বলিদান (চলচ্চিত্র)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বলিদান
বলিদান এর ডিভিডি কভার
পরিচালকতুলসী ঘিমিরে
প্রযোজকশ্যাম সাপকোটা
রচয়িতামদনাথ প্রাস্রিত
শ্রেষ্ঠাংশেহরি বংশ আচার্য
অঞ্জলি লামা
মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠা
শান্তি মাস্কে
কেশব ভট্টরাই
লক্ষ্মী গিরি
নীর শাহ
প্রযোজনা
কোম্পানি
সিনেমা নেপাল
পরিবেশকপশুপতি রেকর্ডস
মুক্তি
  • ১৯৯৭ (1997)
দেশনেপাল
ভাষানেপালি

বলিদান হল ১৯৯৭ সালের একটি নেপালি ঐতিহাসিক নাট্য চলচ্চিত্র, এর পরিচালনায় ছিলেন তুলসী ঘিমিরে এবং লেখক মদনাথ প্রাস্রিত। সিনেমা নেপালের হয়ে এটি প্রযোজনা করেছিলেন শ্যাম সাপকোটা। চলচ্চিত্রটি নেপালের পঞ্চায়েত যুগের ঘটনা নিয়ে, এবং এখানে সমসাময়িক গণতন্ত্র আন্দোলনের একটি কাল্পনিক ঘটনা চিত্রিত করা হয়েছে। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হরি বংশ আচার্য, তাঁর সাথে আরও ছিলেন অঞ্জলি লামা, মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠা, শান্তি মাস্কে, কেশব ভট্টরাই, লক্ষ্মী গিরি এবং নীর শাহ। চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক এবং বাণিজ্যিক উভয় দিকেই সাফল্য পেয়েছিল।

২০০৫ সালে, এই ছবিতে নেপালের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে তুলে ধরার জন্য, নেপালের রাজা জ্ঞানেন্দ্রের নেতৃত্বাধীন স্বল্পকালীন স্বৈরতান্ত্রিক সরকার বলিদানকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল।

ঘটনা[সম্পাদনা]

একদিন একটি ক্যাম্পাসে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বিরোধের পরে একজন বিপ্লবী মারা যায়। বিপ্লবী গোষ্ঠীর নেতা বিক্রম (বি. এস. রানা), মৃত বিপ্লবীর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং পুলিশের থেকে বাঁচার অন্যান্য বিপ্লবীদের লুকিয়ে থাকতে বলে। বিপ্লবীরা নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সংগীতা (অঞ্জলি লামা) সিরানী গ্রামে পৌঁছোয়। সেখানে এক তরুণ ছাত্র অর্জুনের (হরি বংশ আচার্য) সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়। সংগীতা তাকে জানায় যে বিক্রমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অর্জুন তাদের গানের মাধ্যমে অন্যদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য তাদের কর্মসূচিতে কাজ শুরু করে।

এই দলটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অর্জুন ও সংগীতা আরও একটি গ্রামে যায়, সেখানে গণতন্ত্র সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে। রাস্তায়, একজন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনের (মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠা) সঙ্গে তাদের দেখা হয়। তাদের পরিকল্পনায় ক্যাপ্টেন ভরসা করতে পারেনি। ক্যপ্টেন গ্রামের প্রধানকে রাজী করার চেষ্টা করে, যাতে গ্রামে আন্তঃবর্ণ বিবাহের অনুমতি পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রামের প্রধান এই প্রস্তাব মেনে নেয় নি। ক্যাপ্টেন তখন বিপ্লবী গোষ্ঠীকে বলে গ্রামে একটি আন্তঃবর্ণের বিবাহের ব্যবস্থা করতে, যাতে গ্রামের প্রধানকে প্রত্যয় দেওয়া যায়। অর্জুন এবং সংগীতা পরষ্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু দলের আরও এক সদস্য গোপনে সংগীতাকে ভালবাসত। সে দলটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং পুলিশকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেয়।

অর্জুন গ্রেপ্তার হয় এবং বরিষ্ঠ পুলিশ ইন্সপেক্টর কর্ণ (নীর শাহ) তার ওপর অত্যাচার করে। আদালতের বিচারে তার দশ বছরের জেল হয়। আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়, যে মন্ত্রী তার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিল অর্জুন তার উপরে থুতু ফেলে। পরে, কর্ণ অর্জুনের বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়। অফিসার তাকে প্রস্তাব দেয় যে বিপ্লবী গোষ্ঠীতে জড়িতদের নাম প্রকাশ করলে তারা তাকে মুক্তি দেবে, কিন্তু অর্জুন তা প্রত্যাখ্যান করে। যখন অর্জুনকে পাল্পা জেলে স্থানান্তরিত করা হচ্ছিল, সে পুলিশের গাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ তখন বিপ্লবীদের সঙ্গে লড়াই শুরু করে এবং অর্জুন মারা যায়। লড়াইয়ের দৃশ্যে সংগীতা একটি সন্তানের জন্ম দেয় এবং অর্জুন জাতির জন্য নিজের জীবন দিয়েছে এমন একটি গানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি শেষ হয়।

চরিত্র চিত্রণ[সম্পাদনা]

  • হরি বংশ আচার্য- অর্জুন চরিত্রে
  • অঞ্জলি লামা- সঙ্গীতা চরিত্রে
  • কেশব ভট্টরাই- কেশব চরিত্রে
  • বি. এস. রানা- বিক্রম চরিত্রে
  • নীর শাহ- এসপি কর্ণ ধজ চরিত্রে
  • মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠা- অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন চরিত্রে
  • লক্ষ্মী গিরি- অর্জুনের মা চরিত্রে
  • রাজরাম পাউদেল- পুলিশ অফিসার চরিত্রে
  • রামচন্দ্র অধিকারী- হাবিলদার চন্দ্র বাহাদুর চরিত্রে
  • কিরণ কে.সি.- বোহোরা চরিত্রে
  • রাম কৃষ্ণ বাজগাইন- সাগর চরিত্রে
  • শান্তি মাস্কে- সুমিতার মা চরিত্রে

সাউন্ডট্র্যাক[সম্পাদনা]

অরিজিনাল মোশন পিকচার সাউন্ডট্র্যাক[১][২]
নং.শিরোনামগীতিকারসুরকারSinger(s)দৈর্ঘ্য
১."আয়ায়ু আয়ায়ু"রমেশ শ্রেষ্ঠারমেশ শ্রেষ্ঠারমেশ শ্রেষ্ঠা, মনোজ গজুরেেল২:৫৫
২."চামেলি"রমেশ শ্রেষ্ঠারমেশ শ্রেষ্ঠালোচন ভট্টরাই৩:২১
৩."গৌন গৌনবাটা উথা"  রমেশ শ্রেষ্ঠা, ওম শ্রেষ্ঠা, সুনিতা সুব্বা৪:৪৪
৪."হামরো আদম্য ক্রান্তি" রমেশ শ্রেষ্ঠারমেশ শ্রেষ্ঠা, ওম শ্রেষ্ঠা, লোচন ভট্টরাই৭:১০
৫."হামরো নেপালমা"  রমেশ শ্রেষ্ঠা, ওম শ্রেষ্ঠা৩:০৮
৬."হোররা"চেতনারায়ণ রাইচেতনারায়ণ রাইচেতনারায়ণ রাই, মনোজ গজুরেেল৫:৫৫
৭."রক্ত ক্রান্তিকো জ্বলামুখী" রমেশ শ্রেষ্ঠারমেশ শ্রেষ্ঠা, কুমার কাঞ্ছা, লোচন ভট্টরাই৩:৪১

নিষেধাজ্ঞা[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রটি ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল।[৩] ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে, নেপালের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ঘটনা তুলে ধরার জন্য নেপাল সরকার এটি নিষিদ্ধ করেছিল।[৩][৪][৫][৬] টু সার্কেলস এর সুদেষ্ণা সরকার লিখেছিলেন: "বলিদান নেপালের কমিউনিস্ট আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরেছে, পাঁচ বছর আগে যখন রাজা জ্ঞানেন্দ্র সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করেছিলেন এবং নেপালের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের জেলবন্দি করেছিলেন তখন এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল"।[৭] "গৌন গৌনবাটা উথা" গানটি নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (একীকৃত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) গ্রহণ করেছিল।[৩] এটি পূর্বে পঞ্চায়েত যুগে মুক্তি পেয়েছিল, যেটির রচয়িতা ছিলেন শ্যাম তমোট, রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও নেপাল থেকে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[৮] বলিদান চলচ্চিত্রটি অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এর বিপ্লবী বিষয়বস্তুর জন্য এবং মন ছুঁয়ে যাওয়া গানের জন্য এটি দর্শকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল।[৯]

২০১৫ সালের মে মাসে, চলচ্চিত্রটি উপগ্রহ টেলিভিশন স্টেশন ডিশ হোম এ প্রদর্শিত হয়েছিল।[১০]

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

নেপালি সংসার এর কর্মীরা চলচ্চিত্রটিকে চিনো, দর্পণ ছায়া, কুসুম রুমাল, লহুরে, এবং দেশ এর মত "সেরা নেপালি চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি" হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।[১১]রিপাবলিকা কমাল সুবেদী বলেছিলেন: "বলিদান হল সর্বকালের অন্যতম সফল চলচ্চিত্র"।[১২] বস নেপালের কর্মীরা লিখেছিলেন: "আপনি যদি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় নেপালের লোকদের মধ্যে কী ছড়িয়ে গিয়েছিল তার এক ঝলক পেতে আগ্রহী হন তবে এই চলচ্চিত্রটি দেখা উচিত"।[১৩] লা.লিট এর কর্মীরা লিখেছিলেন: "বলিদান, [...] পঞ্চায়েতের পতন এবং মাওবাদী বিপ্লব শুরুর মধ্যে নিখুঁতভাবে স্থিত সহানুভূতি উদ্রেককারী"।[১৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Balidan"Music Nepal। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  2. "Balidaan by Ramesh Shrestha"Gaana। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  3. "THT 10 YEARS AGO: How do you like your tea, biscuity or fruity?"The Himalayan Times। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  4. Kordecki, Anya। "Kollywood: The Essential Films of Nepal"Culture Trip। ৮ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  5. "Delhi Belly gives Nepal censors bellyache"The Times of India। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  6. Mottin, Monica (৯ মার্চ ২০১৮)। Rehearsing for Life: Theatre for Social Change in Nepal (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 114। আইএসবিএন 978-1-108-41611-5। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  7. Sarkar, Sudeshna (১০ জানুয়ারি ২০১০)। "Nepal's India-trained director bridges divide with his art"TwoCircles.net। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  8. "Nepathya release a version of Gaun Gaun Bata Utha"kathmandupost.com। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  9. Sight, Sound & Pulse (ইংরেজি ভাষায়)। Nepal Press Institute with the support of DANIDA। ২০০২। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  10. "डीसहोममा अब नेपाली चलचित्र, शनिबार 'बलिदान' प्रशारण हुने"Online Khabar (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  11. "A Quick Glance at Nepali Cinema: Box Office 2018"Nepali Sansar। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  12. Subedi, Kamal। "10 Nepali movies you should watch during lockdown"My Republica। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  13. "Balidan, sacrifice for the country"Boss Nepal। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  14. "Uma: between meditation and melodrama"La.Lit। ১৩ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]