বাংলাদেশের মহাকাশ কর্মসূচি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলাদেশের মহাকাশ কর্মসূচি বলতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন মহাকাশ অভিযানকে বোঝায়। ১১ মে ২০১৮-এ বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ মার্কিন বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এছাড়া, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০০৮ সালে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এরপর ২০০৯ সালে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় রাষ্ট্রীয় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিটের (আইটিইউ) কাছে ইলেক্ট্রনিক আবেদন করে বাংলাদেশ। কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবস্থার নকশা তৈরির জন্য ২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ কে নিয়োগ দেওয়া হয়। স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনতে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তি করে বিটিআরসি। ২০১৫ সালে বিটিআরসি রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে।[১]

২০১৭ সালে কৃত্রিম উপগ্রহের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানী লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়। এই সংস্থার প্রাথমিক মূলধন হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

সংস্থা[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (সংক্ষেপে: স্পারসো) বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি ঢাকা শহরের আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। ১৯৮০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদানে এ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সংস্থাটি ল্যান্ডস্যাটNOAA নামক কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে ভূমি জরিপে নিয়োজিত। বাংলাদেশের উপগ্রহ চিত্রগুলো স্পারসোর তত্ত্বাবধানে থাকে।[২]

বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানী লিমিটেড[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ (যা সংক্ষেপে বিএস-১ নামে পরিচিত) পরিচালনার জন্য ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।[৩] এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম।[৪] প্রতিষ্ঠানটির মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও অর্থ) ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) শাহরীয়ার আহমেদ চৌধুরী বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. শাহ্‌জাহান মাহমুদ

মহাকাশযান[সম্পাদনা]

ব্র্যাক অন্বেষা[সম্পাদনা]

ব্র্যাক অন্বেষা হলো বাংলাদেশের প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট), যা ২০১৭ সালের ৪ জুন মধ্যরাত ৩টা ৭ মিনিটে একটি কার্গো রকেটের মাধ্যমে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সিআরএস-১১ অভিযানের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটিকে মহাকাশের ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।[৫] এরপর ৭ জুলাই ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সেন্টার থেকে এর নিজস্ব কক্ষপথে ছাড়া হয়।[৫] মহাকাশ থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, সাগর-পাহাড়, গ্রাম-নগর ইত্যাদির আলোকচিত্র ধারণ করা যাবে এই ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার[৬] উপরে অবস্থান করে প্রতিদিন ১৬ বার সমস্ত পৃথিবীকে এবং প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ বার বাংলাদেশকে প্রদক্ষিণ করবে।[৭]

বঙ্গবন্ধু-১[সম্পাদনা]

বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এটি ২০১৮ সালের ১১ মে (বাংলাদেশ সময় ১২ মে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।[৮] এর মধ্য দিয়ে ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ। এই প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয় এবং এটি ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটের প্রথম পণ্য উৎক্ষেপণ ছিল।

বঙ্গবন্ধু-২[সম্পাদনা]

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এর আগে ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি ২০২৩ সালে উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল।[৯][১০][১১][১২]

ফেমটো[সম্পাদনা]

২০২৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম চন্দ্র মহাকাশযান "ফেমটো" উৎক্ষেপণ করা হবে।[১৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কক্ষপথ কিনল বাংলাদেশ"প্রথম আলো। ১৫ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৮ 
  2. "স্পারসো - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৫ 
  3. "বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পরিচালনায় কোম্পানি হচ্ছে"দৈনিক প্রথম আলো। ৪ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৮ 
  4. "কর্মকর্তাবৃন্দেরতালিকা"www.ptd.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৫ 
  5. "'ব্র্যাক অন্বেষা' কক্ষপথে ছাড়া হচ্ছে আজ"jagonews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৮ 
  6. দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট প্রস্তুত, দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
  7. "Contract signing Ceremony of Nation's First Nano Satellite project at BRAC University"BRAC। BRAC University। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  8. কাজী, হাফিজ; সাবেদ প্রথমাংশ2=সাথী। "বিশ্ব কাঁপিয়ে মহাবিশ্বে"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১২ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৮ 
  9. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "২০২৩ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৬ 
  10. "Bangabandhu-2 satellite has to be launched within 2023: Jabbar"New Age | The Most Popular Outspoken English Daily in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৬ 
  11. "Bangladesh to launch Bangabandhu Satellite-2 in 2023"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৬ 
  12. "Govt to launch Bangabandhu Satellite-2 by 2023"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-১০-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১৬ 
  13. "ISRO-র অনুকরণ! এবার চাঁদে যাবে বাংলাদেশেরও স্যাটেলাইট, নয়া ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে পড়শিদেশ"Bangla Hunt। ২০২৩-০৮-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০১ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]