন। এই লড়াইয়ে তিনি তিন রাউন্ড শেষে বিচারকদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে দ্য আলটিমেট ফাইটার ১০-এর প্রাক্তন প্রতিযোগী জন ম্যাডসেনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন।[৭] অতঃপর তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

শিরোপা ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • কেজ রেজ চ্যাম্পিয়নশিপ
    • কেজ রেজ ব্রিটিশ হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ (১ বার, সর্বশেষ শিরোপাধারী)

হার-জিতের পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

ফলাফল নথি প্রতিপক্ষ ধরন ইভেন্ট তারিখ রাউন্ড সময় স্থান টীকা
পরাজিত ৬-৬ জন মেডসেন সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ইউএফসি ১১২ ১০ এপ্রিল ২০১০ ৫:০০ আবু ধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত
পরাজিত ৬-৫ মিরকো ক্রো কপ ট্যাকনিকাল নক আউট (ঘুষি) ইউএফসি ৯৯ ১৩ জুন ২০০৯ ৩:০৬ কোলন, জার্মানি
পরাজিত ৬-৪ চিক কঙ্গো ট্যাকনিকাল নক আউট (ঘুষি) ইউএফসি ৯২ ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ৪:৩৭ লাস ভেগাস, নেভাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বিজয়ী ৬-৩ জেমস ম্যাকসুয়েনি ট্যাকনিকাল নক আউট (ঘুষি) কেজ রেজ ২৭ ১২ জুলাই ২০০৮ ২:০৬ লন্ডন, ইংল্যান্ড
বিজয়ী ৫-৩ গ্যারি টার্নার সাবমিশন (ঘুষি) কেজ রেজ ২৫ ৮ মার্চ ২০০৮ ৩:১৯ লন্ডন, ইংল্যান্ড
পরাজিত ৪-৩ টেঙ্গিজ টেডোরাডজে ট্যাকনিকাল নক আউট (ঘুষি) কেজ রেজ ২৩ ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ৩:২৬ লন্ডন, ইংল্যান্ড
বিজয়ী ৪-২ মার্ক কের ট্যাকনিকাল নক আউট (সাবমিশন থেকে ঘুষি) কেজ রেজ ২০ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ২:২৯ লন্ডন, ইংল্যান্ড
বিজয়ী ৩-২ হেনরি আর্মস্ট্রং মিলার ট্যাকনিকাল নক আউট (ঘুষি) কেজ রেজ ১৮ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০:৫৬ লন্ডন, ইংল্যান্ড
বিজয়ী ২-২ মার্টিন থম্পসন ট্যাকনিকাল নক আউট (ঘুষি) কেজ রেজ ১৬ ২২ এপ্রিল ২০০৬ ৩:০২ লন্ডন, ইংল্যান্ড
বিজয়ী ১-২ ফেরেইডাউন নাঘিজাডেহ ট্যাকনিকাল নক আউট (ঘুষি) কেজ রেজ ৯ - নো মার্সি ২৭ নভেম্বর ২০০৪ ২:২৫ লন্ডন, ইংল্যান্ড
পরাজিত ০-২ কাশিম আনান ট্যাকনিকাল নক আউট (ঘুষি) এক্সট্রিম ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২ - দ্য পারফেক্ট স্টোর্ম ৯ নভেম্বর ২০০৩ উপলব্ধ নয় কর্নওয়াল, ইংল্যান্ড
পরাজিত ০-১ মাইক ওয়ার্ড সাবমিশন (বাহু) এক্সট্রিম ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ১ ৩ মার্চ ২০০২ ১:০০ কর্নওয়াল, ইংল্যান্ড

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Other sports: athletics, motorsport, superbikes, snooker...and more - Mirror Online"। Blogs.mirror.co.uk। ২০১৫-০৪-১৩। ২০১২-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-২৪ 
  2. "Mostapha Al Turk - Official UFC® Profile"। Ufc.com। ২০১৫-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-২৪ 
  3. "UFC 92 Play-by-Play"। Sherdog.com। ২০০৮-১২-২৮। ২০০৮-১২-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-২৪ 
  4. Rossen, Jake (২০০৯-০৬-১৫)। "Al Turk Wants to Appeal 'Cro Cop' loss"। Sherdog.com। ২০০৯-০৭-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-২৪ 
  5. "Jon Madsen steps up to face Rolles Gracie at UFC 109"। ২০১১-০৭-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-২৮ 
  6. "Rolles Gracie headed to UFC, meets Mostapha al-Turk at UFC 109"। mmajunkie.com। ২০০৯-১০-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-২১ 
  7. "Mostapha Al-Turk becomes the latest fighter to be cut from the UFC roster | UFC/MMA News In One Place | MMABay: Powered by TapouT"। MMABay.co.uk। ২০১০-০৪-১৬। ২০১১-১০-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-২৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]