বিশ্বনারায়ণ শাস্ত্রী
বিশ্বনারায়ণ শাস্ত্রী | |
---|---|
ভাষা | অসমীয়া |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
শিক্ষা | বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে প্রথম স্থান এবং ডি-লিট উপাধি লাভ। |
বিষয় | সংস্কৃত সাহিত্য, গবেষণা, অনুবাদক, |
বিশ্বনারায়ণ শাস্ত্রী (ইংরেজি: Bishwanarayan Sastri) ছিলেন একাধারে রাজনীতিক, পণ্ডিত, প্রশাসক, শিক্ষাবিদ ইত্যাদি। তিনি সংস্কৃতে উপন্যাস লেখা আধুনিক আসামের একমাত্র ঔপন্যাসিক৷ সংস্কৃত উপন্যাসটির নাম অবিনাশী। তিনি ১৯৫৩-৫৮ সাল পর্যন্ত নর্থ লখিমপুর কলেজর অধ্যক্ষও ছিলেন৷ [১] তাঁর লেখা মোট গ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি৷ অন্যদিকে তিনি অনুবাদকও ছিলেন৷ ইংরাজী সাহিত্যেও তিনি অনেকগুলি গ্রন্থ লিখে রেখে গিয়েছেন৷ হাতেলেখা পাণ্ডুলিপি থেকে উদ্ধার করে কালিকাপুরাণ, কামাখ্যাতন্ত্র এবং যােগিনীতন্ত্র-এর মতো মূল্যবান সাহিত্য সম্পদ তিনি সম্পাদনা করে ইংরাজীতে মুখবন্ধ এবং পাদটীকাসহ প্রকাশ করে গিয়েছেন। সেইমতো ইংরাজীতে কালিকাপুরাণ-এর অনুবাদ, অসমীয়ায় 'বিমান ও হর্ষ'র অনুবাদ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজাতীয় লােককথার সংকলন ইত্যাদিও তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ৷ [১]
শিক্ষা
[সম্পাদনা]শিক্ষা, সাহিত্য, গবেষণা এবং রাজনীতিতে সমানে সুখ্যাতি লভা ড° শাস্ত্রী প্রবেশিকা পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। সংস্কৃতত অভিলেখ নম্বর পাওয়ার সাথে তিনি প্রবেশিকায় দুটি বিষয়ে লেটার নম্বর পান।[১] তারপর গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সংস্কৃত এবং অসমীয়ায় অভিলেখ নম্বরসহ প্রথম বিভাগে আই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। স্নাতক পরীক্ষাতেও তিনি ডিষ্টিংশন এবং সংস্কৃতে অভিলেখ নম্বর লাভ করেন। তারপর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীর প্রথম স্থান লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সম্মানীয় ডি-লিট উপাধি লাভ করেন।[১]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবনের পত্তন করে ড° শাস্ত্রী কয়েকটি মহাবিদ্যালয়ে অসমীয়া, সংস্কৃত এবং ভারতীয় ইতিহাসের প্রবক্তারূপে কাজ করেন এবং নর্থ লখিমপুর মহাবিদ্যালয়ে ১৯৫৩-৫৮ পর্যন্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।[১] উল্লেখ্য যে বিহপুরীয়া এবং নলবাড়িতে পরম্পরাগত পদ্ধতিতে তিনি সংস্কৃত ভাষা-সাহিত্য এবং ভারতীয় দর্শন তথা বৌদ্ধ দর্শনের চর্চা করেছিলেন এবং তারপর যথাক্রমে কলকাতা এবং বেনারসে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাহিত্য- শাস্ত্রী, ব্যাকরণ-শাস্ত্রী, কাব্যতীর্থ ইত্যাদি উপাধি পান। ভারতীয় ইতিহাস, দর্শন এবং সংস্কৃতির বিষয়ে দেশ-বিদেশের বহু প্রথম সারির পত্রিকা এবং গবেষণা পত্রিকায় মূল্যবান নিবন্ধ লেখা ড° শাস্ত্রীর যুগপৎ দখল ছিল অসমীয়া, সংস্কৃত এবং ইংরাজী ভাষায়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ১২টি শিশু সাহিত্য পুথিকে ধরে মোট ৪০টি অসমীয়া ভাষার গ্রন্থ আছে। ইংরাজীতে তাঁর দ্বারা রচিত গ্রন্থের সংখ্যা চার৷ অন্য বহু গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে সংস্কৃত ভাষায়। তদুপরি হাতেলেখা পাণ্ডুলিপি থেকে উদ্ধার করে কালিকাপুরাণ, কামাখ্যায় এবং যােগিনীতন্ত্রের মতো মূল্যবান সাহিত্য সম্পদ তিনি সম্পাদনা করে ইংরাজীতে মুখবন্ধ এবং পাদটীকাসহ প্রকাশ করাটি ভারতীয় প্রাচীন গ্রন্থ অধ্যয়নে এক বিশেষ অবদান হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। সংস্কৃত নীতিশিক্ষা সম্ভূত সাহিত্য দর্পণ-এর অনুবাদও তাঁর অন্য এক কৃতিত্বর পরিচায়ক।[১] ১১ শতকে কাশ্মীরের পণ্ডিত সােমদেব প্রণয়ন করা সংস্কৃত কাহিনীগ্রন্থ কথাসরিৎসাগরের অসমীয়া অনুবাদ ড° শাস্ত্রীর অন্য এক উল্লেখ্য অবদান। সেইমতো ইংরাজীতে কালিকাপুরাণের অনুবাদ, অসমীয়ায় বিমান এবং হর্ষর অনুবাদ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজাতীয় লােককথার সংকলন ইত্যাদিও বিশেষভাব উল্লেখযােগ্য। লখিমপুর লােকসভা কেন্দ্র থেকে যথাক্রমে ১৯৬৭ এবং ১৯৭১ সালে নির্বাচিত হওয়া ড° শাস্ত্রী হলেন প্রথম সাংসদ যিনি সংস্কৃত ভাষায় লােকসভায় ভাষণ দিয়ে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ১৯৪২ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি কারাবাসও করেন এবং ব্রিটিশ সরকারের কোপদৃষ্টি থেকে হাত সরাতে আত্মগােপন করতে বাধ্য হন। তিনি লখিমপুর জেলা কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়া ছাড়াও আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিরাও সদস্য পদ অলংকৃত করেন। তিনি নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটিরও সদস্য হয়েছিলেন। তদুপরি বিশেষ অধিকার কমিটি, সরকারি হিসাব কমিটি ইত্যাদিরাো তিনি ছিলেন সদস্য তথা আহ্বায়ক। চা বাের্ডের সদস্য, প্রদেশ কংগ্রেস-এর স্বাধীনতা যোদ্ধা কোষের আহ্বায়ক, আসাম সরকারের মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রূপেও তিনি সবার প্রিয়পাত্র ছিলেন। তদুপরি তিনি রাজ্যের পরিকল্পনা আয়ােগের উপাধ্যক্ষ এবং আসাম। প্রকাশন পরিষদের প্রথম সচিব ছিলেন।[১] ৫০-এর দশকে তিনি আসাম সরকারের বিশেষ শিক্ষা আধিকারিকরূপেও নিযুক্ত হয়েছিলেন। অবশ্য দীর্ঘকাল কংগ্রেসের সাথে যুক্ত হয়ে থাকার পর তিনি ১৯৯৮তে কংগ্রেস ত্যাগ করে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যােগ দেন এবং মৃত্যুর সময় পর্যন্ত বিজেপির হয়ে কাজ করে যান। অন্যদিকে, নতুন দিল্লীর সাহিত্য একাডেমীর কার্যবাহী কমিটির সদস্যরূপে তিনি ১০ বছর কার্যনিবাহ করেছিলেন। ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের বিশেষজ্ঞ সমিতির সদস্য, জাতীয় সংস্কৃত সংস্থানের কার্যবাহী সদস্য, কামরূপ অনুসন্ধান সমিতির সভাপতি, ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যবাহী। পরিষদের সদস্য, হংকঙের ‘এশিয়ান রিসার্চ ইনষ্টিটিউট’-এর ফেলাে, নতুন দিল্লীর ভারতীয় ইতিহাস গবেষণা পরিষদ-এর ফেলাে, গােরখপুরের নাগার্জুন বৌদ্ধ ফাউন্ডেশনের অধ্যক্ষ পদে থেকে ড° শাস্ত্রী অসামান্য অবদান দিয়ে গিয়েছেন। রাজনীতিবিদ, প্রাচ্যতত্ত্ববিদ, ভারতবিশারদ, ইতিহাসবিদ, দার্শনিক, গবেষক, সাহিত্যিক ইত্যাদি বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ড° শাস্ত্রী বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে আসামের সাথে ভারতেরাও গৌরব বর্ধন করেছিলেন। গুয়াহাটি-নতুন দিল্লীর থেকে আরম্ভ করে ফ্রান্স, জাপান, জার্মানী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইনস ইত্যাদির বহু শহরে আয়ােজিত সম্মেলনে তিনি যােগ দেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণাপত্র পাঠ করেন। ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি ইউরােপর প্রায় সব দেশ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশে ভ্রমণ করে বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা আহরণ করেন।[১] স্মর্তব্য যে শিশু সাহিত্য সম্পর্কিত প্রতিযােগিতায় ড° শাস্ত্রী দুবারকরে ভারত সরকার থেকে শ্রেষ্ঠতার পুরস্কার অর্জন করেন।[১] আসাম সরকারের সাহিত্যিক পেন্সনপ্রাপ্ত। লেখক হওয়া ছাড়াও তিনি সাহিত্য অকাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। সাথে উত্তর প্রদেশ সাহিত্য একাডেমী প্রদান করা বাণভট্ট পুরস্কার, সংস্কৃত ভাষায় লেখায় অবিনাশী নামের উপন্যাসটির জন্য ভারতীয় ভাষা পরিষদের পুরস্কার, উত্তরপ্রদেশ হিন্দী সংস্থানের পুরস্কার, সংস্কৃতে অনবদ্য অবদানের জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতির সম্মানীয় সার্টিফিকেট, ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির আনন্দরাম বরুয়া প্রতিষ্ঠান (এবোরক)-এর পুরস্কার ইত্যাদি তাঁর লাভ করা সম্মান এবং পুরস্কারের দীর্ঘ তালিকায় অন্যতম সংযােজন। উল্লেখ্য যে ড° বিশ্বনারায়ণ শাস্ত্রী অভ্যর্থনা সমিতি, গুয়াহাটি ১৯৯৭তে তাঁর সম্মানার্থে চারশ পৃষ্ঠার অধিক কলেবরের ৯৫০ টাকা দামের একটি সুদৃশ্য এবং সংগ্রহযােগ্য সংকলনাও প্রকাশ করে।[১] ভারতবিদ্যাসৌভম শীর্ষক সংস্কৃত এবং ইংরাজীতে প্রণীত এই দ্বিভাষিক গ্রন্থটিতে দেশ-বিদেশের বহুসংখ্যক গবেষক পণ্ডিতের লিখে পাঠানো বিশেষ নিবন্ধ সন্নিবিষ্ট হয়েছিল।
শাস্ত্রীর সাহিত্যকৃতি
[সম্পাদনা]- ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতি (১৯৬২)
- সাহিত্যদর্পণ (অনু.১৯৬৪),
- সাহিত্যেরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া (১৯৬৯)
- হর্ষ (অনু.,১৯৭২)
- কালিকাপুরাণ (সম্পা ১৯৭২)
- রামসরস্বতী (১৯৮১)
- কথাসরিৎসাগর (অনু:, ১৯৮৩)
- যােগিনীতন্ত্র (সম্পা১৯৮৪)
- কামাখ্যাতন্ত্র (সম্পা ১৯৮৬)
- সময় ফাউন্ডেশন অভ ন্যায়-বৈশেষিক ফিলোজফি (১৯৯৩)
- মীমাংসা ফিল’ছফি অ্যান্ড কুমারিল ভট্ট (১৯৯৫)
- সংস্কৃত ষ্টাডিজ ইন আসাম গ্লু দি এজেস (১৯৯৮)
- আনন্দরাম বরুয়া (১৯৮৪)
- দিয়ে কালিকাপুরাণ (১৯৯৩)
- অবিনাশী (১৯৮৬) ইত্যাদি