বিষয়বস্তুতে চলুন

বি এল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বনোয়ারী লাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
ঠিকানা
মতিন সাহেবের ঘাট, ধানবান্ধি

,
বাংলাদেশ
,
৬৭০০
তথ্য
বিদ্যালয়ের ধরনসরকারি মাধ্যমিক
নীতিবাক্যশিক্ষাই আলো
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৫৪ সাল
প্রতিষ্ঠাতাবনোয়ারী লাল রায় চৌধুরী
বিদ্যালয় বোর্ডরাজশাহী শিক্ষা বোর্ড
সেশনজানুয়ারি-ডিসেম্বর
বিদ্যালয় নম্বর৬২১০৯
বিদ্যালয় কোড৩৭৫০
ইআইআইএন১২৮৩৭৯ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রধান শিক্ষকআব্দুছ ছালাম খা ন(ভারপ্রাপ্ত)
শিক্ষকমণ্ডলী৪৯
শ্রেণিতৃতীয় - দশম
লিঙ্গবালক
বয়স০৮ -১৭ পর্যন্ত
শিক্ষার্থী সংখ্যা1689
ভাষাবাংলা
সময়সূচিপ্রভাতী(সকাল ৭.১৫-১১.৫০), দিবা(১২.১৫-০৫০০)
শিক্ষায়তন৩.৬০৮১ একর
আয়তন৫ একর
ক্যাম্পাসের ধরনট্রাপিজিয়াম আকৃতি
রং         রং: খাঁকী এবং সাদা
EIIN১২৮৩৭৯
ওয়েবসাইটwww.blgovtschool.edu.bd

বি এল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের একটি অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী স্কুল।

অবস্থান

[সম্পাদনা]

সিরাজগঞ্জ শহরের পূর্বপ্রান্তে, বিচিত্র নদী প্রমত্তা যমুনার কোল ঘেঁষে, অবিভক্ত বাংলার প্রথমশ্রেনীর যে বিদ্যানিকেতনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তারই বর্তমান নাম 'বি এল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়' সৃষ্টিলগ্ন থেকেই সফলতার সাথে দেশের সুযোগ্য নাগরিক সৃষ্টি করা স্কুলটি অর্জন করেছে এক সুবিশাল ঐতিহ্য। বর্তমান অবস্থান যমুনার বক্ষে হলেও ১৮৬৯ সালে এ বিদ্যালয়টির অবস্থিত ছিল শহরের কেন্দ্রস্থলে। বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে যমুনা নদী প্রবাহিত ছিল। নদী ভাঙ্গনের ফলে একে একে কোর্ট-কাচারী, মহকুমা অফিস, মহকুমা প্রশাসক ও মহকুমা পুলিশ প্রশাসক মহোদয়ের বাংলো, রেলস্টেশন এবং সর্বশেষ জেলখানা যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও কালের সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকে বি এল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

অবিভক্ত বাংলায় পিছিয়ে পড়া জনপদ সিরাজগঞ্জকে আলোকিত করার প্রত্যয় নিয়ে ২রা জানুয়ারি , ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের নাম ছিল সিরাজগঞ্জ এইচ. ই. স্কুল (সিরাজগঞ্জ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়)। শিক্ষানুরাগী তাড়াশের তৎকালীন জমিদার দানবীর বনওয়ারী লাল রায় চৌধুরি ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজগঞ্জ স্কুলে সর্বপ্রথম গৃহ নির্মাণে এককালীন ৫০০০ টাকা দান করেন। পাবনা জেলার শিক্ষা সম্প্রসারণ ইতিহাসে বর্ণিত তথ্য থেকে জানা যায়- রাজর্ষি বনওয়ারী লাল মহাশয় নগদ ১ লক্ষ টাকা এবং প্রায় ৫ একর সম্পত্তি দান করেন এবং ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১লা জুলাই ১৮৬৯ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পর্ষদ প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে। এ সময় সিরাজগঞ্জে ভিক্টোরিয়া এইচ. ই. স্কুল ও জ্ঞানদায়িনী এম. ই. স্কুল (মিডিয়াম ইংলিশ স্কুল) নামে আরো দুইটি ইংরেজি বিদ্যালয় ছিল। প্রতিষ্ঠাকালীন নাম সিরাজগঞ্জ এইচ. ই. স্কুল হলেও ১৮৮০ সাল থেকে এর নাম বি. এল. এইচ. ই. স্কুল হিসেবে বিভিন্ন মনিষীর শিক্ষা জীবনী থেকে উল্লেখ পাওয়া যায়। জমিদার বনওয়ারী লাল ১৮৮২ সালে মৃত্যুবরণ করলে তার দত্তক পুত্র রাজর্ষি বনমালী রায় বাহাদুর তাড়াশের জমিদার হন। ইতিমধ্যে ১৮৯৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পে বিদ্যালয়ের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। বিদ্যালয়ের আর্থিক সংকট লাঘব এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে দীর্ঘকালীন প্রধান শিক্ষক বাবু কুলদা প্রসন্ন চৌধুরী মহাশয়ের চেষ্টায় বিদ্যানুরাগী জমিদার রায় বাহাদুর বনমালী রায় আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসেন এবং বিদ্যালয়ের সুদৃশ্য পাকা ভবন নির্মিত হয়। ১৯১৪ সালের প্রথমদিকেই ভবন নির্মাণ সমাপ্ত হয় এবং নতুন ভবনে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। মতান্তরে বাবু বনমালী রায় প্রতিষ্ঠিত নতুন ভবন স্থাপনের মধ্যে দিয়ে তার পিতার নাম অনুসারে এই বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় বনওয়ারী লাল (বি. এল.) উচ্চ বিদ্যালয়। রাজর্ষি বনমালী রায় বাহাদুর ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ নভেম্বর বৃন্দাবনে দেহ ত্যাগ করেন। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছাত্র প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কুলদা প্রসন্ন চৌধুরী মহাশয়ের নাম চির স্মরণীয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তার সুযোগ্য পরিচালনাধীনে বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নতি হতে থাকে। ১৯১৭ সালে শশীমোহন সরকার প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। এই সময় বিদ্যালয়ের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে এবং বিদ্যালয়ের খ্যাতি ও যশ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সর্বোপরি অবিভক্ত বাংলায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিদ্যালয়টি ১ম শ্রেণীর বিদ্যালয়ের গৌরব অর্জন করতে সমর্থ হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর শশীমোহন সরকার পার্শ্ববর্তী ভিক্টোরিয়া এইচ. ই. স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। শূন্যতা পূরণে প্রবীণ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক আব্দুর রহমান সাহেব প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং কিছুকাল এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে মুহাম্মদ আবু তৈয়ব সাহেব এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ অলঙ্কৃত করেন এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এই পদে সমাসীন থাকেন। ইংরেজদের শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পরই তৎকালীন জাতীয় সরকারের নির্দেশক্রমে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের নাম হতে ইংরেজি কথাটা তুলে দেয়া হয়। ফলে বিদ্যালয়ের নাম হয় বি এল উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় সমূহের উন্নতি বিধানকল্পে সমগ্র দেশব্যাপী জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়। তদনুসারে বি এল উচ্চ বিদ্যালয়টি 'এ' গ্রেড ভুক্ত হয় এবং ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি মডেল স্কুলে উন্নীত হয়। প্রধান শিক্ষক জনাব আবু তৈয়ব সাহেব, সরকারী প্রধান শিক্ষক দারোগ আলী সাহেব এবং বিদ্যালয়ের স্থানীয় হিতৈষীবর্গের তৎপরতায় ১৯৬৯ সালের ১লা মে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয় এবং সরকারিকরণের সময়ে বিদ্যালয়টির নাম হয় বি এল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।

ঐতিহ্য

[সম্পাদনা]

গণিত সম্রাট যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন তৎকালীন বি, এল ইংলিশ স্কুলের ছাত্র। কাওয়াকোলা টোলের লেখাপড়া শেষ করে তিনি এই স্কুলে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে এন্ট্রান্স পাস করেন। সাহিত্যিক ইসমাইল হোসেন সিরাজী জ্ঞানদায়িনী স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করে ১৮৯১ সালে এই স্কুলে ৭ম শ্রেনীতে ভর্তি হন এবং ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত এখানে পড়ালেখা করেন। বাংলাদেশের কত কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, বৈজ্ঞানিক ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার আলো লাভ করে দেশে ও বিদেশে মানব সমাজের সেবা করেছেন এবং এখনও করছেন তার পরিসংখ্যান সুদীর্ঘ। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের শিল্পমন্ত্রী মরহুম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম,মনসুর আলী সাহেব এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। বিজ্ঞানী ড. আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন অত্র বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম। ১৯১৭ সালে অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্ররা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। গণিত সম্রাট যাদবচন্দ্র চক্রবর্তীর পুত্র প্রতুল চক্রবর্তী ছিলেন এই ব্যাচের ছাত্র। যাদবচন্দ্র চক্রবর্তীর পৌত্র মুকুল চন্দ্র চক্রবর্তী তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়'র অধীনে এই বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ৪র্থ স্থান অর্জন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৮ সালে ঢাকা মাধ্যমিক বোর্ডের প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় বাবু মনসাচরণ দত্ত ১ম স্থান এবং ১৯৫৩ সালে সাবেক মন্ত্রী ডাঃ এম, এ মতিন সাহেব ৫ম স্থান অধিকার করেন। তৎপর এই স্কুলের প্রাক্তন সহকারী প্রধান শিক্ষক মরহুম দারোগ আলী সাহেবের ১ম পুত্র জনাব মনোয়ারুল ইসলাম ১৯৫৪ সালে ঢাকা বোর্ডে ১ম স্থান, ৪র্থ পুত্র জনাব নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রথম SSC পরীক্ষায় ১ম স্থান এবং কনিষ্ঠ পুত্র জনাব ন,ম জাহাঙ্গীর হোসেন ১৯৭৪ সালে কৃষি বিজ্ঞান বিভাগে SSC পরীক্ষায় ২য় স্থান লাভ করে বিদ্যালয়ের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। সরকারীকরণের বছরই SSC পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ফলাফল বিশেষ সম্মান বয়ে আনে। মোট ৪৫ জন ছাত্রের মধ্যে ৪২ জনই উত্তীর্ণ হয় যার ৫জন প্রথম বিভাগে, ২৮ জন দ্বিতীয় বিভাগে এবং ৯জন তৃতীয় বিভাগে পাশ করেন। কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলী মিরাজ খাঁ সকল গ্রুপের মধ্যে স্টার মার্ক সহ ৯ম স্থান অধিকার করেন। এর ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এজন্য আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্ররা জেলা, বিভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে স্কুলের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছে। এ কারণে বি,এল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শুধু সিরাজগঞ্জ বা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডেরই নয়, বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিদ্যালয় ভবন

[সম্পাদনা]

ডি ব্লক হিসেবে সাইট ম্যাপে নির্দিষ্ট, জমিদার বনওয়ারী লাল বাবুর নির্মিত ভবনটি ১৯৯৫-৯৬ সালে নিলামের মাধ্যমের বিক্রয়ের পর বর্তমানে পাকা আধ-পাকা মিলিয়ে মোট ভবনের সংখ্যা ০৯ টি। এর মধ্যে একটি তিনতলা, দুটি দু'তলা ভবন, তিনটি একতলা এবং তিনটি টিনশেড ভবন। প্রশাসনিক ভবন না থাকায় প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকদ্বয় এবং সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অফিস কক্ষগুলো তিনতলা ভবনের নীচতলায় অবস্থিত।

  • ১নং ভবন-(তিনতলা), শ্রেনীকক্ষ-৬টি এবং অফিস কক্ষ-৩টি।
  • ২নং ভবন-শ্রেনীকক্ষ-৫টি,কম্পউটার ল্যাব-২টি লাইব্রেরী কক্ষ-২টি,ল্যাবরেটারী-৪টি,BNCC কক্ষ-১টি।
  • ৩নং ভবন-শ্রেনীকক্ষ-৬টি।
  • ৪নং ভবন-পাকা মসজিদ
  • ৫নং ভবন-১৮৬৮ সালে নির্মিত পরিত্যক্ত ল্যাব(বর্তমানে ক্রীড়া কক্ষ)
  • ৬নং ভবন-গার্ডরুম(মেইন গেট সংলগ্ন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে নির্মিত)
  • ৭নং ভবন-১৯৬৮ সালে নির্মিত মিলনায়তন
  • ৮নং ভবন-আধপাকা ভবন (টিফিন কক্ষ এবং স্কাউট ডেন)
  • ৯নং ভবন-ছাত্রাবাস

কম্পিউটার ল্যাব

[সম্পাদনা]

অাধুনিক প্রযুক্তির কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানোর জন্য রয়েছে ৩৪টি কম্পিউটার নিয়ে গড়ে তোলা দুইটি কম্পিউটার ল্যাব। তন্মধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ১টি এবং অন্যটি বিদ্যালয়ের সৃষ্ট। বেসরকারি ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন দক্ষ প্রোগ্রামার ল্যার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।

পাঠাগার

[সম্পাদনা]

অজানাকে জানার কৌতূহল শিক্ষার্থীদের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। আর এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানপিপাসা পূরন করতে আমাদের বিদ্যালয় গড়ে তুলেছে এক সমৃদ্ধ পাঠাগার, যা দুই জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে পাঠাগারে পুস্তক সংখ্যা ৪০০০ এর কিছু বেশি। এছাড়া বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে সম্পর্কিত থাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রদেয় নির্দিষ্ট বইগুলো ছাত্রদের মাঝে বিতরন করা হয়। লাইব্রেরী পরিক্রমা  :

  1. ১৬/০৩/১৮৭৫ লাইব্রেরীতে বইয়ের সংখ্যা ছিলো - ২০৫টি
  2. ১৯১১ সালে বইয়ের সংখ্যা - ৭৬৭টি
  3. ১৯৩৩ সালে বইয়ের সংখ্যা -২৩০০টি
  4. ১৯৩৫ সালে বইয়ের সংখ্যা -২৫৯৮টি
  5. ২০১৫ সালে থেকে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা -৪০০০টি

বিজ্ঞানাগার

[সম্পাদনা]

১৯৮৬ সালে নির্মিত দ্বিতল ভবনের দ্বিতীয়তলায় এই বিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, কৃষিশিক্ষা এবং কম্পিউটারের জন্য রয়েছে পৃথক বিজ্ঞানাগার। এসব বিজ্ঞানাগারে রয়েছে বিষয় উপযোগী আধুনিক সব যন্ত্রপাতি ও উপকরণ।

অডিটোরিয়াম

[সম্পাদনা]

১৯৬৮ সালে নির্মিত অাধপাকা অডিটোরিয়াম এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের একমাত্র মিলনকক্ষ,যেখানে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি এই অডিটোরিয়ামের সংস্কার করা হলেও ব্যাপার সংস্কার ছাড়া এটি আগামীদিনে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

মসজিদ

[সম্পাদনা]

২০০৮ সালে রাজস্ব খাত থেকে ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়ের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি মসজিদ। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে সংস্কারের পর বিদ্যালয়টির মসজিদ একটি সুদৃরও সুন্দর স্থাপনা।

ছাত্রাবাস

[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠার সূচনাগগ্ন থেকেই এই বিদ্যালয়ে দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আধপাকা ছাত্রাবাস আছে। ১৮৯৫ সালে যখন ছাত্রাবাস চালু করা হয় তখন গড়পরতা ২০-৩০ কন ছাত্র ছাত্রাবাসে থাকতো। ১৯১৫ সালে হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের জন্য আলাদা ছাত্রাবাস চালু করা হয় এবং দুই ছাত্রাবাসে দুজন শিক্ষক আলাদা হোস্টেল সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।সরকারীকরণ পরবর্তী বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের পাকা অবকাঠামো সংখ্যা বাড়লেও এবং দূরবর্তী ছাত্রদের এখানে পড়ালেখার আগ্রহ থাকলেও অদ্যাবধি কোন নিরাপদ পাকা ছাত্রাবাস নির্মিত হয় নি। এখন ছাত্রাবাসে ছাত্ররা থাকতে চায় না। তবে বর্তমানে এটি প্রাচীর বেষ্টিত করে নিরাপত্তার সাথে ছাত্রদের বসবাসের উপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে ছাত্রাবাসের ছাত্রদের থাকার জন্য এর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা আবশ্যক।বর্তমানে ছাত্রাবাসটি পরিত্যক্ত৷

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের স্মারক নম্বর- শিম/শাঃ-১০/৪ (ডাবল শিফট)- ১/২০০৮ (অংশ)/৯০০, তারিখ -০৮/১২/২০০৯ মোতাবেক ২০১০ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ছাত্রভর্তির মধ্যদিয়ে ডাবল শিফট স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয় এবং মাউশি স্মারক নম্বর- ওএম/১১সম/২০০৯/২১৪৯৭/১৯০-সম, তারিখ -০৯/১২/১০ মোতাবেক ২০১১সাল থেকে সকল শ্রেনীতে ডাবল শিফটে ছাত্র ভর্তি করা হয়। ২০১২ সাল থেকে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেনীতে একটি করে শাখায় পুনরায় ছাত্র ভর্তির মধ্যে দিয়ে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখা চালু করা হয়। ২০১০ সালে ডাবল শিফট চালু হওয়ার পর বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীর সৃষ্ট পদসংখ্যা-

  1. প্রধান শিক্ষক : ০১জন
  2. সহকারী প্রধান শিক্ষক : ০২জন
  3. সহকারী শিক্ষক : ৪৯জন
  4. অফিস সহকারী : ০২জন
  5. অফিস সহায়ক কর্মচারী : ০৫জন

স্কুলে দুটি অধিবেশনে শিক্ষাদান কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হলো প্রভাতী শিফট এবং দিবা শিফট। সকাল ৭.৩০ থেকে প্রভাতী শিফটের এবং দুপুর ১২.০০ থেকে দিবা শিফটের কার্যক্রম শুরু হয়। এটি বালক বিদ্যালয় হলেও এখানে পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও শিক্ষকতা করেন। প্রতি বছর এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ শ্রেণীতে ছাত্র ভর্তি করা হয়। আবার ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি শ্রেণীতে চারটি করে শাখা রয়েছে যথা 'ক ও খ শাখা'(প্রভাতী শিফটের) এবং 'গ ও ঘ শাখা'(দিবা শিফটের)। অভিজ্ঞ এবং দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানকারী প্রাচীন বিদ্যালয়গুলির মধ্যে এটি একটি। পাশাপাশি, সরকারী বিদ্যালয় হওয়ায় লেখাপড়ার খরচও এখানে নিতান্ত কম।

ছাত্র-শিক্ষক

[সম্পাদনা]

অত্র বিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী ১৩৫০ জন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন যোগ্যতা সম্পন্ন ৪৯ জন সুদক্ষ শিক্ষক। এছাড়া দু' শিফটের একাডেমীক বিষয় দেখাশোনার জন্য আছেন দুজন সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন একজন প্রধান শিক্ষক।

পোশাক

[সম্পাদনা]

গ্রীষ্মকালে সাদা হাফ শার্ট এবং খাকী ফুল প্যান্ট এবং শীতকালে সাদা ফুল শার্ট এবং খাকি ফুল প্যান্টের সাথে নেভী-ব্লু সোয়েটার থাকে। তাছাড়া শীত-গ্রীষ্ম সকল সময়ের জন্য পায়ে সাদা মোজা ও সাদা কেডস থাকে এবং সাদা শার্টের সাথে লাগানো থাকে বিদ্যালয়ের মনোগ্রামযুক্ত ব্যাজ। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বেল্ট কালো রঙের।

বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বিবরণী

[সম্পাদনা]
  • শিক্ষামন্ত্রনালয় নির্দেশিত ভর্তির প্রজ্ঞাপন মোতাবেক বিদ্যালয়ে প্রতিবছর ছাত্র ভর্তি করা হয় এবং শিক্ষাপঞ্জি নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
  • প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রাত্যহিক সমাবেশ নিয়ম মাফিক পরিচালিত হয়।
  • বছরের শুরুতেই ছাত্রদের হাতে পাঠ পরিকল্পনা, বিদ্যালয় ডায়েরী,ছাত্র ব্যাচ বিনামূল্যে ছাত্রদের সরবরাহ করা হয়।
  • একটানা তিন ক্লাসের পর উভয় শিফটে ৩০ মিনিটের টিফিন বিরতি দেওয়া হয় এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ম মাফিক স্বাস্থ্যকর টিফিন প্রদান করা হয়। টিফিনের উদ্বৃত্ত টাকা দিয়েই ছাত্রদের প্রতিবছর চাঁদাবিহীন বার্ষিক ভোজের ব্যবস্থা করা হয়।
  • প্রতিবছর ১০ম শ্রেনীর ছাত্ররা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণ করে থাকে।
  • বিদ্যালয়ের স্কাউট, BNCC দল জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে।
  • বিদ্যালয়ের বিতর্কিক দল দক্ষ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে এবং ইতিমধ্যে অঞ্চল পর্যায়ে, জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক বিতর্ক অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত হয়েছে।
  • SCC পরীক্ষার্থীদের বিদায়, নবীন বরণ, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার্ষিক পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, হিন্দু ছাত্রদের সরস্বতীপূজা প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

ভর্তি পরীক্ষা

[সম্পাদনা]

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রদত্ত প্রজ্ঞাপন (সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা) অনুসারে ফরম বিতরন, ভর্তিপরীক্ষা গ্রহণ করা হয় এবং ৩য় ও ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ছাত্র ভর্তি করা হয়।

প্রাত্যহিক সমাবেশ

[সম্পাদনা]

প্রত্যেক শিফটের পাঠদান শুরুর ১৫ মিনিট পূর্বে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক সমাবেশ হয়ে থাকে শিক্ষার্থীরা শ্রেণী ও শাখা অনুসারে শৃঙ্খলা পালন করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেে ৷ সমাবেশে প্রথমে শিক্ষার্থীদের শারিরীক কসরত করানো হয় তারপর প্রধান শিক্ষক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকবৃন্দ জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন ৷ অতঃপর যথাক্রমে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতাপাঠ, শপথবাক্য পাঠ এবং সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়ে থাকে । সমাবেশ শেষে প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপদেশ ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন ৷ এসময় সকল সহকারী শিক্ষক সমাবেশে উপস্থিত থাকেন।

কৃতি শিক্ষার্থী

[সম্পাদনা]
  1. যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী
  2. সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী
  3. আবদুল্লাহ-আল-মাহমুদ
  4. আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন
  5. আবুল ফরাজ খান
  6. ক্যাপ্টেন এম.মনসুর আলী
  7. ডাঃ এম এ মতিন

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  • পাবনা জেলার ইতিহাস-রাধারমন সাহা
  • বিদ্যালয় বার্ষিকী ১৯৬৯(১৩৭৬),১৯৭৫-৭৬,১৯৮৪,১৯৮৮
  • শতবর্ষ স্মারক-বনওয়ারী নগর সি বি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা-ফরিদপুর,জেলা-পাবনা
  • প্রবাহ(বিদ্যালয় বার্ষিকী) -২০১৩ এর বি,এল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য,পৃষ্ঠা ৩৭-৪০
  • প্রবাহ (বিদ্যালয় বার্ষিকী) -২০১৫ এর বিদ্যালয়ের ইতিহাস পরিক্রমা,পৃষ্ঠা-৩,৮,১০ ও ১১}