বারনার্ড লুইস
Bernard Lewis | |
---|---|
Lewis in 2012 | |
জন্ম | London, England | ৩১ মে ১৯১৬
মৃত্যু | ১৯ মে ২০১৮ | (বয়স ১০১)
জাতীয়তা | British American |
দাম্পত্য সঙ্গী | Ruth Hélène Oppenhejm (married 1947–1974) |
সন্তান | 2 |
পুরস্কার | Fellow of the British Academy Harvey Prize Irving Kristol Award Jefferson Lecture National Humanities Medal |
উচ্চশিক্ষায়তনিক পটভূমি | |
মাতৃ-শিক্ষায়তন | SOAS (BA, PhD) University of Paris |
উচ্চশিক্ষায়তনিক কর্ম | |
বিষয় | Historian |
প্রতিষ্ঠান | SOAS Princeton University Cornell University |
ডক্টরাল শিক্ষার্থী | Feroz Ahmad |
প্রধান আগ্রহ | Middle Eastern studies, Islamic studies |
উল্লেখযোগ্য কাজ |
|
যাদের প্রভাবিত করেন | Heath W. Lowry, Fouad Ajami |
বারনার্ড লুইস, এফবিএ (৩১ মে ১৯১৬ - ১৯ মে ২০১৮) একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান ইতিহাসবিদ ছিলেন যিনি প্রাচ্যবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি একজন সুপরিচিত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। লুইস প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ার ইস্টার্ন স্টাডিজ বিভাগের ক্লিভল্যান্ড ই. ডজ এমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। ইসলামের ইতিহাস এবং ইসলাম ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া ছিল লুইসের দক্ষতার ক্ষেত্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লুইস ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর রয়েল আর্মার্ড কোরে এবং ইন্টেলিজেন্স কোরে সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত হন। যুদ্ধের পর, তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে ফিরে আসেন এবং নিয়ার ও মিডল ইস্টার্ন হিস্ট্রির নতুন চেয়ারে নিযুক্ত হন।
২০০৭ সালে লুইসকে "মধ্যপ্রাচ্যের পাশ্চাত্য জগতের শীর্ষস্থানীয় ব্যাখ্যাকারী" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, লুইসের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামী বিশ্বের ক্ষেত্রে সারবস্তুবাদী এবং সাধারণীকরণমূলক ছিল। সাম্প্রতিক গবেষণা দ্বারা চ্যালেঞ্জ হওয়া কিছু প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করার প্রবণতাও তাঁর মাঝে দেখা গেছে। রাজনৈতিকভাবে, লুইসের সমালোচকরা বলেন, তিনি ইসলামের সাংস্কৃতিক নিকৃষ্টতার ধারণাকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং জিহাদের ভয়াবহতা তুলে ধরতে গিয়ে মাত্রা ছাড়িয়েছেন। বুশ প্রশাসনসহ নিওকনজারভেটিভ নীতিনির্ধারকদের কাছে লুইসের পরামর্শ অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ছিল। ইরাক যুদ্ধে তাঁর সক্রিয় সমর্থন এবং নিওকনজারভেটিভ আদর্শের প্রতি তাঁর স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে।
এডওয়ার্ড সাঈদের সাথে লুইসের প্রকাশ্য বিতর্ক তাঁকে আরো বেশি পরিচিত করে তুলে। সাঈদ লুইসকে একজন জায়নবাদী ক্ষমা প্রার্থী ও প্রাচ্যবিদ বলেছিলেন যিনি আরবদের অবমাননা করেছেন, ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদকে উৎসাহিত করেছেন। লুইস এসবের জবাবে বলেছিলেন, প্রাচ্যবিদ্যা মানবতাবাদের একটি দিক এবং সাঈদ বিষয়টিকে রাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা করেছেন।
বার্নাড লুইস আর্মেনীয় গণহত্যা অস্বীকার করার জন্যও পরিচিত ছিলেন। উসমানীয় সাম্রাজ্যের হাতে আর্মেনীয় জনগণের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত গণহত্যার কোন প্রমাণ নেই- অন্যান্য ইতিহাসবিদরা লুইসের এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন। লুইস বলেছিলেন যে, দুটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যকার পারস্পরিক সংগ্রামের ফলে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে "ঐতিহাসিকতার পরিপন্থী" হিসেবে সমালোচনা করা হয়েছে।
পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]বার্নার্ড লুইস ১৯১৬ সালের ৩১শে মে লন্ডনের স্টোক নিউইংটনে এক মধ্যবিত্ত ব্রিটিশ ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হ্যারি লুইস এবং মায়ের নাম জেন লেভি (বিবাহের আগের পদবি)। বার মিৎজভা'র প্রস্তুতির সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন ভাষা এবং ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৪৭ সালে তিনি রুথ হেলেন ওপেনহাইমকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা এবং এক পুত্র সন্তান রয়েছে। ১৯৭৪ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। লুইস ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একজন স্বাভাবিক নাগরিক হন।
শিক্ষাগত কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৩৬ সালে, লুইস লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ (বর্তমানে স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ, SOAS) থেকে নিকট ও মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ ইতিহাস পড়ে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিন বছর পরে, তিনি SOAS থেকেই ইসলামের ইতিহাসে বিশেষজ্ঞ হয়ে পিএইচডি অর্জন করেন। লুইস আইনও অধ্যয়ন করেছিলেন, সলিসিটর হওয়ার পথে কিছুটা এগিয়েছিলেন, কিন্তু পরে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস অধ্যয়নে ফিরে আসেন। তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি প্রাচ্যবিদ লুই মাসিগননের অধীনে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৩৭ সালে "ডিপ্লোম ডেস এটুডস সেমিটিকস" অর্জন করেন। তিনি ১৯৩৮ সালে ইসলামিক ইতিহাসের সহকারী প্রভাষক হিসেবে SOAS-এ ফিরে আসেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, লুইস ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে রয়েল আর্মার্ড কোরে কর্মরত ছিলেন এবং ১৯৪০-৪১ সালে ইন্টেলিজেন্স কোরে কর্পোরাল হিসেবে কাজ করেন, পরে তাকে পররাষ্ট্র দপ্তরে বদলি করা হয়। যুদ্ধের পর, তিনি SOAS-এ ফিরে আসেন এবং পরবর্তী ২৫ বছর সেখানেই ছিলেন। ১৯৪৯ সালে, ৩৩ বছর বয়সে, তিনি নিকট ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের নতুন বিভাগে নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে লুইসকে ব্রিটিশ একাডেমির ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।
১৯৭৪ সালে, ৫৭ বছর বয়সে, লুইস নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে একটি যৌথ পদ গ্রহণ করেন। তার নিয়োগের শর্তাবলী এমন ছিল যে লুইস বছরে মাত্র এক সেমিস্টার শিক্ষকতা করতেন, এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকায়, তিনি আগের তুলনায় গবেষণায় বেশি সময় দিতে পারতেন। ফলস্বরূপ, প্রিন্সটনে লুইসের আগমন তার গবেষণা জীবনের সবচেয়ে উর্বর সময়ের সূচনা করে যেখানে তিনি পূর্বে জমাকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করে অসংখ্য বই ও নিবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৯৮৬ সালে প্রিন্সটন থেকে অবসর নেওয়ার পর, লুইস ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
১৯৬৬ সালে, লুইস ছিলেন শিক্ষিত সমাজ মিডল ইস্ট স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্থ আমেরিকা (MESA) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। কিন্তু ২০০৭ সালে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ দ্য মিডল ইস্ট অ্যান্ড আফ্রিকা (ASMEA) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ইসরাইল ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার ভূমিকার সমালোচক শিক্ষাবিদদের আধিপত্যের কারণে MESA-কে চ্যালেঞ্জ জানাতে এ প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন বলে নিউইয়র্ক সান পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছিল।
১৯৯০ সালে, ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর দ্য হিউম্যানিটিজ লুইসকে জেফারসন লেকচারের জন্য নির্বাচিত করে, যা মানবিক ক্ষেত্রে অর্জনের জন্য মার্কিন ফেডারেল সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান। "ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন: আ ভিউ ফ্রম দ্য ইস্ট" শিরোনামের তার বক্তৃতাটি সংশোধিত হয়ে দ্য আটলান্টিক মান্থলিতে "দ্য রুটস অফ মুসলিম রেজ" শিরোনামে পুনঃপ্রকাশিত হয়। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটে দেওয়া তাঁর ২০০৭ ইরভিং ক্রিস্টল বক্তৃতা "ইউরোপ অ্যান্ড ইসলাম" হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল।