ব্যবহারকারী আলাপ:Anisurrahman225155
বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম[সম্পাদনা]
সুপ্রিয় Anisurrahman225155! উইকিপিডিয়ায় আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করছি এ পরিবেশটি আপনার ভাল লাগবে এবং উইকিপিডিয়াকে সমৃদ্ধ করার কাজে আপনি সহায়তা করবেন। এখানে কিছু পৃষ্ঠা আছে যা আপনাকে উইকিপিডিয়া ব্যবহার এবং সমৃদ্ধ করার কাজে সাহায্য করবে:
আশা করি আপনি বাংলা উইকিপিডিয়া সম্প্রদায়ের একজন হয়ে সম্পাদনা করে আনন্দ পাবেন! আবারও স্বাগতম এবং শুভেচ্ছা!
বাংলা উইকিপিডিয়া অভ্যর্থনা কমিটি ১৮:১০, ২১ মার্চ ২০২৩ (ইউটিসি) |
জীবনের নির্মমতা “আমার বন্ধু তাপস”[সম্পাদনা]
“- আদাব ভাই, কেমন আছো? - জ্বী, ভাইয়া ভালো আছি, তুমি কেমন আছো । - কোন স্কুল থেকে এসেছো? আমি কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এসেছি। - আমি সরল খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে।......
কয়েকদিন পরে,,, -চল কিছু খেয়ে আসি। -আচ্ছা চল।”
কিভাবেই শুরু হল ওর সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। দুইটি ভিন্ন স্কুল থেকে এসেছি আমরা দুজন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে একই সাথে ভর্তি হলাম সরল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে। পুরো পাঁচটি বছর একসাথে ক্লাস করেছি সেই বন্ধুটার সাথে। অসাধারণ এক বন্ধুত্ব ছিল তাপসের সঙ্গে।
জেএসসি ও এসএসসি পাশের পর দুজন দুদিকে গেলাম। আমি লালমনিরহাট সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলাম আর তাপস লালমনিরহাট কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। আমাদের বাড়ি একই গ্রামের দুই পাশে।
মাঝে মাঝেই ছুটির ফাঁকে ফাঁকে আমরা দেখা করতাম। বিদ্যালয়ে থাকতে একসঙ্গে খেলাধুলা করেছি, একসাথে কত আনন্দ হইহুল্লোর করে বেরিয়েছি। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে প্রত্যেক বছর দশম শ্রেণীর বড় ভাইয়েরা একটি অন্ত ক্রিকেট খেলার আয়োজন করে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর প্রত্যেকটি শাখায় সেই খেলায় অংশগ্রহণ করে। এই ধারাবাহিকতায় আমরা দশম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় প্রতিবছরের নয় একটা ক্রিকেট খেলার আয়োজন করেছিলাম। নবম এবং দশম শ্রেণীর মধ্যকার ফাইনাল খেলায় আমাদের সঙ্গে খেলেছিল তাপস। ফিল্ডিং এর এক সময়ে একটা বল ওর হাটুর মধ্যে লেগেছিল। ও সহ আমরা কেউই সেটা সিরিয়াসলি নেইনি। এটা আগেই বলে রাখলাম এই জন্য যে এই খেলাটি ওর জীবনকে থমকে দিয়েছে।
বিদ্যালয় জীবনের পরে আমরা অনেক জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছি। আমরা প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ঘুরাঘুরি করতাম। লাস্ট যে সপ্তাহ গিয়েছিলাম জায়গাটা ছিল রইসবাগ বধ্যভূমি(লালপুল)। পরের সপ্তাহে যাওয়ার কথা ছিল আনন্দবাজার পাকার মাথা। হঠাৎ করে শুনতে পেলাম ওনাকে অসুস্থ হয়েছে। তাই আমরা যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। এক সপ্তাহ পরে শুনলাম ওর পা নাকি প্রচন্ড ব্যথা করছে। ওর নাকি হাঁটতে অসুবিধা হয়। আস্তে আস্তে ওর পায়ের ব্যথা সিরিয়াস হতে থাকলো।
শেষ পর্যন্ত ওকে বড় হাসপাতালে নিয়ে এক্সরে করানো হয়েছিল। রিপোর্ট এসেছিল পায়ে টিউমার হয়েছে। ওর পরিবারের সবাই ভেঙ্গে পড়েছিল। টিউমারের চিকিৎসা অনেক টাকা পয়সা দরকার ছিল। যা ওর পরিবারের পক্ষে যোগান দেওয়া অসম্ভব ছিল। আমাদের বন্ধু মহলের সবাই মিলে ওকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অত টাকা আমরা ম্যানেজ করতে পারিনি। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল সাত থেকে আটটি থেরাপি। যার প্রত্যেকটির জন্য অর্থ প্রয়োজন ছিল ২০ হাজার টাকা করে। আমরা অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু কেউ কখনো সাহায্য করেনি। অবশেষে বন্ধ হল চিকিৎসা।
আস্তে আস্তে ওর শরীর খারাপ হতে লাগলো। আমি মাঝে মাঝেই সময় করে ওকে গিয়ে দেখে আসতাম। ওর মা বাবা আমার সামনে এসে কান্না কাটি করতো। কিন্তু কি করার ছিল। দীর্ঘ দেড় বছর বিছানায় পড়েছিল তাপস। গত জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ আমি রংপুরে ছিলাম। ওখানে কোচিং করতাম মেডিকেল এর জন্য। হঠাৎ করে আমার রুমমেট সহ চলে আসলাম বাড়িতে। আসার কোন কারণ ছিল না। পরের দিনে আমরা চলে আসতাম রংপুরে। কিন্তু সকালবেলা খবর পেলাম তাপস মারা গেছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। থমকে গেলাম আমি। মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙ্গে পড়লাম। যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম ওকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। শেষ পর্যন্ত ওকে শেষ দেখা দেখতে পেরেছি এটাই ছিল আমার মনের সান্তনা। ওর পরিবারের যদিও তেমন অবস্থা ছিল না তারপরও নিঃসন্ত হয়ে গেছে ওর পেছনে।
জীবনের কি নির্মমতা দেখুন, ও ওর জীবনকে উপলব্ধি করতেই পেল না। সৃষ্টিকর্তাকে জীবনকে অনুভব করতে দিলেন না। বুঝতেই পেল না জীবন মানে কি। আজ ওর জন্য আমার খুব দুঃখ হচ্ছে। আমার জানামতে ওর জীবনে এমন কোন ভুল ছিল না যার ফলে এত বড় শাস্তি পাবে। তারপরও সৃষ্টিকর্তা ভালো জানেন। আল্লাহ আমি আমার বন্ধু তাপসের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
ভালো থেকো বন্ধু ওপারে-------
আমায় ক্ষমা করিস। তোর জন্য কিছুই করতে পারিনি। অনেকে তার বন্ধুর জন্য অনেক কিছু করে। কিন্তু আমি তোর জন্য কিছুই করতে পারিনি। I LOVE YOU TAPOS........!!