মুহাম্মদ গাজালি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শেখ মুহাম্মদ আল-গাজালি
الشيخ محمد الغزالي

অর্ডার অব দ্য রিপাবলিক (মিশর)
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৯১৭-০৯-২২)২২ সেপ্টেম্বর ১৯১৭
আল-বুহাইরা, মিশর
মৃত্যু৯ মার্চ ১৯৯৬(1996-03-09) (বয়স ৭৮)
ধর্মইসলাম
জাতীয়তামিশরীয়
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি[১]
ধর্মীয় মতবিশ্বাসআশআরি[২]
আন্দোলনআধুনিকতাবাদ[৩]

শেখ মুহাম্মদ আল-গাজালি আল-সাক্কা (১৯১৭ -- ১৯৯৬) (আরবি: الشيخ محمد الغزالي السقا) ছিলেন একজন মুসলিম পণ্ডিত যার লেখনী মিশরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করে গেছে। তিনি ৯৪ টি বই লিখেছিলেন। এই বইগুলোর মাধ্যমে আধুনিক যুগের আলোকে কুরআন ও ইসলামকে ব্যাখ্যা করার ফলে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাকে মিশরে ইসলামের নবজাগরণের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। [৪] কারও কারও মতে তিনি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানীয় মুসলিম নেতা। [৫]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

গাজালির জন্ম ১৯১৭ সালে, বাহিরা গভর্ণরেটের আলেক্সান্ড্রিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি ছোট উপকূলবর্তী শহর নিকলা আল-ইনাবে (نكلا العنب)। তিনি ১৯৪১ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক লাভ করেন। [৪] তিনি মক্কার উম আল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, কাতার বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলজেরিয়ার আল-আমির আবদ আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।

কর্ম ও পুরস্কার[সম্পাদনা]

শেখ আল-গাজালি কায়রোতে ইসলামিক ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি ছিলেন। তিনি ষাট শতাধিক বই লিখেছিলেন, যার অধিকাংশই একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।

তিনি অনেক পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। এদের মধ্যে প্রথম অর্ডার অব দ্য রিপাবলিক (মিশর) (১৯৮৮), বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার (১৯৮৯) এবং পাকিস্তান হতে এক্সিলেন্স পুরস্কার।

ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি বেগম আমিনা কুতার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র ও পাঁচ কন্যা ছিল। মৃত্যুর পর তাঁকে সৌদি আরবের মদিনায় দাফন করা হয়। [৪] তিনি মিশরের একজন বিখ্যাত শেখ ছিলেন এবং মৃত্যুর পরও জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছিলেন। [৬]

কর্ম[সম্পাদনা]

তাঁর লেখা কিছু বইয়ের নাম নিম্নরুপ: [৬]

  • ইসলাম এবং আধুনিক অর্থনীতি[৪]
  • ইসলাম এবং রাজনৈতিক স্বৈরাচার[৪]
  • খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্মে ধর্মান্ধতা ও সহনশীলতা (একটি জ্ঞানকোষ)[৪]
  • ফিকহ আল সিরাহ
  • কুরআন তাফসির
  • লাইসা মিনাল ইসলাম (ইসলাম থেকে আসেনি)
  • আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্য
  • জীবনকে নতুন করে সাজান
  • ইসলাম ও নারীদের বিষয়
  • নবীর সুন্নাহ: আইনজ্ঞ ও হাদিস বিশারদদের মাঝে (আস-সুন্নাহ আল-নাবাউইয়া বায়না আহল আল-ফিকহ ওয়া আহল আল-হাদিস, কায়রো, ১৯৮৯, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৯০)

নবীর সুন্নাহ[সম্পাদনা]

১৯৮৯ সালে গাজালির বই "নবীর সুন্নাহ" প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে এটি ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। বইটি সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ে পরিণত হয় এবং প্রথম প্রকাশের মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে প্রকাশকদের দ্বারা পাঁচবার পুনঃমুদ্রণ হয়। এক বছর পর বইটির বর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। প্রকাশের দুই বছরের মধ্যে অন্যান্য লেখক দ্বারা বইটির সাতটি সমালোচনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, যেটি প্রমাণ করে বইটি বুদ্ধিজীবীদের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আল-আহরাম সংবাদপত্র বইটিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠন পেরেস্ট্রইকার সাথে তুলনা করেছিল। [৭]

সে সময় ইসলামি পুনরুদ্ধারবাদী পন্ডিতরা ইসলামের ব্যবহারিক বিষয় যেমন অর্থনীতি, কর ব্যবস্থা, ফৌজদারি আইন, নারীদের পোশাক এবং সমাজে পণ্ডিতদের নিজেদের অবস্থান কি হবে এসব নিয়ে চিন্তিত ছিল। গাজালি এ সময় তাঁর বইয়ে সুন্নাহর শুদ্ধতা রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি সুন্নাহ হতে যেকোনো ভুল অথবা মিথ্যা তথ্য অপসারণ করতে জোর দেন। তিনি হাদিস গবেষণার পুরো পদ্ধতি বদলের পরিবর্তে হাদিস বিশারদদের হাদিস সঠিকভাবে বিশ্লেষণ ও বুঝার উপর বেশি গুরুত্ব প্রদান করেন।[৭]

এতকিছুর পরও বইটি আহলে হাদিস ও রক্ষণশীল মুসলিমদের তীব্র সমালোচনা ও আক্রমণের সম্মুখীন হয়। গাজালি একে অজ্ঞতা ও ইসলামিক রচনাসমূহের ব্যাখ্যা বিরোধী আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। মিশর ও সৌদি আরবে আয়োজিত বেশ কিছু বড় সম্মেলনে বইটির সমালোচনা করা হয়, সৌদি মালিকানাধীন সংবাদপত্র আশরাক আল-আসওয়াতে বইটির বিরুদ্ধে লম্বা রচনা প্রকাশিত হয় এবং অন্যান্য লেখকের লেখায় গাজালির উদ্দেশ্য ও কর্মদক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। [৮] গাজালির একজন ছাত্র - খালেদ আবু এল ফাদি'র মতে গাজালি এইসব প্রতিক্রিয়া ও তাঁর পুরাতন ছাত্রদের মৌন দেখে বেশ হতাশ ও হতবাক হয়ে পড়েন এবং একে তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায় প্রচারণা হিসেবে অভিহিত করেন। [৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "A Short Biography of Shaykh Mohammed al-Ghazali"। elwahabiya.com। 
  2. Halverson, Jeffry R. (২০১০)। Theology and Creed in Sunni Islamসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজন। Pelgrave Macmillan। পৃষ্ঠা 74আইএসবিএন 9781137473578 
  3. Biglari, Ahmad. "Political Equality and The Issue of Citizenship Rights in Contemporary Islamic Thought." Journal of Islamic Political Studies 1.2 (2019): 77-102. "...modernist thinkers such as Mohammad al-Ghazali..."
  4. Jehl, Douglas (১৯৯৬-০৩-১৪)। "Mohammed al-Ghazali, 78, An Egyptian Cleric and Scholar"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০২ 
  5. Kepel, Gilles (২০০২)। Jihad : the trail of political Islam। Internet Archive। Cambridge, Mass. : Belknap Press of Harvard University Press। আইএসবিএন 978-0-674-00877-9 
  6. Brown, Jonathan (২০১৪)। Misquoting Muhammad : the challenge and choices of interpreting the Prophet's legacy। London। আইএসবিএন 978-1-78074-420-9ওসিএলসি 869266484 
  7. Brown, Daniel W. (১৯৯৬)। Rethinking tradition in modern Islamic thought। Cambridge [England]। আইএসবিএন 0-521-57077-8ওসিএলসি 34564739 
  8. Abou El Fadl, Khaled (২০০৭)। The great theft : wrestling Islam from the extremists (First HarperCollins paperback ed সংস্করণ)। New York, NY: HarperSanFrancisco। আইএসবিএন 978-0-06-118903-6ওসিএলসি 86073869 
  9. Foer, Franklin (২০০২-১১-১৮)। "Moral Hazard"The New Republicআইএসএসএন 0028-6583। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৩