বহুগামিতা (বৈবাহিক সম্পর্ক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

একাধিক বিবাহ বা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনই বহুবিবাহ (অন্য কথায় বহুগামিতা) বলে স্বীকৃত। একজন পুরুষ যখন একাধিক নারীকে বিয়ে করে, তা বুঝাতে সমাজবিজ্ঞানীগণ polygyny শব্দটি ব্যবহার করেন। একজন মহিলা যখন একাধিক পুরুষকে বিয়ে করে, তা বুঝাতে সমাজবিজ্ঞানীগণ polyandry শব্দটি ব্যবহার করেন। কিন্তু বাংলায় দুটো শব্দের জন্য আলাদা প্রতিশব্দ না থাকায় ঢালাওভাবে বহুবিবাহ বলা হয়। উল্লেখ্য যে সাম্প্রতিক সময়ে শব্দ দুটির আলাদা প্রতিশব্দ করা হয়েছে যথাক্রমে বহুপত্নীকতা (বহুজায়া) এবং বহুনবতা (বহুশ্বর)। বিবাহের মধ্যে যদি একাধিক স্বামী এবং স্ত্রী অন্তর্ভুক্ত থাকে তবে তাকে দলগত বিবাহ বা গুচ্ছ বিবাহ বলা হয়।

রকমভেদ[সম্পাদনা]

বহুগামীতার তিনটি নির্দিষ্ট রূপ রয়েছে-

  • বহুপত্নীকতা বা বহুজায়া: একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী বিদ্যমান থাকা
  • বহুনবতা বা বহুশ্বরতা: একজন মহিলার একাধিক স্বামী বিদ্যমান থাকা
  • গুচ্ছ বিয়ে: একই পরিবারে একাধিক স্বামী ও স্ত্রী বিদ্যমান থাকা

বহুপত্নীকতা[সম্পাদনা]

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

Postcard photo of Prince Manga Bell seated for portrait with four women nearby, possibly late-19th century style
Prince Manga Bell and favorite wives

বহুগামীতার একটি পরিচিত রূপ হলো বহুপত্নীকতা। বহুপত্নীক বিবাহবন্ধন সাধারণত একজন স্বামী ও একাধিক স্ত্রীর সমন্বয়ে গড়ে উঠে। অধিকাংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাষ্ট্র ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বহুবিবাহের বৈধতা দেয়। কিছু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রও এর বৈধতা দিয়েছে। অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় আফ্রিকা মহাদেশে বিশেষত পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে এর বিস্তৃতি ব্যাপক [১]। এর কারণ হিসেবে পণ্ডিতগণ আফ্রিকায় নারী-পুরুষের সাংখ্যিক অনুপাত এবং দাসপ্রথাকেই দায়ী হিসেবে উল্লেখ করছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] নৃতত্ত্ববিদ জ্যাক গুডি এথনোগ্রাফিক এটালাস ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বিবাহের তুলনামূলক গবেষণায় উপ-সাহারান আফ্রিকান সমাজগুলির ক্ষেত্রে ব্যাপক খামার বাগান এবং বহুগামিতার মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক প্রদর্শন করেন। [২]

বহুনবতা[সম্পাদনা]

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

বহুবিবাহ সম্পর্কে সমসাময়িক ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি[সম্পাদনা]

হিন্দুধর্ম[সম্পাদনা]

ঋগ্বেদ হতে জানা যায় যে বৈদিক যুগে বহুবিবাহের(বহুপত্নীকতা) প্রচলন ছিলো।[৩] রামায়ণ ও মহাভারতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ধর্মশাস্ত্র একজন পুরুষকে তার অপেক্ষা নিম্নবর্ণের একাধিক নারীকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়, তবে প্রথম স্ত্রী অবশ্যই সমবর্ণের হতে হয়। বৈদিক যুগে এর প্রচলন থাকলেও তা শুধু উচ্চবর্ণীয় হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সাধারণ হিন্দু পুরুষগণ কেবলমাত্র প্রথম স্ত্রী বন্ধ্যা বা সন্তানদানে অপারগ হলেই দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি পেত।[৪]

ইসলামধর্ম[সম্পাদনা]

বৌদ্ধধর্ম[সম্পাদনা]

বৌদ্ধধর্মে বিয়েকে ধর্মসংস্কার বলে ধরা হয় না। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাপার এবং ভিক্ষুকরা এতে অংশগ্রহণ করে না, যদিও কিছু সম্প্রদায়ের পুরোহিত ও ভিক্ষুক বিয়ে করে। তাই এটি কোন ধর্মীয় অনুমোদন পায়নি।[৫] বিয়ের ধারণা, সংস্কার ও সংস্কৃতি এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন হয়। Parabhava Sutta তে বলা হয়েছে যে "একজন পুরুষ যিনি একজন মহিলার সাথে সন্তুষ্ট না এবং অন্যান্য মহিলাদের পেতে চায় সে পথভ্রষ্ট"। কিছু লেখক এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে বৌদ্ধধর্ম সাধারণত বহুবিবাহের অনুমোদন দেয় না[৬] অথবা এটিকে একটি সহনশীল কিন্তু নিচুতলার বৈবাহিক পদ্ধতি বলে মনে করে। [৭] ২০১০ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডে বহুবিবাহ বৈধ বলে স্বীকৃত ছিল। ২০১৫ সালে মিয়ানমারে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Clignet, Remi, Many Wives, Many Powers, Northwestern University Press, Evanston (1970), p. 17.
  2. Goody, Jack (১৯৭৬)। Production and Reproduction: A Comparative Study of the Domestic Domain। ক্যামব্রিজ: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ২৭–২৯। 
  3. MacDonell, Arthur Anthony; Keith, Arthur Berriedale (১৯৯৫)। Vedic Index of Names and Subjects, Volume 1; Volume 5। পৃষ্ঠা 478। আইএসবিএন 9788120813328 
  4. James g. Lochtefeld, Ph.D (২০০১-১২-১৫)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: N–Z। পৃষ্ঠা 514। আইএসবিএন 9780823931804 
  5. "Accesstoinsight.org"। Accesstoinsight.org। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  6. The Ethics of Buddhism, Shundō Tachibana, Routledge, 1992, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭০০৭-০২৩০-৫
  7. An introduction to Buddhist ethics: foundations, values, and issues, Brian Peter Harvey, Cambridge University Press, 2000, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২১-৫৫৬৪০-৮