মিশরীয় নারীবাদী ইউনিয়ন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মিশরীয় নারীবাদী ইউনিয়ন ( আরবি: الاتحاد النسائي المصري ) মিশরে প্রথম দেশব্যাপী নারীবাদী আন্দোলনের একটি সংগঠন।

ইতিহাস এবং সংক্ষিপ্ত পরিচিতি[সম্পাদনা]

[১][২] কর্মী হুদা শাওরাভির বাড়িতে ৬ মার্চ ১৯২৩ সালে একটি সভায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল,[৩] যিনি ১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এর প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইএফইউ হওয়ার আগে, সংগঠনটি ওয়াফড পার্টির সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। ১৯২০ সালে Wafdist Women's Central Committee বা “ওয়াফডিস্ট কেন্দ্রীয় নারী কমিটি” বলা হয়।[৪] মিশরীয় নারীবাদী ইউনিয়নের সৃষ্টি মিশরের স্বাধীনতা আন্দোলনের নারীবাদী অসন্তোষের প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয়েছিল, যা স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীর অধিকারকে গৌণ হিসেবে রেখেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

এ নারী সংগঠনটির লক্ষ্য ছিল নারীদের জন্য ব্যাপক অধিকার অর্জন করা। ইএফইউ এর কিছু দাবি হলো: নারীর ভোটাধিকার, নারী ও শিশুদের শিক্ষার অগ্রগতি, সরকারি বৈধ পতিতাবৃত্তি বন্ধ করা, ব্যক্তিগত আইনের সংস্কার, সেইসাথে নারী ও শিশুদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।[৫] এই দাবীগুলি ১৯২৫ সাল থেকে তাদের পাক্ষিক সাময়িকী L'Egyptienne এবং ১৯৩৭ সাল থেকে এল-মাস্রেইয়াহ ( মিশরীয় নারী ) পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।[৫] তারা অবশেষে নারীদের ভোটাধিকার সংগ্রামে সফল হয়। মিশর ১৯৫৬ সালে নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করার পাশাপাশি বৈধ পতিতাবৃত্তির অবসান ঘটায়।[৫] ১৯২৫ সালে মিশরীয় নারীবাদী ইউনিয়ন কর্তৃক শিক্ষা সংস্কারের দাবী পূরণ করা হয়। সরকার মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে এবং পরবর্তী দশকে নারীরা প্রথমবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

পারিবারিক আইনের সংস্কারের জন্য মিশরীয় নারীবাদী ইউনিয়নের প্রচারাভিযান অবশ্য ব্যর্থ হয়েছিল।[৬] EFU পারিবারিক আইন এবং ব্যক্তিগত অবস্থার কোডগুলির অংশগুলি সংস্কার করতে সক্ষম হয়নি যা পুরুষরা স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই তাদের স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অনুমতি দেয়া ও বহুবিবাহের অবসান ঘটায়।[৫] ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, দোরিয়া শফিক মিশরের দুটি প্রধান নারীবাদী গোষ্ঠী (ইউনিয়ন এবং বিনতে আল-নিল) থেকে ১৫০০ নারীদের গোপনে একত্রিত করতে সক্ষম হন। তিনি প্রধানত নারীদের আর্থ -সামাজিক অধিকার সম্পর্কিত একটি ধারাবাহিক দাবি নিয়ে সেখানে জড়ো হওয়ার পর চার ঘণ্টার জন্য সংসদকে বাধাগ্রস্ত করে এমন একটি পদযাত্রার আয়োজন করেন। এ ব্যাপারে শফিককে আদালতে রক্ষার জন্য মুফিদাহ আব্দুল রহমানকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।[৭][৮] যখন মামলাটি বিচারে যায়, তখন বিনতে আল-নিল এর অনেক সমর্থক আদালত কক্ষে উপস্থিত হয় এবং বিচারক অনির্দিষ্টকালের জন্য শুনানি মুলতবি করেন।[৯] যাইহোক, সিনেট প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া সত্ত্বেও, নারীর অধিকারের কোন উন্নতি হয়নি।[৮]

ইউনিয়নটি আন্তর্জাতিক নারী ভোটাধিকার জোটের সাথে যুক্ত হয় । ১৯২৩ সালে আন্তর্জাতিক নারী ভোটাধিকার জোট ইতালির রাজধানীতে একটি সভা করে যেখানে ইএফইউ প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের জন্য পাঠায়।[৪]

ইউনিয়ন যুক্তরাজ্য থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা সমর্থন করেছিল, কিন্তু ওয়াফদ পার্টির উচ্চ-শ্রেণীর পুরুষ নেতাদের মতো, ইউরোপীয় সামাজিক মূল্যবোধকে প্রচার করেছিল এবং মূলত তাদের একটি ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল।

ইউনিয়ন কায়রোতে ফিলিস্তিনের প্রতিরক্ষার জন্য ইস্টার্ন উইমেন কনফারেন্সের আয়োজন করে এবং হুদা শারাউই স্বতন্ত্র দেশগুলিকে নারীবাদী ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেয় এবং সেই ইউনিয়নগুলি আরব বিশ্ব জুড়ে একটি ছাতা সংগঠন গঠন করে।[১০] ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে, ইএফইউ কায়রোতে আরব নারীবাদী কংগ্রেস বা আরব নারী কংগ্রেস ডাকে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে আরব নারীবাদী ইউনিয়ন (এএফইউ) প্রতিষ্ঠা করেছিল।[১০]

নাসেরের অধীনে ইএফইউ[সম্পাদনা]

প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসের প্রথম বছরগুলিতে EFU তাদের ভোটের অধিকার (১৯৫৬) দিয়ে তাদের দাবি পূরণ করেছিল।[১১] নাসের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নারীদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন, যখন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত নাগরিকদের শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতায় নারী -পুরুষ উভয়ের অধিকার দেয়।[১১] মিশরীয় নারীবাদী ইউনিয়ন ১৯৫৬ সালের সময় এবং পরে রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসেরের নিয়ন্ত্রিত সরকারের অধীনে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। নাসের শাসন ১৯৫৬ সালে দ্য ইএফইউকে বিলুপ্ত করে এবং সংগঠনটিকে আত্মীভুত করে। এটি স্বাধীন সংগঠন থেকে সরকার পরিচালিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায়[১১] নামকরণ করা হয়, Huda Sha'arawi Association বা হুদা শাওরাভি অ্যাসোসিয়েশন।[১২] নাসের শাসন আইন ৩২/১৯৬৪ পাস করে যা সরকারকে এমন সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয়, যা ইতোমধ্যে সরকারের অধীনে যুক্ত ছিল না।[১১] এর ফলে সংগঠনের পক্ষে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার দাবি করা কঠিন হয়ে পড়ে। ইউনিয়নটি মূল নামে একটি অলাভজনক, বেসরকারি সংস্থা হিসাবে সংস্কার করে কিন্তু ২০১১ সালে এটি ভিন্ন লক্ষ্য এবং দল নিয়ে চলতে থাকে।[১৩][১৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Mariz Tadros (১৮–২৪ মার্চ ১৯৯৯)। "Unity in diversity"। মে ৩০, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  2. Earl L. Sullivan (১ জানুয়ারি ১৯৮৬)। Women in Egyptian Public Life। Syracuse University Press। পৃষ্ঠা 172আইএসবিএন 978-0-8156-2354-0। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৪ 
  3. Nadje S. Al Ali। "Women's Movements in the Middle East: Case Studies of Egypt and Turkey" (Report)। SOAS। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  4. Booth, Marilyn (২০০৪)। Encyclopedia of the Modern Middle East and North Africa 2nd Edition (vol. 2)। Gale। পৃষ্ঠা 770। 
  5. Badran, Margot (২০০৭)। Encyclopedia of Sex and Gender (Vol 2)। Macmillan Reference USA। পৃষ্ঠা 451। 
  6. p. 184 Modern Middle East. William L. Cleveland and Martin Bunton. WestView Press 2013
  7. Cynthia Nelson (১৯৯৬)। Doria Shafik Egyptian Feminist : A Woman apart। American Univ in Cairo Press। পৃষ্ঠা 169–176–। আইএসবিএন 978-977-424-413-1 
  8. "Overlooked No More: Doria Shafik, Who Led Egypt's Women's Liberation Movement" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-২৬ 
  9. Anne Commire; Deborah Klezmer (২০০২)। Women in World History: Schu-Sui। Yorkin Publications। আইএসবিএন 978-0-7876-4073-6 
  10. Weber, C. (2001). Unveiling Scheherazade: Feminist Orientalism in the International Alliance of Women, 1911-1950. Feminist Studies, 27(1), 125-157. doi:10.2307/3178453
  11. Sika, Nadine; Khodary, Yasmin (অক্টো ২০১২)। "One Step Forward, Two Steps Back? Egyptian Women within the Confines of Authoritarianism": 91–100। 
  12. Margot, Badran (২০০৭)। Encyclopedia of Sex and Gender (Vol 2)। Macmillan Reference USA। পৃষ্ঠা 451। 
  13. Eriksen, Mette (১৮ অক্টোবর ২০১১)। "Women's groups relaunch Egyptian Feminist Union"Egypt Independent 
  14. Goldschmidt, Arthur (২০০০)। Biographical Dictionary of Modern Egypt। Rienner। পৃষ্ঠা 190আইএসবিএন 978-1-55587-229-8