পিপলাই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পিপলাই
Chestnut Bob
ডানা বন্ধ অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Hesperiidae
গণ: Iambrix
প্রজাতি: I.salsala
দ্বিপদী নাম
Iambrix salsala
(Moore, 1865)[১]
প্রতিশব্দ

Astictopterus salsala

পিপলাই (বৈজ্ঞানিক নাম: Iambrix salsala (Moore))[২] এক প্রজাতির ছোট আকারের প্রজাপতি যার শরীর ও ডানা লালচে বাদামী রঙের এবং ডানায় সাদা ফুটকি দেখা যায়। এরা ‘হেসপেরায়িডি’ গোত্রের এবং 'হেসপেরায়িনি' উপগোত্রের সদস্য।[৩]

আকার[সম্পাদনা]

পিপলাই এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ২৬-৩০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[২][৪]

উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]

ভারতে প্রাপ্ত পিপলাই এর উপপ্রজাতিসমূহ হল-[৫]

  • Iambrix salsala salsala Moore, 1865 – ইস্টার্ন পিপলাই (Eastern Chestnut Bob)
  • Iambrix salsala luteipalpis Plötz, 1886 – Southern Chestnut Bob

বিস্তার[সম্পাদনা]

পিপলাইদের কুমায়ুন থেকে আসাম অঞ্চল[৬] পর্যন্ত দেখা যায়। এছাড়া মায়ানমার, মালয়, সুমাত্রা এবং জাভা তেও এদের খুব দেখা যায়। [৭]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

এই প্রজাতির পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়ের ডানার বর্ণ কালচে বাদামী এবং তার সাথে উজ্জ্বল জলপাই-বাদামী।[৮]

পুরুষ[সম্পাদনা]

সামনের ডানার উপরিপৃষ্ঠ দু-তিনটি অস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হলদেটে ছোপ, পশ্চাতবর্তী প্রান্তরেখার মাঝ বরাবর অবস্থান থেকে তীর্যকভাবে উপরিদিকে বিস্তৃত রয়েছে।[৯]

স্ত্রী[সম্পাদনা]

সামনের ডানার উপরিতলে তীর্যক একসারি ক্ষুদ্র অর্ধ-সচ্ছ সাদা ছোপ লক্ষ্য করা যায়। এই সাদা ছোপগুলি কম-বেশি স্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান এবং নিচের দিকে একটি অস্পষ্ট হলদেটে ছোপ এর কাছে এসে এই সাদা ছোপের সারি শেষ হয়। সামনের ডানার নিম্নপৃষ্ঠ লালচে-বাদামী অথবা পিঙ্গল বর্ণের এবং ডিসক্যাল অংশ পিঙ্গল বর্ণের উপর কালো রঙের ছাওয়া। কতকগুলি ছোট সাদা ছোপ দেখা যায় যার একটি সেল এর বহিঃপ্রান্তে অবস্থিত এবং অন্য দু-তিনটি তেরচাভাবে একটু দূরে অবস্থিত। পিছনের ডানার নিম্নপৃষ্ঠে ডিস্কে আড়াআড়ি ভাবে তিনটি সাদা ছোপের একটি বাঁকানো সারি চোখে পড়ে। সিলিয়া ধূসর বাদামী বর্ণের, দেহ পাল্পি এবং পা এর নিম্নভাগ হলদেটে।

Mr. de Niceville বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি A. salsala এবং A. stellifer প্রজাতিকে অনুরূপ বলে গণ্য করেছেন; যদিও Mr. Moore জানিয়েছেন যে A. salsala প্রজাতির স্ত্রী এর ডিসক্যাল অংশে সাতটি সাদা ছোপের একটি বাঁকানো অথবা বক্র সারি দেখা যায় এবং নিচের দিকে দুটি কমলা-হলুদ ডিসক্যাল ছোপ লক্ষ্য করা যায়। Mr. Moore এর মতে A. salsala প্রজাতি A. stellifer অপেক্ষা বৃহদাকার। Mr. Elwes এর মতে আবার উক্ত দুটি প্রজাতিই অনুরূপ। সিকিমএ প্রাপ্ত নমুনাগুলি সামনের ডানায় উপস্থিত ছোপের নিরিখে বিশেষভাবে ভিন্ন- এদের ক্ষেত্রে ছোপগুলি কখনো সাদা, কখনো লালচে-বাদামী অথবা পিঙ্গল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে A. stellifer এর ডানায় এই ছোপগুলি অনুপস্থিত।

Edward Yerbury Watson লিখেছেন যে তিনি এই প্রজাতির অসংখ্য নমুনা পেয়েছেন। রেংগুন, বেলিং, আপার টেনাসেরিম, চেন্নাই, কাদুর জেলা এবং মহিশূরে এই সকল নমুনাগুলি ডানার উপরি এবং নিম্ন উভয় পৃষ্ঠে প্রাপ্ত ছোপগুলির স্পষ্টতার নিরিখে বিশেষরকম ভিন্নতাযুক্ত। তিনি আরো বলেছেন যে, তিনি এমন কোনো নিশ্চিত অথবা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট খুঁজে পাননি যার দ্বারা এদেরকে A. salsala এবং A. stellifer এই দুটি প্রজাতিকে আলাদা করে ভাগ করতে পারেন।[১০]

আচরণ[সম্পাদনা]

পিপলাই দের বাঁশ বাগানের প্রান্তে ঝোপঝাড়ে, পথের পাশে গাছের উপরে দেখা যায়। এরা দ্রুত এবং ছোট উড়ান দেয়, মাটির কাছাকাছি ওড়ে।[১১] বসার সময় সামনের পা জোড়া গুটিয়ে ভাঁজ করে শরীরের সাথে সেঁটে রাখে।[২] এদের ফুলে বসতে দেখা যায়।[১২] ছোট ছোট ফুল এদের খুব প্রিয় যেমন- Leea indica[১৩] এরা কখনও কখনও ভিজে দেওয়ালে বসে বিশ্রাম নেয় এবং ভেজা মাটিতে বসে রস পান করে। [১৪]

মধু সংগ্রহকারী উদ্ভিদ[সম্পাদনা]

পিপলাই দের Phaulopsis dorsiflora, Sida rhombifolia, Dicliptera sp. এবং Polygonum sp. ইত্যাদি উদ্ভিদের ফুলের মধু পান করতে দেখা যায়।[১৫]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

ডিম[সম্পাদনা]

পিপলাই এর ডিম গাঢ় লাল বর্ণের হয়। এরা সাধারনত ঘাসের ফলকের ডগায় ডিম পাড়ে।[২]

শূককীট[সম্পাদনা]

শূককীটগুলি হলদেটে সবুজ রঙের এবং দেহের উপর গাঢ় সবুজ রঙের লম্বালম্বি দাগ ও ফুটকি দেখা যায়। এদের শরীরের মাঝের অংশটি চওড়া এবং দু'ধার ক্রমশ সরু হয়ে এসেছে। এদের মাথাটা বড় আকারের এবং তেকোনা আকৃতির। শূককীটের সারা দেহে রোঁয়া আছে এবং রোঁয়াগুলি দেহের পিছনের দিকের তুলনায় সামনের দিকের অংশে বড় আকারের দেখা যায়।[২]

আহার্য উদ্ভিদ[সম্পাদনা]

এই শূককীট বিভিন্ন ধরনের ঘাস, মূলতঃ বাঁশ[৪][১৬] যেমন- Bambusa bambos,Setaria barbata[১৭][১৮] গাছের কচি পাতার রসালো অংশ আহার করে।

মূককীট[সম্পাদনা]

মূককীট কালচে বাদামী বর্ণের হয় এবং এদের দেহে রোঁয়া দেখা যায়।

জীবনচক্রের চিত্রশালা[সম্পাদনা]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Iambrix salsala[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] in LepIndex. Accessed 12 October 2007.
  2. দাশগুপ্ত, যুধাজিৎ (২০০৬)। পশ্চিমবঙ্গের প্রজাপ্রতি (১ম সংস্করণ সংস্করণ)। কলকাতা: আনন্দ। পৃষ্ঠা 161। আইএসবিএন 81-7756-558-3 
  3. Murugesan, S.। "Patterns of butterfly biodiversity in three tropical habitats of the eastern part of Western Ghats"। Journal of research in Biology (2011)। পৃষ্ঠা 217-222। 
  4. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা 306। 
  5. "Iambrix salsala Moore, 1865 – Chestnut Bob"। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৬ 
  6. Alagumurugan, C.। "Seasonal and relative abundance of butterflies in a scrub jungle habitat of Peraiyur Taluk, Madurai District, Tamilnadu."। Journal of research in Biology (2011)। পৃষ্ঠা 44-50। 
  7. Xavier, A.। "Butterfly fauna of Government arts and science college campus,Kozhikode,Kerala(India)" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 2263-2264। আইএসএসএন 0973-2535। ৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৬ 
  8. Beccaloni, George; Scoble, Malcolm; Kitching, Ian; Simonsen, Thomas; Robinson, Gaden; Pitkin, Brian; Hine, Adrian; Lyal, Chris। "The Global Lepidoptera Names Index (LepIndex)"। Natural History Museum, London। 
  9. Isaac, Kehimkar (২০১৬)। BHNS Field Guides Butterflies of India। Mumbai: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 102। আইএসবিএন 9789384678012 
  10. Edward Yerbury Watson (1891) Hesperiidae indicae. Vest and Co. Madras.
  11. Kunte, Krushnamegh (২০১৩)। Butterflies of The Garo Hills। Dehradun: Samrakshan Trust, Titli Trust and Indian Foundation of Butterflies। পৃষ্ঠা 7। 
  12. Santosh et al.,, M.। "Diversity of Flower visiting insects of crops in Bangladesh" (পিডিএফ)The Journal of Tropical Asian Entomology। পৃষ্ঠা 33–47। আইএসএসএন 2012-8746। ৭ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  13. Francis, A.; Lok, S.L। "Leea L.(Vitaceae) of Singapore" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 55-71। ২২ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ arch 2011  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  14. বসু রায়, অর্জন; বৈদ্য, সারিকা; রায়, লিপিকা। সুন্দরবনের কিছু পরিচিত প্রজাপতি (মার্চ ২০১৪ সংস্করণ)। সুন্দরবন জীবপরিমণ্ডল,Department of Forest Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ১১০। 
  15. Basu Roy, Arjan; Das, Rudra Prasad; Mukherjee, Prosanta (২০১৩)। A Pictorial Guide Butterflies of Bengal Plains। Kolkata: Nature mates-Nature Club। পৃষ্ঠা 50। আইএসবিএন 81-903524-5-8 
  16. Bora, A.; Meitei, L.R.। "Diversity of butterflies (Order:Lepidoptera) in assam University Campus and its vicinity, Cachar district,Assam,India" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 328-339। আইএসএসএন 2220-6663। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ arch 2014  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  17. Kalesh, S & S K Prakash (২০০৭)। "Additions of the larval host plants of butterflies of the Western Ghats, Kerala, Southern India (Rhopalocera, Lepidoptera): Part 1"। J. Bombay Nat. Hist. Soc.104 (2): 235–238। 
  18. Brower, Andrew V. Z., (2007). Iambrix Watson 1893. Version 4 March 2007 Page on genus Iambrix in The Tree of Life Web Project, http://tolweb.org/.