বিষয়বস্তুতে চলুন

বারকা-হালাকু যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বারকা-হালাকু যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিভাজন এবং গোল্ডেন হোর্ড‌-ইলখানাত যুদ্ধ
তারিখ১২৬২[]
অবস্থান
ফলাফল অমীমাংসিত
মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিভাজন
বিবাদমান পক্ষ
ইলখানাত গোল্ডেন হোর্ড‌
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
হালাকু খান,
আবাকা খান
বারকা খান,
নোগাই খান,
নেগুদার

বারকা-হালাকু যুদ্ধ মঙ্গোল নেতা গোল্ডেন হোর্ডে‌র বারকা খান এবং ইলখানাতের হালাকু খানের মধ্যে সংঘটিত হয়। ১২৫৮ সালে বাগদাদের পতনের পর ১২৬০ এর দশকে এই লড়াই সংঘটিত হয়েছে। মূলত কসেসাস পর্বতমালা অঞ্চলে এই লড়াই হয়েছে। সমসাময়িক কালে কুবলাই খানআরিক বোকের মধ্যে মঙ্গোল গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। গৃহযুদ্ধে কুবলাই খান হালাকু খানের সমর্থন পেয়েছিলেন। অন্যদিকে আরিক বোকেকে বারকা খান সমর্থন দেন। মংকে খানের মৃত্যুর পর উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য হালাকু খান মঙ্গোলিয়া ফিরে যান। এসময় সংঘটিত আইন জালুতের যুদ্ধে মঙ্গোলরা মামলুকদের কাছে পরাজিত হয়। এর ফলে মঙ্গোলরা মধ্যপ্রাচ্যে বেশি অগ্রসর হতে পারেনি। মামলুকদের বিজয়ের পর বারকা খান ইলখানাতে হামলা করতে উদ্বুদ্ধ হন। বারকা-হালাকু যুদ্ধ, মঙ্গোল গৃহযুদ্ধ এবং পরবর্তী কাইদু-কুবলাই যুদ্ধ মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিভাজনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

১২৫২ সালে বারকা ইসলাম গ্রহণ করেন। ১২৫৭ সালে উলাগচাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি গোল্ডেন হোর্ডে‌র নেতা হন। বারকা তার ভাই বাতু খানের মত মংকে খানের অনুগত ছিলেন।

পারস্য জয়ের পর হালাকু খান ১২৫৮ সালে বাগদাদ ধ্বংস করে ইরাককে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর তিনি মিশরের দিকে অগ্রসর হন। মুসলিম এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর কারণে বারকা খান হালাকু খানের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। হালাকু খানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থ সংগ্রহের জন্য তিনি নোগাই খানকে ১২৫৯ সালে পোল্যান্ডে সামরিক অভিযানে প্রেরণ করেন। এছাড়াও বারকা খান মিশরের সুলতান কুতুজ ও পরবর্তী সুলতান বাইবার্সে‌র সাথে মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন।

একই বছর চীনে অভিযানের সময় মংকে খান মারা যান। তাকে লেখা চিঠিতে বারকা খান উল্লেখ করেছেন: "সে (হালাকু) মুসলিমদের সব শহর ধ্বংস করেছে। আল্লাহর সহায়তায় আমি তার কাছ থেকে সকল নির্দোষের রক্তের হিসাব আদায় করব।" ক্ষুব্ধ হলেও বারকা খান মঙ্গোলদের মধ্যকার লড়াইকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলেছিলেন, "মঙ্গোলরা মঙ্গোলদের তলোয়ারের আঘাতে মারা যাচ্ছে। যদি আমরা একতাবদ্ধ হতাম তবে আমরা পুরো পৃথিবী জয় করতে পারতাম।"

যুদ্ধ

[সম্পাদনা]

হালাকু খান মঙ্গোলিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর ১২৬০ সালে সংঘটিত আইন জালুতের যুদ্ধে মঙ্গোলরা মামলুকদের কাছে পরাজিত হয়। এই খবর পাওয়ার পর হালাকু খান পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তৎপর হন। দুই বছর পর তিনি পারস্যে ফিরে আসেন। কিন্তু বারকা খানের কারণে তিনি মামলুকদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে পারেননি। বারকা খান পুনরায় নোগাই খানকে ককেসাস অঞ্চলে অভিযানে পাঠান। ফলে হালাকু খান নিজের সিংহভাগ বাহিনী নিয়ে সেদিকে মনোযোগী হন। একই সাথে বারকা খান ইলখানাতের অধীন পূর্ব আফগানিস্তান ও গজনি পুনরুদ্ধারের জন্য নেগুদারকা প্রেরণ করেন।[]

হালাকু খান তার ভাই কুবলাই খানের প্রতি অনুগত ছিলেন। ১২৬২ সালে বারকা খানের সাথে হালাকু খানের সংঘর্ষ শুরু হয়। বারকা খান মামলুকদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি কুবলাই খানের প্রতিপক্ষ আরিক বোকেকে সমর্থন দেন। কুবলাই খান গোল্ডেন হোর্ডে‌ হামলার জন্য আবাকা খানের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। অন্যদিকে আরিক বোকে ইলখানাতে হামলার জন্য নোগাই খানকে প্রেরণ করেন। এদের উভয় পক্ষই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল।[]

১২৬৪ সালে কুবলাই খানের কাছে আরিক বোকে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর গোল্ডেন হোর্ড‌চাগাতাই খানাত কুবলাই খানের বিজয় মেনে নেয়[] এবং কুবলাই সুং রাজবংশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি শুরু করেন।[]

ইলখানাতের মিত্র বাইজেন্টাইনদের হাতে মিশরীয় দূতদল বন্দী হওয়ার পর বারকা খান তার অধীনস্থ বুলগেরিয়ার মাধ্যমে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন যাতে দূতদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। আরিক বোকেকে সমর্থন করার কারণে কুবলাই খান বারকাকে গোল্ডেন হোর্ডে‌র খান হিসেবে লিখতে রাজি ছিলেন না। তবে বারকার বাবা জোচির পরিবারকে স্বীকার করা হয়েছিল।[]

খানাতের পশ্চিমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য হালাকু খানকে কুবলাই খান ৩০,০০০ সেনা দিয়ে সহায়তা করেছিলেন।[] ১২৬৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হালাকু খান মারা যাওয়ার পর বারকা খান তিফলিসের নিকটে অগ্রসর হন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনিও মারা যান। কয়েক মাস পরে চাগাতাই খানাতের আলগু খানও মারা যান। এসব মৃত্যুর ফলে পশ্চিম খানাতসমূহের উপর কুবলাই খানের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. The Mongols By David Morgan, pg. 144
  2. Early Mongol Rule in Thirteenth-Century Iran: A Persian Renaissance By George Lane, pg. 77
  3. Barthold, Turkestan down to the Mongol invasion, p. 446
  4. Weatherford, Genghis Khan and the making of the modern world, p. 120
  5. Atwood
  6. H.H.Howorth - History of the Mongols, section: Berke khan
  7. Rashid al-Din, Ibid