ফজল-এ-খোদা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফজল-এ-খোদা
লেখক, সম্পাদক
জন্ম(১৯৪১-০৩-০৯)৯ মার্চ ১৯৪১
বনগ্রাম, বেড়া থানা, পাবনা
মৃত্যু৪ জুলাই ২০২১(2021-07-04) (বয়স ৮০)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাকবি, গীতিকার, শিশু সাহিত্যিক, সংগঠক,পত্রিকা সম্পাদক
দাম্পত্য সঙ্গীমাহমুদা সুলতানা
সন্তানওয়াসিফ-এ-খোদা, ওনাসিস-এ-খোদা ও ওয়েসিস-এ-খোদা
ওয়েবসাইটhttps://fazlekhuda.com/

ফজল-এ-খোদা (৯ মার্চ ১৯৪১- ৪ জুলাই ২০২১) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, গীতিকার, ছড়াকার ও পত্রিকা সম্পাদক।[১] বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় সেরা ২০ গানের মধ্যে ফজল-এ-খোদার লেখা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম গানটি’ ১২তম স্থান পেয়েছিল।[২] তিনি বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক ছিলেন। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২৩ সালে একুশে পদক প্রদান করে। [৩]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

ফজল-এ-খোদা ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মা মোসাম্মাত জয়নবুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি প্রথম সন্তান ছিলেন। মাত্র দশ বছর বয়সে বাবাকে হারান। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। ১৯৬১ সালে পাবনার বনগ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন। [৪]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ফজল-এ-খোদা তৎকালীন পাকিস্তান বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে ১৯৬৩ সাল থেকে কর্মজীবন শুরু করেন। পরের বছর তিনি পাকিস্তান টেলিভিশনেও তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭১-এ অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তাঁর লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে। ২৫ মার্চের ক্রাকডাউনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী টেলিভিশন থেকে গানটি জব্দ করে। [৪] ফজল-এ-খোদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ২ নম্বর সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ফজল-এ-খোদা সে সময় রেডিও পাকিস্তানে কাজ করতেন। যুদ্ধে যাওয়ার পর কাজে অনুপস্থিত থাকার কারণ দেখিয়ে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল।

ফজল-এ-খোদার লেখা এবং মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের সুরারোপ করা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি ২০০৬ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০ গানের তালিকায় ১২তম স্থান পায়।[৪] এছাড়াও লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’, ‘বউ কথা কও পাখির ডাকে ঘুম ভাঙরে’, ‘খোকনমণি রাগ করে না’ ইত্যাদি।[৪]

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ১৯৭৫ সালের ৩ অক্টোবর ফজল-এ-খোদা’কে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ‘বঙ্গবন্ধু বেতার কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগ আনা হয়। কিছুদিন পর তিনি এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেও বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে চাকুরি জীবনে নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার যখন, তখন তিনি বেতারে কাজ করেন। বাংলাদেশ বেতার হয়ে গেল রেডিও বাংলাদেশ। সরকারি কর্মচারী হয়েও ফজল-এ-খোদা লিখলেন এক কাব্যিক প্রতিবাদ ‘এমন তো কথা ছিল না...’। বশীর আহমেদের সুর আর মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদার সেই গানটি ছিল ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহঙ্গ/ সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিল না’।[৫] ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে রচিত এবং প্রচারিত এই গানটি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ও গাওয়া প্রথম গান। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তার হত্যায় ব্যথিত হয়ে ফজল-এ-খোদা নিজের দুঃখ-কষ্ট-ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই গানের মাধ্যমে।[৬]

ফজল-এ-খোদা ছড়াকার, সংগঠক ছিলেন। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। শিশুদের কাছে তিনি মিতাভাই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্তর দশকে তিনি শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রকাশিত 'বেতার বাংলা'র সম্পাদক ছিলেন তিনি।

তার লেখা ১০টি ছড়াগ্রন্থ, ৫টির কবিতার গ্রন্থসহ তার মোট ৩৩টি বই প্রকাশিত হয়।[৭]

কবিতা ও গানের বই

  • সূর্য স্বর্ণ দ্বীপ \ কবিতা ১৯৬৮
  • মোক্তারপাড়া \ নাটক ১৯৭০
  • সঙ্গীতা \ গান ১৯৭৩
  • বিতর্কিত জ্যোৎস্না \ কবিতা ১৯৭৩
  • সানাই \ ছড়া ১৯৭৬
  • ইসলামী গান \ ভক্তিমূলক গান ১৯৮০
  • প্রাসঙ্গিকী \ শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত প্রবন্ধ ১৯৮৩
  • নামে যার কেঁপে ওঠে \ কবিতা ১৯৯০
  • মন্দিরা \ দেশপ্রেমের গান ১৯৯৭
  • গান \ নির্বাচিত গান ১৯৯৭
  • বন্দেগি \ ইসলামি গান ২০০২
  • তাড়া করে অশুভ সময় \ কবিতা ২০০৮
  • কাজল মাটির গান \ লোকধারার গান ২০১২
  • সংগীতভাবনা \ প্রবন্ধ ২০১২
  • নির্জন পঙক্তিমালা \ কবিতা ২০১৪
  • আলো ছায়ার জোয়ার ভাটা \ স্মৃতিগদ্য ২০১৫
  • সভ্যতার চন্দ্রবিন্দু \ কবিতা ২০১৯
  • শিশু-কিশোরদের জন্য রচিত বই
  • মিতাভাইয়ের আসর \ গীতি-নৃত্য-নাট্য ১৯৭৭
  • ফুলপাখিদের গান \ ছোটদের গান ১৯৮৬
  • যমযম \ আরবি অক্ষরভিত্তিক ছড়া ১৯৮৯
  • আড়ি \ ছড়া ১৯৯০
  • টুনটুনি \ ছড়া ১৯৯০
  • নাটক নাটক \ দুটি নাটক ২০০০
  • জয় মুক্তিযুদ্ধ \ ছড়া-কবিতা ২০০৭
  • রবীন্দ্র নজরুল বঙ্গবন্ধু জয়নুল \ গল্প ২০০৭
  • জাগল বাঙালি জাগল \ কবিতা ২০১০
  • নটে গাছটি মুড়ালো \ ছড়া-কবিতা ২০১০
  • রয়েল বেঙ্গল \ বড়ো গল্প ২০১১
  • জয় ছড়ার জয় \ ছড়া ২০১২
  • আড়ং \ ছড়া-কবিতা ২০১২
  • ছড়াকলাকার \ ছড়াকারদের নিয়ে ছড়া ২০১৩
  • বাংলার ছড়া বাঙালির ছড়া \ ছড়া ২০১৪
  • সালাম সালাম হাজার সালাম \ গানের চিত্রায়ন ২০১৫

সম্পাদনা গ্রন্থ

  • প্রেম পিরীতি \ প্রেমের কবিতা ১৯৯৬
  • ঈদের গান \ ঈদভিত্তিক গান ২০০৪

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ফজল-এ-খোদা ৪ জুলাই ২০২১ সালে (২০ আষাঢ়, ১৪২৮ বঙ্গাব্দে) রোববার ভোর চারটায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৮১ বছর বয়সে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গভীর ডিমেনশিয়া ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন।[২] ঢাকার রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়া হয়।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "গীতিকার ফজল-এ-খোদা ইন্তেকাল করেছেন"ইত্তেফাক। ৯ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২১ 
  2. "'সালাম সালাম হাজার সালাম' গানের গীতিকারের মৃত্যু"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২১ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনসহ ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে একুশে পদক"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৩ 
  4. প্রতিবেদক, বিনোদন। "করোনায় মারা গেলেন 'সালাম সালাম হাজার সালাম' গানের গীতিকার"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২১ 
  5. মনজুরুল আহসান বুলবুল। "ফজল–এ –খোদার প্রতি হাজার সালাম"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২১ 
  6. ""সালাম সালাম হাজার সালাম" গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা ভালো নেই"যমুনা টিভি। ২০ মার্চ ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২২ 
  7. "কোভিডে গীতিকার ফজল-এ-খোদার মৃত্যু"bangla.bdnews24.com। ৪ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২১