মেঠো কাঠঠোকরা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মেঠো কাঠঠোকরা
Jynx torquilla
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: পিসিফর্মিস
পরিবার: পিসিডি
উপপরিবার: Jynginae
গণ: Jynx
প্রজাতি: J. torquilla
দ্বিপদী নাম
Jynx torquilla
লিনিয়াস, ১৭৫৮
কমলা: গ্রীষ্মকালীন অবস্থান, সবুজ: সারা বছর অবস্থান, নীল: শীতকালীন অবস্থান

মেঠো কাঠঠোকরা (বৈজ্ঞানিক নাম:Jynx torquilla) ইউরেশীয় ঘাড়বাঁকা বা ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা Picidae (পিসিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Jynx (জিংক্স) গণের এক প্রজাতির পাখি।[১][২] মেঠো কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দৃঢ় ঘাড় পাখি (গ্রিক iunx = ঘাড় ব্যথা; ল্যাটিন torquere = ঘোরানো)।[২] গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তবে আশঙ্কাজনক হারে যেয়ে পৌঁছে নি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৩] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২] পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ বর্গ কিলোমিটার।[৪] এরা কাঠঠোকরা-জাতীয় পাখি। তবে এদের ঠোঁট কাঠঠোকরাদের মত নয়, একটু ছোট। খাবারের জন্য বেশির ভাগ সময় মাটিতেই কাটায় বলে এরা মেঠো কাঠঠোকরা নামে পরিচিত।[৫]

প্রাপ্তিস্থান[সম্পাদনা]

মেঠো কাঠঠোকরা পরিযায়ী স্বভাবের পাখি। সাইবেরিয়াচীন থেকে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে শীতে দক্ষিণ এশিয়ায় আসে, বসন্তে চলে যায়।[৫] এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা জুড়ে মেঠো কাঠঠোকরার বিস্তৃতি।[৩]

বিবরণ[সম্পাদনা]

মেঠো কাঠঠোকরা লম্বা লেজওয়ালা ধূসর-মেটে রঙের পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৯ সেন্টিমিটার, ডানা ৮.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১.৬ সেন্টিমিটার, পা ২ সেন্টিমিটার ও লেজ ৬.৮ সেন্টিমিটার।[২] এদের বুক অসংখ্য কালো কালো ফুটকিতে যেমন রঞ্জিত, তেমনি মাথা-পিঠ ও ডানার উপরি ভাগে আছে সাদাটে-লালচে-বাদামি ও ধূসর-ছাইয়ের আশ্চর্য সুন্দর সমন্বয়। দেহতলে লাল-পীতাভ আভা। কালচে চক্ষু-রেখা ঘাড়ের মাঝ বরাবর চলে গেছে। পিঠের দুই পাশে চওড়া কালো টান। বাদামি ডানা সূক্ষ্ম দাগে ভরা ও কালো, পীতাভ, ও ধূসর রঙের ফোঁটা ও ডোরা রয়েছে। ডানার গোড়া ও পেটে কালো লাইন দেখা যায়। ডানায় সাদাটে তীর-ফলক চিন্হ ও ৩-৪টি স্পষ্ট কালচে ছিটা-দাগ রয়েছে। লম্বাটে লেজটি ঘিরে চার-পাঁচটি চওড়া বলয় দেখা যায়। বলয়ের রং বাদামি-ধূসর। পা, পায়ের পাতা ও ঠোঁট বাদামি।[৬] চোখ পিঙ্গল-বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে একই রকম হলেও পুরুষগুলো একটু বেশি উজ্জ্বল।[৫]

খাদ্যাভাস[সম্পাদনা]

উইপোকা এবং এর ঢিবির সন্ধান পেলে এরা গলায় এক ধরনের চাপা শব্দ তোলে। পিঁপড়ে এবং এর ডিম-বাচ্চা, গুবরে পোকা, পিউপা ও অন্যান্য পোকামাকড় এদের মূল খাবার। খেজুরের রস নলি বেয়ে মাটিতে পড়ে জমা হলে সেখানেও ঠোঁট চালায়। ঠুকরে এরা মাটিতে ছোটখাটো চাষও দিয়ে ফেলে অনেক সময়। মাটিতে নেমে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত অন্য পাখিদের পেছনে পেছনেও ঘুরতে পারে অনিবার্য কারণেই।[৬] গ্রীষ্মকালে খোলা ঝোপঝাড়, মাঠ, বনপ্রান্ত, জমির আইল ও কৃষিজমির ধারেকাছে এবং শীতকালে বাগান ও কৃষি খামারের আশপাশে থাকতে পছন্দ করে। একাকী বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। শুষ্ক মাটি বা পিঁপড়ার ঢিবিতে বসে বা লাফিয়ে লাফিয়ে খাবার সংগ্রহ করে।[৫]

স্বভাব[সম্পাদনা]

মেঠো কাঠঠোকরা তার ঘাড় ঘোরাচ্ছে

দারুণ চতুর-বুদ্ধিমান ও সতর্ক পাখি মেঠো কাঠঠোকরা। গুইসাপ, বেজি, বনবিড়ালও এদের পাকড়াও করতে পারে না। বিপদের গন্ধ পেলে স্থির হয়, মড়ার মতো শরীর এলিয়ে দিতে পারে। কাছে গেলে পালিয়ে যায়[৬] কদাচ কোনো মানুষ নাগালে চলে এলে ঘাড়ের পালক ফুলিয়ে, চোখ উল্টিয়ে ঘাড়-মাথা প্রায় ১৮০ ডিগ্রি কোণে ঘোরাতে থাকে, মাঝে মাঝে লেজ নাড়ায় ও মাটিতে শুয়ে পড়ে। দেখে যে-কেউ ভাববে, পাখিটির ঘাড় ব্যথায় টনটন করছে ও সে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। এই অবস্থায় তাকে বাঁচানোর জন্য হাতে তুলে নিলেও চুপচাপ অসুস্থতার অভিনয় করে যাবে। কিছুটা অন্যমনস্ক হলে, সেই সুযোগে পাখিটি হঠাৎ করেই তীরবেগে উড়ে পালায়। আবার ভয় পেলে বুক ঠেকিয়ে মাটির সঙ্গে লেপটে থাকে কিংবা অনিচ্ছুক ভাবে ঝোপে বা গাছে উড়ে যায়। দেহের রঙ সহজেই এদের মাটির সঙ্গে মিলেমিশে যেতে সাহায্য করে, পালক এদের ছদ্মবেশ-সহায়ক। এ সময় সুযোগ পেলে আশপাশের ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয়। ভয় কেটে গেলে ফের মাঠে আসে।[৫] এরা সহজে উড়তে চায় না, কিন্তু পরিযায়নের সময় এরা একনাগাড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। মাঝে মাঝে এরা নাকি সুরে ডাকে: চিওন-চিওন-চিওন......। প্রজনন ঋতুতে বিলাপের সুরে ডাকে: টির-টির-টির.....[২]

প্রজনন[সম্পাদনা]

মে-জুলাই প্রজননকাল। সাইবেরিয়া থেকে চীন পর্যন্ত এদের প্রধান প্রজননস্থল। ছোট গাছের খোঁড়লে বাসা বানায়। সচরাচর কাঠঠোকরার পরিত্যক্ত বাসা ব্যবহার করে। বাসায় কেউ উৎপাত করলে সাপের মতো মাথাটিকে ঘুরিয়ে হিস-হিস শব্দ করে উৎপাতকারীকে ভয় দেখায়। এদের ডিমের রং সাদা।[৫]

গ্যালারি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ১২২।
  2. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৪১।
  3. Jynx torquilla[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ মেঠো কাঠঠোকরা বিষয়ক পাতা।
  4. Jynx torquilla ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে, BirdLife International এ মেঠো কাঠঠোকরা বিষয়ক পাতা।
  5. পাখির নাম ঘাড়ব্যথা[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],আ ন ম আমিনুর রহমান, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১২-০৭-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  6. অলস এক পরিযায়ী পাখি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],শরীফ খান, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ৩১-০৫-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • Oiseaux আলোকচিত্র।