বিষয়বস্তুতে চলুন

বেড়িবাঁধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি (নদীরক্ষা) বেড়িবাঁধের অংশসমূহ:
  1. নকশাকৃত উচ্চ জলস্তর
  2. নিম্ন জলপ্রণালী
  3. প্লাবন প্রণালী
  4. নদীপার্শ্বস্থ ঢাল
  5. নদীতীরবর্তী ঠেকনা ঢাল
  6. বেড়িবাঁধের মুকুট
  7. ভূমিপার্শ্বস্থ ঢাল
  8. ভূমিপার্শ্বস্থ ঠেকনা ঢাল
  9. ভিত্তি রক্ষাঢাল
  10. নিম্ন জল আস্তরণ
  11. নদীপার্শ্বস্থ ভূমি
  12. বেড়িবাঁধ
  13. সুরক্ষিত নিম্নভূমি
  14. নদী অঞ্চল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্যাক্রামেন্টো শহরের একটি বেড়িবাঁধের পার্শ্বদৃশ্য

বেড়িবাঁধ, সুরক্ষা বাঁধ বা প্রতিরক্ষা বাঁধ বলতে মূলত মাটি (কদাচিৎ পাথর) দিয়ে নির্মিত এক ধরনের বাঁধকে বোঝায়, যেগুলি কোনও জলপ্রবাহের (নদীর) সমান্তরালে ধার ঘেঁষে কিংবা কোনও বৃহৎ জলাশয়ের (হ্রদ বা সাগর) পাড় ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়, যার উদ্দেশ্য এমনভাবে জলপ্রবাহের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা যাতে পানি উপচে পড়ে আশেপাশের ভূমি প্লাবিত না হয়, কিংবা সাগরের ঢেউ বা জোয়ারের কারণে যেন উপকূলীয় নিম্নভূমি প্লাবিত না হয়।[] অনেক সময় নদী উপচে পড়ে বন্যা হলে নদীর গতি কমে গিয়ে পলিমাটির অধক্ষেপ পড়ে ও জমতে জমতে উঁচু হয়ে প্রাকৃতিকভাবে এক ধরনের বেড়িবাঁধ সৃষ্টি হতে পারে। তবে কৃত্রিম মানবনির্মিত বেড়িবাঁধগুলি প্রাকৃতিকগুলির চেয়ে যথেষ্ট উঁচু হয় এবং চারপাশের অঞ্চলকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করে।[][] উপকূলীয় সামুদ্রিক বেড়িবাঁধকে অনেক সময় ডাইক বলে (নেদারল্যান্ডসের ওলন্দাজ ভাষায় প্রচলিত পরিভাষা)। সাধারণত কোনও নদীর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য বরাবর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয় না, তবে নদীর পাড়ের যেসব এলাকা অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান যেমন নগর বা ছোট শহর, ইত্যাদিকে সুরক্ষিত করতে নদীর অংশবিশেষে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়ে থাকে। বন্যার পানিকে বেড়িবাঁধের সুপরিকল্পিত ফাটল দিয়ে নির্দিষ্ট দিকে চালিত করে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যবান ভূমির দিকে ধাবিত করা হয় ও অতঃপর অন্যান্য গৌণ বাঁধের সহায়তায় সম্পূরক জলপ্রণালী দিয়ে নিষ্কাশন করা হয়।

বেড়িবাঁধগুলিকে বন্যার উদস্থিতিক চাপ, ভূমিক্ষয়, নলবৈকল্য ও চোঁয়ানোর মতো সমস্যাগুলি সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হয়। ঘুণ্টি, পাথরের আস্তরণ, নাল, ইত্যাদি দিয়ে বাঁধগুলিকে মজবুত করা হতে পারে। বন্যাপীড়িত অঞ্চলগুলিতে প্রাচীনকাল থেকেই বেড়িবাঁধের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্য। প্রাচীন মিশর, সিন্ধু উপত্যকা, চীনমেসোপটেমিয়া (ইরাক) অঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। বেড়িবাঁধগুলিকে যথেষ্ট প্রশস্ত করে নির্মাণ করতে হয় যাতে বন্যার পানি শুষে নিয়ে এগুলি ধসে না পড়ে বা ক্ষয়ে না যায়। বাঁধের উপরে ঘাস বা লতাপাতার আস্তর লাগানো হয় যাতে বাঁধের ক্ষয় ন্যূনতম থাকে। আধুনিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি নদীর ধার ঘেঁষে প্রায় ১০০০ মাইল দীর্ঘ বেড়িবাঁধ আছে। অনেক সময় পলিসমৃদ্ধ নদীর গতিবেগ কমে গিয়ে পলল অধক্ষেপের কারণে নদীর গভীরতা কমে গিয়ে নদীর পানি বেড়িবাঁধ উপচে বা ভেদ করে বিপর্যয়মূলক বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। চীনের হুয়াং হো নদীতে এইরূপ আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া ভূমিক্ষয় বা অন্য কারণেও বেড়িবাঁধ বিফল হয়ে বিপর্যয়ের সৃষ্ট হতে পারে।[] ২০০৫ সালে ক্যাট্রিনা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃহত্তর নিউ অরলিন্স শহরের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভয়াবহ বন্যা বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছিল।

পরিবেশগতভাবে বেড়িবাঁধ ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক দিক আছে।[] বেড়িবাঁধের কারণে জলপ্রণালী ও তার আশেপাশের অঞ্চলের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র ব্যহত হয়। নদী থেকে দূরবর্তী যে বদ্ধ জলাভূমি অঞ্চলগুলি বন্যার সময় নতুন নতুন প্রণালীর মাধ্যমে মৌসুমী পানি লাভ করত, সেই প্রক্রিয়াটিতে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে ঐসব জলাভূমিতে মৎস্যসম্পদের প্রজনন, খাদ্য আহরণ ও বাসস্থানের বৈচিত্র্যে বাধার সৃষ্টি হয়ে মৎস্যসম্পদের নাটকীয় হ্রাস ঘটতে পারে। নদীর মাছগুলি প্লাবিত ভূমিতে আসার সুযোগ পায় না বলে মৎস্যসম্পদের বৈচিত্র্য হ্রাস পায়। বন্যা দ্বারা প্লাবিত হয় না বলে ভূগর্ভস্থ পানিস্তরের ঠিকমত পুনর্ভরণ ঘটে না, ফলে ভূগর্ভস্থ পানির উপরে নির্ভরশীল বাস্তুগত ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি হ্রাস পায়। বেড়িবাঁধের কারণে নদীর বয়ে আনা পলিমাটি প্লাবনভূমিতে থিতু হতে পারে না, ফলে মাটি পুষ্টি ও উর্বরতা বৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে কৃষিভূমিগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবেই পাঁচ বা দশ বছর পরপর প্লাবিত হতে দিতে হয়, যাতে বন্যার প্রাকৃতিক সুবিধাগুলির সদ্ব্যবহার করা যায়।

পৌর ও শিল্প এলাকাগুলিতে নির্মিত বেড়িবাঁধগুলি নকশা ও নির্মাণের সময় সেগুলির পরিবেশগত প্রভাব মাথায় রেখে ঘুরপথ (বাইপাস), ধারণকারী নিম্ন অববাহিকা, ইত্যাদির সাথে মিলিয়ে নির্মাণ করতে হয়।

অন্য ভাষায়

[সম্পাদনা]

বেড়িবাঁধকে ইংরেজি ভাষায় লেভি (Levee), ডাইক (Dyke বা Dike), এমব্যাংকমেন্ট (Embankment), ফ্লাডব্যাংক (Floodbank), স্টপব্যাংক (Stopbank), ইত্যাদি নামে ডাকা হতে পারে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Henry Petroski (২০০৬)। "Levees and Other Raised Ground"। American Scientist94 (1): 7–11। ডিওআই:10.1511/2006.57.7 
  2. "Levee"education.nationalgeographic.org (ইংরেজি ভাষায়)। National Geographic Society। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-২৭ 
  3. "Levee"National Geographic। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০২৩ 
  4. "A Look at Preventing Levee Erosion"Federal Emergency Management Agency। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০২৩ 
  5. "Flood risk reduction with multiple benefits: more space for the river"www.preventionweb.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২২