মাৎসু বাসো

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাৎসু বাসো (松尾 芭蕉)
জন্মমাৎসু কিন্সাকু (松尾 金作)
১৬৪৪
ইগা প্রদেশ, উইনো'র নিকটে
মৃত্যুনভেম্বর ২৮, ১৬৯৪ (৫০ বছর)
ওসাকা[১]
ছদ্মনামসোবো (宗房)
তোসে (桃青)
বাসো (芭蕉)
পেশাকবি, শিক্ষক
জাতীয়তাজাপানি
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিOku no Hosomichi
মাৎসু বাসো
জাপানি নাম
কাঞ্জি 松尾 芭蕉
হিরাগানা まつお ばしょう

মাৎসু বাসো (松尾 芭蕉, ১৬৪৪ – নভেম্বর ২৮, ১৬৯৪), জন্মনাম মাৎসু কিন্সাকু (松尾 金作), পরবর্তীতে মাৎসু চুয়েমন মুনেফুসা (松尾 忠右衛門 宗房),[২][৩] ছিলেন জাপানের এদো সময়কালের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি। তার জীবদ্দশায় তিনি মূলত হাইকাই ন রেঙ্গা বা রেংকু নামক সহযোগীতামূলক কবিতায় তার অবদানের জন্য পরিচিত ছিলেন। শত বছরের ব্যাখা-বিশ্লেষণের পর তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ হাইকু কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার কবিতাগুলো বিশ্ব্বব্যাপী খ্যাত। জাপানের স্মৃতিস্তম্ভ ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহে তার বহু কবিতা লেখা হয়েছে। যদিও বাসো পশ্চিমা বিশ্বে তার রচিত হাইকুর জন্যই বিখ্যাত, তিনি নিজে মূলত রেংকুতে তার অবদান ও অংশগ্রহণকেই তার সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে করতেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,"আমার বহু অনুসারী আমার মতো হাইকু লিখতে পারে। হাইকাই শ্লোক যোগ করার মধ্য দিয়েই প্রকৃতভাবে আমি আমাকে দেখাতে সক্ষম হয়েছি।"[৪]

বাসোর কাব্যপরিচয় খুব ছোটবেলাতেই হয়। এদোর (আধুনিক টোকিও) বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে জড়িত হওয়ার খুব অল্পদিনের মধ্যেই সমগ্র জাপানে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক হলেও জাপানের সাহিত্যিকদের শহুরে সামাজিক জীবন এড়িয়ে চলতেন। তিনি বরং জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন। তিনি গহীন জনমানবহীন অরণ্য, প্রকৃতির মাঝে ঘুরে ঘুরে তার লেখার অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতেন।

মৎসুর জীবনী

প্রাথমিক জীবন

বাসোর অনুমিত জন্মস্থান, ইগো প্রদেশ।.

বাসোর জন্ম ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে ইগা প্রদেশের উএনো শহরের কাছে। বাসো পরিবার সামুরাই পরিবার ছিল এবং ওনার বাবা খুব সম্ভবত ছিলেন একজন মুসোকুনিন, একধরনের কৃষক শ্রেণী যাদের জমি অধিগ্রহণের অধিকার ছিল এবং কিছু সামুরাই বিশেষ সুবিধা পেতেন।

বাসোর ছোটবেলা বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা যায়না। যুবকালের শেষের দিকে তিনি তোদো ইওশীতাদার সেবায় নিয়োগ হন। তাকে পরে কখনোই এক পূর্ণ সামুরাইর মর্যাদায় উন্নীত করা হয়না। কিছু সমকালীন সূত্রে বলা হয় যে বাসো সেখানে খানসামা এবং অন্যান্য রসুইর কাজ করতেন, তবে এর কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ নেই।[৫] এই সম্বন্ধে আর একটি অনুমান বলে উনি ইওশীতাদার শিষ্য নিয়োগ হয়েছিলেন এবং এটার প্রমাণ কিছু অন্য কাগজপত্রে পাওয়া যায়।

বাসো ইওশীতাদার মতন হাইকাই নো রেঙ্গার শখ ছিলো। এটি হচ্ছে একটি যৌথ কাব্যিক রচনা যার প্রতিটি ক্রোম শুরু হতো একটি ৫-৭-৫ মোরা বিন্যাসের মাধ্যমে। এই বিন্যাসকে বলা হতো হক্কু যার পরে নাম হাইকু হয় যখন বিন্যাসটি মুক্ত ভাবে উপস্থাপিত করা হয়। হক্কুর পর এক অন্য কবি একটি সম্বন্ধিত ৭-৭ মোরা কাব্য পুরো কবিতার সঙ্গে যোগ করতেন।

বাসো এবং ইওশীতাদা নিজেদের একটি করে হাইগো (হাইকাই কবির ছদ্মনাম) দিলেন। বাসোর নাম হলো সোবো যেটা ওনার নাম মুনেফুসার ওন-যমী (জাপানি কানজির চৈনিক উচ্চারণ) উচ্চারণ।

১৬৬২ সালে বাসো নিজের প্রথম কবিতা প্রকাশিত করেন। ১৭২৬ সালে বাসোর আরো দুটি কবিতা একটি সংকলনে ছাপা হয়।

১৬৬৫ সালে বাসো, ইওশীতাদা এবং তাদের কয়েকজন জানাশোনা কবি মিলে একটি হযাকুইন, একশো শ্লোকের রেন্কু, লেখেন। ১৬৬৬ সালে ইওশীতাদা মারা যান এবং বাসোর শান্তির জীবনে পরিবর্তন আসে। এই সময়ের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই কিন্তু বলা হয় বাসো সামুরাই হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে বাড়ি থেকে চলে জান।[৬] অনেক জীবনিকার বাসোর বাড়ি ছাড়ার নানা কারণ এবং গন্তব্যের ব্যাপারে তত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি বলে বাসো এবং একটি শিন্তৌ মিকোর প্রেমে বাড়ি ছাড়েন কিন্তু এই কথার কনো সত্যতা নেই।[৭]

বাসোর নিজে এই সময়ের উল্লেখ অস্পষ্ট ভাবে করেছেন। এক জায়গায় উনি বলেছেন "এক সময়ে আমি জমি সংক্রান্ত একটি দাপ্তরিক কাজ চাইছিলাম।" এবং যে "একটা সময়ে ছিলো জখন আমি সমকামী প্রেমের ব্যাপারে মুগ্ধ ছিলাম।" অবশ্য এটা জানা জায়না যে এটি সত্যিকারের আবেশ ছিলো নাকি ছিলো কবির কল্পনা।[৮] বাসোর জীবনীকারেরা এটা মনে করেন যে বাসো সমকামী সম্পর্কে জীবনভর ছিলেন[৯] এবং তার প্রেমিকদের মধ্যে অনেক জন ছিলো তারই শিষ্য।[১০] অধ্যাপক গ্যারি লেইউপ্পের মতে বাসোর সমকামী রচনা তার নিজের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক[১১]

বাড়ি ছাড়ার পর বাসো মনস্থির করতে পারছিলেন না কবি হতে। ওনার নিজের কথায় "বিকল্পগুলো আমার মস্তিষ্কে যুদ্ধ করেছিল এবং আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছিল।"[১২] ওনার মনের দ্বিধা হয়তো এইজন্য ছিলো কারণ তখনো রেঙ্গা এবং হাইকাই নো রেঙ্গা খুব একটা জনপ্রিয় ছিলোনা।[১৩]

যাইহোক, ওনার কবিতা কাব্য সংগ্রহে ১৬৬৭, ১৬৬৯, ১৬৭১ সালে প্রকাশিত হতে থাকে। উনি নিজে ১৬৭২ সালে ওনার সব কবিতা এবং তেইটোকু ধারার লেখকদের লেখা, কাই ওই (ঝিনুকের খেলা) নামক সংগ্রহে প্রকাশিত করেন।[১৪] সেই বছরের বসন্তকালে বাসো এদো শহরে চলে আসেন কাব্যরচনা নিয়ে পড়বেন বলে।[১৫]

সুখ্যাতি[সম্পাদনা]

বাসো দুজন কৃষকের সঙ্গে দেখা করছেন যারা মাঝ-শরতের চাঁদ উৎসব পালন করছেন। ছবিটি য়োশিতোশির চাঁদের একশো অভিব্যক্তি সংগ্রহ থেকে নেয়া। ছবির ওপর হাইকু লেখা যার মানে দাড়ায়ে: সেই অর্ধচন্দ্র রাত থেকে/আমি শুধু আজ রাতের অপেক্ষায় ছিলাম।

নিহনবাসীর প্রচলিত সাহিত্যচক্রে বাসোর সহজ এবং প্রাকৃতিক শৈলী খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাসো হাইকাই কবিদের অন্তরিনচক্রে সামিল হন এবং তাকে কিতামুরা কিগিন (১৬২৪-১৭০৫) গোপনে শিক্ষা প্রদান করেন।[১৬] বাসো তখনকার শোগানের প্রতি উপহাসমূলক শ্রদ্ধা যাপনের জন্য এই হক্কুটি লেখেন:

甲比丹もつくばはせけり君が春 kapitan mo / tsukubawasekeri / kimi ga haru
   ডাচ ক্যাপ্টেনরাও / নিজের রাজার সামনে নতজানু হয় -- /তারই রাজত্বে উত্থান করে। [1678]

নিশিয়ামা শএন, হক্কু লেখার দানরিন ধারার প্রত্যিষ্ঠাতা এবং অগ্রণী, ওসাকা ছেড়ে এদো আসেন ১৬৭৫ সালে। বাসোকে আমন্ত্রিত করা হয় ওনার সঙ্গে পদ্য লেখার জন্য।[১৭] এই উপলক্ষে বাসো নিজের হাইগো নাম বদল করে টোসেই রাখলেন। এরপর বাসো কাব্যচর্চার শিক্ষকতা করতে লাগলেন এবং ১৬৮০ সালের মধ্যে ২০টি শিষ্য তার কাছে পড়তে আরম্ভ করলো। এই শিষ্যরা টোসেই-মনটেই ডোকুগীন-নিজুকাসেন (টোসেইর কুড়িটি শিষ্যের দ্বারা লেখা শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রকাশিত করলেন এবং তাদের শিক্ষকের প্রতিভা জনসম্মুখে আনলো। সেই বছরের শীতকালে সবাইকে অবাক করে দিয়ে, বাসো নদী পার করে ফুকুগাওয়া চলে গেলেন, একটি শান্ত এবং একান্ত জীবন কাটানোর জন্য।[১৮]

ওনার শিষ্যরা মিলে একটি গ্রামীণ কুঁড়েঘর তৈরি করলো ওনার থাকার জন্য। সেখানে ওরা নিজেদের গুরুর জন্য উঠোনে একটি কলাগাছ (芭蕉, বাসো) লাগলো, যেটি চোখে পড়তে, তিনি নিজের হাইগো নাম পাল্টে বাসো রাখলেন। বাসো গাছটি দেখে খুব খুশি হলেন কিন্তু গাছের নিচে ফুকুগাওয়ার মিস্ক্যানথুস ঘাস দেখে নিরাশ হলেন। তিনি লিখলেন:

ばしょう植ゑてまづ憎む荻の二葉哉 bashō uete / mazu nikumu ogi no / futaba kana
   আমার নতুন কলাগাছের ধরে/ প্রথম সংকেত আমার বিস্তৃস্যতার — / একটি মিস্ক্যানথুসের অঙ্কুর! [1680]

সুখ্যাতি পেয়েও বাসো নিজেকে খুব একা এবং অসন্তুষ্ট মনে করেন। তিনি জেনধ্যান শুরু করেন কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়না।[১৯] ১৬৮২ সালের শীতে বাসোর বাড়িতে আগুন লাগে এবং পরের বছর ওনার মার স্বর্গপ্রাপ্তি হয়। বাসো এরপর যামুরা জান এবং একটি বন্ধুর বাড়ি থাকেন। ১৬৮৩ সালের শীতকালে বাসোর শিষ্যরা আবার একটি কুঁড়েঘর নির্মাণ করে কিন্তু বাসোর মন তবুও ভালো হয়না। ১৬৮৪ সালে বাসোর ছাত্র তাকারাই কিকাকু বাসোর এবং অনন্য কবির কাব্য মিনাশীগুড়ি (কুঁচিত বাদাম) নামক একটি সংগ্রহে প্রকাশিত করেন।[২০] একই বছরের শেষের দিকে বাসো নিজের চারটে বড়ো যাত্রার প্রথমটির উদ্দেশে এদো ত্যাগ করেন।[২১]

বাসো একা ভ্রমণ করতে লাগলেন এবং অখ্যাত এদোর পাঁচ রাস্তা (গোকাইডো) ধরে হাঁটতে লাগলেন। মধ্যকালীন জাপানে এই পাঁচ রাস্তা খুবই বিপজ্জনক ছিলো। প্রথমে বাসো ভেবেছিলেন যে উনি রাস্তার মাঝখানে এক অজানা জায়গায় মোরে পরে থাকবেন অথবা ডাকাতেরা ওনাকে খুন করবে। বাসোর এই মনোভাবের উন্নতি হতে লাগলো যাত্রা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে, এবং তিনি যাত্রা উপভোগ করতে লাগলেন। পথে বাসোর অনেক বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা হয় এবং ঋতুর পরিবর্তন দেখে তিনি মুগ্ধ হন।[২২]

বাসো এবার কবিতায় অন্তর্মুখী না হয়ে বেশি করে যা দেখছেন তার বর্ণনা করতে থাকেন। তিনি লেখেন:

馬をさへながむる雪の朝哉 উমা বো সায় / নাগমুরু যুকি নো / আশিতা কানা
   একটি ঘোড়াও / আমার চোখ আটকে দায়ে / এই তুষারময় সকালে। [1684]

বাসোর প্রথম যাত্রা তাকে এদো থেকে ফুজি পর্বত, উএনো এবং কিয়োটো নিয়ে যায়।[২৩] তিনি প্রচুর কবির সঙ্গে দেখা করেন যারা বাসোর ছাত্র হতে চায়। বাসো তাদের এদো শৈলী ত্যাগ করার উপদেশ দায়। উনি নিজের কুঁচিত বাদাম শৈলীও তাদের ত্যাগ করতে বলেন কারণ "বইটিতে এমন অনেক কাব্য আছে যেটা আলোচনার যোগ্য নয়"।[২৪]

বাসো এদো ফিরে আসেন ১৬৮৫ সালের গ্রীষ্মকালে এবং আরো হাইকু রচনা করেন। এদো ফিরতে উনি কিছুটা সময় ব্যয় করেন কাব্য লিখতে এবং নিজের জীবনের সম্বন্ধে টিপ্পনি করতে। তিনি লেখেন:

年暮ぬ笠きて草鞋はきながら তোশি কুরেণু / কাসা কিতে ওরাজি / হাকিনাগারা
   আরো একটি বছর চলে গেল / একটি যাত্রীর ছাতা আমার মাথায়, / খড়ের চটি আমার পায়ে। [1685]

এদো ফিরে বাসো খুব খোশমেজাজে নিজের অধ্যাপিকা করতে লাগলেন কিন্তু তারই সাথে, মনে মনে, আবার বেরিয়ে পড়ার চিন্তা করতে লাগলেন।[২৫] নিজের যাত্রার সময়ে লেখা হাইকু গুলি নজারাশি কিকো (মাঠের অভিজ্ঞতার বিবরণ) নামক বইতে প্রকাশিত হয়। ১৬৮৬ সালে বাসো নিজের সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় হাইকুটি লেখেন:

古池や蛙飛びこむ水の音 ফুরু ইকে য়া / কায়াজু তবিকোমু / মিজু নো ওটো
   একটি প্রাচীন পুকুর / একটি ব্যাঙ ঝাঁপায় / জলের শব্দ। [1686]

ইতিহাসবিদ্বের মতে কবিতাটি সঙ্গে-সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে যায়। এপ্রিল মাসে এদোর কবিরা বাসোর বাড়ি আসেন একটি হাইকাই নো রেঙ্গার প্রতিযোগিতার জন্য। বাসোর শ্রদ্ধায় কাব্যের বিষয় ছিলো ব্যাঙ এবং প্রতিযোগিতা শেষে বাসোর হক্কু সংগ্রহের প্রথমে রাখা হয়।[২৬]

বাসো এদোতে থেকে অধ্যাপিকা এবং প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে লাগলেন। ১৬৮৭ সালের শরৎকালে তিনি গ্রামে চাঁদ দেখার জন্য ভ্রমণে বেরোন। ১৬৮৮ সালে আরো লম্বা ছুটিতে তিনি উএনো ফেরত আসেন নতুন চন্দ্রোবৎসর পালন করতে। এদো ফিরে তিনি কিছুটা একান্তবাসী জীবন কাটান। তিনি কখনো অথিতিদের ডাকে সাড়া দিতেন না আবার কখনো অতিথিদের সঙ্গ উপভোগ করতেন।[২৭] তিনি নিজের জীবন সুক্ষ ঠাট্টার সঙ্গে উপভোগ করতেন যেমন এই হাইকুটিতে দেখা যায়:

いざさらば雪見にころぶ所迄 ইজা সারাবা / যুকিমি নী কোরোবু / টোকোরোমাদে
   এবার চলো বেরোই / তুষার উপভোগ করতে যতক্ষন না / আমি পা ফসকে পরে যাচ্ছি! [1688]

গভীর উত্তরের সরু পথ[সম্পাদনা]

বাসোর দ্বিতীয় যাত্রার গোপন পরিকল্পনা ওনার সেরা কাজ ওকু নো হোশোমিচী (গভীর উত্তরের সরু পথ) বইটি থেকে আমরা জানতে পারি। ১৬৮৯ সালের মে মাসের ১৬ তারিখ বাসো এবং তার ছাত্র কাযাই সোরা হনশুর উত্তরের প্রদেশের উদ্দেশে রওয়ানা হন। ২৯সে জুন ওনারা হিরাইজুমি পৌঁছন। সেখান থেকে দ্বীপের পশ্চিম দিকে কিসাকাটা ভ্রমণ করেন এবং তারপর সমুদ্রতীর ধরে আস্তে-আস্তে পাহাড় চড়ে ফিরে আসেন। বাসো এবং তার শিষ্য ১৫০ দিনের এই যাত্রায় ৬০০রি (২৪০০ কিলোমিটার) হেঁটে দেশের উত্তরপূর্ব অঞ্চল দেখে ১৬৯১সালে এদো ফিরে আসেন।[২৮]

বাসো যখন গিফু অঞ্চলের ওগাকি শহর পৌঁছন ততোদিনে ওনার নিজের যাত্রাবৃত্তান্ত লেখা শেষ। উনি তিন বছর ধরে লেখাটি সম্পাদন করেন এবং অনেক কিছু বাদ দেন, এবং সর্বশেষ সংস্করণ করেন ১৬৯৪ সালে।অবশেষে গভীর উত্তরের সরু পথ বইটি প্রকাশিত হয় ১৭০২ সালে বাসোর মারা যাওয়ার পর।[২৯]

বইটি অতি জনপ্রিয় হয় এবং অনেক হবু কবি বাসোর যাত্রার পথ অনুসরণ করেন।[১৪] এই বইটি বাসোর জীবনের শ্রেষ্ঠ লেখা বলে মানা হয় যেখানে এই প্রকারের হাইকু ছিলো:

荒海や佐渡によこたふ天河 আরাওনি য়া / সাডো নি যকোটাও / আমানোগাওয়া
   উত্তাল সুমুদ্র / সাডোর দিকে প্রসারিত / আকাশগঙ্গা ছায়াপথ[1689]

শেষ জীবন[সম্পাদনা]

১৬৯১সালের শীতকালে এদো ফিরে বাসো, নিজের ছাত্রদের তৈরি করা তৃতীয় কুঁড়েঘরে থাকতে লাগলেন। কিন্তু তিনি আর একা থাকেননি। নিজের ভাইপো এবং তার মহিলা বন্ধু জুটেই, দুজনেই তখন অসুস্থ, কে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন। এই সময় বাসোর সঙ্গে দেখা করতে প্রচুর অতিথি আসতে থাকে।

বাসোর অস্থিরতা ফিরে আসে। উনি নিজের বন্ধুকে চিঠিতে লেখেন "অন্যদের জ্বালাতনে আমার মনের শান্তি নেই।"[৩০] বাসো শিক্ষকতা এবং হাইকাই সম্মেলনে মন দেন কিন্তু ১৬৯৩ সালে, একমাসের জন্য তিনি নিজের বাড়ির দরজা অতিথিদের জন্য বন্ধ করে দেন। এই সময়টা তিনি কারুমিনীতি আপন করেন। এটি হচ্ছে একটি অর্ধ-বৌদ্ধ দর্শন যেটি রোজকার জীবন থেকে নিজেকে আলাদা না রেখে, জীবনকে মেনে নিতে বলে। এই নীতি আপন করার পর বাসো নিজের কুঁড়েঘরের দরজা আবার খুলে দেন।

১৬৯৪ সালের গ্রীষ্মকালে বাসো শেষ বারের মতন এদো ত্যাগ করেন এবং উএনো আর কিউটোতে সময় কাটিয়ে, ওসাকা চলে আসেন। ওসাকায় তিনি পেটের রোগ নিয়ে অসুস্থ হন এবং নিজের শিষ্যদের মাঝে শান্তভাবে মারা জান।[৩১]

যদিওবা বাসো কোনো মৃতুকাব্য লেখেননি, নিম্নলিখিত কাব্যটি তার জীবনের শেষ কাব্য এবং এটি তার বিদায়কালীন কাব্য হিসেবে ধরা হয়:

旅に病んで夢は枯野をかけ廻る
তাবি নি যান্ডে / য়ুমে বা কারেনো বো / কাকে মেগুরু
   যাত্রায় অসুস্থ হওয়া / আমার স্বপ্ন ঘুরতে যায় / একটি সুখনো ঘাসের মাঠে। [1694]

প্রভাব এবং সাহিত্য সমালোচনা[সম্পাদনা]

কিগোর (ঋতু শব্দ) হাত না ধরে, যেটি আজো জাপানে খুব জনপ্রিয়, বাসো নিজের কবিতায় আসল প্রকৃতি এবং আসল ভাবনা দর্শাতে চাইতেন।[৩২] বাসোর জীবনকালীন ওনার শৈলী এবং প্রচেষ্টা যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলো এবং ওনার মারা যাওয়ার পর সেটি আরো বৃদ্ধি পায়। মুকাই কেওরাই এবং হাত্তরী দোহোর মতো ছাত্ররা বাসর নিজের কবিতা সম্বন্ধে বলা উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করে।[৩৩]

১৮ই শতাব্দীতে বাসোর লেখা কবিতা নিয়ে চর্চা আরো উৎসাহ পায়ে। ইশীকো সেকিসুই আর মোরো নানিমারুর মতো পন্ডিতেরা বাসোর কবিতার সঙ্গে ঐতিহাসিক ঘটনা, মধ্যকালীন পুস্তক, অন্য কাব্যচর্চা মেলানোর জন্য প্রচুর গবেষণা করেন। এই গবেষকেরা বাসোর কবিতায় লেখা অস্পষ্ট ঐতিহাসিক উল্লেখের প্রচুর প্রশংসা করতেন যদিও তার মধ্যে কিছু সাহিত্যিক মিথ্যে সমজাতীয় ছিলো।[৩৩]

১৭৯৩ সালে শিন্তো আমলাতন্ত্র বাসোর কবিতাকে ইস্বরত্বত ঘোষণা করে এবং বাসোর লেখাকে নিন্দে করা ধর্মনিন্দা মানা হয়।[৩৩]

১৯ শতাব্দীর শেষের দিকে বাসোর কব্যের সর্বসম্মত প্রশংসার অবসান ঘটে। মাসওকা শিকি, বাসোর সেরা সমালোচক, নিজের সাহসী এবং অকপট সমালোচনার মাধ্যমে বাসোর প্রশংসা নিষ্ঠার অবসান ঘটান।[৩৩] আবার অন্যদিকে, শিকি ছিলেন সেইজন যার মাধ্যমে বাসোর হক্কু জপানি বুদ্ধিজীবী আর মানুষের মধ্যে আবার প্রচলিত হয় এবং কাব্যগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ হয়।[৩৪] শিকি হক্কুর নাম বদলে হাইকু রাখলেন কারণ তিনি এই ৫-৭-৫ শ্লোক হাইকাই নো রেঙ্গা কাব্যশৈলীর শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট মানতেন।[৩৩]

বাসোর কবিতার সমালোচক ব্যাখ্যা ২০বী শতাব্দী অব্দি চলতে থাকে, য়ামামোতো কেনকিচি, ইমোতো নোইচি এবং ওগাটা শুতমুর কাজ বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য। এই শতাব্দীতে বাসোর কবিতা অন্য বিদেশি ভাষায় অনুবাদ শুরু হয়। বিদেশি চোখে বাসোকে হাইকুর শ্রেষ্ঠ রচয়িতা হিসেবে দেখা হয়। বিদেশি পাঠকদের হাইকু শৈলী কে রেঙ্গা অথবা ট্যাংকা শৈলীর চাইতে বড় দেখা বাসোকে জাপানি কবিদের মধ্যে আদিরূপাত্মক এবং হাইকুকে জাপানি কাব্যলেখনের মধ্যে আদিরূপাত্মক প্রতিষ্ঠা করেছে।[৩৫] কিছু পাশ্চাত্য পন্ডিতেরা ভুল করে বাসোকে হাইকুর জনক হিসেবে ধরে নেন।[৩৬] বাসোর প্রতিচ্ছায়াবাদি এবং পর্যাপ্ত শ্লোক এজরা পাউন্ড, বিম্ববাদী এবং বিট প্রজন্মকে প্রভাবিত করে।[৩৭]

১৯৫২ সালে দ্য নিউইয়র্কার পত্রিকায় জে.ডি.সলিংগারের লেখা "টেডি" ছোট গল্প বাসোর দুটি কবিতা জনপ্রিয় বানায়।[৩৮]

১৯৭৯সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন বুধগ্রহের একটি গর্তের নামকরণ বাসোর নামের আধারে করা হয়।[৩৯]

সাহিত্য তালিকা[সম্পাদনা]

  • কাই ওই (ঝিনুকের খেলা) (১৬৭২)
  • এদো সানগিন (江戸三吟) (১৬৭৮)
  • ইনাকা নো কুবাসে (田舎之句合) (১৬৮০)
  • টোসেই মন্টেই ডোকুগিন নিজু কাসেন (桃青門弟独吟廿歌仙) (১৬৮০)
  • টোকিওয়া নো কুবাসে (常盤屋句合) (১৬৮০)
  • মিনাশিগুড়ি (虚栗, "কুঁচিত বাদাম") (১৬৮৩)
  • নোজারাশি কিকো (আবহাওয়া উদ্ভাসিত একটি নরকঙ্কালের প্রতিবেদন) (১৬৮৪)
  • ফুয়ু নো হি (শীতের দিনগুলি) (১৬৮৪)
  • হারু নো হি (বসন্তের দিনগুলি) (১৬৮৬)
  • কাওয়াজু আওয়াসে (ব্যাঙ প্রতিযোগিতা) (১৬৮৬)
  • কাশিমা কিকো (কাশিমা মন্দিরের যাত্রা) (১৬৮৭)
  • ওই নো কোবুমি, অথবা উতাৎসু কিকো (একটি ভ্রমণ জীর্ণ ঝুলির প্রতিবেদন) (১৬৮৮)
  • সারাশিনা কিকো (সারাশিনা গ্রামের যাত্রা) (১৬৮৮)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Louis Frédéric, Japan Encyclopedia, Harvard University Press, 2002, p. 71.
  2. "松尾芭蕉"। The Asahi Shimbun Company। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-২২ (জাপানি)
  3. "芭蕉と伊賀上野"। 芭蕉と伊賀 Igaueno Cable Television। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-২২ (জাপানি)
  4. Drake, Chris. 'Bashō’s “Cricket Sequence” as English Literature', in Journal of Renga & Renku, Issue 2, 2012. p7
  5. Ueda, 1982, pg 23
  6. Ueda,1982,pg21
  7. Okamura, 1956
  8. Ueda, 1982, pg22
  9. Gregory M. Pflugfelder (1999). Cartographies of Desire: Male-Male Sexuality in Japanese Discourse, 1600-1950. University of California Press. p. 39. ISBN 978-0520251656.
  10. Leupp, Gary (1997). Male Colors: The Construction of Homosexuality in Tokugawa Japan. University of California Press. p. 137.
  11. Ibid., p. 83.
  12. Ueda 1982, p. 23.
  13. Ueda 1982, p. 9.
  14. Kokusai 1948, p. 246
  15. Ueda 1992, p. 29
  16. Carter 1997, p. 62.
  17. Yuasa 1966, p. 23
  18. Carter 1997, p. 57
  19. Ueda 1982, p. 25.
  20. Kokusai 1948, p. 247
  21. Ueda 1992, p. 95.
  22. Ueda 1982, p. 26.
  23. Examples of Basho's haiku written on the Tokaido, together with a collection of portraits of the poet and woodblock prints from Utagawa Hiroshige, are included in: Forbes and Henley, 2014.
  24. Ueda 1992, p. 122.
  25. Ueda 1982, p. 29.
  26. Ueda 1992, p. 138
  27. Ueda 1992, p. 145
  28. Kokusai 1948, p. 241.
  29. Bolitho, Harold, in Treasures of the Yenching: seventy-fifth anniversary of the Harvard-Yenching Library, Chinese University Press, 2003, ISBN 978-962-996-102-2 p. 35.
  30. Ueda 1992, p. 348
  31. Ueda 1992, p. 34.
  32. Ueda (1970), p. 50.
  33. Ueda 1992, p. 7.
  34. Burleigh, David 'Modern Haiku Review' vol 35.2, Summer 2004, Lincoln, United States.
  35. Shirane (1998), p. 37.
  36. Ross, Bruce. How to Haiku: A Writer's Guide to Haiku and Related Forms, Tuttle, 2002, ISBN 978-0-8048-3232-8, p. 2.
  37. See, for instance, Lawlor 2005, p. 176.
  38. Slawenski, 2010, p. 239: "Nothing in the voice of the cicada intimates how soon it will die" and "Along this road goes no one, this autumn eve."
  39. International Astronomical Union (30 November 1980). Transactions of the International Astronomical Union, Volume XVIIB. Springer Science & Business Media. p. 291. ISBN 978-90-277-1159-5.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • "Matsuo Bashō (松尾芭蕉)"। Classical Japanese Database। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১২  Various poems by Bashō, in original and translation.
  • "Interpretations of Bashō"। Haiku Poets Hut। ২০০২-০৭-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১২  Comparison of translations by R. H. Blyth, Lucien Stryck and Peter Beilenson of several Bashō haiku.
  • Price, Sean (২০০৭)। "Phinaes' Haikai Linked Verse Translations"। ২০০৭-১২-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০২  Translations of renku by Bashō and his disciples, by Sean Price.
  • Norman, Howard (২০০৮)। "On the Poet's Trail"। National Geographic Magazine। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১২  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) Travels along the path Matsuo Bashō followed for Oku no Hosomichi. Photography by Mike Yamashita.
  • Norman, Howard (২০০৮)। "On the Poet's Trail"। National Geographic Magazine। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১২  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) Interactive Travelogue of Howard Norman's journey in Basho's footsteps, including a map of the route taken.
  • "An Account of Our Master Bashō's Last Days"। Simply Haiku: A Quarterly Journal of Japanese Short Form Poetry। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-২৯  A translation by Nobuyuki Yuasa of an important manuscript by Takarai Kikaku, also known as Shinshi, one of Bashō’s followers.
  • গ্রন্থাগারে মাৎসু বাসো সম্পর্কিত বা কর্তৃক কাজ (ওয়ার্ল্ডক্যাট ক্যাটালগ) (ইংরেজি)
  • "Matsuo Bashō - Complete Haiku in Japanese"। André von Kugland। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-০৯ 
  • bashoDB